জিপিএ ৫ পেয়েও জানেনা জিপিএ এর মানে কি! দোষটা কি সেই শিক্ষার্থীদের নাকি শিক্ষা ব্যবস্থার?

লিখেছেন লিখেছেন সিয়াম মেহরাফ ৩১ মে, ২০১৬, ১০:০০:৩৪ রাত

জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানেনা জিপিএ মানে কি!!! ওয়াও কত্ত অসাধারণ।বাংলাদেশ সম্পর্কেও তাদের ধারনা নেই।

.

২০০১ সালে বাংলাদেশে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৭৬ জন এবং ২০১৬ সালে এসে তা দাঁড়ায় ১,১০,০০০ অর্থাৎ এক লক্ষ দশ হাজার জনে।এবং গড় পাশের হার ২০০১ সালে ছিলো ৩৫.২২% যা ২০১৬ তে এসে দাঁড়ায় ৮৮.২১ এ।যা প্রায় ২০০১ সালের থেকে আড়াই গুনেরও বেশি।

.

কিছু জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হলো জিপিএ এর পুর্নাঙ্গ রুপ কি।বিভিন্ন শিক্ষার্থী থেকে উত্তর আসলো জানিনা,মনে পড়ছে না,গ্রেটিং পয়েন্ট।

.

জিজ্ঞেস করা হলো এস.এস.সি এর পুর্ন রুপ কি।তারা উত্তর দিলো মনে পড়তেছেনা,জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, স্কুল সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট।

.

জিজ্ঞেস করা হলো আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি এর ইংরেজী কি।উত্তর আসলো I am gpa 5,I give a gpa 5,I get gpa 5,I will gpa 5......

.

জিজ্ঞেস করা হলো শহীদ মিনার কোথায় উত্তর আসলো জানানেই।

.

অপারেশন সার্চলাইট কোথায় উত্তর আসলো অপারেশনের সময় যে লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয় সেটাই।

.

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে? উত্তর আসলো জানিনা,১৭ই ডিসেম্বর,১৬ই আগস্ট।

.

জিজ্ঞেস করা হলো আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস কবে।উত্তর আসলো জানিনা।কেউবা বললো ১৬ই ডিসেম্বর।

বিজয় দিবসের কথা জিজ্ঞেস করতেই উত্তর আসলো ২৬শে ডিসেম্বর।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায় অবস্থিত সেটা জানা নেই।

.

রণসঙ্গীত কে রচনা করেছে।উত্তর আসলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কেউ উত্তর দিলো জানিনা।জিজ্ঞেস করা হলো জাতিয় সঙ্গীত এর রচয়ীতা কে উত্তর আসলো কাজী নজরুল ইসলাম।

.

পীথাগোরাস কে?

উত্তর আসলো উপন্যাসিক।

নিউটন কোন তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত।উত্তর জানিনা।আইনস্টাইন কোন তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত এটা তারা পরেনি।নিউটনের তত্ত্ব হলো গাছ থেকে আপেল পরে সেটা।

.

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নাম কি।উত্তর জানিনা।

এভারেস্ট কোথায় অবস্থিত।উত্তর ইংল্যান্ড.....।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।উত্তর আসলো ৯টি।

.

নেপালের রাজধানী কোথায়।উত্তর আসলো নেপচুন..!!! হাডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর পার্থক্য জানেনা।সেটা কি তাও না।

.

পাঠ্যবইয়ের বাইরে গল্পের বই পরে তারা।লেখকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গল্পের নাম জিজ্ঞেস করতেই শোনা গেল তারা জানেনা।

.

এক ছাত্রকে এসব না পারার কারন জিজ্ঞেস করতে জানা গেল সে সংবাদপত্র পড়েনা,নিউজ দেখেনা বা সারাদিন পাঠ্যবইয়ের ভিতরেই থাকে।

.

আমি মোটেই এসব শিক্ষার্থীদের দোষ দিচ্ছিনা।মুলত দোষটা তাদের নয়।দোষটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর শিক্ষকদের।স্কুলের মান আর নাম বৃদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে সাজেশন ধরিয়ে দিয়ে মোটা টাকা নিচ্ছে। ফলাফল তারা শুধু পাঠ্যবইয়েই আবদ্ধ।সাজেশনে আবদ্ধ। অন্যান্যা দিক দেখে জিপিএ নষ্ট করবেনা তারা।তাই অন্য দিকে না দিকে সাজেশন আর পাঠ্যবইয়েই আটকে থাকে।

.

জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য যে জ্ঞানটুকু দরকার তাও তাদের নেই।তারমানে এই না তারা যোগ্য হতে পারবেনা।মুলত তাদের হাতে সাজেশন দিয়েই তাদেরকে জিপিএ দেয়া হয়েছে।কিন্তু এই জিপিএ দিয়ে কোন লাভ নেই।কেননা আসল জ্ঞান না থাকলে কোথাও সফলতা আসবেনা।

.

অনেকে বলছে এরা নিয়ে একটা ইস্যু তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা জানেনা এটা যে আসলে একটা ছাত্র যে জানেনা জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কে সে কিভাবে দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি করবে? এটা সিম্পেল।ছাত্রদের বিপক্ষে কথা বলা নয়।তারা পারছেনা।দোষটা তাদের নয়।

.

সর্বশেষ কথা একটাই জিপিএ পেলে যেন সেটা নিজের মেধাতেই হয়।সাজেশনের পক্ষে গিয়ে,প্রাইভেট টিউটর আর স্কুল কলেজের মধ্যে দিয়ে সৃজনশীলতাকেও মুখস্তবিদ্যা বানিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করাটা কারোই উচিত নয়।আর তা যদি হয় নিজেদের স্বার্থে।

.

এভাবে সার্টিফিকেট হয়ত পাওয়া যাবে কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান না।এরাই ভবিষ্যৎ এর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু যারা মানুষ বাঁচাতে গিয়ে মেরে ফেলবে,বিল্ডিং তৈরি করতে গিয়েও ভেঙ্গে ফেলবে।আগেই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎটাকে সাজানো উচিত সুন্দরভাবে।হ্যা শিক্ষার্থীদের কথাই বলছি।প্রত্যেকটা কলেজের,প্রাইভেট টিউটরদের টার্গেট যেন শুধুই জিপিএ ৫ বা গোল্ডেন ৫ না থাকে।সেটা যেন হয় জ্ঞানের জিপিএ ৫...যা এগিয়ে দেবে আমাদের ভবিষ্যৎ এর উজ্জ্বল জায়গাতে।

.

[ সেই সাক্ষাতকার এর ভিডিওটি

বিষয়: বিবিধ

১৯২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370561
৩১ মে ২০১৬ রাত ১০:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এটাই এখন আমাদের জিপিএ-৫!
370583
০১ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৪২
হতভাগা লিখেছেন : বছর দুয়েক আগে বুয়েটে কোন এক ইস্যুতে আন্দোলনরত এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সে বুয়েটের কোন সাবজেক্টে পড়ে ?

উঃ এসেছিল সে কমার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।

পোলাপানদের এসব উত্তর শুনে আমরা হাসাহাসি করলেও এর প্রভাব কিন্ত পরবর্তীতে আমাদের মুখ থেকে হাসি চিরতরে কেড়ে নেবে।

সরকারী কর্ম কমিশনে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের আনবার সুপারিশের ক্ষেতর বানানোর জন্যই শিক্ষা ব্যবস্থার এ বেহাল দশা করে দেওয়া হচ্ছে।
370635
০১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়।
রমজান নিয়ে ব্লগীয় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-
Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File