আপন ভূমিতে পরবাসি...

লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:০১:৩৬ দুপুর

আপন ভূমিতে পরবাসি...

-সেলিম সামীর

কতো ব্যাথা বুকে চাপালে

তাকে বলি আমি ধৈর্য্য

নির্মমতা কতো দূর হলে

জাতি হবে নির্লজ্জ।

আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া,

করিতে পারিনি চিৎকার

বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে,

নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার...

দীর্ঘ দিন পর দেশজ পরিস্থিতি নিয়ে লিখতে বসেছি। না লিখার কারনটা যদিও চোঁখের পীড়া, তবে তার সাথে যুক্ত হয়েছে এক ধরনের হতাশা। কী হবে লিখে! বড় বড় বুদ্ধিজীবী লেখকদের শানিত ক্ষুরধার লেখনিও যখন ব্যার্থ সেখানে আমি নগন্য নিরীহ একজন মানুষ কষ্ট করে লিখে কিইবা হবে? এটা নিতান্তই পন্ডশ্রম নয় কি।

আজ আসলে বিশেষ কোন বিষয়ে লিখতে বসিনি। দেশের সামগ্রীক পরিস্থিতিতে লেখার জন্য হাজারো ইস্যু যখন মাথায় কিলবিল করে, তখন নির্দিষ্ট একটা বিষয় নিয়ে কি আর লেখা যায়? এখানে লিখে মনের নিদারুন যন্ত্রনা কষ্ট আর হতাশা কিছুটা লাগব হয় কিনা সেই আশায় মনের অগোছালো আর বিক্ষিপ্ত কিছু অভিব্যাক্তি প্রকাশের চেষ্টা করছি। আর তাই লেখার প্রথমেই হায়দার হোসাইন এর গানের কটি লাইন দিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলাম।

আমি সব সময় দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের মত করে যতটুকু পারি নির্ভিকভাবেই লিখার চেষ্টা করেছি। বরাবর আমার পরিবার বন্ধুমহল এবং শুভাকাঙ্খীরা এসব বিষয়ে লিখতে বারন করে এসেছেন। বন্ধুমহলের এমনও আছেন যারা আমার ফেসবুক আইডিতে যুক্ত হতেও ভয় পান। সেই নিকট অতীতের তুলনায় আজ আমার দেশের পরিস্থিতি আরও নাজুক এবং এমন এক ভীতিকর পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে, ইতিহাস সৃষ্টিকারী সব নির্ভিক কলম সৈনিকেরাও আজ চুপসে গেছেন। স্তব্ধ হয়ে গেছে তাদের কলমের গতি। আমিতো তাদের তুলনায় কিছুই নয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের নিদারুন স্বেচ্ছাচারীতা, জুলুম নির্যাতন, গুম খুন, দুর্নীতি আর লুটপাটের নজীরবিহিন কির্তিকলাপে আমার মত নিরীহ কিন্তু রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা সচেতন সাধারন মানুষ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন সরকার তাদের ক্ষমতার প্রথম টার্মের শুরু থেকে ২য় টার্মের এ পর্যন্ত বিরোধী দল দমনে যে বিভিষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা পুরোপুরি বিধ্বস্থ বিপর্যস্ত। সর্বোপরি ভিন্ন মত দমন এবং দলনে এ সরকার যেসব ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এবং করে চলেছে তা সমগ্র বিশ্বের সকল গনতান্ত্রিক দেশের ইতিহাসকে হার মানিয়েছে।

শুধুমাত্র এই একটি কারনে অকল্পনীয় এবং গনবিরোধী যেসব নতুন নতুন আইন ক্রমে ক্রমে প্রনীত হয়েছে এবং জুডিশিয়াল প্রহশন একের পর এক দৃশ্যায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে করে সাধারন মানুষ চরম নির্বাক হয়ে সেগুলো দেখে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। তার চেয়েও সাংঘাতিক ব্যাপার হলো, মারাত্বক স্বার্থদুষ্ট এবং উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত এসব আইনের সুযোগে 'ল' এনফোর্সমেন্ট সংস্থাগুলোর সীমাহীন স্বেচ্ছাচারীতা আর আইনের অপব্যবহার সাধারন মানুষকে চরম অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। আজ মানুষ নিরাপত্তার ব্যাপারে এতটাই শংকিত যে হাট বাজারের চায়ের টেবিল তো দুরের কথা নিজের ড্রয়িং রুমের আলোচনায়ও রাজনৈতিক ভিন্ন মত প্রকাশের সাহস দেখাতে ভীত। ভিন্ন মত দলনের মাত্রা কোন পর্যায়ে গেলে একটি দেশের প্রধান বিচারপতি ভিন্ন মত প্রকাশের কারনে দেশ ত্যাগে বাধ্য হতে হয়! বিদেশে বসে পদত্যাগ করতে হয়। এই বিচারপতিকে কিন্তু ক্ষমতাসীনরাই আসীন করেছিলেন নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। তিনি অক্ষরে অক্ষরে তা-ই পালন করে গেছেন। কিন্তু অজানা কারনে তিনি সরকার বিরোধী একটি মন্তব্য করে ফেলায় সেটাই তার জন্য কাল হয়েছে। তাকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেয়নি ক্ষমতাসীনরা।

