জিনদের সম্পর্কে বিশ্ময়কর কিছু বিষয় ! (লেখাটি আলকুরআনের ভিত্তিতে লিখছি, ধৈর্য্য ধরে পড়ুন)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ নভেম্বর, ২০১৯, ০৯:৩৬:০২ রাত
-------------------------------------------------------------
বহুকাল পূর্ব থেকেই মানুষদের ভেতর কিছু মানুষ জিনদের সাথে যোগাযোগ করত এবং নানান রকমের শির্কে লিপ্ত ছিলো। জিনেদের সাথে তাদের চুক্তি হত এবং জিনেরা মানুষদেরকে নানান ভেল্কী দেখিয়ে তাদের মনের কর্তৃত্ব গ্রহন করত এবং কখনও কখনও নিজেদেরকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার আসনে বসিয়ে মানুষের নানান আচরণ দেখে মজা করত। মানুষেরা যাতে জ্বিনদেরকে মহা শক্তিশালী ভাবে তার জন্যে সম্ভাব্য সবকিছু তারা করত এবং এখনও কখনও কখনও তারা তা করে। যারা জ্বীনদের সাধক, তারা মানুষের থেকে অবৈধভাবে উপকৃত হতে জ্বীনদের দ্বারা প্রচারিত মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে নানানভাবে।
পূর্বে জ্বীনদের ব্যাপারে বহু রকমের বিশ্বাসের ভেতর এটাও ছিলো যে,জ্বীনরা আল্লাহর পাশাপাশি সকল ক্ষমতার উৎস্য। আইয়ামে জাহেলিয়াতে বিশ্বাস করা হত, জঙ্গলের জিনেদের উপাসনা বা সম্মান করে জঙ্গল পাড়ি দিলে কল্যান হবে,না করলে বিপদ হবে। মরুভূমীর জ্বীনকে তুষ্ট না করে মরুভূমী পাড়ি দিলে বিপদ হবে এভাবে আকাশের জ্বীনদের সম্পর্কেও নানান অন্ধ বিশ্বাস ছিলো। জ্বীন সাধকরা সমাজে জ্বীনদের সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত কথা বলে মানুষকে যেমন ধোকা দিয়েছে তেমনী জ্বীনদের অহংকারও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ বলেন-
"আরো এই যে, কতক মানুষ কতক জ্বীনের আশ্রয় নিত,এর দ্বারা তারা জ্বীনদের গর্ব অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছে।" (সূরা জ্বীন আয়াত ৬)
এমনকি জ্বীনদের ভেতর খারাপ জ্বীন বা শয়তান জ্বীনরা অন্য জ্বীনদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে বা করত। শয়তানরা অন্য জ্বীনদেরকে খারাপ পথে পরিচালিত করতে নানান কৌশল করে। আল্লাহ তায়ালা এই বিষয়ে আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছেন :
" আরো এই যে, (জ্বীনেরা বলেছিলো) তোমরা (জ্বীনেরা)যেমন ধারনা করতে তেমনী মানুষেরাও ধারনা করত যে,(মৃত্যুর পর) আল্লাহ কাওকে পূণরুত্থিত করবেন না।" (সূরা জ্বীন,আয়াত ৭)
আজকে জ্বীনদের একটি বিশেষ ঘটনার কথা বলব:
[ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্নিত, রসূল(সাঃ) একদল সাহাবীকে নিয়ে উকায বাজারের দিকে রওনা হলেন। এ সময়ে জ্বীনদের আসমানী খবরাদী শোনার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে, এবং ছুড়ে মারা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জ্বীন শয়তানরা ফিরে আসলে অন্য জ্বীনেরা তাদেরকে বলল, তোমাদের কি হয়েছে ? তারা বলল, আসমানী খবরাদী সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের উপর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং অগ্নী শিখা ছুড়ে মারা হয়েছে। তখন প্রধান শয়তান বলল, তোমাদের খবর সংগ্রহে যে বাধা প্রধান করা হয়েছে,তা অবশ্যই নতুন কোনো ঘটনার কারনেই হয়েছে। সুতরাং তোমারা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ভ্রমন করো এবং এই ঘটনার কারন উদঘাটন করো। এরপর জ্বীনেরা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সফরে বের হল ঘটনার কারন অনুসন্ধ্যানে। ইবনে আব্বাস(রাঃ)বলেন, যারা তিহামার উদ্দেশ্যে বের হল, তারা নাখলা নামক স্থানে রসূল(সাঃ) এর কাছে এসে উপস্থি হল। রসূল (সাঃ) এখান থেকে উকায বাজারের দিকে যেতে মনস্থির করেছিলেন। সে সময় রসূল(সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। আর এ সময় জ্বীনদের ওই দলটি কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পেয়ে গভীর মনোযোগের সাথে তা শুনতে লাগল। এবং এরপর তারা বলতে লাগল-"আসমানী খবররাখবর সংগ্রহে এটিই আমাদের ভেতর প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি করেছে।" এরপর তারা তাদের কওমের কাছে ফিরে এসে বলল, 'হে আমাদের কওম ! আমরা এক আশ্চর্যজনক কুরআন শ্রবন করেছি,যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনই আমাদের প্রতিপালকের সাথে কোনো শরীক স্থাপন করব না। ' এরপর আল্লাহ তার রসূলের(সাঃ) প্রতি ওহী অবতীর্ণ করলেন- " বলো, আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে যে, জ্বীনদের একটি দল মনোযোগের সাথে (কুরআন)শ্রবন করেছে।" জিনদের উপরোক্ত কথাসমূহ আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে তার নবীকে(সাঃ) জানিয়ে দিয়েছিলেন। ]
