নির্বাচন ২০১৮, রম্য রচনা পর্ব ১

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৮ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:১০:৩৩ সন্ধ্যা

সংবাদীক আক্কেল আলী কোন সিটির নির্বাচনী হালচাল আগে দেখতে যাবে তা নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনার মাঝে পড়ে গেল। একবার চিন্তা করল আগে সিলেটে যাবে, পরক্ষণেই চিন্তা করল না রাজশাহী যাবে, আরে না বরিশাল থেকে শুরু না করলেই নয়-------। ঠিক সেই সময়ে তার আমেরিকা প্রবাসী তালত ভাই, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর উস্তাদ ডঃ কুতুবউদ্দিনের ফোন তার চিন্তার ব্যাঘাত ঘটল। সে ফোন রিসিভ করে বলল, আরে কুতুব যে কবে বাংলাদেশ এ আইলা। এই তো গতকাল দুপুরে। তখন আক্কেল বলল, আমাকে ফোন দেও নাই কেন? কুতুব বলল, ফোন করার সময় কই, প্লেন থেকে নেমেই তো ম্যাডামের সাথে মিটিং ছিল। সে যাই হোক আক্কেল তোমরা ভাল আছ। তোমার পুলিশের চাকরীর কী অবস্থা। আক্কেল বলল ভাইরে সাবাইকে দিয়া সব কাজ হয় না, পুলিশের চাকরী ছেড়ে এখন সংবাদীকের কাজ করছি। ডঃ কুতুব বলল এখনকার যে পরিস্থিতি তাতে সংবাদিকের কাজ করা আর হুকুমের গোলাম বনে যাওয়া একই কথা। আক্কেল বলল, ভাইরে আফনে একখান খাটি কথা কইছেন, এই আক্কেলের, সে যে কী প্রতিভা ছিল তা প্রকাশ করতে পারলে সারা বিশ্বের বেবাগতে আমারে এক নামে চিনত! কুতুবউদ্দিন অনেক কষ্টে হাসি দমন করে বলল, কেন কেন তুমি তা প্রকাশ করতে পারছ না? আক্কেল বলল, স্বাধীন ভাবে কোন কিছু লেখার উপায় আছে। লিখতে গেলেই তো আব্বাদের ফোনের পর ফোন আসতে থাকব। আর তার পরও যদি লিখি তবে না হয় আমার মাথা ফাটাইবো, নয়ত থোতা ভাইঙ্গা হাতে ধরাইয়া দিব, নয়ত চরদিনের মত গুম হইয়া যামু। ভাইরে একটাই ভরসা যদি নির্বাচনের মধ্য দিয়া এই জালিম শাহীর হাত থেকে রক্ষা পাই। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর উস্তাদ কুতুবউদ্দিন বলল, আক্কেলরে আর বাচন নাই, কেননা নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচনের আগেই হয়ে গেছে। আক্কেল বলল, হায় হায় কী গজব কথা শুনাইলা। মনে করছিলাম এই বার গণতন্ত্র দেখা পামু আর স্বাধীন ভাবে একটু লেখার সুযোগ পেয়ে নিজের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পামু। আক্কেলের মুখে এই কথা শুনে মনে মনে কুতুব বলল, আরে পাঠার ঘরে পাঠা কোন মতে টেনে টুনে বি এ পাশ করে এত কথা, ব্যাটা ঐ সংবাদিকদের কথা ভাব যাদের অনেক প্রতিভা থাকা সত্বেও লেখার স্বাধীনতা না থাকার জন্য আকালে ঝড়ে যাচ্ছে। সে একবার চিন্তা করল না আর ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ করব না, পরক্ষণেই চিন্তা করল, অন্যের মাথায় কাঁঠাল না ভেঙ্গে কেউ কোন দিন বড় হতে পারে ---- আক্কেল বলল তালত ভাই কী চিন্তা ভাবনা করছ; কুতুব বলল, না তোমার কথা ভাব ছিলাম আর কী।

কুতুবউদ্দিন বলল, ম্যাডামের সাথে মিটিং এ এটা ঠিক হয়েছে যে, রাজশাহী ও বরিশালে আম্বারা আর সিলেটে বিরোধী দল আসন পাবে! আক্কেল বলল, বিরোধী দল একটা জিতবে বিষয়ডা বুঝতাম পারলাম না। ডঃ কুতুব বলল, বিষয়টা আতিব পরিষ্কার, না বুঝার কিছু না। সব কিছু মওকা পেয়ে নিজের পেটে পুরলে হজম করা কষ্ট হয়ে যাবে না। আক্কেল বলল, এই বার বুঝতাম পারছি কিন্ত কথা হল সিলেটের কামড়ান উদ্দিনকে কেন বলীর পাঠা বানাইল। একটু চিন্তা করে আক্কেল বলল, এই বার বুঝছি, এই কামড়ানউদ্দিন নির্বাচনে জিতার জন্য কবর মাজার পুজারীদের সমাবেশে মুসলমানদের মসজিদ ভেঙ্গে সুরমা নদীতে ফেলে দেওয়াকে সমর্থন করেছিল। চান্দু এবার নির্বাচনে জিত। ডঃ কুতুব বলল, আসলে বিষয়টা সে রকম নয়। এর মূল কারন কেয়ামতে ইসলামের সিলেট নির্বাচনে অংশগ্রহণ। আক্কেল বলল তালত ভাই বুঝছি বুঝছি এইবার বিষয়ডা আমার কাছে পরিষ্কার হইছে। এর কারন হল আম্বা বিরোধী দল মনে করবে কেয়ামতে ইসলাম ছাড়াও আমরা জিততে পারি। তাই কেয়ামতে ইসলামের সাথে জোট করার দরকার নেই। অন্য দিকে কেয়ামতে ইসলাম মনে করবে আমগোর নেতাদের কবরে পাঠানোর সাথে সাথে আমগোর দলও অর্ধেক কবরে চলে গেছে, এই জন্য ভোটের এই করুন দশা। আমরা না জয়ী হয়ে জয়ী হয়েছে বিরোধী দল, তাই এটা কার চুপির নির্বাচন না, কারচুপি হলে তো আম্বা শাহী জয়ী হত, অবশ্যই বিরোধী দল নয়! এই দল করে কোন কাজ হবে না। আক্কেলের এই বিশ্লেষণ শুনে কুতুব আবাক হয়ে গেল, মনে মনে ভাবল পড়া শুনা আর বাস্তব জগত এক জিনিস নয়। নয়ত আক্কেল বেক বেঞ্চের ছাত্র হওয়া সত্বেও কী ভাবে এত নির্ভুল ব্যাখ্যা করল! আক্কেল বলল কী ভাই ঠিক বলি নাই। তার তালত ভাই বলল, ঠিক তো ঠিক ১০০% নির্ভুল। আক্কেল বলল, তালতো ভাই কামড়ানউদ্দিনের জন্য দুঃখ লাগে ব্যাচারা। কুতুব বলল, না তার কপাল অনেক ভাল, আম্বা শাহী দল বলেছে, কামড়ানউদ্দিনকে মেয়রের চেয়ে অনেক অনেক বড় মাপের সুযোগ সুভিদা দেওয়া হবে, তবে শর্ত হল তার নিজের কেন্দ্রে কারচুপি মুক্ত ভোট হবে এবং তাকে তার কেন্দ্রে জয়ী হতে হবে। আক্কেল বলল তার নিজের কেন্দ্রে জয়ী হওয়া ওয়ান টূর ব্যাপার মাত্র, না জিতার কোন কারন দেখছি না। কুতুব বলল তা ঠিক তবে কপাল বলে কথা।

সংবিধিবদ্ধ সতরকরনঃ এই রম্য রচনার চরিত্রগুল কাল্পনিক, তাই কারো সাথে মিলের কোন প্রশ্নই উঠে না।

বিষয়: বিবিধ

৭৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File