রেড হাইফার
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:৫৩:৪২ রাত
রসূল(সাঃ) বলতেন তোমরা বনী ঈসরাইলের মত বেশী বেশী প্রশ্ন করে দ্বীনকে জটিল কঠিন করে ফেলোনা। ...সাহাবীরা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন যাতে লোকে ফালতু প্রশ্ন করতে না পারে, তারপরও কোনো কোনো লোক সেটা করেছে। বনী ঈসরাইলের এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর তার হত্যাকান্ড নিয়ে ব্যপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমনকি একাধিক পক্ষ বিপক্ষ তৈরী হয়ে বিষয়টি প্রায় যুদ্ধে পরিনত হতে থাকে। তখন মূসা(আঃ)কে তারা অনুরোধ করেন যাতে আল্লাহর থেকে তিনি জেনে নেন প্রকৃত হত্যাকারী কে । মূসা(আঃ) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন এ বিষয়ে। এরপর আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন :
"আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমকে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা একটি গাভী যবেহ করবে’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের সাথে উপহাস করছ’? সে বলল, ‘আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি’।" (সূরা বাকারা, আয়াত ৬৭)
বনী ঈসরাইল যদি কে কোনো একটি গাভি জবাই করে তার গোস্ত আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক মৃত লোকটির মরীরে নিক্ষেপ করত, তবে লোকটি জিবীত হয়ে বলে দিত কে তার হত্যাকারী। কিন্তু তারা সাধারণ বিষয়টিকে পেঁচালো। পরের আয়াত :
"তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দো‘আ কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন গাভীটি কেমন হবে’। সে বলল, ‘নিশ্চয় তিনি বলছেন, নিশ্চয় তা হবে গরু, বুড়ো নয় এবং বাচ্চাও নয়। এর মাঝামাঝি ধরনের। সুতরাং তোমরা কর যা তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে’।" (বাকারা: ৬৮)
এরপরও তারা খুশী হলোনা। কোনো কারন ছাড়াই স্রেফ নিজেদের কাজকে কঠিন করার স্বার্থেই তারা আরও সাধারণ বিষয়টিকে পেচালো।....
"তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দো‘আ কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, কেমন তার রঙ’? সে বলল, ‘নিশ্চয় তিনি বলছেন, নিশ্চয় তা হবে হলুদ রঙের গাভী, তার রঙ উজ্বল, দর্শকদেরকে যা আনন্দ দেবে’।" (বাকারা:আয়াত ৬৯)
মূসা(আঃ) তাদেরকে এটা বললেন। কিন্তু তবুও তারা একাজটি না করে আবারও আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেস করতে বললো। এভাবেই ওরা নিজেদের প্রত্যেকটি ভালো বিষয় পেচিয়ে খারাপ করেছে।
"তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দো‘আ কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, তা কেমন? নিশ্চয় গরুটি আমাদের জন্য সন্দেহপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর নিশ্চয় আমরা আল্লাহ চাহে তো পথপ্রাপ্ত হব’।"(বাকারা:আয়াত ৭০)
ওরা নিজেরাই সহজ বিষয়কে এমনভাবে পেচালো যে ওদের জ্ঞানী ও তার্কিকরা জটিল সমীকরনে উপনিত হল এবং বিষয়টি সন্দেহপূর্ণ হয়ে উঠলো ওদের কাছে।
