একটি ছেলের নিঃস্ব হওয়ার গল্প

লিখেছেন লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:৫৬:১৮ সন্ধ্যা



এইইই রেহান! উঠ। এতক্ষণ ধরে ডাকছি তাও উঠছিস না! যা উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়।

রেহানকে প্রতিদিন এভাবেই জাগান তার মা। খুব আদর করেন তাকে। আর করবেনই না বা কেন! একমাত্র ছেলে বলে কথা। তাই এই রেহানই তার মা-বাবার কলিজার টুকরা।

একটু পর রেহানের বাবা এসে বললেন কিরে তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস!! ডাক দিব নাকি তুর মাকে? এই বলে টান দিয়ে রেহানকে বিছানা থেকে তুললেন তার বাবা। রেহান উঠে বললো তোমাদের জন্য শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারিনা। এ শুনে তার বাবা বললেন, কি!! ১০ টা পর্যন্ত ঘুমিয়েও আরো ঘুমাতে চাও? রেহান কিছু না বলে চোখ ঢলতে ঢলতে ওয়াশ রুমে চলে গেল।

কি গো! তোমরা বাপ ছেলে কই? তোমাদের নিয়ে যে কই যাই! এই বলে চিল্লি দিলেন রেহানের মা। এইতো আসছি বলে রেহানের বাবা গেলেন খাবার টেবিলে। একটু পর রেহানও আসলো। ৩ জন খেতে বসেছেন। হঠাৎ রেহানের মা তার স্বামীকে বললেন, ওগো চলো আমরা কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি। বোরিং লাগছে বাসায়।

হুম। কোথায় যাবে? আমারও ইচ্ছা হচ্ছে যাওয়ার। কিন্তু কোথায় যাবো ঠিক করতে পারছিনা। রেহান তুই বল কই যাবি? রেহান খুশি হয়ে বললো ঢাকার বাহিরে এক জায়গায় গেলেই হলো। আমি একটু মুক্ত শ্বাস নিতে চাই। এই ঝামেলাপূর্ণ শহরে আর ভালো লাগেনা।

রেহানের বাবা একটু ভেবে বলে উঠলেন, তাহলে চলো আমরা সিলেট গিয়ে ঘুরে আসি। রেহান আর তার মাও সম্মতি জানালো। সবাই খুশি। কালই রওয়ানা হবেন। রেহানের বাবা তার স্ত্রীকে বললেন সব গোছিয়ে নাও ২-৩ দিনের জন্য যা লাগে। আমি একটা গাড়ি রেডি করি।

পরদিন ভোরেই যাত্রা শুরু করলেন তারা সিলেটের উদ্দেশ্যে। সবাই খুব আনন্দে। কেউ বুঝতেও পারেনি একটু পরেই শেষ হয়ে যাবে তাদের আনন্দ। শেষ হয়ে যাবে তাদের সবকিছু।

মেঘনার ব্রিজ পাড় হয়ে, আশুগঞ্জের পরই একটা মোড় অতিক্রম করতে গিয়ে বাসের সাথে ধাক্কা খেল রেহানদের কার। বাসের বেশি কিছু না হলেও বিশ্বরোডের ওপাশে গিয়ে সিটকে পড়লো রেহানদের কারটি। রেহানের আর কিছু মনে নেই।

চোখ খুললো ঢাকা মেডিকেলে। বুঝার চেস্টা করলো সে কোথায় আছে। যখন বুঝলো এটা হাসপাতাল তখনই চতুর্দিকে তাকিয়ে তার মা বাবাকে খুজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও দুজনের একজনকেও দেখতে পেল না। নার্সকে জিজ্ঞাস করলো তার মা বাবা কোথায়। নার্স বললো তারা আছেন। তুমি শুয়ে থাকো। কিন্তু না রেহান পাগলামি শুরু করে দিল। তাই বাধ্য হয়েই তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো।

কারণ তার মা বাবাকে দেখানো যাবেনা তাকে। তাহলে রেহানের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কেননা তারা আর বেঁচে নেই। তারা রেহানকে ছেড়ে, এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন পরকালে। রেহান এখনো জানেনা তার মা বাবার কথা। তাকে জানানো হচ্ছেনা। কিন্তু যখন জানতে পারবে তখন সে সহ্য করবে কি করে?

এভাবেই শেষ হয়ে গেল একটি সুখি পরিবার। শেষ হয়ে গেল রেহানের জীবন। মিটে গেল তার মা বাবা হীন বেঁচে থাকার স্বাদ।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379203
২৮ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৯:৫৩
আফরা লিখেছেন : রোড এস্কিডেন্টে কারো মৃত্যুর শুনলে বুকের ভিতরটা কেমন লাগে ।


ধন্যবাদ
২৮ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৯:৫৬
314021
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : হুম। আপ্নাকেও ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
379211
২৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০১:০৯
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো /
২৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৯:৪৩
314040
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
379217
২৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৭:২২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : এটা আমাদের দেশের নিত্যদিনের ঘটনা। দুর্নীতি ও অবহেলা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম সম্পুর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে। রোহানদের জন্য শুভকামনা করা ছাড়া আর কি বা বলার আছে!
২৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৯:৪৪
314041
ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন : জ্বী ঠিকই বলেছেন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File