"পরিবর্তন এবং এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা"

লিখেছেন লিখেছেন সিয়াম মেহরাফ ২২ মে, ২০১৬, ১০:০৫:৫০ রাত

আবুল সাহেব নতুন পাঞ্জাবি,টুপি কিনেছেন।শবেবরাতের দিনে নতুন পাঞ্জাবি টুপি হাকিয়ে, পুরো মুড নিয়ে মসজিদে যাবে বলে।মসজিদে সেই ৫ বছর থেকে একজনই ইমাম।ইমাম সাহেব মনে হয় শবেবরাত, শবেকদর,ঈদের দিন আর কুরবানির দিনের নামাজ ছাড়া তাকে মসজিদে দেখেন না।তবে প্রায়ই তাকে রাস্তায় বসে চা,সিগারেট খেতে দেখা যায়।

.

বরাবরের রুটিন মোতাবেক শবেবরাতের রাতে সে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত।বরং নামাজের বহু আগেই উপস্থিত একা একা বসে আছে মাথা নিচু করে চোখ বুঝে।এমনভাবে যেন মনে হয় ধ্যান করছে।আর মুখে আল্লাহ আল্লাহ বলছেন।৩০ মিনিটের মধ্যেই মসজিদ লোকজনে ভরপুর।তবুও তার ধ্যান ভাঙ্গেনা। আজ সে আল্লাহ ভক্ত।ইমাম সাহেবের মাইকে হালকা কাসির আওয়াজ শুনে ইমাম সাহেবের দিকে মনোযোগ দিলেন।

.

ইমাম সাহেবের বলা সবগুলো কথা আজ মগজে ঢুকিয়ে নিলেন।হয়ত আজ রাত ১২ টার পরেই আবার সেগুলো কান থেকে বেরিয়ে যাবে।ইমামের পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে জামাতে সালাত আদায় করলেন।ইমাম সাহেব বলছেন-"আপনারা যারা আজকে মসজিদে নামাজ পড়তে চান তাদের জন্য আজ সারারাত মসজিদ খুলা থাকবে।আপনারা চাইলে সারারাত এখানে থেকে আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন".....এটা বলে ইমাম সাহেব নিজের রুমে যাওয়ার পথেই শুনলেন কে তাকে সালাম দিলো-"আসসালামু আলাইকুম ইমাম সাহেব"...ইমাম সাহেব বললেন-"অলাইকুম সালাম। আবুল সাহেব নাকি? কেমন আছেন? আর এতদিন পরর দেখলাম আপনাকে"....

-জ্বি মানে কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়তো তাই আসা হয়না।

-তা তো জানিই আপনার কাজ দিন,রাত ২৪ ঘন্টা

(ইমাম সাহেব বেশ বুঝতে পারছেন তার কাজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসে থেকে বিকেল থেকে রাত পায়চারী করে বিড়ি, সিগারেট,চা খাওয়া...)

-জ্বি মানে হ্যা।

-তা এবার শবেকদরের রাতে এলেন না যে মসজিদে?

-কি বলেন? আসিনি? মনে পড়ছেনা।

-জ্বি আসেননি।ওদিন আপনাকে খুঁজেছিলাম আমি।

(আবুল সাহেব মনে করে দেখলেন আসলেই সে ওইদিন আসেননি।আফসোস করতে করতে মাথা নিচু হয়ে গেল)

-হ্যা মনে পড়েছে আসিনি।

-আচ্ছা আবুল সাহেব ভাল থাকবেন।ঈদের দিন দেখা হবে।আসি।আল্লাহ হাফেজ।

(ইমাম সাহেব বেশ বুঝেছেন আবুল সাহেবকে ঈদের আগে আর মসজিদে পাওয়া যাবেনা। হতে পারে দু একদিন রোজা মিস করলে আবারো সেই পায়চারী করতে দেয়া যাবে।আর রোজা থাকলে আর রোজার ভিতরে দেখা মিলবেনা।আবুল সাহেব সাধারন ভাবেই নিলেন ব্যাপারটা)

.

