ঈসা আঃ এর অবতরণ, ইমাম মাহাদী ও কাদিয়ানির 'ভ্রান্ত মতবাদ' পর্ব-৭

লিখেছেন লিখেছেন সত্য প্রিয় বাঙালী ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৫:০৯ সকাল

ঈসা আঃ এর নাম............

ঈসা আঃ কে কোরআনে মোট চারটি নামে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে ঈসা নামটি কোরআনে এসেছে ২৫ বার এবং ‘মসীহ’ নামটি এসেছে ১১ বার। আর ঈসা আঃ এর নাম ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ এটা আল্লাহই রেখেছেন, আর মরিয়ম আঃ এর নামও আল্লাহই রেখেছেন, এগুলো মানুষের রাখা নাম নয়।

“যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে নিজের পক্ষে থেকে কালেমার সুখবর দিচ্ছেন, যার নাম ‘মাসীহ ঈসা ইবনে মরিয়ম’ সে সম্মানিত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্যতম” (সূরা আলে ইমরান-৪৫)

মির্জা দাবি করেছে, ঈসা আঃ মদ খেতেন (মির্জা গোলাম রচিত ‘কিশতিয়ে নূহ’ ৮৭ পৃষ্টা, এই বইটি আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইটে পাওয়া যাবে)।

চিন্তা করুন! যে রাসূলের জন্মের সুসংবাদ দিছেন আল্লাহ নিজেই এবং তিনি নিজেই তাঁর নাম রেখেছেন এবং বলছেন তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্যতম,আর ভন্ড মির্জা তাঁকে অপমান করছে!! আর মির্জা নিজেই ছিল ‘আফিম-খোর’ তাই তার পক্ষে এসব ধারণা করা খুবই সহজ।

কোরআন এবং হাদীসে প্রায় বেশীরভাগই ঈসা আঃ কে ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ নামেই ডাকা হয়েছে। এর কারন এটা আল্লাহর দেয়া নাম আর ঈসা আ; যে ‘কুমারী মাতা’ মরিয়ম আঃ থেকে জন্ম নিয়েছেন এর ওপর জোর দেয়ার জন্য। মরিয়ম নামটিও আল্লাহর দেয়া, “অতঃপর যখন তাকে প্রস্রব করল, তখন বলল, হে আমার রব! আমি এক কন্যা প্রসব করেছি! তাঁর প্রসব সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন, ‘ছেলে তো কন্যার মত নয়’ আর আমি তাঁর নাম মারইয়াম রাখলাম” (সূরা আলে ইমরান-৩৬)

ভন্ড কাদিয়ানি এইসব সত্যকে পাশ কাটানোর জন্য একটা গল্প সাজিয়েছে.........

“তিনি (আল্লাহ) বারহীনে আহমদিয়ার তৃতীয় অংশে আমার নাম রেখেছেন মারইয়াম। অতঃপর যেমন বারহীনে আহমদীয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, দু’বছর পর্যন্ত আমি মারইয়ামের গুণাবলী সহকারে লালিত হই...অতঃপর মারইয়ামের ন্যায় ঈসার রুহ আমার মধ্যে ফুঁৎকারে প্রবেশ করানো এবং রুপক অর্থে আমাকে গর্ভবতী করা হয়। অবশেষে কয়েকমাস পরে যা দশ মাসের চাইতে বেশী হবেনা। সেই এলহামের মাধ্যমে যা বারহীনে আহমদিয়ার চতুর্থ অংশে উল্লেখিত হয়েছে। আমাকে মারইয়াম থেকে ঈসায় পরিণত করা হয়। এই ভাবেই আমি হলাম ঈসা ইবনে মারিয়াম” (মির্জা গোলাম কাদিয়ানি)

এই হলো তার ব্যাখ্যা! কী আর বলব!! শুধু এইটুকুই বলি, কাদিয়ানি ছিল ব্রিটিশদের দালাল এবং এক বড্ড পাগল!

ঈসা আঃ কে আকাশে উঠে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত কোরআনে আয়াত.........

