আল্লাহর ভয়ে কাঁদার ফযিলত

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৫ জানুয়ারি, ২০২১, ০১:৩৮:৫৩ রাত

দরসে হাদীস

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏"

#বাংলা: ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ্ তা'আলার ভয়ে যে চোখ ক্ৰন্দন করে এবং আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারায় রাত যাপন করে। (তিরমিযী:১৬৩৯)

অপর হাদীস: حُرِّمَتْ النَّارُ عَلَى عَيْنٍ دَمَعَتْ أَوْ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَحُرِّمَتْ النَّارُ عَلَى عَيْنٍ سَهِرَتْ فِي سَبِيلِ اللَّه

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই চক্ষুর জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেওয়া হয়েছে, (এক) যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করেছে এবং (দুই) যে চক্ষু আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারা দিয়ে রাত্রি জাগরণ করেছে। (সহীহ আততারগীব:৩৩২১)

#আলোচনা: "জাহান্নামের আগুন চোখকে স্পর্শ করবে না" এর অর্থ হলো, ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দেহের কিছু অংশ জাহান্নামে না যাওয়া মানে পুরো দেহ জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকা উদ্দেশ্য। এখানে দুই প্রকারের ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।

১. আল্লাহর ভয়ে যে কাঁদে: আল্লাহর ভয়ে কান্নার অর্থ হলো অন্তর থেকে কান্না। চোখ অন্তরের অনুগামী। অন্তর যখন নরম হয়, আল্লাহর আযাবের ভয়ে প্রকম্পিত হয় তখন চোখ তার প্রভাবে অশ্রু ঝরায়। আল্লাহর ভয়ে যার অশ্রু ঝরে না তার হলো কঠিন হৃদয়। আল্লাহ বলেন-

"মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। (সূরা আনফাল:২)

আর আল্লাহর ভাষায় সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় পায় আলেম বা জ্ঞানীরা। সুতরাং যার অন্তর প্রকম্পিত হয় না, চোখে জল নেই সে প্রকৃত আলেম নয়।

"বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।" (সূরা ৩৫ ফাতির:২৮)

হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার ভয়ে যে লোক ক্ৰন্দন করে তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার পালানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধুঁয়া কখনও একত্র হবে না। (তিরমিযী:১৬৩৩)

অপর হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; এদের একজন সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়। (বুখারী:৬৬০ ,মুসলিম:১০৩১)

২. আল্লাহর পথে পাহারাদার: আল্লাহর পথে রাতে পাহারা দেয়া জিহাদের অন্যতম মর্যাদার স্তর। কেননা এরাই শত্রুদের মোকাবিলায় প্রথম সারিতে থাকে বা প্রথম মুখোমুখি হয়। আল্লাহর পথে পাহারা দেয়ার অর্থ, জিহাদের ময়দানে অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত শত্রুদের চক্রান্ত থেকে মুমিনদের রক্ষার উদ্দেশ্যে পাহারা উদ্দেশ্য হতে পারে। আল্লাহর পথে পাহারার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদীস এসেছে, যেমন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে এক দিনের পাহারা দেয়া, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে (তার থেকে) সর্বাপেক্ষা উত্তম। (বুখারী:২৮৯২, মুসলিম:১৮৮১)

অপর হাদীসে এসেছে, সালমান ফারিসী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহর পথে একদিন বা একরাত সীমানা পাহারা দেয়া, একমাসের সওম পালন ও সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর ঐ প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার কৃতকর্মের এ পুণ্য ‘আমলের সাওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিযক (জান্নাত হতে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি পাবে। (মুসলিম:১৯১৩)

অপর হাদীসে এসেছে-

তিন ব্যক্তির চক্ষু জাহান্নাম দর্শন করবে না। (এক) যে চক্ষু আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারা দিয়ে রাত্রি যাপন করেছে, (দুই) যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে এবং (তিন) যে চক্ষু আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু দর্শন করা থেকে বিরত থেকেছে। (ত্বাবারানীর কাবীর: ১০০৩, সহীহাহ: ২৬৭৩, সহীহ আততারগীব: ১২৩১/১৯০০)

#আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আনাস ইবনে মালিক (রা.)