সরকারের প্রশাষনিক কাঠামোর প্রতিটি স্তরে স্তরে দলীয়করনের যে ইনকিলাব বয়ে গেছে এই কটি বছরে, তাতে প্রশাষনের স্বাভাবিক চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। বিশেষ করে জননিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মাঝে ইতিহাসের নজীরবিহিন দলীয়করনের কারনে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে দল এবং সরকার পুরোপুরিভাবে গুলিয়ে গেছে। দল যা করছে নিরাপত্তা বাহিনীও তাই করছে। নিরাপত্তা বাহিনী বরং দলের কর্মসুচি বাস্থবায়নে দলের চেয়েও এগিয়ে।

তাইতো আমরা দেখছি, সরকারী দল রাজপথের কোন কর্মসুচি দিলে নিরাপত্তা বাহিনী সেই কর্মসুচি বাস্থবায়নে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদান করছে। আর সরকার বিরোধী কোন দল শান্তিপুর্ন কোন কর্মসুচি দিলেও সরকার দল নাশকতা প্রতিরোধের নামে পাল্টা কর্মসুচি দিয়ে বসছে। সেখানে বিরোধী দলের কর্মসুচি ভন্ডুল করে দিতে সরকার দল যা করছে নিরাপত্তা বাহিনীও তাই করছে। সেখানে দল এবং সরকার উভয়ে মিলেমিশে একাকার।

নজিরবিহীন এই দলীকরনের ফলে দুঃশাষনের এমন এক বিভৎস রুপ আমাদের সামনে চিত্রিত হয়েছে যা দেশের আইন শৃঙ্খলা আর নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অন্ধকারের অতলান্তে নিয়ে গেছে। তাইতো আমরা দেখি, ইংল্যান্ডের একজন যুবরাজকে রং পার্কিংয়ের কারনে পুলিশ জরিমানা করে, সেখানে যুবরাজ বলে, "থ্যাক ইউ ভেরি মাচ!, ইউ ডিড দ্যা রাইট জব।" পক্ষান্তরে আমার দেশের ওয়ার্ড পর্যায়ের সরকার দলীয় নেতা রাস্থার উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে দেয়, সেখানে পুলিশ যদি বাধা দেয় তবে পুলিশকে থাপ্পড় মারতেও কুন্ঠাবোধ করে না।

সেদিন আমার এক ভাগ্নে সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের কোন এক খেয়া পার হতে নৌকায় উঠেছিলো, সেখানে কিছু ছেলেপিলে খেয়ার ভাড়া দেয়নি তারা আ.লীগের লোক তাই। ওখানে এরকম নাকি প্রতিনিয়তই হয়। অবাক হবার কিছু নেই। সুনামগঞ্জের সুদুর হাওড় বাওড় এলাকা হলে কি হবে সরকার দলের লোক বলে কথা!

দলীয়করন যখন দেশের প্রশাষনের রন্দ্রে রন্দ্রে ব্যাপৃত, তখন দলবাজির এমন বাস্তব চিত্র প্রতিনিয়তই চোখে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। স্কুল কলেজ ভার্সিটির প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে নজির এ সরকারের আমলে সৃষ্টি হয়েছে তা পৃথিবীর কোথাও নেই। প্রশ্ন ফাঁসকারীদের এই অপ্রতিরোধ্য গতি সরকারের চরম দলবাজী, দলীয়করন আর আইনের দুঃশাষনেরই অনিবার্য পরিণতি।

