অজানা রহস্য "এলিয়েন": ভিন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব কি আছে? ইসলাম কি বলে?

লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৮:২৮ দুপুর





খ্রীষ্টপূর্ব পাঁচ শতকে থেলাস সর্বপ্রথম ভিনগ্রহের প্রাণীর ধারনা পোষন করেন। তার ধারনা মতে “দৃশ্যমান গ্রহ ব্যবস্থা ছাড়াও অন্য কোন জীবন বহুল জগত রয়েছে”। পুটার্চ তার ধারণায় চাঁদে স্বর্গের অসুরদের আবাস ভূমিকে খুঁজে পেয়েছিলেন। অনুরূপভাবে মধ্যযুগের জ্যোতির্বিদগণও পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে জীবনের কল্পনাই় শুধু করতেন না, তারা কল্পিত জগতগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেরও নিরন্তর প্রয়াস ও ধ্যান ধারণার চিহ্ন রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। বিখ্যাত গণিতবিদ সি এফ গাউস সাইবেরীয় জঙ্গলের বৃক্ষরাজিতে একটি অতিকায় ত্রিকোণ তৈরীর প্রস্তাব করেছিলেন যা অন্যান্য গ্রহের অধিবাসিগণকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে। জে জে ভন লিট্রো সাহারা মরুভূমিতে জ্যামিতির পদ্ধতি অনুসারে সুবৃহৎ আকৃতির নালা তৈরী করে তাতে কেরোসিন ঢেলে রাতের বেলায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব রাখেন। সি গ্রস দিনের সূর্যালোকে অতিকায় আয়না স্থাপন করে আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে ভিন গ্রহের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ পর্যন্ত দান করেছিলেন।

এ তো গেল প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দার্শনিকদের প্রচেষ্টা। আর আধুনিক যুগে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান। পৃথিবীর অভিযানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেটি (SETI:Search for Extraterrestrial Intelligence), যা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেক। 'সেটি' বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান করে পৃথিবী থেকেই। বর্তমানে ১০টিরও বেশি দেশে 'SETI' কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে আংকিক কিংবা যৌক্তিক কিংবা বিশ্বাসগত এই বিপুল সমর্থনের কারণেই গবেষকরা খুঁজে চলেছেন প্রাণের অস্তিত্ব। এই সন্ধান-কার্যক্রমে গবেষকরা একদিকে অতীতের ঐতিহাসিক উৎসে খোঁজ করছেন ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আর বিজ্ঞানীরা খোঁজ করছেন পৃথিবীর বাইরের গ্রহ কিংবা উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব।

শুধু বিজ্ঞানিক ও দার্শনিক নয় গণমাধ্যমও রেখে যাচ্ছেন এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা- ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে বহু চটকদার এবং কখনও কখনও ভাবগম্ভির কাজও হয়েছে। যেমন লেখা হয়েছে বই, প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার প্রতিবেদন, তেমনি তৈরি হয়েছে গান, চলচ্চিত্র এবং এ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র। যা নতুন করে বলার কোন অবকাশ রাখেনা, কারণ এগুলো সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি।

তবে বাস্তবতা হল, পৃথিবী ব্যাতিত আর কোন গ্রহে এখন পর্যন্ত কোন প্রানের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়নি। প্রানের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ জুড়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সৌরজগতে অনেক গ্রহই আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেখানে সশরীরে মানুষ না পৌছা পর্যন্ত এসব গ্রহগুলোর বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন। আমাদের বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অতি শীঘ্রই হোক আর দুর ভবিষ্যতেই হোক মানুষ এসব জানতে পারবে এবং দেখতে পাবে এমনটা ভাবা অমুলক হবে না। বাস্তবিকই কোন একটা গ্রহে যদি প্রানের সন্ধান পাওয়া যায় তা কি খুব বিস্ময়কর হবে ?

এবার আসুন, দেখি আমরা আল কোরআন কি বলে-

''তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদিগের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।" (শুআরা: ২৪)

"তাঁর ইঙ্গিত সমুহের একটি - নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া জীব। তিনি যখন ইচ্ছা এদেরকে একত্র করতে সক্ষম।" (আস শুরাঃ২৯)

"তিনি আল্লাহ যিনি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং সমসংখ্যক (৭টি) জমীনও সৃষ্টি করেছেন।"(তালাক্বঃ ১২)

