উম্মাতে_মুহাম্মাদীর_জন্য_বিশেষ_ছাড়
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৭:৫৬:৫৫ সন্ধ্যা
দরসে হাদীস
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ - : " تَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ ، وَالنِّسْيَانَ ، وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ "
বাংলা: ইবনু ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "আল্লাহ্ আমার উম্মাতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।" (হাকেমের আল মুসতাদরাক:২৮৫৫)
আল্লাহ তা'আলা উম্মাতে মুহাম্মাদীকে বিশেষ অনুগ্রহ, উপহার ও গুণাবলী দিয়ে গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি অনেক আবশ্যকীয় কাজের ক্ষেত্রে হিসাব নেয়া ও শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অব্যাহতি দিয়েছেন এই উম্মাতকে। অনেক বিষয়ে তিনি কঠোরতা ছেড়ে সহজ পন্থা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা'আলা এই জাতির ভুল, স্মৃতিভ্রষ্টতা, জোরপূর্বক কুতকাজের দায় থেকে মুক্ত দিয়েছেন। ইসলামের একটি মূলনীতি হলো- "প্রতিটি কাজ তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল।" (বুখারী, মুসলিম) যেহেতু এই সমস্ত বাপারে তার নিয়ত বা মনের ইচ্ছা ছিলো না তাই এই ব্যাপারে আল্লাহ উম্মাহকে পাকড়াও করবেন না! এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এই উম্মাহর জন্য বিশেষ ছাড় ও অনুকম্পা। হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে "এটা ইসলামের এক চতুর্থাংশ"। (দ্রষ্টব্য: ফাইযুল কাদীর:৯৬২২)
ইমাম বুখারী সনদহীন হাদীস এনেছেন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়্যাত করবে এবং যে ব্যক্তি অনিচ্ছায় বা ভুলবশত কিছু বলে, তার কোনো নিয়্যাত থাকে না। (বুখারী, ক্রীতদাস আযাদ অধ্যায়)
আল্লাহ তাআ'লা এই উম্মতকে ছাড় দিয়েছেন-
১. ভুল: মনের ইচ্ছা, অন্তরের সংকল্প বা নিয়ত ছাড়াই যে সমস্ত কাজ হয়ে যায়, যেটা সে অন্তর থেকে করে নি বা মনের অজান্তে হয়ে গেছে। যেমন- কোনো জন্তুকে লাঠি হাতে তাড়া করতে গিয়ে কোনো ব্যক্তির গায়ে আঘাত করা। তাতে ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তবে তাতে শাস্তি প্রযোজ্য হবে না।
আল্লাহ বলেন-
"আর এ বিষয়ে তোমরা কোনো ভুল করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আহযাব, ৩৩:৫)
২.বিস্মৃতি: কোনো কিছু করতে ভুলে যাওয়া, ভুলে গিয়ে কিছু করা ইত্যাদি বিস্মৃতিমুলক কাজ। যেমন, ওযু ছাড়াই নামাজ পড়া। তবে স্মরণ হওয়ামাত্র ওযু করে আবার সালাত আদায় করতে হবে।
আল্লাহ বলেন-
"আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। (সূরা বাকারা, ২:২৮৬)
৩. জবরদস্তি: কাউকে জোর করে কোনো কাজ করতে বাধ্য করা হলে, জবরদস্তি কোনো কাজের জন্য আল্লাহ কাউকে পাকড়াও করবেন না। যে কাজে তার সংকল্প ছিলো না, নিয়ত ছিলো না (জোর-জবরদস্তি/ভয় দেখিয়ে কোনো কথা বা কাজ করানো হলে) এমন গর্হিত কাজের জন্য আল্লাহ শাস্তি দিবেন না। এ ক্ষেত্রে জবরকারী ব্যক্তির শাস্তি/হিসেব হবে। আল্লাহ বলেন-
"কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য আছে মহা শাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।" (সূরা নাহল, ১৬:১০৬)
৪.#ওয়াসওয়াসা বা অন্তরের কুচিন্তা/খটকা: মানুষের অন্তরে সৃষ্টি হওয়া সংশয়, সন্দেহ, কুমন্ত্রণা, খারাপ ভাব বা পাপের চিন্তা ইত্যাদি বিষয় কথা বা কাজে পরিণত পর্যন্ত মাফ করে দেয়া হয়েছে এই উম্মাতের জন্য। সূরা বাকার এই আয়াত ("আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন।") অবতীর্ণের পর বিষয়টি সাহাবীদের কাছে কঠিন মনে হলো, পরবর্তীতে আল্লাহ নাযিল করলেন- "আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে।(দ্রষ্টব্য তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা বাকারা: ২৮৪-২৮৬)
যেমন হাদীসে এসেছে-
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (বুখারী: ২৫২৮) সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে- "কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা আমার উম্মতের জন্য তাদের মনে কল্পনাগুলোকে মাফ করে দিয়েছেন।" (মুসলিম:১২৭)
#যাদের উপর শরীয়তের হুকুম প্রযোজ্য নয়:
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبُرَ)
তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ
(১) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়,
(২) অসুস্থ (পাগল/বেহুঁশ) ব্যক্তি, যতক্ষণ না হুঁশ ফিরে আসে/ আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়। (আবু দাউদ: ৪৩৯৮, নাসাঈ:৩৪৩২, ইবনে মাজাহ:২০৪১)
হাদীসটির ভিন্ন ভাষ্য-
" وُضِعَ ، عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأُ ، وَالنِّسْيَانُ ، وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ " (বাইহাকী, তাবারানী)
إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ (ইবনে মাজাহ)
#বর্ণনাকারী: ইবনে আব্বাস, ইবনে উমার (রা.)
#মান: হাসান, সহীহ (সহীহুল জামে':১৮৩৬)
#গ্রন্থ:ইমাম হাকেমের "আল মুসতাদরাক",তালাক অধ্যায়, হা: ২৮৫৫, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:১৪৬২১,১৯৩৮৪, সুনানে দারে কুতনী: ৪২৭২/৩৩, তাবারানীর মু'জামুল আওসাত:৮২৬৯/৮২৭৩, ইবনে মাজাহ:২০৪৫; ইবনে হিব্বান:৭২১৯, সহীহুল জামে':১৮৩৬;
ইবনে উমার (রা.) সূত্রে বাইহাকীর সুনানুল কুবরা: ১১১৩৪,মু'জামুল আওসাত:৮২৭৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদ:১০৫০৬, ফাইযুল কাদীর:৯৬২২
#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
৯৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন