মীযানের পাল্লায় ভারি কালিমা

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ০৭:২৬:৪৮ সন্ধ্যা



عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَتَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ

আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি কালিমা আছে, যেগুলো দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী। "সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহান্নাল্লাহিল আযীম" (আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।) (বুখারী: ৭৫৬৩)

#আলোচনা: আলোচ্য হাদীসে কিয়ামত দিবসে ন্যায়বিচারের পাল্লায় ওজনদার কালেমার বর্ণনা করা হয়েছে। যেটা ন্যায়বিচারের দন্ডে অত্যন্ত ভারি অথচ মুখে উচ্চারণ করতে খুবই সহজ আর আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়। কিয়ামত দিবসে ন্যায়বিচারের পাল্লায় শুধু আ'মলই ওজন করা হবে না, কথাও ওজন করা হবে, যার প্রমাণ এই হাদীস। আল্লাহ বলেন-

"আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।" (সূরা আম্বিয়া, ২১:৪৭)

সুতরাং আমাদের এমন কথা বলা উচিত যা ওজনের পাল্লায় সওয়াবই বৃদ্ধি করে গোনাহ নয়। মন্দ কথা বাদ দিয়ে বেশি বেশি তাসবীহ, তাহমিদ, তাহলীল, তাকবীর পাঠ করা উচিত।

তাসবীহ, তাহলীল, তাহমিদ, তাকবীরের ফযিলত:

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি বলি-سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ ("সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়ালাইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার") অর্থাৎ- "আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ভিন্ন কোন মা’বূদ নেই, আল্লাহ মহান" পড়া আমার নিকট বেশি প্রিয়- সে সব বিষয়ের চেয়ে, যার উপর সূর্য উদিত হয়। (মুসলিম:২৬৯৫)

হাদীসে আছে, আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় বাক্য চারটি- سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ (১) সুবহা-নাল্ল-হ, (২) আল হামদুলিল্লা-হ, (৩) লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ও (৪) ওয়াল্ল-হু আকবার। এ চারটি কালিমার যে কোন একটি প্রথমে (আগ-পিছ করে) বললে তাতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। (মুসলিম:২১৩৭) ইবনে মাজাহর বর্ণনায় আছে "চারটি শ্রেষ্ঠ বাক্য" (ইবনে মাজাহ:৩৮১১)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে ‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’ তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী:৬৪০৫, মুসলিম:২৬৯১)

একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ কালাম (বাক্য) সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে কালাম আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মালায়িকাহ’র (ফেরেশতাগণের) জন্য পছন্দ করেছেন তা হলো, ‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’। (মুসলিম:২৭৩১)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে

‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’

(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)

তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব হবে। তার জন্য একশ’ নেকী লেখা হবে, তার একশ’টি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ দু‘আ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে বেশী পড়বে। (বুখারী:৩২৯৩, মুসলিম:২৬৯১)

#বর্ণনাকারী: আবু হুরাইরা (রা.)

#মান:সহীহ

#গ্রন্থ: বুখারী, দু'আ অধ্যায়, হা:৬৪০৬; শপথ ও মানত অধ্যায়, হা:৬৬৮২, তাওহীদ অধ্যায়, হা: ৭৫৬৩, মুসলিম:২৬৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান:৮৩১,৮৪১ তিরমিযী:৩৪৬৭, ইবনে মাজাহ:৩৮০৬, মুসনাদে আহমাদ:৭১২৭/৭১৬৭, মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ:৪২৩৯, ৫০৩৫/২৯৪১৩/২৮৮৩৫,৩৪৩৮০ সহীহ আল জামে':৪৫৭২, নাসাঈর সুনানুল কুবরা:৯৩৩০, মুসনাদে আবু ইয়ালা:৫৯৬২, সহীহ আত্ তারগীব: ১৫৩৭

#সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম (নীল মুসাফির)

#দরসে_হাদীস

বিষয়: বিবিধ

৫২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File