রম্য রচনা সংবাদিক আক্কেল আলী, বিষয়ঃ লাঠির মাথায় গণতন্ত্র পর্ব ২

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৬:৩৬:৩২ সন্ধ্যা

“ফলাফল, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮” উপরে এস্যাইনম্যেন্ট পাওয়ার পর কী ভাবে কাজ শুরু করা যায় তার উপরে একটা ছক একে শরীর দুর্বল বিধায় আবার ঘুমের দেশে ডূব দিল আক্কেল। সে দেখল একটি লাঠি যার মধ্যে বিভিন্ন বাহীনির নকসা আঁকা এবং লাঠিটির মাথায় লেখা রয়েছে ‘গণতন্ত্র’ তা তার দিকে ভীষণ বেগে তেড়ে আসছে। তাড়াকারী লাঠিধারী ব্যাক্তিটিকে দেখে পুলিশের লোক বলে মনে হচ্ছে তার। আবাক কান্ড দ্বিতীয় বার যখন পিছনে ফিরে ঐ লাঠিধারী ব্যাক্তিটিকে দেখল ভোজবাজীর মত তাকে দেখা যাচ্ছে র‍্যাবের পোশাকে , তো পর মুহুত্রে বি জে বি, আনসার, আর্মি ---। আক্কেল ধরফর করে ঘুম থেকে উঠে ঢক ঢক করে এক গেলাস পানি খেল। তারপর প্রথমে তার মাথায় যে চিন্তাটা খেলে গেল তা হল নিশ্চয় তার স্বপ্ন এবং আম্বা-জোটের প্রতীক ‘লাঠির’ সাথে কোন সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। তাই সে সাথে সাথে কুষ্টিয়া থেকে সদ্য নির্বাচিত এম পি বাঁশানুল হক চিনুকে ফোন করল।

ফোন করে আক্কেল বলল, কংগ্রেচুলেশন বাঁশানুল হক চিনু সাহেব। প্রতি উত্তরে বলল এত দেরী কেন? সবাইতো আমাকে নির্বাচনের দিন সকাল সাত থেকে আটটার মাঝে কংগ্রেচুলেশন জানিয়ে ফেলেছে। আক্কেল বলল চিনু স্যার ভুল হয়ে গেছে আসলে এই বিষয়ে আমার জানা ছিল না। চিনু বলল নির্বাচনের আগের রাত্রে কত কেরামতি করে বিভিন্ন বাহিনীর সাহায্যে, লাঠি মার্কায় ছিল মেরে, বিজয়কে ১০০% নিশ্চিত করেছি তা সবাই জানলেও তুমি মিয়া সংবাদীক হয়ে জানলা না! আমার সাথে কী মশকরা করছ। আক্কেল বলল, স্যার গো স্যার সে সময়ে আমি তো হুসে ছিলাম না। চিনু রেগে গিয়ে বলল, মিয়া আমারে কী ছাগল মনে করছ, যেই তোমার ভুল চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম আর অমনেই খৈ খৈ করে বলা শুরু করলা, তখন তো আমি হুসে ছিলাম না। মিয়া সময় থাকতে ভাল হয়ে যাও। ভাল হইতে পয়সা লাগে না। আমি বলি কী সংবাদীক মানুষ আপদ বিপদ থেকে বাচতে চাইলে একটু পড়াশুনা কর। আইন কানুন ভাল করে জেনে বুঝে নেও, সবার ভুলের মাফ আছে কিন্ত সংবাঁদিকদের ভুলের কোন মাফ নাই- এই আইন আমরা পাশ করেছি। কথা বুঝ নাই।

অবশেষে আক্কেল অনেক চেষ্টার পর তার মাথায় লাঠির বারি থকে সকল ঘটনা বলে চিনুকে কনভিস করতে সমর্থ হয়। প্রকৃত ঘটনা বুঝার পর চিনু বলল, মিয়া এই কথা তুমি আগে বলবা না। আক্কেল তখন কথার বিষয় ঘূরানোর জন্য বলল আপনি তো জানেন জনৈক ব্যাক্তি আপনাকে চ্যালেঞ্চ দিয়ে বলেছে আপনার এলাকায় ফেয়ার ইলেকশন হলে আপনি কোন কেন্দ্রেই পাশ করবেন না, এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? আপনি কী ঐ চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করবেন? প্রতি উত্তরে চিনু বলল, মিয়া আমারে কী পাগলা কুত্তায় কামরাইছে। ঐ চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করে বেইজ্জত হই আর কী! আক্কেল বলল তবে কী ঐ ব্যাক্তির ঐ চ্যালেঞ্চকে আপনে বেয়াদবী মনে করছেন! চিনু এবার রাগান্বিত ভাবে বলল, ঐ ধরনের আচরণ অবশ্যই বেয়াদপী! এই কিছিমের বেয়াদপীর জন্য ক্ষমা না চাইলে ভবিষতে খবর আছে।

আক্কেল দেখল কথায় কথায় তার আসল প্রশ্নটাই করা হচ্ছে না। সে বলল স্যার স্যার যদি কিছু মনে না করেন আমার একটা প্রশ্ন ছিল, আপনারা কেন এই নির্বাচনে “পেট্রোল বোমা” প্রতীক না নিয়ে লাঠিকে আপনাদের জোটের প্রতীক করেছেন। চিনু বলল এতক্ষণে না একটা প্রশ্নের মত প্রশ্ন করেছে। আসলে হয়েছে কি আমরা দেখলাম “পেট্রোল বোমা” ইস্যু এখন কোন ইস্যুই না। কিন্ত লাঠি অতি পুরাতন অস্ত্র হলেও এটা যখন বিভিন্ন বাহিনীর হাতে থাকে তা কাজ করে ম্যাজিকের মত। তুমি যদি কারো মতামত পরিবর্তন করতে চাও তবে লাঠির বিকল্প নেই। এটার প্রধান এডভানটেজ হল ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় নাই বললেই চলে। এই সকল কারনে আমরা গণতন্ত্র পন্থীদের মোকাবেলায় ‘লাঠিকে’ আমাদের জোটের প্রতীক হিসাবে বেছে নিয়েছি।

বিষয়: বিবিধ

৫৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File