ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উৎসব পালন ও একটি পর্যালোচনা

লিখেছেন লিখেছেন মুিজব িবন আদম ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:০০:২৭ দুপুর

সামনে ১২ই রবিউল আউয়াল। প্রতি বছরের মত এবারও দেশের বিরাট এক অংশ ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান করার আয়োজনে ব্যস্ত। কেননা ১২ই রবিউল আউয়ালকে এরা নবী (সHappy এর জন্মদিবস মনে করে থাকেন। বস্তুত: রাসূলুল্লাহ (সাHappyএর জন্মের নির্দিষ্ট বছর ও দিন (বার) সম্পর্কে সকলে একমত। কিন্তু তাঁর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় সম্ভব হয়নি, এ ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন অভিমত রয়েছে।

নবী (সাHappy জন্মের নির্দিষ্ট বছর ছিল “আমুল ফিল” তথা হস্তি বাহিনীর বছর। ইমাম ইবনুল কাইয়ূম -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : “এতে সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার অভ্যন্তরে হস্তি বাহিনীর বছর জন্ম গ্রহণ করেন।” মুহাম্মদ ইব্ন ইউসুফ সালেহি -রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন : “ইব্ন ইসহাক -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : তার জন্ম ছিল হস্তি বাহিনীর বছর। ইব্ন কাসির-রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : এ অভিমতই প্রসিদ্ধ। ইমাম বুখারির উস্তাদ ইবরাহিম ইব্ন মুনযির বলেছেন : এ ব্যাপারে কোন আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি। আধুনিক যুগে মুসলিম ও পাশ্চাত্য গবেষকদের পরিচালিত গবেষণা এ মতই সমর্থন করে, তারা বলেছেন হস্তি বাহিনীর বছর ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ অথবা ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ছিল”।

নবী (সাHappy জন্মের দিন(বার)সম্পর্কেও সকলে একমত। সোমবার তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। আবু কাতাদা আনসারি -রাদিআল্লাহু আনহু- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন : এ দিনে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়।” (মুসলিম : ১১৬২)

তবে রাসূলুল্লাহ (সাHappyএর জন্মের ব্যাপারে মত বিরোধ হচ্ছে নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে। এ বিষয়ে আলেমদের বিভিন্ন অভিমত নিম্নরূপ :

১। ইবনে আব্দুল বারর মনে করেন, রাসূলুল্লাহ (সাHappy রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখে জন্ম গ্রহণ করেছেন।

২। ইবনে হাজম প্রাধান্য দেন রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ।

৩। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের দশ তারিখ, যেমন আবু জাফর বাকের।

৪। কতক মুসলিম গণিত ও জ্যোতির্বিদ গবেষণা দ্বারা বের করেছেন যে, রবিউল আউয়াল মাসের নয় তারিখ-ই সোমবার হয়। বর্তমান যুগের কতক সিরাত লেখক এ মতটিই প্রাধান্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে উস্তাদ মুহাম্মদ আল-খিদরি ও শফিউর রহমান মোবারকপুরি অন্যতম। উস্তাদ মুহাম্মদ আল-খিদরী -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন : “মিসরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মরহুম মাহমুদ বাশা বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ছিল সোমবার সকাল বেলা, রবিউল আউয়াল মাসের নয় তারিখ, মোতাবেক এপ্রিলএর বিশ তারিখ, ৫৭১খ্রিষ্টাব্দ।

৫। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ, যেমন ইবনে ইসহাক। ইবনে আবু শায়বাহ তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে এ মতটি আফ্ফান থেকে, সে সাঈদ ইব্ন মিনা থেকে, সে জাবের ও ইব্ন আব্বাস থেকে বর্ণনা করে, তারা উভয়ে বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্তি বাহিনীর বছর, রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ, সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেন।

৬। কেউ বলেছেন, তিনি রমযান মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যেমন জুবাইর ইবনে বাক্কার।

পক্ষান্তরে ভেদাভেদ নেই যে তারিখটি নিয়ে, তাহলো নবী (সHappy মৃত্যুদিবস (১২ই রবিউল আউয়াল)। অর্থাৎ তাঁর নিশ্চিত মৃত্যুদিবসে ঈদ পালন করা হচ্ছে।এটা কী মহানবীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, না মহব্বত? এটা আসলে কী? রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে এই জিনিষ কি আমাদের প্রিয় নবী (সাHappy এর প্রাপ্য?

