রক্তঝরা ২৮শে অক্টোবর : সত্য মুক্ত-স্বাধীন জীবন লক্ষ্য ছিল যাদের.. ..

লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:০৭:৪৫ বিকাল



২৮শে অক্টোবর ২০০৬। রাজধানী ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এবং তৎসংলগ্ন পল্টন এলাকা। মানবতার দুশমন ইবলিশের অনুসারী রাম-বাম ১৪ দল নামের লগি-বৈঠাধারী সশস্ত্র হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইসলাম প্রিয় জনতার উপর। সে এক ভয়াল নৃশংসতম দৃশ্য ভেসে উঠছে টিভি পর্দায়। নেত্রীর নির্দেশ পালনার্থে ঝাঁিপয়ে পড়েছে লগি-বৈঠা দিয়ে, আঘাতের পর আঘাত হানছে, বন্দুক দিয়ে পাখির মত গুলি করছে, বোমা নিক্ষেপ করছে সন্ত্রাসীরা, আহত হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে আমার ভাইদের, নিহতদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেহ তেতলে দেয়া হচ্ছে, লাশের উপর নৃত্যোল্লাস করা হচ্ছে। প্রভু এরা কি মনুষ্যপদবাচ্য হতে পারে! মিডিয়ার বদৌলতে বিশ্ব দেখছে আর ধিক্কার দিচ্ছে। মানবতা বিরুদ্ধে এমন পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে তিন বছর আগে।



পরপারে প্রভুর দরবারে হাজির হয়েছিলেন আমাদের প্রিয় ভাইয়েরা : শহীদ হোসাইন মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম (স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি), শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া (ঢাকা কলেজ) শহীদ সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুম (সরকারী তিতুমীর কলেজ) শহীদ জসিম উদ্দিন, শহীদ মো.হাবিবুর রহমান, শহীদ আবদুল্লাহ আল্ ফয়সল (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং আহত-পঙ্গু হয়েছিল হাজারো ইসলাম প্রিয় জনতা। কি অপরাধ ছিল তাদের? তারা তো কোন দখলদার ছিল না, চাঁদাবাজ ছিল না, সন্ত্রাসী ছিল না। তারা গিয়েছিল জোট সরকারের ৫ বছরের ফুর্তি উপলক্ষে জামায়েতে ইসলামীর আয়োজিত সমাবেশে। তারা চায় এ দেশে একটি ইসলামী সমাজ কায়েম করতে। মানুষকে ভালবাসা দিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে আসতে। তারা সুস্থ দেহে আর ফিরে নি স্নেহময়ী মায়ের কাছে, ফিরেছে লাশ হয়ে, শহীদ হয়ে।



“ভয় নেই, ভয় নেই শহীদ, তোমরা হওনি অন্তর্ধান

দ্বীনের জন্য বিলিয়ে দিয়েছো তাজা রক্ত প্রাণ.. ..

শহীদ হয়ে সাক্ষ্য দিলে দ্বীন কায়েমের পথে

মরে গিয়ে বেঁচে আছ তোমরা পাক কোরআনের বুকে।”

(স্বর্গবাসী, রাশেদুল হাসান)

আর মহাগ্রন্থ আল্ কোরআন এভাবে বলছে তাদের উদ্দেশ্যে : “আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।”(সুরা বাকারা-১৫৪)

তাঁরা তাদের রবের পক্ষ থেকে রিজিক পেয়ে থাকেন। (সুরা আলে ইমরান-১৬৯)

ওদের চলে যাওয়ার এই পথ নতুন নয়, এই পথে চলে গেছে, হামিদ, শাব্বির, আইয়ুব, জাফর জাহাঙ্গীর, বাকীউল্লাহ। ওদের পূর্বসুরী হযরত হামজা (রা), হযরত ইমাম হোসাইন (রা)সহ লক্ষ লক্ষ শহীদ। ওদের প্রেরণার উৎস বদর, উহুদ, কারবালা, বালাকোট। আর নবতরে যুক্ত হল পিচঢালা রাজপথ ঢাকার পল্টন। অবিনাশী সত্যের এই শহীদি কাফেলার মিছিল কখনো থামবে না, চলতেই থাকবে। ২৮শে অক্টোবরের খুনীরা বাংলাদেশের মুক্ত আলো বাতাসে ঘুরছে। খুনীদের বিচার কার কাছে চাইবো? ওদের রক্তের উপর ১/১১ নামক দৈত্য সওয়ার করে ২২শে জানুয়ারী (২০০৭) নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করেছিল। বাংলাদেশকে তাবেদার দেশ বানানোর জন্য, দেশকে বিকিয়ে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে তারা তাদের আরো পুর®কৃত করেছে। আমরা তাদের বিচারের ভার তোমার উপর ন্যস্ত করলাম হে মহামহীম পরওয়ারদেগার। আমাদের শহীদরা তোমার কাছ থেকে পুর®কৃত হবে তুমিই পাক কোরআনে বলেছ।



ইবনে মাজা শরীফের হাদীসে বর্ণিত রাসূল (সা) বলেছেন, “আল্লাহতায়ালার নিকট শহীদদের ৬টি মর্যাদা রয়েছে ঃ ১) খুনের পয়লা কাতরা প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই সবগুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়(ঋণ ব্যতীত) ২) শাহাদাতের সময় বেহেশতের তাঁর নিজস্ব স্থান দেখানো হয়। ৩) কবর আযাব থেকে রেহাই দেয়া হয় ৪) কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে হেফাজতে থাকবে ৫) ঈমানের অলংকারে ভুষিত করা হবে এবং ৬) নিজের স্বজনদের মধ্য থেকে ৭০ জনের জন্য সুপারিশ করতে পারবে। তো শহীদদের এমন মর্যাদা হয়ে থাকলে আল্লাহর রাহে জীবন দেয়া থেকে কি পৃথিবীর কোন শক্তি তাদের বিরত রাখতে পারে?

বছর ঘুরে সেই কলংকিত দিন আজ আমাদের সামনে। শহীদেরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, এখন তাদের লালিত স্বপ্নের সোনালী সমাজ কায়েমের দায়িত্ব আমাদের কাছে। শাহাদাত মুমিন জীবনের কাম্য। কন্ঠকাকীর্ণ সেই রাজপথ অনেক দীর্ঘ। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে দৃপ্ত পায়ে। বাধা পাহাড় মাড়িয়ে পথ যতই বন্ধুর হোক। স্বপ্নের সেই সমুদ্র পাড়ি জমাতে হবে সমুদ্র যতই তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ হোক। মুলতঃ শাহাদাতের মিশন ছাড়া তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাসূল (সা) বলেছেন, যার মনে শাহাদাতের বাসনা নেই, তার মৃত্যু হবে মুনাফিকী মৃত্যু। আমরা জানি শহীদের রক্তের সিঁিড় বেয়েই এদেশে ইসলামের সত্যিকার বিজয় আসবে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এসেছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। শাহাদাতের পেয়ালা পান করা ছাড়া কি ইসলামের বিজয় সম্ভব? তবে এত ভয় কেন?

“আমাদের এই মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে

আমরা বদর থেকে উহুদ হয়ে এখানে

শত সংঘাতের মধ্যে এ শিবিরে এসে দাঁড়িয়েছি

কে জিজ্ঞেস করে আমরা কোথায় যাবো

আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের

উদয় ও অস্তের ক্লান্তি আমাদের কোনদিনই বিহ্বল করতে পারে নি

আমাদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত/আমাদের রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিল মুতার প্রান্তর

পৃথিবীতে যত গোলাপ ফুটে তার লাল বর্ণ আমাদের রক্ত

আমাদের হাতে একটি মাত্র গ্রন্থ আল্ কোরআন।”

( আমাদের মিছিল, আল্ মাহমুদ)




পৃথিবীর কোন শক্তি শহীদি কাফেলা ইসলামী আন্দোলনের জানবাজ লড়াকু সেনানীদের পথযাত্রা রুখতে পারবে না। পারেনি নমরূদ, পারে নি ফেরাউন। পারে নি ইয়াজিদ, পারবে না দেশে দেশে তৈরী নব্য ফেরাউন-নমরূদের প্রেতাত্মরা। শয়তানের দোসর বুশ-ব্লেয়ার-শ্যারনরাও পারছে না। পারবেনা কোন পাশ্চাত্যবাদীরা, সাম্রাজ্যবাদীরা, ব্রাক্ষèণ্যবাদীরা, ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারীরা। কারণ তারা মহান আল্লাহর দরবারে যাওয়ার জন্য শহীদের পেয়ালায় চুমো দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

আল্ কোরআনের ভাষ্য, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জান এবং মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।” (সুরা তওবা-১১১) তাই শহীদদের মিশন ছিল এটাই, “আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ-সবকিছুই মহান স্রষ্টা আল্লাহরই জন্য উৎসর্গিত।” (সুরা আল্ আন’আম-১৬২) আজ সেই সব লড়াকুদের ডাক পড়েছে, যারা শোষণমুক্ত, একটি সুন্দর ইসলামী কল্যাণমুলক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রাখতে পারে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঠিকই বলেছেন,

“সত্য-মুক্ত স্বাধীন জীবন লক্ষ্য ছিল যাদের

খোদার রাহে প্রণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের।”


আমরা যারা শহীদের উত্তরসুরীরা বেঁচে আছি বাংলাদেশের এই সবুজ জমিনে কলেমার পতাকাকে বিজয়ী করতে, তোমাদের আজীবনের লালিত স্বপ্নকে পূরণ করতে লড়ছি এবং লড়ে যাবো।

=====

বিষয়: বিবিধ

১৯৬৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347423
২৭ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
288529
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ..Good Luck Good Luck
347424
২৭ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪১
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
288530
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ..Good Luck Good Luck
347437
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বিচার হওয়া দরকার মানবতার জন্য... ধন্যবাদ।
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
288531
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন। ধন্যবাদ..
347448
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ৷ এ যাত্রা তখনই থামবে যখন অত্যাচারীর খড়্গকৃপান ভীম রণভূমে রণিবেনা৷
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
288532
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : ইনশাল্লাহ। অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে..
347465
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৩২
আবু জান্নাত লিখেছেন : সময় মত সঠিক বিচারের প্রত্যাশায়.........
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
288533
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ..
347490
২৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:১২
নূর আল আমিন লিখেছেন : একমত শেখের পোলা
লিখেছেন :
ইনশাআল্লাহ৷ এ
যাত্রা তখনই থামবে
যখন অত্যাচারীর
খড়্গকৃপান ভীম
রণভূমে রণিবেনা৷
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
288534
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : জুলুমের অবসান হবেই, ইনশাল্লাহ..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File