চুলকানী
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:১২:৩৮ রাত
গত মাসে আমার পায়ে হালকা চুলকাচ্ছিলো। চুলকাতে খুব আরাম লাগত। এরপর একটা রাজহাস খেলাম, তার পর থেকে বেশী চুলকাচ্ছিলো। চুলকানোর জন্যে একটা চিরুনী কিনলাম। সাধারনত চুলকাতো রাতে,সকালে,দুপুরে। চিরুনী দিয়ে চুলকালে খুব মজা লাগত, কিন্তু চুলকিয়ে কখনও রক্তাক্ত হয়ে যেতাম,এরপর জ্বলতো। বিষয়টা বাড়তে থাকলো। দুপায়ের গোড়ালী থেকে হাটু পর্যন্ত চুলকানো শুরু করলো। এটা বাড়তে শুরু করলো। এরপর ফেসবুকে একটা স্টাটাস দেওয়ার পর বহু শুভাকাঙ্খি বহু রকমের ওষুধ,মলম দিলেন। তাদের আন্তরিকতার জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশে মানুষের চেয়ে ডাক্তার বেশী। আর কোনো কিছু হলে আশপাশের মানুষেরা ভালো মনে করে কোনো এক চিকিৎস্যার কথা বলে ফেলেন এবং রোগীকে কখনও ফোর্স করেন তার অনুমিত চিকিৎস্যাটা নিতে। এতে অনেক সময় রোগীর অপচিকিৎস্যা হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রোগের আসল কারন না জেনে উপসর্গ দেখে চিকিৎস্যা দেওয়া হয় এবং সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে।
আমার ওই চুলকানীর সময় গরম পানি দিলে খুব মজা লাগত। উপসর্গটা হুবহু একজিমার মত। বলা যায় একজিমার সাথে মিল ৯৯%। কিন্তু আমি শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। একজন ডাক্তার বন্ধু বললো রক্তে হয়ত চিনির পরিমান বেশী,ডাক্তারের কাছে যান। আরেকজন বন্ধু ডাক্তার স্যাম ইনবক্সে এলার্জির মেডিসিন সাজেস্ট করলেন, এটা এন্টি হিস্টামিন জাতীয়। আমি এটা খাওয়ার পর ২/৩দিন চুলকানী কমেছিলো। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও চুলকানো শুরু করলো। আমি আসলে পয়সা খরচের ভয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাচ্ছিলাম না, কিন্তু ঘটনা আর ছোটখাটো মনে হলনা।
এরপর আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার দেখে বললেন, ধরন দেখে একজিমাও মনে হচ্ছে, তবে এলার্জীও হতে পারে। উনি উনার অনুমান সংক্রান্ত বিষয়ে ৪ পৃষ্ঠার একচি নোট লিখলেন এবং ৩টা মেডিসিন সাজেস্ট করলেন। আর কেন তিনি এটা সাজেস্ট করেছেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ওই ৪ পৃষ্ঠায় লিখে প্রিন্ট করে দিলেন আমাকে। এলার্জী ও একজিমা নিয়ে সেখানে অনেক কথা ছিলো।
ডাক্তার এলার্জীর দু রকম মেডিসিন দিল এর একটা খেলে ঘুম আসে সেটা হল hydroxyzine hydrochloride 25mg tab, অন্যটায় জেগে থাকতে হয়,নাম হল prednisone 20mg tab. প্রথম ৩দিনে ডোজ বাড়িয়ে দিল। পরের ২ দিন অর্ধেক ডোজ,তার পরের ২ দিন সেটার অর্ধেক। আর একজিমার মলমও দিল,নাম triamcinolone acetone ointment use , 0.1% । তারপর আমি আমার পছন্দমত ফার্মেসী থেকে প্রেসক্রিপশন নিলাম। সেখানে আমাকে সব রকমের ওষুধ দিল । দুটো ছোট ছোট কৌটায় এক সপ্তাহের মত মেপে ওষুধ দেওয়া হল। পুরো ওষুধের দাম আসলো ৪৭ ডলার। আমি দিলাম মাত্র ৯ ডলার, বাকীটা আমার ইন্সুরেন্স দিয়েছে। ওষুধগুলো দিয়ে একজন ফার্মাসিস্ট আমাকে ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান দিল। সাইড এফেক্ট আছে কিনা,কিভাবে কখন কোনটা খেতে হবে ভালো করে বলে দিল। আমি সেভাবেই খেতে থাকলাম।
ডাক্তার বলেছিলো ১ সপ্তাহে যদি সেরে যায়,আর আসা লাগবে না। আর যদি কাজ না হয় চলে আসবে, আমরা তখন বিস্তারিত চিকিৎস্যায় যাব। কিন্তু মাত্র ৩/৪ দিন খাওয়ার পর আমার চুলকানী শেষ হল। আমি তারপরও ডোজ পূর্ণ করলাম।
আমি বুঝতে পারলাম কোনোভাবেই এটা একজিমা নয়। এটা পুরোপুরি এলার্জী ছিলো। অথচ ধরনটা একেবারে চুলকানীর মত। আসলে চুলকানীটা ছিলো স্রেফ একটা উপসর্গ। আমি বিস্তারিত লিখছি এই কারনে যে,দেশে বহু মানুষ এলার্জীর কারনে হয়ত শরীর চুলকাচ্ছে কিন্তু তারা চিকিৎস্যা নিচ্ছে চুলকানী,ফলে দীর্ঘদিন ধরে তারা সমস্যাগ্রস্ত। কোনো সমস্যা হলে আসলেই ভালো ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ। কখনও ভুল চিকিৎস্যায় সমস্যা দীর্ঘায়িত হয় এবং যা অল্প চিকিৎস্যায় ঠিক হত,সেটা জটিল আকার ধারন করায় ধকল যায় ব্যক্তির উপর।
আপাতত মাত্র ৯ ডলারে সব ঠিক হয়েছে মনে হলেও তা নয়। তবে ভালো এই যে ব্লাডের টেস্ট দেয়নি ডাক্তার। কারন ওটার অন্তত ৩৫% খরচ আমাকে দিতে হত। যতদূর মনে হচ্ছে ডাক্তারের ভিজিট ৩০০/৪০০ ডলার,তবে সেটা ইন্সুরেন্স কোম্পানীরই দেওয়ার কথা। দেখা যাক বিল আসুক আগে। ৩ সপ্তাহ হয়ে গেল অথচ ডাক্তারের বিল হাতে আসেনি।
বিষয়: বিবিধ
১০০৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন