আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৩৮

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২২ মার্চ, ২০১৭, ০৯:৫৩:৫৬ সকাল

কেসস্টাডি(Case Study): আমরা এই কেসস্টাডির মধ্যদিয়ে খুঁজে পেতে চেষ্টা করব যে, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ কতৃক উৎভাবিত এবং তার সমর্থনে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের পথকে অনুসরণ করে সৃষ্ট অর্ধেক- অর্ধেক গুষ্ঠিগুলর প্রভাব--আজকের বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কতটুকু।

আমরা পূর্বেই বিস্তারিত আলোচনা করে দেখিয়ে ছিলাম যে অর্ধেক-অর্ধেক মতবাদগুল প্রচারের মুল উদ্দেশ্য ছিল, (ক) সনাতন ধর্ম ত্যাগী মুসলমানদের পুনরায় সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য মুসলিমদের তাওহীদের উপর বিশ্বাসের ভাঙ্গন ধরান (খ) সনাতন ধর্ম ত্যাগী মুসলমানদের দলে ভিড়ানোর লক্ষ্যে ব্রাহ্মবাদীদের পরোক্ষ সমর্থনে বর্নভেদ প্রথাকে অস্বীকার করে মানবাতাবাদী হিসাবে নিজেদের জাহির কারা অর্থাৎ বাজী হেরে বাজী জিতা (গ) হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে অবাস্তব অবান্তর আবেগী কথা বার্তা বলে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করা (ঘ) অবাস্তব অবান্তর আবেগী কথা বার্তা বলে মুসলিম সমাজে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী শিরকি প্রথার প্রচলন। এখানে আমরা আজকের বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই অর্ধেক- অর্ধেক মতবাদগুলর প্রভাব সম্পকিত আলোচনা উপরে উল্লেখ্যিত ঐ চারটি (ক,খ, গ, ঘ) পয়েন্টের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখব।

বিষয়ঃ শাহ্‌বাগ মুভমেন্ট। এই কেস স্টাডি দুইটি ভাগে আলোচনা করব। প্রথম ভাগে শাহবাগ মুভমেন্ট বলতে আমরা কী বুঝি এবং সেখানে প্রকৃত পক্ষে কী ঘটে ছিল সে সম্পর্কে একটা ধারনা দিব মাত্র, ঘটনা বিরাট বিশাল বিধায় কোন ধরনের বিস্তারিত বর্নায় যাব না। দ্বিতীয় অংশে আমরা কিছু ঘটনা বিশ্লেষন করে দেখাতে চেস্টা করব এই মুভমেন্ট সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী ছিল?

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের কর্ম-কান্ড থেকে এটা প্রতিয়মান হয় যে, তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার অভিলাষ নিয়ে একের পর এক গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে করে চলছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে পিলখানা হত্যাকান্ড, শাপলা চত্তরে আলেম ওলেমাদের উপর আক্রমণ এবং গনহত্যা ইত্যাদি। সম্ভবত এই পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ইসলামী দল জামাতে ইসলামকে বাংলাদেশের জমিন থেকে মুছে দেওয়ার। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারা গঠন করে ICT (International Crimes Tribunal)। এই ICT মাধ্যমে তারা জামাতে ইসলামির নেতাদের বিচার কাজ শুরু করে। বিচারের বিষয় আজ থেকে প্রায় অর্ধ শত বছর(১৯৭১) পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা অর্থাৎ যুদ্ধ অপরাধ। এই বিশেষ ট্রাইবুনাল থেকে সর্বপ্রথমে যে জামাতনেতা এবং প্রভাবশালী ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলল্লাহ বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয় তার নাম আব্দুল কাদের মোল্লা। বিচারকরা রায়ে তাকে যাবতজীবন কারাদণ্ড দিলে, ৫-ই ফ্রেবুয়ারী ২০১৩ সালে অর্ধেক- অর্ধেক মতবাদধারীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাত জানাতে ঢাকার শাহ্‌বাগে একত্রিত হয়। ব্রাহ্মবাদী শক্তি ও মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে তারা প্রথমিক ভাবে সাফল্যও পেয়ে ছিল। এই মুভমেন্ট ‘শাহ্‌বাগ মুভমেন্ট’ নামে খ্যাত।