আমরা কোন প্রিয়জনের মৃত্যুদিবসে উৎসব করি না। প্রিয়জনের মৃত্যুদিবসে উৎসব করার জন্য কোন বোকাকেও হয়তো পাওয়া যাবে না। তাহলে অমরা কি বোকাদের চেয়েও বোকা? নইলে শোকের দিনে আনন্দ আসে কিভাবে? যে চোখ অশ্রু সিক্ত থাকার কথা, তাতে উৎফুল্লতা আসে কোথা থেকে এবং কিভাবে ? সবচেয়ে বেশী প্রিয় মানুষটির মৃত্যুদিবসে বিশাল এক কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রেখে দেখতে হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই সাথে শিরেক হবার ভয়ে মনটা আরও কেঁদে ওঠে।

একজন প্রকৌশলী হয়ে ইসলামিক বিষয়ে ফতোয়া দেবার কোন অধিকার আমার নেই। কেবল নিরবে নিভৃতে আল্লাহর কাছে কান্না করা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।তাই বিজ্ঞ আলেমসমাজের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা বিষয়টি নিয়ে একটি সুন্দর সমাধানের জন্য কিছু করুন। নবী (সাHappy কে সঠিক সম্মান ও মর্যাদা দিতে মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবার সহায় হন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298105
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫১
হতভাগা লিখেছেন : রাসূল (সাঃ) তার জীবদ্দশায় তার জন্মদিন পালন করেন নি । এমন কি কোন নবী ও রাসূলরা তাদের জীবদ্দশায় তাদের জন্মদিন পালন করেন নি । তার মৃত্যুর পর তার সাহাবারাও এটা করেন নি ।

খৃস্টানদের মত বেশ কিছু মুসলমানেরা নবীজীর জন্ম দিবস পালনের রীতি চালু করেছে। অথচ খৃস্টানরা তাদের ধর্ম গ্রন্থকে পরিবর্তন করেছে নিজেদের পছন্দ মত । এখনকার বাইবেল কিন্তু আসমানী কিতাব ইন্জিল না।

মুসলমানদের ঈদ ২টা , ১. ঈদুল ফিতর ২. ঈদুল আযহা ।

এর বাইরে যে কোন ঈদ পালন করা হল বি'দাত

৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
241510
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : অভিমত প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
298106
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
যারা এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন তারা উল্টা বলেন যে ওফাত এর দিন নিয়ে নাকি বিতর্ক আছে। অথচ স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় জন্মের সময় তিনি ছিলেন একজন পিতৃহিন মানুষ আর ওফাত এর সময় তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রনায়ক। তাহলে কোন তারিখটি সঠিকভাবে সংরক্ষিত থাকা সম্ভব!!

এদের এই বাড়াবাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম শাহি জামে মসজিদ এর খতিব মরহুম সাইয়েদ আবদুল আহাদ আল মাদানি বলেছিলেন যে এই দিন উৎসব করে ইসলামের শত্রুরা।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
241511
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। এই দিন উৎসব করে ইসলামের শত্রুরা। ধন্যবাদ।
298120
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
ইয়াফি লিখেছেন : কোথায় জানি যেন পড়েছিলাম সম্ভবত মাসিক মদীনায় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যেদিনই জম্মগ্রহণ করেন ঐদিনই মৃত্যুবরণ করেন। এজন্য মিলাদুন্নবী পালন না করে সীরাতুন্নবী পালন করাটা বাঞ্চনীয়।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
241373
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : মাসিক মদীনার তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রহন করা উচিৎ।
298145
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : সহমত
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৩
241512
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : সহমত। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File