সুখ-সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে- ১২

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০১:২২:৪৫ রাত

শরয়ী কারণ ছাড়া পুরুষের সামনে কোনো নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা করা নিষেধ:



শরয়ী কারণ বলতে, বিয়ের পাত্রীর অবস্থা বর্ণনা করা। এক্ষেত্রে তার দোষ-গুণ যা বর্তমান সব পাত্রকে বলতে হবে এবং যথা সম্ভব তার দৈহিক সৌন্দর্যের কথাও বলা যাবে। নইলে অনর্থক নারী হোক পুরুষ হোক কেউ কোনো নারীর দৈহিক সৌন্দর্য বিষয়ক কিছু আলোচনা করতে পারবে না। এতে পুরুষদের ফিতনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মহিলা যেন অন্য কোন মহিলাকে [নগ্ন] কোলাকুলি না করে। [কারণ] সে পরে তার স্বামীর কাছে তা এমনভাবে বর্ণনা করবে যে, যেন সে [তা শুনে] ঐ মহিলাকে প্রত্যক্ষভাবে দর্শন করছে।’’ ( তিরমিযী: ২৭৯২, আবূ দাউদ: ২১৫০)



#উদ্ভট, আজেবাজে কথা, আষাঢ়ে গল্প ও মিথ্যা বাকপটুতা প্রকাশের পরিণতি:



নিজের জ্ঞান, পান্ডিত্ব্য জাহির করার জন্য মিথ্যা-বানোয়াট গল্প, কল্পবিলাস কাহিনি ও উদ্ভট, আজেবাজে, অনর্থক কথা-বার্তা বলা ইসলামে নিষেধ।



জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং অবস্থানে আমার থেকে দূরতম হবে তারা; যারা অনর্থক অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে ও বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; যারা আলস্যভরে বা কায়দা করে টেনে-টেনে কথা বলে। আর অনুরূপ অহংকারীরাও।’’ ( তিরমিযী: ২০১৮)



আবূ উমামা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের যিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের যিম্মাদার আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের যিম্মাদার। ( আবু দাউদ: ৪৮০০)

আবূ আবদুল্লাহ আল-জাদালী (রাহঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র-মাধুর্য সম্বন্ধে আইশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো অশ্লীল ও কটুভাষী ছিলেন না, অশ্লীল ব্যবহারও করেননি। তিনি কখনো বাজারে গিয়ে হউগোল করতেন না এবং অন্যায়ের দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেননি। বরং তিনি উদার মন নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন। ( তিরমিযী: ২০১৬)

বেশি কথা বলা:

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বাগাড়ম্বর-কারীরা ধ্বংস হয়ে গেল [বা ধ্বংস হোক]।’’ এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম: ২৬৭০, আবূ দাউদ: ৩৬০৮)



অশ্লীল ও অসভ্য ভাষা প্রয়োগ করা নিষেধ:



ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে বস্তুর মধ্যে অশ্লীলতা থাকবে, তা তাকে দূষিত করে ফেলবে, আর যে জিনিসের মধ্যে লজ্জা-শরম থাকবে, তা তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলবে।’’ (তিরমিযী: ১৯৭৪, ইবনু মাজাহ: ৪১৮৫)

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুমীন খোঁটা দানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীল-ভাষী হয় না।’’ (তিরমিযী: ১৯৭৭, আহমাদ: ৩৮২৯, ৩৯৩৮)



#সারাদিন_কথা_বন্ধ_রাখা_নিষেধ:



আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই বাণী মনে রেখেছি যে:

‘‘সাবালক হবার পর ইয়াতীম বলা যাবে না এবং ( কোন দিন ) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কথা-বার্তা বন্ধ রাখা যাবে না।’’

(হাসান সনদে দ্রষ্টব্য: সুনানে আবূ দাঊদ: ২৮৭৩, সুনানুল কুবরা: ১১০০১, আরো ব্যাপকভাবে তাবারানীর মু'জামুল আওসাত: ২৯২, মু'জামুস সাগীর: ২৪৫)

পুনশ্চ: অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা যেমন নিষেধ, তেমনি একদম চুঁপ থাকাও ঠিক নয়। ‘জাহেলিয়াতের যুগে বাক্ বন্ধ রাখা এক প্রকার ইবাদত ছিল। এখন মানুষের সাথে ভালো কথা বলা, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজ থেকে নিষেধ, কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির ইত্যাদি নেকীর কাজ ও তার নির্দেশ রয়েছে।

কায়েস ইবনে আবূ হাযেম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু আহ্মাস গোত্রের যয়নাব নামক এক মহিলার নিকট এসে দেখলেন যে, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, ‘ওর কি হয়েছে যে, কথা বলে না?’ তারা বলল, ‘ও নীরব থেকে হজ্জ করার সংকল্প করেছে।’ তিনি বললেন, ‘কথা বল। কারণ, এ [নীরবতা] বৈধ নয়। এ হল জাহেলী যুগের কাজ।’ সুতরাং সে কথা বলতে লাগল। (বুখারী, রিয়াদুস সালেহীন: ১৮০১)



কারো মুখোমুখি প্রশংসা করা ঠিক নয়:

কারো মুখোমুখি প্রশংসা বা গুণগান করলে প্রশংসিত ব্যক্তির আত্মগর্বে লিপ্ত হবার আশংকা থাকবে। আবার এটা এক ধরণের চাটুকারীতা। তাই যথা সম্ভব এই কাজ বর্জণীয়।

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি অন্য একজনের [তার সামনে] ভাল প্রশংসা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হায় হায়! তুমি তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে!’ এরূপ বার-বার বলার পর তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যদি কাউকে একান্তই তার সাথীর প্রশংসা করতে হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি ওকে এরূপ মনে করি’ - যদি জানে যে, সে প্রকৃতই এরূপ - ‘এবং আল্লাহ ওর হিসাব গ্রহণকারী। আর আল্লাহর [জ্ঞানের] সামনে কাউকে নিষ্কলুষ ও পবিত্র ঘোষণা করা যায় না।’’ (বুখারী: ৬০৬১, মুসলিম: ৩০০০)



আবূ মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির [সামনা-সামনি] অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে বললেন, ‘‘তুমি লোকটার পৃষ্ঠ কর্তন করলে অথবা তাকে ধ্বংস করে দিলে।’’ (বুখারী: ৬০৬০, মুসলিম: ৩০০১)

চাটুকারীতার পরিণতি:

হাম্মাদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি এসে উসমান (রাঃ)-এর সামনে তার প্রশংসা শুরু করলে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) মাটি তুলে নিয়ে তার মুখমন্ডলে ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা চাটুকারদের সাক্ষাৎ পেলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। ( আবু দাউদ: ৪৮০৪)

শরীয়ত-সম্মত খাত ছাড়া ধন-সম্পদ নষ্ট করা নিষিদ্ধ:



আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস পছন্দ করেন এবং তিনটি জিনিস অপছন্দ করেন। তিনি তোমাদের জন্য পছন্দ করেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোন কিছুকে অংশী স্থাপন করো না এবং আল্লাহর রজ্জুকে জামাআতবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না। আর তিনি তোমাদের জন্য যা অপছন্দ করেন তা হল, অহেতুক আলোচনা-সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া, অধিকাধিক প্রশ্ন করা এবং ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা।’’ (মুসলিম: ১৭১৫, আহমাদ: ৮১৩৪)

লোক চলাচলের রাস্তা-ঘাটে ও ছায়াতলে পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ:



আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’টি অভিসম্পাত আনয়নকারী কর্ম থেকে দূরে থাক।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘দু’টি অভিসম্পাত আনয়নকারী কর্ম কি কি?’’ তিনি [উত্তরে] বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের রাস্তায় এবং তাদের ছায়ার স্থলে পায়খানা করে [তার এ দু’টি কাজ অভিসম্পাতের কারণ]।’’ (সহীহ মুসলিম: ২৬৯, আল মুসতাদরাক: ৬৯০, আবূ দাউদ: ২৫, আহমাদ: ৮৬৩৬, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ৬৭)

বদ্ধ পানিতে পেশাব করা নিষেধ:



জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম: ২৮১, নাসায়ী: ৩৫)

পুনশ্চ: এগুলো করলে সাধারণ মানুষদের কষ্ট হয়। রাস্তায় যেখানে মানুষ চলাচল করে এবং যে গাছের ছায়ায় মানুষ বিশ্রাম নেয় সেখানে পেশাব-পায়খানা করলে জায়গা টা নোংরা হবে, মানুষ সেখানে বসতে পারবে না। বদ্ধ পানিতে পেশাব করলে পানি নাপাক বা অপবিত্র হয়ে যাবে। মানুষের কষ্ট হয় এমন সব কাজই ইসলামে নিষিদ্ধ।

ক্রমশ..

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

বিষয়: সাহিত্য

৫৮৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386417
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ দুপুর ১২:৫৩
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : চালিয় জান ভাই

সাথে আছি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File