‘শাহ্‌বাগ মুভমেন্টের’ দাবী অনুসারে কর্তার ইচ্ছায় কিত্তনের মত আইনকে সংশোধন (amend) করে এবং সেই নতুন সংশোধিন আইনকে একই দিনে কার্যকর করে বিশ্ব রেকড তৈরি করে(they amend and in force the law at the same day!)। পরবটিতে এই নতুন আইনের অধীনে পুনঃবিচারের মাধ্যমে কাদের মোল্লাকে ফাঁসী দিতে সমর্থ হয়ে ছিল। এটা ছাড়া এই ধরনের কোন বাস্তব ঘটনার কথা আমার জানা নেই। তবে এই ধরনের বিচারের মত বিচার নিয়ে একটা গল্প পরেছিলাম। গল্পটা ছিল এই, এক বার এক চোর রাজার বাগানে চুরি করে ধরা পড়লে তাকে বিচারের জন্য রাজ দরবারে হাযির করে। ক্রোদ্ধানিত রাজা তাকে হত্যার আদেশ দেয়। তখন তার পরিসদবর্গ রাজাকে স্মরন করিয়ে দেয় যে, তার রাজ্যের আইন অনুসারে চুরির শাস্তি হল কয়েক মাস জেল মাত্র। ক্রোদ্ধানিত রাজা তখন বলল, আমি রাজা তাই ‘আমিই আইন’, আজ থেকে চুরির শাস্তি হত্যা। তখন তার পরিসদবর্গ রাজাকে বলল, রাজা মশাই এর পরও আপনি এই চোরকে হত্যা করতে পারেন না কেননা যখন সে চুরি করে ছিল তখন সে এই আইন সম্পর্কে অবহিত ছিল না। তখন রাজা আরও রেগে গিয়ে বলল, আমি রাজা তাই আমার ইচ্ছাতেই আমার প্রজাদের শাস্তি হতে হবে সে অপরাধ করুক আর নাই বা করুক তাতে কিছু এসে যায় না!

আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে ছিলাম যে আমাদের এই আলোচনা শুধু মাত্র চারটি পয়েন্ট সীমাবদ্ধ রাখব, তাই বিচার ব্যাবস্থা(ICT), ইসলাম প্রচারকদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ, বিচারের রায়, স্কাইপ কেলেংকারী, অন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন ইত্যাদী বিষয় গুল আমাদের আলোচনায় টেনে আনবো না। আমরা এখানে দেখাতে চেস্ট করব এই ‘শাহ্‌বাগ মুভমেন্ট’ অর্ধেক-অর্ধেক মতবাদ দ্বারা কতটা প্রভাবিত ছিল উপরে উল্লেখিত ঐ চারটি পয়েন্টের আলোকে।

প্রথমত শাহবাগীরা যুদ্ধ অপরাধ, যুদ্ধ অপরাধ আওয়াজ তুলে জামাত ইসলামের অনুসারী ইসলাম প্রচারকদের বিরুদ্ধ্বে অবস্থান গ্রহণ করলেও তারা পুনঃ পুনঃ এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে যে, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে! তারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করেছে। তারা যে ইসলামকে অনুসরণ করছে তা বুঝানোর/ প্রচারের জন্য তাদের যুবতী সমর্থকরা বেপর্দা হয়ে প্রকাশ্যে কুরআনকে তালাওয়াত করেছে! বীনা উজুতে জানাজা নামাজ পরেছে! ছেলে মেয়ে একত্রিত হয়ে নামাজ পড়েছে! -----

