আক্কেল আলী (রম্য রচনা)- বিষয় অতি বুঝবান, ছাগলা পাগলা আলুপুরি হুজুর – পর্ব ৬

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ০৯:৫২:৪৮ সকাল

জাবেদ আলুপুরী হুজুরকে বলল, আপনি বললেন হানীফিয়া, শাফিীইয়া, মালেকিয়া এবং হাম্বলিয়া, শুধু মাত্র এই চার মাযহাবের ক্ষেত্রে ‘মাযহাব’ অর্থ হবে ‘পথ’ এবং এই চার ইমামের দেখানো ‘পথ’ পরস্পর বিরোধী হলেও তা সঠিক ‘পথ’! এখন আমার প্রশ্ন হল তবে কী আমরা চার জনের মাযহাব বা পথকে অনুসরণ করতে পারি, যেহেতু তাদের সকলের দেখানো পথই সঠিক পথ। প্রতি উত্তরে আলুপুরী হুজুর তার দাঁড়ীতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, মাযহাব বড়ই কঠিন জিনিস যা শিক্ষা নিবার এবং বুঝবার একমাত্র সহি জায়গা হ’ল বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুল! আর এই জ্ঞান অন্য জায়গার থেকে নিলে মাযহাব না বুঝবার পারবে না সঠিক জ্ঞান হাসিল করবার পারবা! তামাম দুনীয়ার কোথাও এই জ্ঞান নাই, শুধু আছে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলতে! কিন্তু তোমার এই জ্ঞান বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে আসে নাই তা আমি পরিষ্কার বুঝবাম পারতাছি। জাবেদ হ্যাঁ সুচক জবাব দিলে আলুপুরী হুজুর বলল, আর এ জন্যই তুমি গণ্ড মূর্খ পণ্ডিত জাকির নায়েক এবং লা মাযহাবীদের ন্যায় বার বার একই ভুল করতান লাগছ।

মাযহাবের এই জটীল জ্ঞান ভাল করে বুঝে নেও আমার কাছ থেকে যাতে করে ভবিষৎতে আবার একই ভুলের গর্তে পড়ে না যাও। ধর কেউ যদি বলে এই চার ইমামের কোন বিষয়ে উপর কোন সমাধান (মাযহাব) যদি নবী করিম () সহি হাদিসের সাথে মিলে যায়, তবে তার সেই বিষয়ের উপর সেই মযহাবকে মানব, আর যদি সহি হাদিসের বিপরীত হয় তবে মাযহাব না মেনে, মানব নবী করিম () সহি হাদীসকে, তবে তো সেই ব্যাক্তি আর লা মাযহাবি এবং ঐ গণ্ড মূর্খ পণ্ডিত জাকির নায়েকের মাঝে কোন প্রার্থক্যই থাকল না। কেননা তারা এই সকল মহান ইমামদের মাযহাব না মেনে মানল নবী করিম () সহি হাদিসকে; এখন তুমিও যদি তাদের ন্যায় মাযহাব না মেনে মান নবী করিম () সহি হাদিস! তবে তুমিই আমাকে বল, তাদের কপালে যদি লা মাযহাবী এবং গণ্ডমূর্খ উপাধী ঝুলে তবে তোমার কপালে কেন তা ঝুলবে না?

আমি তো তোমার ভালাই চাই, তাই বলি ‘লা মাযহাবী’ এবং ‘গণ্ড মূর্খ পণ্ডিত’ উপাধী পাওয়ার হাত থেকে যদি বাচতাম চাও তবে, ওস্তাদী না করে, তাড়াতারি ফালদিয়া ঐ চার জন ইমামের মধ্য থেকে শুধু মাত্র ‘একজন ইমামের পথকে অন্ধ ভাবে অনুসরণ’ (ত্তাকলীদ) করা শুরু করে দাও! আর যদি উস্তাদী করে একজন ইমামের পথকে অন্ধভাবে অনুসরণ না করে, ঐ চারজন ইমামের মতামতকেই সহি হাদিসের আলোকে যাচাই বাছাই করে অনুসরণ করা শুরু করছ তো মরছ। তবে ভাল করে শুনে নেও, ‘লা মাযহাবী’ এবং ‘গণ্ড মূর্খ পণ্ডিতে’র সাটিফিকেট দেওয়ার জন্য তোমার মত পণ্ডিতদেরকে হাতে হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজছে আমাদের দেওবন্দি ওলামা কেরাম। আমার কথা যদি বুঝে থাক তবে বলত লা মাযহাবি এবং গণ্ড মূর্খ পণ্ডিত এই দুই কিছিমের উপাধী পাওয়ার হাত থেকে বাচতে হল কিভাবে মাযহাবকে বুঝতে এবং মানতে হবে। জবেদ বলল, হুজুর আপনার বুঝ মতে এই দুই কিছিমের উপাধী পাওয়ার হাত থেকে বাচার একটাই পথ তা হল, মাযহাবকে বুঝতে হবে যে কোন একজন ইমামের বুঝের আলোকে এবং ঐ ইমামের মাযহাবকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে হবে! অর্থাৎ ত্তাকলীদ করতে হবে।

আলুপুরী হুজুর আবার জাবেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি তো তামার ভালাই চাই, তাই বলি গলায় যদি ‘গণ্ড মূর্খ’ এবং ‘লা মাযহাবি’ মেডেল ঝুলাইতে না চাও তো যুক্তি তর্কে না যেয়ে ইমাম হানাফীর () অনুসরণকারী হয়ে যাও। জাবেদ বলল, কিন্ত কেন আমরা অন্য তিন ইমামকে বাদ রেখে শুধু মাত্র ইমাম আবু হানাফির দেখানো পথকে অনুসরণ করব। আলুপুরী হুজুর বলল, উত্তর অনেক সহজ, কেননা আমাদের বাব দাদারা ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ করত তাই আমরাও তাকে চোখ মুখ বুঝে, এদিক সেদিক না তাকিয়ে অন্ধ ভাবে অনুসরণ করব। কথা বুঝ নাই।

জাবেদ বলল হুজুর কথা তো বুঝলাম তয় পুরা বুঝি নাই। তার কারন হ’ল হুজুর আমরা বাংলাদেশের মাদ্রাসার ছাত্র না হওয়ায় বুঝি একটু কম। আর এই কম বুঝার কারনেই আমি বুঝি, আমরা একমাত্র নবী করিম () মাযহাব বা পথ বা তরিকা’কে অন্ধ ভাবে অনুসরণ করব, অন্য কারোটা নয়। কিন্ত আপনি তা না বলে বলছেন ইমাম আবু হানীফার মাযহাবকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে! প্রতি উত্তরে আলুপুরি হুজুর বলল এই জন্যই তোমাকে আমি বলেছিলাম মাযহাব বড় কঠিন জিনিস আর যে এ দিকে ফুঁ দিতাম যাইবে তার মুখ পুইরা কুক হইয়া যাইবে। সে যাই হোক তোমার জিজ্ঞাসার উত্তর হল ইমাম আবু হানিফার মাযহাব অনুসরণ করা আর নবী করিম () মাযহাব অনুসরণ করা একই কথা। কেনানা নবী করিম () দেখানো পথ আর ইমাম আবু হানিফার দেখানো পথ একই পথ।

জাবেদ বলল হুজুর, বিষয়টা বড়ই কঠিন লাগছে যদি একটু খোলসা করে বুঝাইয়া বলতেন। আলুপুরী হুজুর বলল আমি তোমারে বুঝাইয়া বলতাম লাগছি, তুমিই আমাকে বল, খ্রিষ্টানরা কী বলে না তিন খোদা মিলে এক খোদা। জাবেদ বলল জী হুজুর তারা তা বলে। তারা যদি তিন খোদা সমান এক খোদা বলতে পারে তবে আমরা কেন দুই মাযহাব মিলে এক মাযহাব বলতে পারব না। জাবেদ বলল তারা তো শিরক করে। আলুপুরী হুজুর বলল তারা শিরক করে ঠিক কিন্ত আমরা তো দুই মাযহাবকে এক মাযহাব বলে কোন শিরক করি না, কেনানা আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে খোদা মানি না। কী কথা এইবার বুঝে আসছে। জাবেদ বলল, হুজুর বাংলাদেশে বুদ্ধিমান লোকের অভাব নাই। তাই আমরা দেখি বুদ্ধির সাহায্যে যুক্তি খাটীয়ে, হক কথা এবং না হক কথার মধ্যে বুদ্ধিমান আলেমরা তালগোল পাকিয়ে ফেলে। ফলে সাধারন জনতার পক্ষে কোনটা হক কথা আর কোনটা না হক কথার তা বুঝা অসম্ভব হয়ে যায়। হুজুর আমি নিজে বাংলাদেশের মাদ্রাসার ছাত্র না হওয়ায় এমনেতেই কম বুঝি, তার উপরে আপনার পাগলা যুক্তির ঠেলায় যতটুকু বুঝতাম তাও শেষ।

বিষয়: বিবিধ

৫৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File