সুবহানআল্লাহ! এই আয়াতসমুহ থেকে কি বোঝা যায় ? পৃথিবীতে জীবন ধারনের জন্য যেমন পরিবেশ রয়েছে, এমন পরিবেশ বিশিষ্ট আরও অন্তত ৬ টি জমীন আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন। সে জমীন গুলো কোথায়? অনেকে ৭ টি জমীনের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন যে, পৃথিবীর জমীনের ৭ টি স্তর রয়েছে। কোরআনের ৭টি জমীন দ্বারা মুলতঃ এ ৭টি স্তরকেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাখ্যা যদি ঠিক না হয়ে থাকে তবে আরও ৬টি জমীনের অবস্থান কোথায়? আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহের বাইরে যদি সে জমীন গুলোর অবস্থান হয় তাহলেতো ধরে নেয়া যায় পৃথিবীর মত জমীন বা গ্রহ এই মহাকাশে আছে। যেখানে তিনি প্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি চাইলেই এদের সবাইকেই একত্র করতে সক্ষম। হয়ত এই গ্রহ গুলো আমরা এখনও আবিষ্কার করতে পারিনি, যেখানে প্রানের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞানের ধারণাকেই সঠিক বলে ধরে নিতে পারি। কারণ, উপরোক্ত আয়াতসমুহ় এই ধারণাকেই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করছে। অনেকে বলে থাকেন, কোরআনের সাথে বিজ্ঞানকে টানার কি প্রয়োজন? হ্যা, ঠিকই বলেন, প্রয়োজন নেই, তবে সমস্যাও নেই। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মত কোরআন বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় উড়ে যাবার মত নয়। পোপতান্ত্রিক বা যাজকতান্ত্রিক খ্রিষ্টধর্মও যেখানে বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাড়িয়েছিল, সেখানে ইসলাম সম্পুর্ন ব্যাতিক্রম। বিজ্ঞান কোন বিষয়ে চরম সত্যে পৌছালে সেটা বরং কোরআনের ভাষ্যকেই প্রমানিত করবে। 'এই কিতাবে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই'। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা'আলার বাণী এই গ্রন্থের প্রতিটি বর্ণ সত্য। এই কিতাব সবার জন্য একটি ওপেন চ্যালেঞ্জও বঠে। তবে বিজ্ঞান এই চ্যালেঞ্জে আসলে দোষ কোথায়? বিজ্ঞান সত্যে পৌছাতে পারলেতো কোরআনের সে সব বিষয়ই বাস্থব হয়ে সামনে আসবে যা আমরা না দেখেও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

একথা ঠিক যে, পরম সত্যে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক সব গবেষনাই অনুমান নির্ভর। যে কারনে আগে ইসলামের মহাশুন্য ও মহাজাগতিক অনেক সুত্রকে বিজ্ঞান অস্বীকার করলেও চুড়ান্ত গবেষনায় যখন মহাসত্য সামনে এসেছে তখন বিজ্ঞানের সব অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্ত ভুল প্রমানিত হয়েছে। যেমন রাসুল সঃ এর মেরাজের বাহন বোরাকের গতি নিয়ে বিজ্ঞানের প্রশ্ন ছিল, কিন্তু এখন বিজ্ঞানের ভাষ্য হল, গতির কোন সীমারেখা নেই। চন্দ্র সুর্য্য সহ গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদির গতি প্রকৃতি নিয়ে বিজ্ঞান সত্যের যত কাছে পৌছাচ্ছে কোরআনের বক্তব্যের সত্যতা ততই উদ্ভাসিত হচ্ছে এবং হবে।

এলিয়েন বা ভিন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব নিয়েও আমাদের বিতর্ক আছে, প্রশ্ন আছে। বিজ্ঞান এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করলেও এখনও যা বলছে সব অনুমানের উপর। এখনও কিছু আবিস্কার করতে পারেনি। কিন্তু এই অনুমানকে সত্যে প্রমানিত করতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভিন গ্রহে প্রানের খোজ পাওয়া যেতেই পারে, সেটা কোরআনের সাথে কখনই সাংঘর্ষিক হবে না।

(সংগৃহীত কিছু আর্টিকেল থেকে সংশোধিত সংযোজিত ও পরিমার্জিত।)

বিষয়: বিবিধ

৩২০৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

268910
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৭
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৬
212685
মুক্ত কন্ঠ লিখেছেন : ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ!
268914
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
এখনও সম্প্রসারনশিল মহাবিশ্বের লক্ষ ভাগের এক ভাগও মানুষের জ্ঞানের আওতায় আসেনি।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
212688
মুক্ত কন্ঠ লিখেছেন : আপনার সাথে ১শ ভাগ একমত।ধন্যবাদ!
269048
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৩৫
এলিট লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার বিষয়বস্তু নির্বাচন অসাধারন। আগেরবার লিখেছিলেন হুর, এবার এলিয়েন
আপনার লেখার অংশ বিশেষঃ
পৃথিবীর বাইরে অনেক গ্রহই আবিষ্কৃত হয়েছে।কিন্তু এদের সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না কারণ এদের অনেকেই তাদের নক্ষত্রের খুব কাছে অবস্থিত। যার কারনে এত দূর থেকে আলোর মাধ্যমে এদের বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন।

এখানে লক্ষনীয় হল-
১। সব গ্রহই পৃথিবীর বাইরে থাকে
২। সকল গ্রহই নক্ষেত্রের কাছে থাকে
৩। আলোর মাধ্যমে বৈশিষ্ট্য বোঝার কোন কায়দা নেই
বিজ্ঞান বিষয়ে কিংবা মহাকাশ বিষয়ে আপনার জ্ঞান, এই লেখাতে প্রকট ভাবে ফুটে উঠেছে। যাই হোক, বিজ্ঞানের কোন বিষয় ভুল ব্যাখ্যা দিলে আপনার কোন বিপদ নেই। কিন্তু কোরআনের ভুল ব্যাখ্যাতে অনেক বড়পাপে জড়ানোর পথ খুলে যায়। অনুরোধ করব - একটু সাবধানে, বুঝে শুনে কোরআনের ব্যখ্যা দিবেন।
০৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৪
215700
মুক্ত কন্ঠ লিখেছেন : ধন্যবাদ! তবে আমি কোরআনের কোন ব্যাখ্যা তো দেইনি। আয়াতের সহজ সরল অর্থে যা বুঝায় সেটাই আরোচনা করেছি। পপরামর্শের জন্য ধন্যবাদ!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File