দ্বিতিয়ত তারা অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠিগুলর ন্যায় বৈষ্ণব, হিন্দু, মুসলিম এবং পীরতন্ত্র বা সুফীকে এক সুতায় গেথে প্রকাশ্য ভাবে এর স্বপক্ষে শ্রী চৈতন্যের অনুসারীদের ন্যায় নর্তন কুর্দন এবং উচ্চ স্বরে সংগীতের আয়োজন করেছে। তারা অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠিগুলর ন্যায় সব ধর্মকে এক পাল্লায় রেখে বিভিন্ন আবেগী কথাবার্তা বলেছে এবং বিভিন্ন আবেগী প্রথার প্রচলনের জন্য চেষ্টা করেছে, যেমন মঙ্গল প্রদীপ,মঙ্গল শিখা, আল্পনা ইত্যাদি।

এই অর্ধেক–অর্ধেক শাহ্‌বাগীগুষ্ঠির উদ্দেশ্য এবং গতিবিধি সম্পর্কে একটি সুন্দর চিত্র পাই লুণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইজডীর ছাত্রী সঞ্চারী দীর এক নিবন্ধে (January 29, 2017

Debates About Religion and Secularism Turn Lethal in Bangladesh: The Case of The Shahbag Movement) ঐ নিবন্ধে তিনি লিখেন, “Some Shahbag -bloggers lost their lives as part of the struggle, but there were also some gains. For instance, religious minorities used the sphere of Shahbag as a space for practicing cultural activities based on minority sects, such as Bauls who combine religious practices of both Vaishnava Hindus and Sufi Muslims. In this sense, the Shahbag movement encompasses a variety of cultural and political activities both online and offline.” **

“কিছু ব্লগার(অর্ধেক–অর্ধেক শাহ্‌বাগীগুষ্ঠির সদস্য) তাদের সংগ্রামের অংশ হিশাবে জীবন হরিয়েছে ঠিক(যেমন, রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা) কিন্তু তাদের কিছু অর্জনও ছিল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সংখ্যা লঘু ধর্মীয় গ্রুপ গুল (অর্থাৎ অর্ধেক – অর্ধেক গুষ্ঠিগুল) শাহ্‌বাগকে ব্যাবহার করতে পেরেছিল তাদের সংস্কৃতি চর্চাকে ব্যাপক ভাবে আমজনতার কাছে তুলে ধরার সুযোগ হিসাবে। যেমন বাউল, যারা বৈষ্ণব, হিন্দু এবং সুফী মুসলিমের আচার আচরণকে সস্মিলিত ভাবে পালন করে থাকে(!) এই অর্থে শাহবাগ মুভমেন্ট বিভিন্ন প্রকারের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক গতিকে ধারন করে ছিল, অনলাইন ও অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে-ই।”

স্পস্টতই দেখা যাচ্ছে যে, শাহবাগ মুভমেন্ট আমাদের দুই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কতৃক উদ্ভাবিত এবং ব্রাহ্মবাদের সমর্থনে সৃষ্ট অর্ধেক- অর্ধেক গুষ্ঠিগুল কালের আবর্তে হাড়িয়ে গেলে/ কোন কোন গুষ্ঠি দুর্বল ভাবে টিকে থাকলেও- তাদের কুলষিত মতবাদগুল না হাড়িয়ে গিয়েছে না দুর্বল হয়েছে বরং তার প্রভাব এখনও সমভাবে জারি আছে। পূর্বে এই অর্ধেক- অর্ধেক মতবাদগুল ব্যাবহার করার উদ্দেশ্য ছিল সনাতন ধর্ম ত্যাগীদের সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর এখন তা ব্যাবহার হচ্ছে এই অঞ্চল থেকে ইসলামকে বিতাড়িত করার জন্য। প্রার্থক্য শুধু এইটুকুনই।

**http://religiongoingpublic.com/archive/2017/debates-about-religion-and-secularism-turn-lethal-in-bangladesh-the-case-of-the-shabag-movement

চলবে---

বিষয়: বিবিধ

৯৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File