আমার ঘটকালী

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:২১:৪১ দুপুর

ঘটকালীর শখ আমার ছোটবেলা থেকেই। লোকের বিয়ে দেখতে ভালো লাগত,বিয়ে খেতেও। স্কুলে থাকতে এলাকার এক বড় ভায়ের উকিল বাপ হয়েছিলাম, ছোট্ট মেয়েটাকে তুলে আনা হয়েছিলো। পরে অবশ্য উভয় পরিবার মেনে নিয়েছিলো। কলেজে থাকতে প্রিয় বন্ধু ফজলুল হকের মেঝো ভায়ের বৌয়ের উকিল বাপ হয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে বলছিলো, কে হবে উকিল বাপ ? মুরব্বীরা রাজি হলোনা, কেন তা বুঝিনি। আমি হাত তুলে বললাম, আমি ছোটবেলা থেকেই উকিল বাপ, এখন এটা তো ব্যাপারই না। বানালো সবাই মিলে। পরে দেখী একদিন সেই ভাবী আমার পা ছুয়ে সালাম করছে। মার্টাল আর্ট স্টাইলে তিড়িং করে লাফ দিয়ে পিছিয়ে আসলাম। উনি বললেন, আপনি আমার উকিল বাপ ! বললাম সর্বনাশ ! কিসের বাপ ! বন্ধুর ইশারায় পকেট থেকে টাকা বের করে বখশিশ দিয়ে বাঁচলাম। ততক্ষনে বুঝে গেছি কেন লোকে উকিল বাপ হতে চায়নি। উকিল বাপের নানান রসম রেওয়াজ চালু আছে সমাজে, পরে ওমুখো আর হইনি, কিন্ত লোকের বিয়ে দেওয়া বা উৎসাহ দেওয়ার কাজে আমি শীর্ষে। আমাকে বাপ,খালু ,মুচি বানিয়ে লোকে যদি বৌ পায়, তবে বৌ'ই ভালো।

কিন্তু হ্যপা হয়েছিলো অনলাইনে এসে। ভারতের এক সিনিয়র প্রযুক্তিবীদ সিস্টারকে চিনতাম আরেক ভায়ের মাধ্যমে। বিশাল এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে অনেক টাকা বেতনে চাকুরী করতেন। বলেছিলেন উত্তম মুসলিম পাত্র খুঁজছেন। আমার বন্ধু মহলে সম বয়সীদের চাইতে বুড়ো আর জুনিয়ররা ছিলো বেশী। বললাম, ঠিক আছে চেষ্টা করতে দেন। ইন্দোনেশীয়ান এক হ্যান্ডসাম চল্লিশোর্ধ যুবককে পেলাম আরেক জনের মাধ্যমে। কথা বললাম, বায়োডাটা নিলাম, খুব ভালো মনে হল। মেয়ে ত্রিশোর্ধ এবং সন্তানে আপত্তি নেই, কারন তিনি ছিলেন তালাকপ্রাপ্তা। তার স্বামী মুশরিক থাকা অবস্থায় উনি ইসলাম গ্রহন করেন, এবং স্বামী ইসলামে দিক্ষিত হতে না চাওয়াতে তাকে নিজেই তালাক দেন। উভয়ের ভেতর পরিচয় করিয়ে দিলাম।

কিছুদিন পর সিস্টার বললেন, ওই লোককে বিয়ে করব না। হতবাক হয়ে জানতে চাইলাম, এত ভালো পাত্র! সমস্যা কোথায় ? উনি বললেন, এই লোকের ৮টা সন্তান । পূণরায় জানতে চাইলাম, ৮টা কি ? উনি বললেন, তার ৮টি সন্তান। জানতে চাইলাম, তবে যে ছবিতে দেখলাম ছোট দুটি সন্তান ! উনি বললেন, ওরা হল সর্বশেষ দুটো, উপরে আরও ৬টা।...মনে মনে মারহাবা বলে মুখ গোমড়া করে আরেকবার ঢোক গিয়ে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বললাম, তা ছেলে তো মাশাআল্লাহ খুবই হ্যান্ডসাম ! আর তার সম্পর্কে জেনে এবং পরিচিত হয়ে ভালো মনে হল, পরহেজগারও। ইসলামিক জ্ঞানও খুবই উঁচু মানের।

উনি বললেন, হ্যা কথা ঠিক, কিন্তু ভেবে দেখলাম, এই লোক ৮টি সন্তান ও একটি মৃত বৌ(কবরে) রেখে ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতে আসতে চায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে, আমার পায়ে জীবন উৎস্বর্গ করতে চায়,,,, কিন্তু ও যদি বছর কয়েক পর আমার কাঁধে হালি খানেক বাচ্চা গছিয়ে দিয়ে আরেক মুখো হয়, আমার কি উপায় হবে ! ভেবে দেখলাম কথা নির্ঘাৎ সত্য হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। আমি রণে ভঙ্গ দিয়ে মুখে কুলুপ এটে বসে থাকলাম।

ওদিকে ভদ্র লোক অনাবরত মেইল করে যাচ্ছে। শেষে জানতে চাইলো ,সম্মানীতা সিস্টার কি কোনো সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ? উত্তরে সঠিক কি বলেছিলাম ভালো মনে নেই, তবে মনে মনে অবশ্যই বলেছিলাম,,,, বাপু তোমার জন্যে ইন্দোনেশিয়ান মাটিই বেশী উর্বর, আপাতত ওখানে চাষাবাদে মনোযোগী হও, তুমি ভালো কৃষক।

বিষয়: বিবিধ

৫৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386798
২৪ জানুয়ারি ২০২০ রাত ০১:১৮
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File