চাঁদ (রকমারি)

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ১২ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:৫৩:৪৪ সকাল

কৈশোর পার করে বড় হয়ে উঠার সময়টায় যখন হঠাৎ হঠাৎ নিজেকে বেশ বড় মনে হতো, বিবর্তনের সেই সময়টায় তখনও রয়ে যাওয়া কৈশোরীয় উচ্ছলতাটার সাথে বড়দের মতো করে কোনো কাজ করার বেশ মরিয়া চেষ্টা করতাম আমি এবং আমার বন্ধুরা। সন্ধ্যার পর আড্ডা দেয়ার ব্যাপারটা এর অন্যতম। আমরা তো এখন আর সেই নান্নামুন্না কিশোরটি নেই, এমন অনুভূতি ছিলো সেসব কর্মকান্ডের মহামূল্য জ্বালানি। সন্ধ্যার পরের আড্ডাটা ইনডোরের সীমা পেরিয়ে আউটডোরে যখন গড়ালো সেই সময়টার কোনো একদিন আমরা শহরের প্রায় বাইরে নিরবিলি কোথাও আড্ডা দিচ্ছিলাম। একটু বোধহয় রাত হয়ে গিয়েছিলো। বন্ধু তুষার হঠাৎ ঘোষণা করলো, আকাশে যে বিশাল আলোকউৎস দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে সূর্য, কেউ যেনো ভুলেও এটাকে চাঁদ মনে না করে বসি। গোধূলির সূর্য তাই তেজ একটু কম এই যা! এখানে উল্লেখ করা ভালো, এই বন্ধুর দিক সম্পর্কে জ্ঞানটা বারাক ওবামার বাংলা ব্যকরণ জ্ঞানের সমান। সেই উত্তাল ঘোষণার পরে উপস্থিত সবাই যার যা জ্ঞান আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অবশেষে সেই আলোকউৎসটার পরিচয় নিশ্চিত হলো। সেটা চাঁদই ছিলো। সেদিনের চাঁদটা একটু বেশীই বড় ছিলো। বিশাল আর উজ্জ্বল চাঁদটা দেখে বন্ধুর সময় এবং দিকজ্ঞান দুইটাই সামিয়ক লোপ পেয়েছিলো কেবল।

ফেসবুকের যুগে কোনো কিছু জানতে না চাইলেও জেনে ফেলতে হয়। জানার প্রক্রিয়াটা এখানে সব সময় ঐচ্ছিক নয়। প্রথমদিকে ফেসবুকে কোনো কিছু আমার ইচ্ছে হলে পড়বো বা জানবো এরকম একটা সুযোগ ছিলো। ফেসবুকের বিবর্তনের কারণে এখন সেটা সম্ভব না। ফেসবুকে সবাই যেভাবে সুপারমুন নিয়ে স্ট্যাটাস পোস্ট করছিলো, সে সম্পর্কে না জানার সুযোগ তাই ছিলো না। শুধু স্ট্যাটাস তো আর নয়, সুপারমুনে ঘরের বাইরে যেয়ে ছবি তুলে আপলোডও কম হয় নি। একজনের থেকে সুপারমুন সম্পর্কে যুগান্তর পত্রিকার একটা আর্টিকেলের লিংক পেলাম। সেখান থেকেই জানলাম, প্রতি ১৪টি চান্দ্র মাস সম্পন্ন হওয়ার পর একটি সুপারমুন ঘটে। একটি সুপারমুন সংঘটিত হওয়ার পর ১৫তম পূর্ণিমাটি হচ্ছে সুপারমুন। আর এটি খালিচোখেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। ২০১৪ সালের ১২ জুলাই ছিল বছরের প্রথম সুপারমুন আর ১০ আগস্ট দ্বিতীয় সুপারমুন। শেষেরটা সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ। তবে আগস্ট মাসেই চাঁদ পৃথিবীর বেশি কাছে থাকবে। ১০ আগস্ট, ২০১৪, রোববার চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৯৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করবে। এর আগে ২০১৩ সালের ২৩ জুন পৃথিবী থেকে ৩,৫৬,৯৯১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করে চাঁদ। সুপারমুন দেখতে বিশ্ববাসীকে একবছর অপেক্ষা করতে হয়। আবার সুপারমুন দেখা যাবে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। তখন পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব হবে তিন লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বরের সুপারমুনে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব হবে তিন লাখ ৫৬ হাজার ৫০৯ কিলোমিটার।

অনেক বছর আগে চাঁদকে সূর্য বলে ভূল করার সেই দিনটা তবে কি সুপারমুন ডে ছিলো! হবে হয়তো। এত পরিচিত চাঁদকে হঠাৎ সূ্র্য মনে করে ফেলার আর তো কোনো কারণ দেখছি না।