সরকার প্রধান দেশ কিংবা বিদেশ সবখানে হরদম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বুলি আওড়ে গেলেও কার্যত গণতন্ত্র ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বহুদলীয় গণতন্ত্রের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আজ শুধু সরকারের মুখেই আছে। বাস্তবে সেই ফিল্ডকে ছিন্নভিন্ন, তছনছ করে দেয়া হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ যে আজ সুদুর পরাহত সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে আদালতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা প্রদান এবং জেলে প্রেরনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক সংগঠনের চেয়ারপারসন এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রিকে জেনারেল মঈনের সামরিক সরকারের আমলে করা একটি প্রশ্নবিদ্ধ মামলায় সাজা প্রদানের মাধ্যমে যে জুডিশিয়াল ড্রামা জাতির সামনে উপস্থাপিত হলো, তাতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষীণ আশাকেও পদদলিত করা হয়েছে। হাজারো প্রশ্নে জর্জরিত এই রায়ের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার এমন এক নগ্ন রুপ বিশ্ব দরবারে উন্মুক্ত হলো, যা গোটা জাতির জন্য বড়ই বেদনাদায়ক ও অপমানজনক। এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের গোঠা বিচার ব্যবস্থার ললাটে বিচারহীনতার কলংক লেপিত হলো। যে দেশের বিচার বিভাগের এমন ভঙ্গুর অবস্থা, সে দেশের সামগ্রিক সরকার ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই ভঙ্গুর এবং জনগ্রাসী হয়ে যেতে বাধ্য।

খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের পর জেলকোড অনুযায়ী তার ডিভিশন নিয়েও যে টালবাহানা আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা সত্যিই বেদনাদায়ক। জেলকোড অনুযায়ী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য ডিভিশন দিতে হলে যে আলাদা করে কোন অর্ডারের প্রয়োজন হয় না এটা পাগল ছাড়া যে কেউই বুঝে, কিন্তু বোঝেননি নাজিম উদ্দিন রোডের পুরান জেলের জেলার সাহেব। বুঝেননি আমাদের করিৎকর্মা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিষয়টি বিশ্ব বিবেবকে হতবাক করে দিয়েছে।

আমরা আইন আদালতের প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু সেই শ্রদ্ধা উবে যেতে চায় যখন আমরা দেখি এ দেশে বিরোধী নেত্রির ২ কোটি টাকার মামলার দ্রুত নিস্পত্তি ও সাজা হয় অথচ সরকার দলীয় নেত্রির হাজার হাজার কোটি টাকার মামলাগুলো কোন এক যাদুর কাঠির ছোয়ায় হাওয়া হয়ে যায়।

আমরা জানি মঈন উদ্দিন সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনেক মামলার জট লেগেছিল।

ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা পদাধিকার বলে (!) তার বিরুদ্ধে যে সব দূর্নীতি মামলা প্রত্যাহার করেছেন তার কয়েকটি হচ্ছে-

১.নাইকো দুর্নীতি ১৩,৬৩০ কোটি টাকা।

২. মিগ ২৯ বিমান ক্রয় দুর্নীতি ৭০০ কোটি টাকা।

৩. কোরিয়ান ফ্রিগেট ক্রয় দুর্নীতি ৪৪৭ কোটি টাকা।

৪. মেঘনা ঘাঁট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি ১৮ কোটি টাকা।

৫. খুলনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুষ দুর্নীতি ৩ কোটি টাকা।

৬. ব্যাবসায়ী আজম জে চৌধুরীর কাছে ঘুষ গ্রহন ৩ কোটি টাকা।

৭. কাজী তাজুল ইসলামের কাছে ঘুষ গ্রহন দুর্নীতি ৩ কোটি টাকা। (উল্লেখ্য এই ব্যবসায়ীকে ষড়যন্ত্রমূলক ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।)

৮. ব্যাবসায়ী নুর আলীর কাছে ঘুষ গ্রহন ৫ কোটি টাকা।

৯.নভো থিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতি ৫২ কোটি টাকা।

১০. বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ।

১১.বেপজা পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির মামলা।

এসব মামলা যেমনি হাওয়া হয়ে গেছে, তেমনি আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধটাও হাওয়া হয়ে যেতে চায়, যখন দেখি সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংক সহ সকল সরকারী ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের কোন বিচার হয় না, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড হারিয়ে যায়, শেয়ার বাজারের ২০ লাখ মানুষের পুজি লুট করে নিঃস্ব করে দিলেও জড়িতদের বিচার হয় না।

উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। সেই উন্নয়নের পথে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে হাজার কোটি টাকা দুর্নিতি হয়, পদ্মা সেতু দুর্নিতি শুরু হয় সেই পরামর্শক নিয়োগ থেকেই। এক ঢাকা সিটির ভেতর অসংখ্য ফ্লাইওভার বা উড়াল সেতুর প্রজেক্ট করে বারে বারে নির্মান ব্যায় বর্ধিত করে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নিতি হয়। সেসবের কোন বিচার হয়না। উল্টো তেল গ্যাস বিদুৎ এর দাম ধাপে ধাপে বাড়িয়ে, বিভিন্ন ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স আর সার্ভিস চার্জের নামে জনগনের উপর বিশাল অংকের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়।

আমরা আরও দেখি বিরোধী দলগুলোর জনপ্রিয় এবং বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিগন একে একে গুম হয়ে যায় তাদের কোন হদিস নিরাপত্তা বাহিনী বের করতে পারে না। অথচ, দেশের কোন এক প্রান্ত থেকে বঙ্গবন্ধু কিংবা তার কন্যার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে ধরে ফেলতে পারে আমাদের ট্যালেন্টেড নিরাপত্তা বাহিনী। শত শত পুলিশ ও মিডিয়া কর্মিদের সামনে নির্মম নিষ্টুরভাবে বিশ্বজিতদের হত্যা করা হয়, নিজের ঘরের বেডরুমে সাগর-রুনীরা নির্মম ভাবে নিহত হয়, খোদ নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক 'সেভেন মার্ডার' হয় কিন্তু বছরের পর বছর গেলেও তাদের হত্যাকারীদের সন্ধান পায় না এ সরকার। অথচ আমরা দেখেছি ৩৫ বছর আগের বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়। ৪২ বছর আগের যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের খুজে খুজে বের করে বিচার হয়। সে সব বিচারকে যৌক্তিক করতে গিয়ে নতুন নতুন আইনও হয়। শুধু আইন হয় না শেয়ার বাজার লুন্টনকারীদের বিচারে, আইন হয় না ব্যাংক লোপাটকারীদের বিচারে, আইন হয় না উন্নয়নমুলক প্রজেক্ট গুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিকারীদের বিচারে। আইন হয় না ইলিয়াস গুম, সাগর-রুনী হত্যা, তনু হত্যাসহ অসংখ্য অগনিত রহস্যজনক গুম-হত্যাকান্ডের বিচারে।

আজ বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে না, বরং বিচারের বানী সদম্ভে হাটে, আর মানবতা নিভৃতে কাঁদে।

যখন দেশে দুঃশাষনের জয়জয়কার, দেশের বিচার ব্যবস্থার এহেন করুণ অবস্থা, যখন হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির ভিড়ে মাত্র দুই কোটি টাকার মামলায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সাজা দেয়া হয়, তখন আর সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না যে, একদলীয় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে দির্ঘায়িত করার নীল নকশা বাস্থবায়নে এগিয়ে চলেছে এই সরকার।

আর এই নীল নকশা বাস্থবায়নে সরকার একা নয়। তাদের সাথে রয়েছে তাদের সব সময়ের বন্ধু ভারতমাতা সহ আন্তর্জাতিক মহল। আন্তর্জাতিক মহল প্রকাশ্যে সরকারের কার্যকলাপের নিন্দা করলেও পরোক্ষভাবে সবাই এক সুতোয় গাথা। ইউরোপ আমেরিকা যাতে কার্যকর কোন ভূমিকা না নেয় সে জন্য তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষবাদ আর ইসলামকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে এই মেরুকরন। আর ইসলাম প্রশ্নে পৃথিবীর তাবৎ শক্তি এক ও অভিন্ন। কারণ 'ইসলাম' ও ইসলামের মনস্তাত্ত্বিক 'জাগরন' সবারই কমন এনিমি। সর্বোপরি সামগ্রিকভাবে এসব নীল নকশার পেছনে রয়েছে এই দেশ ও জাতির চিরশত্রু বন্ধুরুপি দেশ ভারত। একাত্তরে পাকিস্তানের দুঃশাষন থেকে মুক্তি পেতে আমরা যতটা না যুদ্ধ করেছিলাম স্বাধিনতার রক্তলাল সুর্যটাকে ছিনিয়ে আনতে, ভারত আমাদের পাশে থেকে ততটা যুদ্ধ করেছে তাদের ভূরাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থে। এবং তারা তাদের লক্ষ্যে শতভাগ সফল। স্বাধিনতা অর্জন করে আজোবধি আমরা যতটা না উপকৃত হয়েছি তার চেয়ে হাজারগুন বেশি উপকৃত হয়েছে যুদ্ধ সংগী এই দেশ ভারত। ভূরাজনৈতিকভাবে যেমন তার ক্ষমতার বলয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি তার অর্থনীতির জন্য সৃষ্টি হয়েছে শুল্কমুক্ত একটি উর্বর খোলা বাজার। বাংলাদেশি জাতিসত্তা স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে মাথা উচু করে দাড়াতে পারলে এটা হবে ভারত মাতার অর্থনীতির জন্য বিরাট এক হুমকি। সুতরাং এটা তারা কখনো হতে দেবে না। স্বাধিনতা অর্জন করা যত সহজ, স্বাধিনতা রক্ষা করা তত কঠিন। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধিনতা অর্জন করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু স্বাধিনতা রক্ষা করতে গিয়ে আমরা বরাবর হিমশিম খাচ্ছি। স্বাধিনতার পর থেকেই সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা আমার মাতৃভূমিকে খুবলে খুবলে খেয়ে যাচ্ছে এই শকুনীর দল, খেতে চাইবে চিরকাল।

