"আল্লাহ তায়ালা দয়ালু হয়েও কেন আমাদের জন্য শাস্তির বিধান রেখেছেন?"

লিখেছেন লিখেছেন সিয়াম মেহরাফ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:৩২:৪৩ রাত

ক্লাস শেষে ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে আকিব অপেক্ষা করছে আবইয়ানের জন্য।আবইয়ান নিশ্চয় লাইব্রেরি থেকে কিছু বই ধার করে আনতে গিয়েছে।পড়াশুনার পরেও টাইম বের করে ৩ টা বই হোক বা ৪ টা হোক সে সেগুলো শেষ করে ফেলবেই।আবার আগামীকাল জমা দিয়ে নতুন করে বই নিবে।যুক্তিতে ওর সাথে হার মানা খুব কষ্টের কাজ।ক্লাস শেষে বইগুলো নিয়ে বের হয়ে এসে আকিবকে বলল -"চল ক্যান্টিনে গিয়ে বসি"..! আকিব হ্যা সুচক উত্তর দেয়ায় দুজন মিলে ধেয়ে চললো ক্যান্টিনের দিকে।গিয়ে দু কাপ চায়ের অর্ডার দিয়েই আবইয়ান ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে শুরু করলো।আকিব মাঝে মাঝে অবাক হয়, আবইয়ান যদি ওর সামনে বই পড়তেই থাকে তাহলে তো একাই পড়তে পারে, তাকে আবার ডেকে চা খাইয়ে পাশে বসিয়ে রাখার কি দরকার।ভার্সিটির প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট আবইয়ানকে বেশ ভালভাবেই চিনে।ওর যুক্তিসহ কথাগুলো সহ সবকিছুই বেশ ভাল লাগে সবার।ভাল মানুষদের পিছনে বসে কথা বলা মানুষেরও অভাব থাকেনা।আবইয়ানের সাথে থাকার দরুন আকিবকেও ভার্সিটির স্টুডেন্টসরা চিনে ভালভাবেই।

.

পাশ থেকেই ওইপাশের টেবিলে বসা কারা যেন বলে উঠলো-" আল্লাহ পরম দয়ালু কিন্তু সেই দয়ালুই তার ইবাদাত না করলে শাস্তির বিধান দিয়েছে,হুমকী দিয়েছে,পরকালে জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছে..!"" কথাটা আকিবের কানে যাওয়ার আগে হয়ত আবইয়ানের কানে পৌঁছেছিলো।আবইয়ান আকিবকে জিজ্ঞেস করলো আমি যা শুনলাম ওরা কি সেইটাই বলেছিল? আকিব হ্যা সুচক উত্তর দেয়।ওরা হয়ত আবইয়ানকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে।এই ছেলেগুলো ঘোর নাস্তিক।আবইয়ান দাঁড়িয়ে যায়।পা ফেলে আকিবকে বললো-"চল"..!! আকিবকে নিয়ে ওদের টেবিলে গিয়ে বসে।

.

ওরা আবইয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে -"আবইয়ান আমাদের প্রশ্নটা বা সংশয়টা তুমি শুনেছো? এটার কোন যুক্তি আছে তোমার কাছে?..!"

আবইয়ান চুপচাপ বসে আছে।আকিব অবাক হয়ে আছে।আল্লাহ সম্পর্কে ওরা এত বড় কথা বললো তবুও আবইয়ান চুপ করে আছে..!!

আবইয়ান হুট করে ওদেরকে প্রশ্ন করলোঃ

-আচ্ছা তোমরা তো আল্লাহকে বিশ্বাস করোনা।করলে এরুপ বলতে পারতে না।আর তোমাদের মতে আল্লাহ তো তোমাদের জন্যেও শাস্তির বিধান রেখেছে তাইনা?

-হুম।আমরা আল্লাহর ইবাদাত না করলে,আল্লাহ পরকালে আমাদের জান্নাত দিবেন না।এইটা কি হুমকি নয়? এটা কি ভয় দেখিয়ে তার ইবাদাত জোর করে আদায় করানো হয়না??

-আচ্ছা তোমরা ডিজিটাল যুগের ছেলেপুলে।তোমরা যখন স্কুলে পড়তে যেতে তখন স্কুলে ফুল সিকিউরিটি থাকতো না?? হেড স্যার নির্দেশ দিয়ে দিত না যে ছুটির আগে কেউ গেট থেকে বেরুতে পারবে না? গেট থেকে বেরুলেই বেতের পিটুনি?

-হুম সেটা ঠিক আছে।কিন্তু সেটার সাথে আল্লাহর হুমকি দেয়ার কি সম্পর্ক?

