দুনিয়াটা প্রবাস, পরকালই আসল ঠিকানা (দরসে হাদীস)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০২:৫৬:৫৪ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দুনিয়াটা প্রবাস, পরকালই আসল ঠিকানা (দরসে হাদীস)

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بمنكبي فقال كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل وكان ابن عمر يقول إذا أمسيت فلا تنتظر الصباح وإذا أصبحت فلا تنتظر المساء وخذ من صحتك لمرضك ومن حياتك لموتك

বাংলা: ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমার দু’ কাঁধ ধরে বললেনঃ তুমি দুনিয়াতে থাকো যেন তুমি একজন আগুন্তুক (অপরিচিত) অথবা পথচারী।



আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের আর অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার আর অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার সময় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য প্রস্ত্ততি লও। আর তোমার জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি লও।

Abdullah bin `Umar said, "Allah's Messenger (ﷺ) took hold of my shoulder and said, 'Be in this world as if you were a stranger or a traveler." The sub-narrator added: Ibn `Umar used to say, "If you survive till the evening, do not expect to be alive in the morning, and if you survive till the morning, do not expect to be alive in the evening, and take from your health for your sickness, and (take) from your life for your death."

(বুখারী: রিক্বাক অধ্যায়, হা:৬০৫৩)

এই হাদীসের অনুরূপ অপর বর্ণনার শেষে বলা হয়েছে- "তুমি নিজেকে কবরবাসীদের অন্তর্ভুক্ত মনে কর।"

দ্রষ্টব্য: মু'জামুস সাগীর লিত তাবরানী:৬১, মু'জামুল কাবীর:১৩৪৭০, সুনানে ইবনে মাজাহ:৪১১৪,তিরমিযী: ২৩৩৩, মুসনাদে আহমাদ:৪৯৮২, ৬১২১, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৪৯৮৭ )

পার্থিব জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

"পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলিকে ওর শোভা করেছি মানুষকে এই পরীক্ষা করবার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম।" (সূরা ১৮ কাহফ:৭)

"যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হল এবং জান্নাতে দাখিল করা হল, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হল, কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়"।- (সূরা ৩ আলে ‘ইমরান:১৮৫)

"

হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোনো প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছুতেই আল্লাহ সস্পর্কে তোমাদেরকে প্রবঞ্চিত না করে। (সূরা ৩৫ ফাতির:৫)



"তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার।" (সূরা ৬৪ তাগাবুন:১৫)



তিনি আরো বলেন-

"তোমরা জেনে রেখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্ব প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরা-টুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি (কাফিরদের জন্য) এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি (মুমিনদের জন্য), আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (সূরা ৫৭ হাদীদ:২০)



তিরমিযীতে এসেছে-

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একসময় খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তিনি ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে দাঁড়ালে দেখা গেল তার গায়ে মাদুরের দাগ পড়ে গেছে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমরা আপনার জন্য যদি একটি নরম বিছানার (তোষক) ব্যবস্থা করতাম। তিনি বললেনঃ দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক দুনিয়াতে আমি এমন একজন পথচারী মুসাফির ছাড়া তো আর কিছুই নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিল, তারপর তা ছেড়ে দিয়ে গন্তব্যের দিকে চলে গেল।(তিরিমযী, যুহদ অধ্যায়:২৩৭৭,মুসনাদে আহমাদ:৩৭০১, ইবনে মাজাহ:৪১০৯, আল মুসতাদরাক:৭৯২৯)

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: "আয় আল্লাহ্! আখিরাতের জীবনই সত্যিকারের জীবন।" (বুখারী:৬০৫১)



পৃথিবীতে বাস করতে হবে মুসাফির বা প্রবাসীর মতো, রাসূলের সুন্নাহর অনুসরণে জীবনকে পরিচালিত করা ও পার্থিব লালসা থেকে বিরত থাকাই হাদীসের মূল উপপাদ্য। পার্থিব ছলনা থেকে বেচে কিভাবে পরকালীন জীবনে লাভবান হতে পারি সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-

"নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার প্রভৃতি কমনীয় জিনিসকে মানুষের নিকট শোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।

বলো, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্রা সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।

যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।’

যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দানশীল এবং রাত্রির শেষাংশে ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা ৩ আলে ইমরান:১৪-১৭)



সংকলন ও সম্পাদনা: সামসুল আলম দোয়েল

বিষয়: বিবিধ

৬৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File