সর্বক্ষেত্রে_উদারতার_মাহাত্ম্য

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:৫১:১৯ রাত

#সর্বক্ষেত্রে_উদারতার_মাহাত্ম্য

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ وَإِذَا اشْتَرَى وَإِذَا اقْتَضَى

#বাংলা: জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহম করেন, যে বিক্রয়কালে, ক্রয়ের সময় এবং পাওনা আদায়ের সময় উদারতা বা নম্রতা প্রদর্শন করেন। (বুখারী:২০৭৬)

#আলোচনা: আলোচ্য হাদীসের মূল বক্তব্য হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির জন্য রহমতের দু'আ করেছেন যে মানুষের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও উদারতার পরিচয় দেয়। (سَمْحًا) শব্দটি ব্যবহৃত হয় সহজতা, সনশীলতা বা উদারতার ক্ষেত্রে। যাতে কঠোরতা, জটিলতা নেই। এই হাদীসে তিনটি ক্ষেত্রের ব্যাপারে আলোচনা হলেও উদ্দেশ্য হলো, পারস্পরিক বিভিন্ন বিষয়ে কঠোরতা ত্যাগ করে মানুষের সাথে সহনশীল হওয়া। যেমন অপর বর্ণনায় বিচারের ক্ষেত্রে সহনশীলতার কথাও এসেছে। (দ্রষ্টব্য: ইবনে হিব্বান: ৪৯০৩)

১. বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সহনশীলতা: পণ্যের দাম নির্ধারণে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করে বরং ক্রেতার সামর্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা, ক্রেতার সাথে হঠকারিতা না করা, কিছু হক ছেড়ে দেয়া হলো বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উদারতা বা সহনশীলতার পরিচয়।

২. ক্রয়ের সময় সহনশীলতা: কারণ ছাড়া পণ্যের অবমূল্যায়ন না করা, সঠিক দাম দেয়া এবং বিক্রেতার সাথে হঠকারিতা না করা হলো ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহনশীলতা।

ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীলতার ফযিলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে-

উসমান ইবনে আফ্‌ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যে ব্যক্তি সহজতা প্রদর্শন করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (ইবনে মাজাহ, আহমাদ, সহীহাহ:১১৮১)

৩. পাওনা আদায়ে সহনশীলতা: ধনী-গরিব সকল ঋণগ্রস্থদের সাথে নরম ব্যবহার করা, দরিদ্র বা অভাবীদের সাথে কঠোরতা বা চাপ না দিয়ে সময় দেয়া, সহানুভূতি ও করুণার সাথে পাওনার কথা বলা এবং সুযোগ থাকলে ঋণ মাফ করে দেয়া হলো পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীলতা।

এক হাদীসে এসেছে (সংক্ষেপে-)

মানুষের সাথে পারস্পরিক লেনদেনে সহানুভূতিশীল হওয়া, দেনাদার ধনী হলেও সময় প্রদান এবং গরীব দেনাদারের পাওনা মাফ করে দেয়ার কারণে আল্লাহ এক বান্দাহকে জান্নাতে প্রবেশ করান। (বুখারী:৩৪৫১, মুসলিম:১৫৬০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় যে, আল্লাহ তাকে তাঁর ছায়ার নিচে স্থান দিক, যে যেন ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় অথবা তার দেনা মাফ করে দেয়। (ইবনে মাজাহ:২৪১৯, সহীহ আত তারগীব:৯০১)

অন্য হাদীসে এসেছে-

তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের এক ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা’আলা মাফ করে দিয়েছেন। সে বিক্রির ক্ষেত্রে ছিল উদার-কোমল, ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছিল উদার, তাগাদার ক্ষেত্রেও ছিল উদার।(তিরমিযী:১৩২০, আহমাদ:১৪২৪৮)

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ سَمْحَ الْبَيْعِ سَمْحَ الشِّرَاءِ سَمْحَ الْقَضَاءِ ‏"‏ ‏

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রয়-বিক্রয় ও ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা উদারতা ও নম্রতা পছন্দ করেন। (সহীহাহ:৮৯০৯)

পুনশ্চ: হাদীসটির ভিন্ন ভাষ্য-

رحِم اللهُ عبدًا سَمحًا إذا باع سَمحًا إذا اشترى سَمحًا إذا اقتَضى (ইবনে মাজাহ:২২০৩)

رَحِمَ اللهُ عبدًا سَمْحًا إذا باعَ ، سَمْحًا إذا اشْتَرى ، سَمْحًا إذا قَضَى ، سَمْحًا إذا اقْتَضَى (সহীহ আল জামে':৩৪৯৫)

#বর্ণনাকারী: জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.)

#মান:সহীহ

#গ্রন্থ: বুখারী, ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়, হা:২০৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহ:২২০৩, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:১০৬৭৯, বাইহাকীর আদাব: ১৪১, সহীহ ইবনে হিব্বান:৪৯০৩, সহীহ আত তারগীব:১৭৪২

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম (নীল মুসাফির)

#দরসে_হাদীস

বিষয়: বিবিধ

৫০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File