#মান: হাসান, সহীহ লিগাইরিহী

#গ্রন্থ: তিরমিযী:১৬৩৯, সহীহ আততারগীব:১২২৯, ৩৩২২, জামিউস সগীর:৫৬৩১, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তাবারানীর মু'জামুল আওসাতে, সহীহুল জামে':৪১১৩, জামিউস সগীর:৫৬২৯, সহীহ আততারগীব:১২৩০

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম (#নীলমুসাফির)

#দরসে_হাদীস

লভনচ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏"

#বাংলা: ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ্ তা'আলার ভয়ে যে চোখ ক্ৰন্দন করে এবং আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারায় রাত যাপন করে। (তিরমিযী:১৬৩৯)

অপর হাদীস: حُرِّمَتْ النَّارُ عَلَى عَيْنٍ دَمَعَتْ أَوْ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَحُرِّمَتْ النَّارُ عَلَى عَيْنٍ سَهِرَتْ فِي سَبِيلِ اللَّه

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই চক্ষুর জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেওয়া হয়েছে, (এক) যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করেছে এবং (দুই) যে চক্ষু আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারা দিয়ে রাত্রি জাগরণ করেছে। (সহীহ আততারগীব:৩৩২১)

#আলোচনা: "জাহান্নামের আগুন চোখকে স্পর্শ করবে না" এর অর্থ হলো, ঐ ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দেহের কিছু অংশ জাহান্নামে না যাওয়া মানে পুরো দেহ জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকা উদ্দেশ্য। এখানে দুই প্রকারের ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।

১. আল্লাহর ভয়ে যে কাঁদে: আল্লাহর ভয়ে কান্নার অর্থ হলো অন্তর থেকে কান্না। চোখ অন্তরের অনুগামী। অন্তর যখন নরম হয়, আল্লাহর আযাবের ভয়ে প্রকম্পিত হয় তখন চোখ তার প্রভাবে অশ্রু ঝরায়। আল্লাহর ভয়ে যার অশ্রু ঝরে না তার হলো কঠিন হৃদয়। আল্লাহ বলেন-

"মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। (সূরা আনফাল:২)

আর আল্লাহর ভাষায় সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় পায় আলেম বা জ্ঞানীরা। সুতরাং যার অন্তর প্রকম্পিত হয় না, চোখে জল নেই সে প্রকৃত আলেম নয়।

"বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।" (সূরা ৩৫ ফাতির:২৮)

হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার ভয়ে যে লোক ক্ৰন্দন করে তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার পালানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধুঁয়া কখনও একত্র হবে না। (তিরমিযী:১৬৩৩)

অপর হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; এদের একজন সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়। (বুখারী:৬৬০ ,মুসলিম:১০৩১)

২. আল্লাহর পথে পাহারাদার: আল্লাহর পথে রাতে পাহারা দেয়া জিহাদের অন্যতম মর্যাদার স্তর। কেননা এরাই শত্রুদের মোকাবিলায় প্রথম সারিতে থাকে বা প্রথম মুখোমুখি হয়। আল্লাহর পথে পাহারা দেয়ার অর্থ, জিহাদের ময়দানে অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত শত্রুদের চক্রান্ত থেকে মুমিনদের রক্ষার উদ্দেশ্যে পাহারা উদ্দেশ্য হতে পারে। আল্লাহর পথে পাহারার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদীস এসেছে, যেমন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে এক দিনের পাহারা দেয়া, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে (তার থেকে) সর্বাপেক্ষা উত্তম। (বুখারী:২৮৯২, মুসলিম:১৮৮১)

অপর হাদীসে এসেছে, সালমান ফারিসী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহর পথে একদিন বা একরাত সীমানা পাহারা দেয়া, একমাসের সওম পালন ও সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর ঐ প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার কৃতকর্মের এ পুণ্য ‘আমলের সাওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিযক (জান্নাত হতে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি পাবে। (মুসলিম:১৯১৩)

অপর হাদীসে এসেছে-

তিন ব্যক্তির চক্ষু জাহান্নাম দর্শন করবে না। (এক) যে চক্ষু আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারা দিয়ে রাত্রি যাপন করেছে, (দুই) যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে এবং (তিন) যে চক্ষু আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু দর্শন করা থেকে বিরত থেকেছে। (ত্বাবারানীর কাবীর: ১০০৩, সহীহাহ: ২৬৭৩, সহীহ আততারগীব: ১২৩১/১৯০০)

#আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আনাস ইবনে মালিক (রা.)

#মান: হাসান, সহীহ লিগাইরিহী

#গ্রন্থ: তিরমিযী:১৬৩৯, সহীহ আততারগীব:১২২৯, ৩৩২২, জামিউস সগীর:৫৬৩১, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তাবারানীর মু'জামুল আওসাতে, সহীহুল জামে':৪১১৩, জামিউস সগীর:৫৬২৯, সহীহ আততারগীব:১২৩০

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম (#নীলমুসাফির)

#দরসে_হাদীস

বিষয়: সাহিত্য

৮৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File