-হেডস্যার যখন তোমাদের বলতো স্কুল থেকে পালিয়ে গেলে টিসি দেয়া হবে।বা বেতের পিটুনি দেয়া হবে।সেটাও তো হুমকীই ছিল তাইনা? তারা সেটা কেন করতো? সেই হুমকী আর মারার ভয় কেন দেখাতো? সেখানে হুমকী দিয়ে তাদের কি নিজস্ব কোন লাভ ছিল বা স্বার্থ ছিলো? তুমি তো স্কুলে গেলেও তাদের বেতন দিবে, স্কুলে না গেলেও তাদের বেতন দিবে।তবুও কেন তোমাকে স্কুল থেকে পালালে বেতের পিটুনি,স্কুলে দুদিন না আসলে কয়েক ঘা বেতের পিটুনি দেয়ার হুমকি তারা দিয়েছিল?

-তারা হুমকি দিয়েছিল তখন কারন যাতে আমরা স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলি,আর এতে করে যাতে একটা ভাল রেজাল্ট করতে পারি।

-তুমি তো নিজেই সবটা বুঝে গেছো! তাহলে আল্লাহর সম্পর্কে এই প্রশ্নটা কেন করলে?

আল্লাহ চান যাতে আমরা সবসময় তার ইবাদাত করি,তিনি তার ইবাদাত করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন।তার ইবাদাত যদি তুমি বা তোমরা না করো তাহলে কি তার কিছু ক্ষতি হবে? হবেনা।সে মহান, মহানই থাকবে।তার ইবাদাত না করলে, তার দেয়া বিধান না মানলেই তোমরা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে ঢলে পড়বে যার শাস্তি জাহান্নাম।আল্লাহ বান্দাদের ক্ষতি চায়না,এজন্যেই সে শাস্তির বিধান আরোপ করেছে যাতে করে তুমি বা তোমরা তার ইবাদাত করো এবং তাকে বিশ্বাস করে তার বিধান মেনে খারাপ পথ থেকে দূরে থাকো।এতে তার নিজস্ব কোন স্বার্থকতা নেই।সে আমাদের ভালোর জন্যেই শাস্তির বিধান আরোপ করেছেন।স্কুল কলেজে যেমন তুমি না গেলেও তাদের কোন ক্ষতি হবেনা,তুমি না গেলেও তোমাকে বেতন দিতে হবে,গেলেও দিতে হবে, তবুও তারা হুমকি দিচ্ছে,মারার ভয় দেখাচ্ছে যাতে তুমি ভাল পথে আসো।প্রত্যেকদিন নিয়ম শৃঙ্খলা অনুসরণ করো তাই।আর যাতে ভাল একটা ফলাফল পাও।

-কিন্তু তার ইবাদাত করলেই যে ভাল পথে থাকতে পারবো তার কি গ্যারান্টি?

-দেখো।আল্লাহ বলেছেন মিথ্যা কথা বলা পাপ।মিথ্যাবাদীদের জন্য শাস্তি রয়েছে।তুমি যদি আল্লাহকে বিশ্বাস না করো,মিথ্যা বলা পাপ এটা বিশ্বাস না করো তাহলে তো তুমি মিথ্যে বলতেই থাকবে।আর যদি বিশ্বাস করো মিথ্যা বলা পাপ।এতে শাস্তি রয়েছে তাহলে কি তুমি সেই পাপ জেনেশুনে করবে?যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করো? অবশ্যই না।এইজন্যেই শাস্তির বিধানগুলো দিয়েছে,যাতে করে আমরা তাকে বিশ্বাস করে শাস্তিগুলো থেকে বাঁচার জন্যে হলেও মিথ্যা বলা বা পাপের পথ ছেড়ে দেই।কিন্তু তবুও যদি তুমি মিথ্যা বলো এতেও মহান দয়ালু আল্লাহর কোনরূপ কোন ক্ষতি হবেনা।তুমি সামাজিকভাবে চিন্তা করে দেখো আজ তুমি মিথ্যে বললে কাল যদি সমাজের কেউ সেটা জানতে পারে তাহলে কাল তারা তোমাকে বিশ্বাস করবেনা।মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ক্ষতি চাননা বলেই শাস্তির বিধানগুলো রেখেছেন।যাতে তুমি তা পালন করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারো আর পরকালেও জান্নাত পাও।

ওরা আপাতত চুপসে গেছে।আবইয়ান আবার বলতে শুরু করলোঃ-

"দেখো মহান আল্লাহ তায়ালা কতটা দয়ালু,সে ঠিকই তুমি ভুল পথে গেলে তোমার জন্য শাস্তির বিধান রেখেছেন কিন্তু ভেবে দেখো আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি,তুমি করোনা কিন্তু আমিও পৃথিবীতে যেভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছি তুমি ঠিক তেমনিভাবেই পারছো।আল্লাহ তায়ালা তো তোমাকে শাস্তি দিতে চাইলে সে তোমার দম বন্ধ করে দিতে পারতো।সে সর্বশক্তিমান।সে এটা কেন করলোনা। সে করেনি কারন সে চায় তুমি পৃথিবীতে বসেই যাতে নিজেকে সুধরে নেও আর পরকালে ভাল ফলাফল পাও।তোমার ইহকালীন স্বাধীনতার উপর আল্লাহ কোন প্রভাব ফেলছেনা।তুমি আল্লাহ বিশ্বাসী নও,আমি বিশ্বাসী তবুও সে কিন্তু তোমাকে শ্বাস প্রশ্বাস বা কোনকিছু থেকেই বঞ্চিত করেনি।আর যেসব শাস্তির বিধান রয়েছে তা কখন কার্যকর হবে তাও তিনি যুগে যুগে জানিয়ে দিয়েছেন।আর আবারো বলছি তোমাদের স্বাধীনতার ভার বা তোমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ইচ্ছে তোমার উপরেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।এর ব্যাপারে আল্লাহ কখনো হস্তক্ষেপ করবেনা।সমাজের ক্ষেত্রে ভুল করলে যেমন তুমি শাস্তি পাও,বা মানুষ তোমাকে ঘৃনা করে,আজ তুমি পাপ করলে নির্দিষ্ট দিনে তুমি তার শাস্তিও পাবে।আর ভাল কাজ করলে উপহার!"

ওরা এখনো চুপচাপ আবইয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো গিলছে।

-"সুরা আনকাবুত, আয়াত নং-৬৪ (২৯:৬৪) এখানে আল্লাহ বলেছেন -"এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া,কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়,আর পরকালের জীবনই তো প্রকৃত জীবন।যদি ওরা তা জানতো।..

সুরা নাবা, আয়াত নং-১৭,৩৮(৭৮:১৭) এখানে আল্লাহ বলেছেন-"নিশ্চয় বিচার দিবস নির্ধারিত রয়েছে"..

(৭৮:৩৯) -"এই দিবস সত্য।সুতরাং যার ইচ্ছা সে তার পালনকর্তার পানে ঠিকানা খুঁজে নিক"...

আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই প্রেক্ষাপট অনুসারে বলেছেন।এবং তুমি যাতে ভাল পথে থাকো তাই শাস্তি উল্লেখ্য করেছেন।যাতে তুমি তার প্রতি ঈমান এনে ভাল কাজ করো।পার্থিব জীবনে ভালভাবে না পরলে যেমন তুমি ভাল রেজাল্ট পাবেনা তাহলে এই জীবনে খারাপ কাজ করলে তুমি তার ফল কিভাবে পাবে? তোমার স্কুলের কথাগুলো এখানে টেনে আনাটা অযোক্তিক ছিলো।বুঝাতেই এগুলোকে টেনে এনেছি আমি।মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে কখনো কোন কিছুর তুলনাই হয়না।সে মহান।সে সর্বশক্তিমান। তবুও তোমাদের বুঝাতেই এই স্কুলের ব্যাপারটা এখানে এনেছি আমি"

...

... ওদের মুখগুলো চুপসে গিয়েছে।আবইয়ানের কথা বলাতে সম্পুর্ণ চা আবইয়ান খেতে পারেনি।চায়ের কাপটা এখন একটা শরবতের পাত্রের মত ঠান্ডা হয়ে আছে।

আবইয়ান উঠে হাঁটা শুরু করলো।অনেক বেলা হয়ে গিয়েছি।যোহরের নামাজটা এখনো বাকি ওর।ওর পাশে হাঁটতে থাকা আকিব ওই ছেলেগুলোর দিকে এখনো তাকিয়ে আছে।হাঁটতে হাঁটতেও ওর দৃষ্টি ওই ছেলেগুলোর দিকে। ছেলেগুলো এখনো আবইয়ানের চলার পথের দিকে তাকিয়ে আছে।ওদের চেহারায় ভয়ের আর হেরে যাওয়ার ছাপটা স্পষ্ট।ওরাও এখন এটা বলতে বাধ্য মহান আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু,সর্বশক্তিমান..!!

.

"আল্লাহ পরম দয়ালু হয়েও কেন আমাদের শাস্তির ভয় দেখায়,হুমকী দেয়" / সিয়াম মেহরাফ

-

(প্রথম পর্ব)

-

পড়ুন এখানে

বিষয়: বিবিধ

১১৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377532
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:৩৫
সিয়াম মেহরাফ লিখেছেন : আমার এই সিরিজ শুরুর উদ্দেশ্য হলো নাস্তিকদের কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর গল্পের মাধ্যমে দেয়া।

সবাই আশা করি পড়বেন।অগ্রীম ধন্যবাদ
377536
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১০:০৩
আফরা লিখেছেন : ঈদ-মোবারক Rose Rose। গল্প পরে পড়ব ইনশা আল্লাহ !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File