"মূসা বলল, ‘তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি বরং সুস্থ ও নিখুঁত’। তারা বলল, ‘এখন তুমি সত্য প্রকাশ করেছ’। তারা তাকে যবহ করল যদিও তাদের জন্য সেটা প্রায় অসম্ভব ছিল। "
এবার এরকম গরু খুজে পাওয়া তাদের জন্যে খুবই কঠিন হয়ে উঠলো,তবে তারা তা পেল।
"আর স্মরণ কর, যখন তোমরা একজনকে হত্যা করলে অতঃপর সে ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করলে। আর আল্লাহ প্রকাশ করে দিলেন তোমরা যা গোপন করছিলে। অতঃপর আমি বললাম, ‘তোমরা তাকে আঘাত কর গাভীটির (গোশতের) কিছু অংশ দিয়ে। এভাবে আল্লাহ জীবিত করেন মৃতদেরকে। আর তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখান, যাতে তোমরা বুঝ।" (বাকারা ,আয়াত ৭২-৭৩)
তবে এখানে গরু জবাই করার পেছনে আরেক কারন ছিলো। মূস(আঃ) যখন তার উম্মতকে নিয়ে পালালেন,তখন ফিরাউন পেছনে ধাওয়া করলো। আল্লাহর আদেশে তিনি লোহিত সাগর লাঠি দ্বারা আঘাত করলেন,তখন রাস্তা হয়ে গেল এবং তিনি পার হলেন। ফেরাউনও ধাওয়া করে সেই রাস্তায় আসলো। ওপারে পৌছে মূসা(আঃ) আল্লাহর আদেশে সাগরে আবার আঘাত করলেন তখন প্রবল ঢেউসহ পানি এসে ফেরাউনকে গ্রাস করলো। তারা সকলে মারা গেল। এবার এপারে এসে বসতি স্থাপনের একটা পর্যায়ে আল্লাহ তাকে তূর পাহাড়ে ডাকলেন ওহীর জন্যে। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশী সময় অর্থাৎ ৪০ দিন অবস্থান করলেন। পরে মূসা(আঃ) এসে দেখে তার কওম, গরুর বাছুর পূজা শুরু করেছে। সামীর নামক এক স্বর্ণকার ছিলো,যে স্বর্ণ দিয়ে গরুর বাছুর তৈরী করেছিলো আল্লাহ পরিক্ষার জন্যে সেই বাছুরকে সাময়িক জীবন্ত করে দিয়েছিলেন। এতে সামীর লোকদেরকে বুঝায় যে এই বাছুরের ভেতর স্বয়ং স্রষ্টা চলে এসেছে তোমরা পূজা করো। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া সকলেই সেপথে চলে গেল। মূসা(আঃ) তাওরাত কিতাব নিয়ে ফিরে আসলেন এবং এই দৃশ্য দেখে রাগে ক্ষোভে নিজের ছোট ভাই হারুন(আঃ) (তিনিও নবী ছিলেন) তাকে ভৎসনা করেন এবং দাড়ী ধরে হ্যাচকা টান মারেন। তবে হারন(আঃ)এর কথা বনী ঈসরাইল শোনেনি।
আল্লাহ পরবর্তী কালের ওই হত্যাকান্ডের ঘটনার নিষ্পত্তি করার সময় ওদের পূজনীয় সেই গরুকেই জবাই করতে বললেন,আর ওরা গরু জবাই করবে না বলে নানান বাহানা তৈরী করে। অনেকের বাইরে ইমান থাকলেও ভেতরে গরুর প্রতি আলাদা রকম একটা আবেগ ছিলো। আল্লাহ সেই আবেগকে দূর করতে গরু জবাই করতে বলেন এবং এর দ্বারা একটি সমস্যার সমাধানও করে দেন।
"আর যখন আমি মূসাকে চল্লিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম অতঃপর তোমরা তার যাওয়ার পর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে, আর তোমরা ছিলে যালিম।"
সূরা বাকারা,আয়াত ৫১)
এখান থেকে শিক্ষা হল: অন্তরের গহীনে মন্দের প্রতি মহব্বত থেকে থাকলে সেটাকে কুরবানী দিতে হবে। আর দ্বীনকে সহজভাবে গ্রহন করতে হবে। আল্লাহর আদেশ চলে আসলে কেবল বলতে হবে-শুনলাম এবং মেনে নিলাম। সিরাতাল মুস্তাকিম হল সরল সোজা পথ। সকল বক্রতা পরিহার করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৬৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন