নিজ দেশে পরবাসী

লিখেছেন লিখেছেন জেরিন সরকার ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৫৮:৫৭ বিকাল

শিরোনাম দেখে হয়ত মনে হতে পারে এ আবার কেমন কথা! নিজ দেশে মানুষ পরবাসী হয় কিভাবে? এ কিভাবে সম্ভব? কিন্তু হ্যাঁ, এটাই বাস্তব, এটাই শুরু হয়েছে এবং বিস্তৃতভাবেই তা শুরু হতে যাচ্ছে সরকারী আয়োজনে। হয়ত পত্রিকা কিংবা টিভি সংবাদে জেনে থাকবেন যে, "মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে জনসাধারণকে টোল দিয়ে সড়ক ও মহাসড়কে চলতে হবে"। কত কি টোল দিতে হবে তা জানতে সংবাদপত্রের এই লিংকে গিয়ে দেখতে পারেন http://dailynayadiganta.com/details.php?nayadiganta=MjY1NDA%3D&s=MQ%3D%3D

আমার লেখার বিষয় টোলের পরিমান নিয়ে নয়, টোলের উদ্দেশ্য নিয়ে। এই টোল থেকে রেহাই দেওয়া হবেনা রিক্সা কিংবা সাইকেল চালকদের। একটু ভেবে দেখুন, মহাসড়কগুলো মূলত গ্রামগুলো উপর দিয়েই তৈরী হয়েছে। গ্রামের দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে মহাসড়কগুলো ব্যবহার করে, আর সেখানেই যদি সাইকেল বা ভ্যানের উপর টোল নেওয়া হয় তবে তাদের অবস্থা কি হবে? গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলোর সন্তানরা যখন সাইকেলে চড়ে মহাসড়কগুলো ব্যবহার করে গ্রাম থেকে শহরে আসে পড়াশুনার জন্য আর তাদের কাছ থেকে যদি টোল নেওয়া হয় তবে সেই শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর অবস্থা কি হবে?

শুধু তাই-ই নয়, এই টোল আদায়ের জন্য যখন ইজারা দেওয়া হবে বা টেন্ডার দেওয়া হবে তখন সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা সেই টেন্ডার জবরদখল করবে এবং ইচ্ছামতো টোল আদায় করবে। এ অবস্থায় সাধারণ দরিদ্র মানুষগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে?

তাহলে কেন এই ধরনের জনক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার? এর কারন, সরকারের তহবিলের সমস্ত টাকা-পয়সা ইতোমধ্যে সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে, এই লুটপাটের ফলে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারছেনা সরকার। ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে জর্জরিত হয়ে গেছে সরকার এবং ব্যাংকগুলো আর ঋণ দিচ্ছে না বা দিতে পারছেনা। তাই উপায় হিসেবে এখন সাধারণ মানুষের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। সেই সাথে দলীয় নেতা-কর্মীদের নতুন করে লুটপাটের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে সড়ক-মহসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

প্রতিটি মানুষের কাছথেকে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ট্যাক্স নিচ্ছে, চাকুরীজীবিদের কাছ থেকে তাদের বেতনের উপর কর নিচ্ছে বা রাজস্ব আদায় করছে, সরকারী চাকুরী না পেলেও চাকুরীতে আবেদনের জন্য ব্যাংকড্রাফট বাবদ টাকা নিচ্ছে, বিদ্যুতের মূল্য বারবার বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে টাকা নিয়ে নিচ্ছে, এসব তো করছে সরকার আইন প্রনয়ন করে। অপরদিকে সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজী করে সর্বসাধারণের উপর জুলুম করে চলেছে। তার মাঝে আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের চরম উর্দ্ধগতির মাধ্যমে মানুষের জীবনধারনের মান সর্বনিম্নপর্যায়ে নিয়ে গেছে সরকার। এর মাঝে আবার যদি রাস্তায় চলাচলের জন্য টোল নিতে শুরু করে তাহলে জীবনের মান কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকবে, ভেবে দেখেছেন?

নিজ দেশে বসবাস করব আর সরকার জনগনকে নাগরিক সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে পকেট কাটার ব্যবস্থা করে চলেছে প্রতিনিয়ত। দেশের জনগনের কাছথেকে রাস্তায় চলতে টোল নিতে সরকারের এত আগ্রহ অথচ বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতকে যে ট্রানজিট দেওয়া হচ্ছে তাতে টোল চাইতে সরকারের অসীম লজ্জা। দেশের মাটিতে রাস্তায় চলব অথচ দিতে হবে টাকা, আর ভারতের ট্রাক চলবে বাংলাদেশের বুক চিরে অথচ লাগবে না কোন টাকা! অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাতৃভূমিতে বাস করতে প্রতি পদে পদে সরকারকে টাকা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা দেশের জনগন নই আমরা পরবাসী।

যাইহোক, তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এই কারনে যে, জনগনকে করুনা করে এখনও রাস্তায় হাঁটার উপর টোল ধার্য্য করেনি। তবে শেখ হাসিনা যদি আরও এক মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহন করে, তবে হয়ত তার কল্যাণে(!) রাস্তায় হাঁটার উপরও টোল ধার্য্য হবে অদূর ভবিষ্যতে।

বিষয়: বিবিধ

১২০৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

197765
২৫ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৩
197824
২৫ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
নীল জোছনা লিখেছেন : বিএনপি জামাত শিবির সহিংসতার নামে দেশের সম্পদের বারোটা বাজিয়েছে তাই সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই এই টোল ব্যবস্থা।
198266
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File