আবুল সাহেব তাড়াতাড়ি নামাজ পরে নিলেন আর জোর করে চোখের কোনে দুফোটা পানি আনার চেস্টা করলেন।কিন্তু ব্যর্থ।শবেকদরের রাতে কি করেছিল ভাবতে ভাবতে মনে পরলো সেদিন রাতে মসজিদে নামাজ পরতে যাবে বলে ওযু করতে গিয়েছিলেন এসে দেখলেন তার স্ত্রী তার পছন্দের খাবার রান্না করছেন।সেটার তালে তালে নামাজের কথা ভুলে গেলেন।খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।আজ চিন্তা করলেন বউকে গিয়েও বকা দিবে।অন্তত বউ তাকে এব্যাপারে জানিয়ে দিতে পারতো।আল্লাহর কাছে আফসোস করলো সেদিন রাত জাগতে পারেনি বলে।যাই হোক শবেবরাতের রাতে ঘুমালে চলবে না।আজ সারারাত মসজিদে বসে কাটিয়ে দিবে বলে ভাবছেন।ইতোমধ্যে তার চোখ বুঝে যাচ্ছে ঘুমে।বাসায় চলে গেলেন তাড়াতাড়ি চোখে পানি দিতে।রেস্ট নিয়ে নামাজ পরবে ভেবেছিলো।বউকেও বলেনি ঘুমিয়ে পরলে জাগিয়ে দিতে।রেস্ট নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।হঠাৎ জেগে উঠলো।আরেবাব্বাহ।নামাজ পরতে হবে।ঘড়ির দিকে চাইতেই দেখলো ঠিক ভোর ৪.৫৮ এর মত বাজে।হঠাৎ চারিদিকে ভোরের আজান ফুটলো।বেচারা আবুল সাহেব এবারেও আফসোস করলেন।আর বউকে জাগিয়ে আজ বকা দিয়ে বললেন শবেকদর এর রাতে কেন জাগায়নি তাকে।বউ বললো তাকে ডেকেছিল কিন্তু সে কঠিন ঘুমে ছিলো।

.

রোজার মধ্যে আল্লাহর ইবাদাত করলো প্রত্যেকদিন। এরমধ্যে একদিন মাহফিল ছিল এলাকায়। সেখানেও গিয়েছিলেন।সেখানে পরকালে কঠিন শাস্তির কথা শুনে সে ভয় পেয়ে যান এবং তার মধ্যে আল্লাহ ভিতী পুরোপুরি চলে আসে।সে বুঝতে পারলো এতদিন সে যেভাবে চলেছে তা শয়তানের দেখানো পথ ছিলো।আর কিছুই নয়।সেদিনের পর থেকে তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আর আল্লাহর ইবাদাতে মন দিলেন।এবং সবচেয়ে বড় কথা সিগারেট নামক বিষাক্ত জিনিস ছেড়ে দিলেন।

.

এরপর থেকে তিনিই সবাইকে বলতেন, "শয়তানের দেখানো পথে চলোনা,সিগারেট খেয়োনা।আল্লাহকে ভয় করো,আল্লাহ মহান,আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সব জানেন দেখেন।শুধু শবেকদর, শবেবরাত,ঈদ বা কোরবানির নামাজই নয় সবসময়ই নামাজ পড়া উচিত।সবসময় আল্লাহর ইবাদাত করা উচিত।"তিনি সবাইকে আরো বলতেন-"যা ভুল করেছি সব ভুলে আমাদের আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং আল্লাহর ইবাদত করার জন্য তার নির্দেশনা এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দেখানো পথে চলা উচিত।ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ নিশ্চয় আমাদেরকে মাফ করে দিবেন।"...এরপর থেকে আবুল সাহেবের পরামর্শে আবুল সাহেব পুর্বে যেরুপ কাজ করতেন সেরুপ কাজ যারা করতো তারাও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তার ইবাদাত শুরু করলো।এখনো প্রত্যেকদিন,প্রত্যেকওয়াক্ত নামাজে আবুল সাহেব আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চান আর বলেন-"হে আল্লাহ!আমার পুর্বের কাজগুলোর জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা ভিক্ষা করো।আর আমাকে যতদিন জীবন আছে তোমার ইবাদাত করার তৌফিক দাও।এবং আমি যেন একজন ইমানদার হয়ে মারা যেতে পারি সেই তৌফিক দান করো।আমিন"

.

.

"পরিবর্তন এবং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা"

-সিয়াম মেহরাফ

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File