সে জন্যই আমার জন্মভূমি বার বার ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে চরম দুঃশাষন আর সর্বগ্রাসী সৈরাচারের আগ্রাসী ছোবলে। বার বার ভেঙ্গে পড়ছে অর্থনীতির মেরুদন্ড, বাধাগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা। বিভক্ত হচ্ছে জাতির ঐক্য আর সম্প্রীতি! স্বাধিনতার ৪২ বছর পরও আজোবধি আমরা আপন ভূমিতে পরাধিন। দেশ পরিচারনা করি আমরা, কিন্তু আমাদেরকে পরোক্ষভাবে শাষন করে বিদেশি অপশক্তি। আইন প্রনয়ন করি আমরা, কিন্তু মন্ত্রনা দেয় বহিঃশক্তি।

তাই আমার দেশের আপামর জনতাকে এটা ভাল করেই বুঝতে হবে, শ্বাসরুদ্ধকর এই দুঃশাষনের কবল থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতে কোন বিদেশি বন্ধু এগিয়ে আসবে না। আমাদের নিজেদেরকেই জাগতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ভয় আর আতংকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় এই অসহায় জাতিকে জাগাবে কে? মুষড়ে পড়া এ জাতির মধ্যে জাগরনের স্পৃহা সৃষ্টি করবে কে? যারা জাগাবে জাতির বিবেক বলে কথিত সে সাংবাদিক সমাজ আজ অন্ধ মুক ও বধির হয়ে আছেন। নির্ভিক কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমান দীর্ঘ বন্দি জীবনের পর মুক্ত হয়ে একরকম নিরবই রয়েছেন। তার এই নিরবতার পেছনে যৌক্তিক অনেক কারণও রয়েছে। কলমযুদ্ধের ময়দানের একক এই লড়াকু হয়ত জাতির এই অসহায় অবস্থাদৃষ্টে হতাশ। হয়তবা কোন অভিমান তাকে নিরব করে রেখেছে। হয়তবা তার কর্মক্ষেত্র 'আমার দেশ' এর কার্যক্রম সরকার অবৈধভাবে বন্ধ করে রাখায় তিনি তার কলমের শানিত ঝলকানি দেখাতে পারছেন না। তবে যেভাবেই হোক আতংকগ্রস্ত এ জাতির মধ্যে মুক্তির জাগরণ ফিরিয়ে আনতে মাহমুদুর রহমানের কলমের শানিত ঝলকানির খুবই প্রয়োজন। শুধু এক মাহমুদুর রহমান নয়, প্রয়োজন আরও অনেক মাহমুদুর রহমানের। এ জাতির রক্তে মুক্তির স্পন্দন তুলতে হলে আগে জাগতে হবে জাতির বিবেকগনকে। একাত্তরে জাতির বিবেকগন সজাগ ছিলেন বলেই বাংলার দামাল সন্তানদের রক্তে আগুন জ্বলেছিলো। নব্বইয়ে জাতির বিবেকগন জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ ছিলেন বলেই সৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছিলো। আজো তোমাদের জাগতে হবে হে জাতির বিবেক! নয়ত এ জাতির দুঃস্বপ্নের রাত পোহাবে না। আলো ফুটবে না সুবহে সাদিকের।

সেলিম সামীর

২৭/০২/২০১৮

বিষয়: বিবিধ

৮৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File