(বুখারী ৪৯২১,৭৭৩,মুসলিম ৪৪৯,তিরমিযি ৩৩২৩,আহমাদ ২২৭১)
বি:দ্র: রসূল(সাঃ) এর নবুয়্যত লাভের পূর্বে জ্বীনেরা আকাশের বিশেষ স্থান থেকে ফেরেশতাদের উপর অবতীর্ণ হওয়া আল্লাহর বানীর কিছু অংশ গোপনে শুনে ফেলত। আল্লাহ এই অবকাশ জ্বীনদেরকে দিয়েছিলেন মানুষকে পরিক্ষা করার কারনে। জ্বীনকে তিনিই ক্ষমতা দিয়েছেন তার ধোকাবাজীর জন্যে, আবার তিনিই আশ্রয়প্রার্থী মানুষকে উদ্ধার করেন, এটাই তার পরিক্ষা। কিন্তু আকাশের সেই বিশেষ স্থান থেকে জ্বীনদেরকে আর নির্বিঘ্নে তথ্য নিতে দেওয়া হয়না হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর সম্মানে। ফলে তাদেরকে অগ্নীগোলক নিক্ষেপ করে বিতাড়িত করা হচ্ছিলো।
নীচে সূরা জ্বীনের কিছু আয়াত পেশ করা হল:
"বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না’। আর আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা অতি উচ্চ, তিনি গ্রহণ করেননি কোন স্ত্রী আর কোন সন্তান। ‘আর আমাদের মধ্যকার নির্বোধেরা আল্লাহর ব্যাপারে অবাস্তব কথা- বার্তা বলত’। অথচ আমরা তো ধারণা করতাম যে, মানুষ ও জিন কখনো আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করবে না’।" (সূরা জ্বীন, আয়াত ১-৪)
নিম্নোক্ত কথাগুলো জীনেরা বলেছিলো যখন তারা রসূল(সাঃ)কে দেখতে পেল এবং তার কন্ঠে আল কুরআনের বাণী শ্রবন করল। জ্বীনদের কথোপকথন আল্লাহ পছন্দ করেছিলেন তাই তিনি ওহীর মাধ্যমে পুরো ঘটনা রসূল(সাঃ)কে অবহিত করেন। এই কথাগুলো অত্যন্ত মূল্যবান।
"আর আমরা আকাশের খবর নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম কঠোর প্রহরী বেষ্টিত ও জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডে পরিপূর্ণ। আমরা (আগে) সংবাদ শুনার জন্য আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে বসতাম, কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে তার উপর নিক্ষেপের জন্য সে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডকে লুকিয়ে থাকতে দেখে। আর নিশ্চয় আমরা জানি না, যমীনে যারা রয়েছে তাদের জন্য অকল্যাণ চাওয়া হয়েছে, নাকি তাদের রব তাদের ব্যাপারে মঙ্গল চেয়েছেন’। ‘আর নিশ্চয় আমাদের কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রম। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত’। আর আমরা তো বুঝতে পেরেছি যে, আমরা কিছুতেই যমীনের মধ্যে আল্লাহকে অপারগ করতে পারব না এবং পালিয়েও কখনো তাকে অপারগ করতে পারব না’। ‘আর নিশ্চয় আমরা যখন হিদায়াতের বাণী শুনলাম, তখন তার প্রতি ঈমান আনলাম। আর যে তার রবের প্রতি ঈমান আনে, সে না কোন ক্ষতির আশংকা করবে এবং না কোন অন্যায়ের’। ‘আর নিশ্চয় আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছে আত্মসমর্পণকারী এবং আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সীমালংঘনকারী। কাজেই যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারাই সঠিক পথ বেছে নিয়েছে’। ‘আর যারা সীমালঙ্ঘনকারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন’। " (সূরা জ্বীন ,আয়াত ৮-১৫)
আমরা যা জানলাম ঃ
১. জ্বীনদের ভেতর ভালো ও মন্দ আছে। জ্বীনদের মন্দরা হল শয়তান। শয়তান কেবল মানুষকেই ধোকা দেয়না, বরং জ্বীনদের ভেতরও ধোকাবাজি করে।
২. জ্বীন ও মানুষেরা জান্নাত ও জাহান্নাম পাবে। ভালো মানুষ ও ভালো জ্বীন পাবে জান্নাত। খারাপ মানুষ ও খারাপ জ্বীন পাবে জাহান্নাম।
৩. আল্লাহ জ্বীনদের কাছেও তার বানী পাঠান। সেটা কিভাবে পাঠান সেটা আমাদেরকে জানানো হয়নি। জ্বীনদের ভেতর নবী ,রসূল আছে কি না সেটা আমাদের জানানো হয়নি, তবে রসূল(সাঃ) এর সাথে জ্বীনদের অনেকবার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে বলে সহি হাদীসগুলোতে উল্লেখ আছে।
৪. আলোচ্য সূরা জ্বীনে মানুষদের জন্যে শিক্ষা এই যে, আমরা উক্ত জ্বীনদের মত হেদায়াত অনুসন্ধানের চেষ্টা করব,তাহলে আল্লাহ হেদায়াত দান করবেন। আল্লাহর সাথে কোনো শরীক স্থাপনের চেষ্টা করব না। আর আল্লাহর উপর সম্পুর্ণরূপে আত্মসমর্পন করব।
বিষয়: বিবিধ
১২১৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন