একটি কমন কৌতুক ও একটি পারিবারিক সমস্যা ও একটি ...

লিখেছেন লিখেছেন মাটিরলাঠি ২৩ মে, ২০১৫, ০৩:৩৭:৫১ রাত

একটি কমন কৌতুকঃ

এক মহিলা পাশের বাড়ির মহিলার কাছে তাঁর মেয়ের জামাই আর পুত্রবধূর কথা বলছিলেন।

: মেয়ের জামাই আমার খুবই ভালো। প্রতি সকালে মেয়ের জন্য নাশতা বানিয়ে বিছানায় নিয়ে আসে। অফিস থেকে ফিরে আবার রান্নাঘরে ঢোকে। রাতে বিছানার মশারিটাও টানায় জামাই। জামাই আমার মেয়েকে বড় সুখে রেখেছে।

: আর ছেলের বউ কেমন?

: বউটার কথা আর বলবেন না। অলসের এক শেষ। ডাইনি আমার ছেলের হাড়-মাংস জ্বালিয়ে খেল। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ১০ টার সময়। উঠার সাথে সাথে ছেলে গিয়ে বেড টি দিয়ে আসে। তারপর আবার সকালের নাস্তা দিতে হয়। অফিস থেকে ফেরার পরও নিস্তার নেই। রান্নাঘরে ঢুকে। ছেলের হোম-ওয়ার্ক দেখিয়ে দিতে হয়। আর নবাবজাদি পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে টিভি দেখে না হলে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে।

বিষয় একই, একটু অন্য ফরমেটেঃ

দুই বান্ধবীর সাথে দেখা হলো জীবনের শেষ বয়সে। স্বাভাবিকভাবেই একজন আরেকজনের সন্তানাদির খোজখবর নিতে লাগল। একজন জিজ্ঞেস করল, তোরতো একটামাত্র মেয়ে, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মেয়ে জামাই নিয়ে কেমন আছিস? জানিস ? আমার মেয়ে জামাই খুবই ভালো, সে তো আমার মেয়েকে ছাড়া কিছুই বোঝে না, আমি বা আমার মেয়ে কিছু বললে কোনকিছুতেই না বলে না। মাস শেষে বেতনের পুরো টাকা আমার মেয়ের হাতে তুলে দেয়। যাকবাবা আমি আমার মেয়ে জামাইকে নিয়ে খুবই সুখেই আছি।

তো তোর ছেলের খবর কি? আমার ছেলের খবর আর কি বলব? সুখে থাকব ভেবে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে ঘরে নতুন বউ আনালাম। তারপর শুরু হলো আমার দুখের কাহিনী। ছেলেতো তার বউ ও শাশুড়ী ছাড়া কিছুই বোঝে না, তার বউয়ের কথামতো উঠাবসা করে, মাসশেষে বেতনের টাকাটাও বউয়ের হাতে তুলে দেয়, আমাদের কোন কথায় শুনে না। এইভাবে কি আর জীবন চলে? এইসব কথা শুনে তার বান্ধবী উত্তর দিল, আমার ছেলে এমন করলে আমি তাকে ত্যাজ্য পুত্র করতাম। তুই যে কি করিস?

১৯৬০ সালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক বনেদী পরিবারের বড় ছেলেকে বিয়ে দেয়া হলো পাশের থানার আরেক বনেদী পরিবারের বড় মেয়ের সঙ্গে। ছেলের বয়স ১৮, কনের বয়স ১৩। কোন কারণে কিছুদিন পরে ছেলের মার বউমা পছন্দ হলো না। শুরু হলো বউমা ও ছেলের উপর অত্যাচার। বউকে তালাক দিতে হবে। ছেলে রাজী নয়। ছেলের বক্তব্য মেয়ের দোষ কি? বৌমাকে দিয়ে বাড়ীর দাসীবান্দিদের কাজ করানো শুরু হলো। পাথার থেকে ধান আনতে, জংগল থেকে পাতা খড়ি আনার কাজে নিয়োজিত করা হলো। সকালে পান্তা ছাড়া কিছু দেয়া হতো না। দুপুরে, রাতে ঠিকমতো ভাত তরকারী দেয়া হতো না। তখনকার নিয়ম হিসাবে মেয়ের বাবার বাড়ী থেকে নানা রকম দ্রব্যাদি, পিঠাপুলী, চাল, চিড়া, খৈ, মুড়ী আসতো, কিন্তু শাশুড়ি তা বউমাকে খেতে দিতেন না। এভাবে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে দশ বছর অতিক্রান্ত হলো। কিন্তু মেয়ে বাবার বাড়ীকে জানতে দিলোনা তার উপর অত্যাচারের কথা। ঘটনাচক্রে মেয়ের বাবা সব কিছু জানার পর একদিন এসে মেয়ে ও জামাইকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। এর দুবছর পর ছেলে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে একটি বাড়ী ও কিছু জমি কিনে নতুন বাড়ীতে এসে সংসার শুরু করলেন।

ছেলের এহেনো বউভারুয়া রোগের কারনে তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত রাখা হলো।

এর বিপরীত চিত্রটিও আমরা অহরহ দেখি। “তুমি আমার স্ত্রী, তোমার জন্যতো মাকে ত্যাগ করতে পারিনা।” “মা যা বলবে সব তোমাকে শুনতে হবে।” “এ সংসার চলবে মায়ের কথা মতো।” “মায়ের হুকুম ছাড়া কিছু করবে না।” ইত্যাদি।

অনেক পরিবারে চলে অত্যাচার, ছেলে বাড়ী আসে, মার কাছ থেকে অভিযোগ শুনে তারপর শুরু হয় মারপিট। একই সঙ্গে মাকে খুশী করতে হবে, আবার বউকে খুশী করতে হবে - এই সমস্যায় ভুগে বহু পুরুষ। নিম্ন বিত্তে সমাধান বৌ পিটানো। আর মধ্য বিত্তেও এর প্রচলন আছে, আর মধ্য ও উচ্চবিত্তে চলে মোডারেট আউটরেজ।

আসুন একটি একটি প্রয়োজনীয় ফতোয়া দেখে নেই। আশরাফ আলী থানবী (র) -এর 'মুসলিম দাম্পত্য জীবন” বই থেকে নেয়া (অনুবাদ শফিউল্লাহ বিন আশরাফ, পৃষ্ঠা-১১০, এডিশন ২০ শে জুলাই, ২০০৪ইং)।

প্রশ্নঃ মা বাবার প্রতি লক্ষ্য করতে গিয়ে স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ না দেয়া কিংবা তাতে সংকোচন করার শরয়ী হুকুম কি?

উত্তরঃ শরীয়ত যে বিষয়টিকে ওয়াজিব সাবস্ত্য করেছে , তা পালনে মা-বাবা যদি বাধা হয়ে দাড়ায়, তাহলে তাদের কথা পালন করা জায়েয নেই। যেমন- কারো অর্থনৈতিক অবস্থা যদি এমন হয়, সে মা-বাবার পেছনে খরচ করতে গেলে তার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি কষ্ট পাবে, এমতাবস্থায় মা-বাবার পিছনে খরচ করে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে কষ্ট দেয়া জায়েয হবে না।

অনুরূপ স্ত্রীকে মা-বাবা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখা তার অধিকার। স্ত্রী যদি এ অধিকার বলে মা-বাবা থেকে পৃথক থাকতে চায়, আর মা-বাবা যদি তাতে সম্মতি না দেয়, তাহলে মা-বাবার অসম্মতি সত্ত্বেও তাকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। (ইমদাদুল ফাতওয়া)।

বিষয়: বিবিধ

৩৪২১ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321953
২৩ মে ২০১৫ সকাল ০৭:০৫
শেখের পোলা লিখেছেন : ইদাদুল ফতোয়ায় সন্দেহ রয়ে গেল৷
২৩ মে ২০১৫ সকাল ১১:২৯
263078
মাটিরলাঠি লিখেছেন : আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। পারিবারিক ভাবে অহরহ ঘটে যাওয়া এই জুলুমের বিষয়টি তুলে ধরতেই এই পোষ্ট। এর সার্বিক সমাধান আপনারা যারা ইসলাম বিশেষজ্ঞ ব্লগার আছেন, তাদের আলোচনার মাধ্যমে আমরা পাবো এই আশা করি ইনশা-আল্লাহ। Good Luck Good Luck
321961
২৩ মে ২০১৫ সকাল ০৮:৫৮
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আচ্ছা মা বাবা যদি স্ত্রি কে তালাক দিতে বলে তখন ফায়সালা কি উপরোক্ত ঘটনায়?
২৩ মে ২০১৫ দুপুর ০২:৫৫
263129
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ফয়সালা কি আমরা দিতে পারি? তবে মনে রাখতে হবে যে, স্বামী কেবল স্ত্রীর শুধু জীবনসাথীই নয়, স্ত্রীর ওলীও বটে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck

321967
২৩ মে ২০১৫ সকাল ১০:২৩
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। আপনাকে প্রিয়তে রাখলাম। কারন আজ/কাল কেউই সত্যও হক্ব কথা বলেনা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
২৩ মে ২০১৫ দুপুর ০১:০০
263103
আবু জান্নাত লিখেছেন : আপনার কষ্ট অনুমান করতে পেরেছি শ্রদ্ধেয়া লায়লা। সুখী হোক আপনার দাম্পত্য জীবন। এমন হাজারো নযীর রয়েছে সমাজের বাঁকে বাঁকে।
২৩ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৬
263139
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আমি একজন অনিয়মিত ব্লগার। আপনি প্রিয়তে রেখেছেন জেনে কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি। পোষ্টে ষাটের দশকের যে দম্পতির কথা বলেছি, তারা এখনো জীবিত, কর্মক্ষম ও সফল এক সংসারের অধিকারী। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়াতের উপর রাখুন। আ-মী-ন। Good Luck Good Luck
321982
২৩ মে ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
egypt12 লিখেছেন : আমার মা-বাবাকে সন্তুষ্ট রাখা আমার দায় আমার বৌয়ের না...বৌদের প্রতি দায় চাপানোর সংস্কৃতি আমরা পেয়েছি সনাতন ধর্মের বিশ্বাস থেকে।
২৩ মে ২০১৫ বিকাল ০৪:১৬
263147
মাটিরলাঠি লিখেছেন : "আমার মা-বাবাকে সন্তুষ্ট রাখা আমার দায় আমার বৌয়ের না" -সহমত। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck
321987
২৩ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ মে ২০১৫ বিকাল ০৪:১৮
263148
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও। Good Luck Good Luck
321998
২৩ মে ২০১৫ দুপুর ০১:০৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সমাজে উভয়দিকের মানুষ রয়েছে, বেশিরভাগ সুবিধাবাদী।
মেয়ের জামাই থেকেও পেতে চায়, ছেলের শশুরদের থেকেও পেতে চায়।
মেয়েকে সূখে রাখুক, জামাই মেয়ের কথায় চলুক, অপরদিকে ছেলে আমার কথায় চলুক, ছেলের বৌ বান্দীর মত খাটুক। এমন মনমানসিকতার পরিবার সমাজে ৮০%।
সুন্দর সামাজিক চিন্তাধারা তুলে ধরার জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর
২৩ মে ২০১৫ রাত ০৮:২৪
263172
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। জাজাকাল্লাহু খাইরান। Good Luck Good Luck
322941
২৭ মে ২০১৫ রাত ১০:২০
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আমাদের সমাজের বাস্তবা চিত্র তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২৮ মে ২০১৫ রাত ০১:১৩
264217
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ধন্যবাদ লোকমান ভাই। আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File