আমার জীবনের প্রথম ও শেষ কবিতা আবৃত্তি

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ নভেম্বর, ২০১৬, ০৯:১৪:৩০ সকাল



ছোটবেলায় কিছু মজার ছড়া কবিতা বেশ ভালো লাগত। কিন্তু যত বড় হতে থাকি ততই কবিতার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মাতে থাকে। কেন যে কবিতা ভালো লাগত না,তা বুঝতাম না। অল্প কিছু ছড়া কবিতা যার মূল ভাব বেশ মজার,সেটা ভালো লাগত। অন্য কবিতা মোটেও পছন্দ ছিলোনা। স্কুলে বা অন্য কোথাও কোনো সাষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে কবিতা আবৃত্তি করত তখন,কিন্তু সেই অংশে আমার মেজাজ বিগড়ে যেত। আমার যত বন্ধু ছিলো এদের কেউ কবিতা পছন্দ করত না। আর পরিচিত কেউ কখনও কবিতা আবৃত্তি করলে আমার লজ্জা করত আর মনে মনে ভাবতাম সে থামলে বরং বেচে যাই....। তবে শিরোনামের সাথে লেখার কিন্তু সম্পর্ক আছে......কাহিনীতে ফিরে যাওয়া যাক...

আমি যখন ক্লাশ সিক্স এ পড়ি,তখন সমাজ-বিজ্ঞান ক্লাশ নিত আকবর স্যার। এই সেই আকবর স্যার,যার কাহিনী ক্লাশ ২ তে থাকতেই মুখস্ত ছিলো। বিশাল লম্বা,স্বাস্থ্যবান আর কালো চেহারার স্যারের দিকে তাকালে মায়া মমতার কোনো ছাপ দেখতে পেতাম না। যদি কেউ ক্লাশ ফাকি দিতে চাইতো তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা হত এই স্যারের ক্লাশ।.....তার মৃদু লাঠির ব্যবহারে পেছনের চামড়ার রং বদলে যেত....(বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)

তো এক দুপুরে আকবর স্যার সকলের পড়া ধরছে। ক্লাশে ছাত্র ছিলো অন্তত ৭০/৮০ জন। এম.এল পাইলট হাইস্কুলের পুকুরের দিকটার পাশে দ্বিতীয় তলায় চলছিলো ক্লাশ। স্যারের মুখ চুন,,পেছন থেকে পড়া ধরা হচ্ছে,,,বেশীরভাগ ছাত্রই দাড়িয়ে পড়েছে অপারগতায়। আমি লাঠির দিকে তাকালাম,,,,,নাহ আশ আশা নেই....আমি অর্ধেক মুখস্ত করেছিলাম,বাকী অর্ধেক একটু একটু করে বই দেখে সেই সময়ের ভেতর আয়ত্ব করার চেষ্টায় রত হলাম,,কিন্তু লক্ষ্য করলাম এক লাইন মুখস্ত করলেই পেছনের মুখস্ত থাকা অংশ দিব্যি ভুলে যাচ্ছি। ....ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে.....দোয়া দুরুদ পড়তে থাকলাম,,,,বোধহয় তা কবুল হয়ে গেল....

এবার আসল কাহিনীতে আসি,,,,,,,হঠাৎ ক্লাশে ঢুকল দশম শ্রেনীর সায়েন্স বিভাগের ফার্ষ্টবয়.....স্যারকে বলল-"মন্টু স্যার বলেছে যারা যারা সামনের স্বাধীনতার অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করতে চায়,তারা যেন এখনি অমুক রুমে গিয়ে দেখা করে,স্যার সেখানে বসে আছে।".......

আকবর স্যার সকলকে বলল--"এই তোরা কেউ কবিতা আবৃত্তি করতে পারিস ??"

কেউ মাথাও নাড়লো না,,,আমি উঠে দৌড়....। আকবর স্যার শুধু তাকিয়ে দেখলো..একজন উঠে দৌড় দিল। আমি পেছনে না তাকিয়ে সোজা সেই রুমে গিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখী আরও অনেকে সেখানে বসে আছে। সেই সময়ে আমি প্রচন্ড লাজুক ছিলাম। মানুষের সামনে আসতাম না। কথা বলতাম না। কেউ কথা বললে মাথা নেড়ে জবাব দিতাম। তবে নিকটজনদের সাথে,বন্ধুদের সাথে ব্যপক কথা বলতাম। মন্টু স্যার আমার দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। কারন কারা কবিতা আবৃত্তি পারে সেটা তিনি জানেন। যে ছেলে ডাকতে গিয়েছিলো তাকে উনি বললেন--"এই একজন পাইছিস ?" সে বলল-জি স্যার.....

ওদিকে আমি সময় গুনছি আকবর স্যারের ক্লাশ শেষ হল কিনা। মনে হচ্ছিলো আমাকে ফেরত পাঠাবে...তখন চিন্তা করছিলাম -ফেরত পাঠালে ক্লাশে যাব না...টয়লেটে যাওয়ার নাম করে সেখানে বসে থাকব। কিন্তু মন্টু স্যার বলল-"এই ওকে সত্যেন্দ্রনাথের ওই কবিতাটা দেখিয়ে দে....কবিতার নাম মনে নেই.....তবে লাইনগুলো হল...কোন দেশেতে চলতে গেলে ....দূর্বা কোমল,,,কোথায় ফলে সোনার ফসল ,সোনার কমল ফোটে রে,,সে আমদের বাংলাদেশ আমাদেরী বাংলা রে..."

স্যার বই হাতে নিয়ে সকলের সামনে স্যারের টেবিলের পাশে দাড়িয়ে আবৃত্তি করতে বলল। এটাই জীবনে প্রথমবার কিছু মানুষের সামনে দাড়িয়ে কিছু বলা বা আবৃত্তি করা। মাথার ভেতর আকবর স্যার ছাড়া আর কিছু নেই। তবে আমি বাংলা লেখা বেশ শুদ্ধ করে ভুল না করেই পড়তে পারতাম। উচ্চারনও বেশ শুদ্ধ ছিলো। জিহবায় জড়তা ছিলোনা। মনে মনে শুধু বললাম আমাকে পারতেই হবে,নইলে মন্টু স্যার ফেরত পাঠাবে,,,কপালে আজ মাইর ছাড়া কিছু নেই। আমি সাহস করে পড়ে ফেললাম।...মন্টু স্যার বলল--"ওরে এ দেখী ভালই পারে....হয়েছে তো".....আল্লাহর কসম,,,কবিতা আবৃত্তি বলতে যা বুঝায় তা আসলেই হয়নি কিন্তু আরও যারা আবৃত্তিকার ছিলো তারা কেউ সুবিধার ছিলোনা,ফলে তাদের তুলনায় ভালো করেছিলাম। খুশীর বিষয় হল এই যে,কবিতা আবৃত্তির জন্যে আমাকে আরও একবার ডাকা হয়েছিলো এবং সেদিনও ছিলো আকবর স্যারের ক্লাশ। অর্জন বলতে এটুকুই....আমিও খুশী। পরে এমন একজনকে অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তির জন্যে মনোনিত করল,যাকে না করলেই বরং ভালো হত,,,সে গড় গড় করে কবিতার ট্রেন চালিয়েছিলো। তবে আমি খুশী এ কারনে যে দুদিন পড়ার হাত থেকে বেচে গেছি.....!!!

বিষয়: বিবিধ

১১৪৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379367
০২ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:০৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : এমনিতেই কালো মানুষরা কঠোর অন্তরের অধিকারী হয়, বি,এস,এফ এর হাতে ধরা পড়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে, পুলিশের হাতে, শিক্ষকদের হাতে, আত্মীয় স্বজনদের কাছেও একই অবস্থা।

০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৪
314141
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy Happy Happy মাইর না খেলে নাকি পড়াশুনা হয়না Happy
379376
০২ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : হায় হায় দুদিন পড়ার হাত থেকে বেচে গেছেন তখন কিযে লাভ হয়েছে মনে করা হতো তাই না..?
০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৫
314142
দ্য স্লেভ লিখেছেন : তখন একবেলা স্যারে থেকে বাচা মানে বিরাট ব্যাপার হেহহেহে তবে সব সময় বাচিনি...মাইরও খেয়েছি
379384
০২ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:২১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু সুপ্রিয় ছোট ভাই।


আপনার কবিতা আবৃত্তির জন্য আপনার আকবর স্যারের কৃতিত্ব যে অনেকখানি তা বেশ স্পষ্ট! নইলে এই লাজুক ছেলেটিকে দিয়ে কবিতা পাঠ!!


অন্নেক সুন্দর ও মজাদার একটি লিখা মাশাআল্লাহ।


জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৬
314143
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। মাইরের উপর মেডিসিন নাই। আকবর স্যার বলত...এই লাইব্রেরী থেকে আমার ওষুধের কৌটাটা নিয়ে আয়....মানে বেত...Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
379391
০২ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৮
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো / পিলাচ/
০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৬
314144
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
379397
০২ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কবিতা পছন্দ করেন না????
আপনি মানুষ খুন করতে পারেন। কবিতার এমন অপব্যাবহার ইতিপূর্বে কেউ করেছে কিনা সন্দেহ আছে। আপনার ওই স্যারের মাইর এর হাত থেকে বাচানর কৃতজ্ঞতা টুকু হলেও কবিতার প্রাপ্য ছিল!!!
০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৮
314145
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমার কবিতা ভালো লাগেনা। আবৃত্তি শুনলে এখনও গা জ্বলে,তবে কখনও কখনও ভালোও লেগেছে প্রতিষ্ঠিত দু এক জনের কবিতা অঅবৃত্তি। শিমুল মোস্তফা না কি যেন নাম,তার কবিতা শুনেছিলাম একবার।
379424
০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:২২
আফরা লিখেছেন : ওরে---------------পড়াচোর--অন্ধের রাজ্যে কানাই রাজা Good Luck Good Luck Rolling on the Floor Rolling on the Floor
০৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৩৯
314146
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কিসের মধ্যে কি,,, পান্তা ভাতে ঘি.....Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File