পীর ধরার অকাট্য দলীল: মগজ ধোলাই ও সংশোধন ৫ম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১২ মার্চ, ২০১৭, ০৩:২৫:৩২ রাত

৫. পীর ধরার ৫নং অকাট‌্য দলীল:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ

হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছে তাদের। (৪:৫৯)

(উলিল আমর এর মানে হল ন্যায় বিচারক/ধর্মীয় নেতা/ওলি-আউলিয়া/­পীর-মুর্শিদ ইত্যাদি শব্দ ধরা যেতে পারে)



আসুন দেখি প্রখ্যাত তাফসীরকারকগণ কী বলেন:



ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنْكُمْ‏ আয়াতটি নাযিল হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা ইবনু কায়স ইবনু আদী সম্পর্কে যখন তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলের প্রধান করে প্রেরণ করেছিলেন। (বুখারী: ৪২২৯ তাফসীর অধ্যায়, মুসলিম:৪৫৯৪)



এরপর তিনি (‘উবাদাহ) বললেন, আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণরূপে শোনা ও মানার উপর বাই‘আত করলাম। আরও (বাই‘আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝাগড়া করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফ্রী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা। (বুখারী:৬৬৪৭, মুসলিম:৩৪৩৩)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহর অবাধ্যতা করলো। যে ব্যক্তি আমীরের (শাসকের) আনুগত্য করে সে আমারই আনুগত্য করলো আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো। (মুসলিম:৪৫৯৫)

রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবলই সৎ (শরী'আত সম্মত) কাজে। (মুসলিম:৪৬১৩)



ইবনে আব্বাস (রা.)এর মতে, উলিল আমর বলতে, أهل الفقه والدين আহলুল ফিকহি অ দ্বীন (এর মানে হলো আলেমগণ) । মুজাহিদ, আতা, হাসান বসরী, আবুল আলিয়া প্রমুখের তাই মত। ইবনে কাসীর বলেন- শব্দটি সাধারণভাবে আমীর ও আলেমগণ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। (দ্র.তাফসীরে ইবনে কাসীর)

আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের মানে হলো- কিতাব ও সুন্নাহর অনুসরণ আর আদেশদাতার আনুগত্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে কেননা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো আনুগত্য নেই।

উলিল আমর বলতে দুই ধরণের বক্তব্য পাওয়া যায়। প্রথমত: আমীর/নেতা বা শাসক আর দ্বিতীয়ত: উলামা ও ফুক্বাহাগণ। অর্থের দিক দিয়ে উভয় শ্রেণীর মান্যবরদেরকেই বুঝানো যেতে পারে। উদ্দেশ্য এই যে, প্রকৃত আনুগত্য তো আল্লাহর প্রাপ্য। তাতে কয়েকটি শব্দ দেখতে পাই-أهل العلم والفقه আহলুল ইলম অলফিকহ, أهل الفقه والدين বা الفقهاء والعلماء

বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: তাবসীরে তাবারী, কুরতবী, বাগাভী

পূর্ণ আয়াতের অনুবাদ: হে বিশ্বাসিগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তাহলে তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূল ও তোমাদের নেতৃবর্গ (ও উলামা)দের অনুগত হও। আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। এটিই হল উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর। (সূরা ৪ নিসা:৫৯)

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আমীর ও শাসকের আনুগত্য করা জরুরী হলেও তা একেবারে শর্তহীনভাবে নয়, বরং তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের শর্তসাপেক্ষ।



এখানে কোথায় পীর বা মুরশিদ বা কথিত ধর্মীয় নেতা বুঝানো হয়েছে? তাছাড়া এখানে নেতা বা আলেমদের আনুগত্য লাগামহীন করে দেয়া হয় নি বরং তা হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশের অনুকুলে।

আল্লাহ আমাদের সঠিক ও সত্য বুঝার তাওফিক দিন। আমীন!!

বিষয়: বিবিধ

১০১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File