পত্রিকায় আরো পড়লাম, 'প্রকৃতিতে সুপারমুনের তেমন কোন প্রভাব নেই। পূর্ণিমা জোয়ারের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে, বিশেষ করে পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদ একই সরলরেখায় থাকলে। তবে এমন কথা ছড়িয়ে আছে, চাঁদ পৃথিবীর কাছে আসলে প্রতিবারই পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। ২০১১ সালের ১৯ মার্চ দসুপারমুনদ রাতে ইংল্যান্ডের সোলেন্ট সাগরে ভাসমান ৫টি বড় জাহাজ সাগরের অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়। এবারে কোনো জাহাজ সাগরে তলিয়েছে কি না জানি না তবে সেই রাতে ভীষণ ঝড় হয়েছে দেখেছি। সুপারমুন নাইটে ঘরের জানালা দিয়ে দেখেছি ঝড়ের প্রচন্ড ঝাপটা। ইংল্যান্ডে এমন দমকা হাওয়া কমই দেখেছি।

প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে গেলো আমার ফেলে আসা দিনের একটা গল্প। এক বন্ধুর গাড়িতে রাতে ঘুরতে বের হয়েছি। শহর থেকে অনেক দূরে। বেশ গভীর রাত। ছোট্ট একটা নদীর উপরে ব্রীজ। সেই ব্রীজের উপর বসে অনেকক্ষণ গল্প করছিলাম। সেদিন পূর্ণিমা ছিলো না তবে বেশ জোছনা ছিলো। জোছনার আলোয় ব্রীজ থেকে ছোট নদীটাকে দেখছিলাম। গভীর রাতে রূপালী জোছনায় মায়াবী রঙের নদী। সাথে ছিলো পানির মৃদুমন্দ চলাচলের কলকল সুর। এত চমৎকার তবু মন ভরেও যেনো ভরে নি। সেদিনই আমরা তাই পরিকল্পনা করলাম আগামী পূর্ণিমায় সারা রাত নদীতে কাটিয়ে দেবো।

সে বয়সে কোনো কিছু করে ফেলাটা কেনো যেনো খুব সহজ ছিলো। মাসখানেক পর। সব ব্যাবস্থা হয়ে গেলো। আমার সবসময়ের প্রিয় কালনী নদীতে পূর্ণিমা রাতে আমরা নৌকায় উঠে বসলাম। সারাটা রাত কাটিয়ে দিলাম। সেদিন সুপারমুন ছিলো কি না আমি জানি না। সুপারমুনের চাঁদ কতো বড় হয় তা'ও আমি জানি না তবে সেদিনের পূর্ণিমা ছিলো আমার জন্যে একটা 'সুপার অভিজ্ঞতা'। সেইরাতের অনুভূতি বর্ণনা করার আমার সাধ্য নেই। সেটা করবোও না। এটুকু বলতে পারি, যেই বয়সটায় মানুষ নিজের জীবনের পৃষ্ঠাগুলো উল্টে দেখে তৃপ্ত হতে চায়,সেই সময়টায় যদি আল্লাহ আমাকে পৌঁছান, তখন টলটলে চোখে স্মৃতিচারণের গল্পে পূর্ণিমায় কালনী নদীর সেদিনের নৌকা বিলাসটা হবে অতি যত্ন করে তুলে রাখা একটা রূপালী অধ্যায়।

সেই সময়গুলোর জন্যে নিজের জীবনে এমনসব গল্প তৈরী করাটা আমার কাছে কখনোই গুরুত্বহীন ছিলো না। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে এমন প্রচুর গল্প দান করেছেন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

253510
১২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:২৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : Very interesting ... Jajakallahu khair.
২৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৩৪
258043
আহসান সাদী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।

(রিপ্লাই দিতে সামান্য একটু দেরী হয়ে গেল মনে হয়!)
253523
১২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
ভিশু লিখেছেন : সুপার-মুন নিয়ে সুপার লেখা! এই ব্লগের অধিকাংশরাই এত্ত জ্যোৎস্না+বৃষ্টি-প্রিয়...Rolling Eyes Day Dreaming
Good Luck
Rose
২৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৩৫
258045
আহসান সাদী লিখেছেন : জেনে ভালো লাগলো...
254345
১৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : সুপারমুন একটাও দেখতে পারিনি Sad দেখা যাক ৯ ই সেপ্টেম্বরেরটা Day Dreaming ভাল লাগল Good Luck Good Luck
২৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৩৫
258044
আহসান সাদী লিখেছেন : দেখেছিলেন কি?
301555
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:০৪
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File