“আমরা আল্লাহর রাসূল ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি; অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শূলে চড়িয়েছে বরং তাদের কাছে এরুপই মনে হয়েছিল; আর যারা তাঁকে নিয়ে মতভেদ করেছিল তারা, এ ব্যাপারে সন্দেহে ছিল; অনুমান ব্যতীত কোন সঠিক জ্ঞানই তাদের ছিল না; তবে নিশ্চিত যে তাঁকে হত্যা করেনি” (সূরা নিসা-১৫৭)

“বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে (রাফা’হ) নিয়েছেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সূরা নিসা-১৫৮)

কাদিয়ানিরা এখানে বলে, রাফা মানে তুলে নেয়া নয়, মানে তাঁকে সম্মানে বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ এটা সম্পূর্ন ভূল অনুবাদ। আগেই বলেছি, কাদিয়ানিরা কোরয়ানকে রুপক বই বানিয়ে নিয়েছে। তাই তারা সব কিছুরই নিজস্ব অর্থ দাঁড় করিয়েছে।

প্রথমতঃ প্রথমতঃ রাফা অর্থ (কাউকে ওপরে উঠানো) ইংরেজীতে, (he was raised)

দ্বিতীয়তঃ ১৫৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছিল কাফিররা তাঁকে হত্যা করতে এসেছিল। ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীরে লিখেছেন যে ইহুদীরা তাঁকে হত্যার জন্য যখন তাঁর বাড়ী ঘিরে রেখেছিল, তখন তিনি তাঁর একজন হাওয়ারী (সাহাবী) কে বললেন, কে আছ যাকে আমার চেহারার মতো করে দেয়া হবে......। অতঃপর আল্লাহ তখন তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আকাশে আর কাফিররা তাঁর সেই সাহাবী যাকে তাঁর মতো করে দেয়া হয়েছিল তাঁকে হত্যা করে আনন্দ করছিল। (দ্রষ্টব্যঃ আলে ইমরান-৫২ এবং ৫৩)

এখানে ১৫৮ নং আয়াতে সমাধান দেয়া হচ্ছে, যেহেতু ১৫৭ আয়াতে বলা হচ্ছে তাঁকে হত্যা করা হয়নি, শূলেও চড়ানো হয়নি, তাহলে তাঁকে কি করা হয়েছিল কিংবা তিনি সেখানে থেকে কীভাবে রক্ষা পেয়েছেন। সম্মানের দিক থেকে উন্নীত করানো বুঝালে তাঁকে আল্লাহ কীভাবে রক্ষা করেছিল তা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া ১৫৮ নং আয়াতে ‘সম্মানের দিক থেকে উন্নীত (রাফা)’ বুঝানোর দরকার টাই কি যেখানে তিনি কীভাবে বেঁচেছিলেন তাঁর সমাধান দেয়া হচ্ছে।

ব্যাপারটা এই রকম, কারো বাসায় আগুন লেগেছে এবং সেখানে একজন মানুষ আটকা পড়েছে আর আপনি তার উদ্ধারের ব্যবস্থা না করে তাঁকে মোবাইল করে বললেন, তোমার মান সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে, তোমার নামে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে দেয়া হবে!! আল্লাহ এখানে সমাধান দিচ্ছেন আসলে আল্লাহ কীভাবে তাঁকে রক্ষা করেছেন, “বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে (রাফা’হ) নিয়েছেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী” (সূরা নিসা-১৫৮) , এবং বলা হয়েছে, আল্লাহ পরাক্রমশালী, আল্লাহর কাছে আকাশে তুলে নেয়া কোন ব্যাপারই না।

তৃতীয়তঃ রাফা অর্থ শারীরিক তোলা নয় আধ্যাত্মিক ভাবে মর্যাদা উন্নীত করা-এই থিউরী ১৯০০ সালে মির্জার থিউরী। কিন্তু দূর্ভাগ্য কোরানের ব্যাখার দায়িত্ব মির্জার নয় কিংবা ১৯০০ সালে এসে কোরানের নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর কোন সুযোগ নাই। (সূরা মায়িদা-৩ ‘ইসলাম পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে’ সেই সপ্তম শতাব্দীতে যেই দিন এই আয়াত নাযিল হয়, আর কোরআন ব্যাখ্যার দায়িত্ব মোহাম্মদ সাঃ এর আন নাহল-৪৪)

চতুর্থতঃ কাফেররা যেখানে বাইরে অপেক্ষা করছিল ঈসা আঃ কে মারার জন্য, সেখানে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে তাদের সামনে দিয়ে কাশ্মির চলে যাবেন, আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা অবিশ্বাস্য। আর তাহলে কোরআনে ১৫৮ নং আয়াতে বলা থাকতো ঈসা আ; কে কাফিরদের থেকে রক্ষা করে কাশ্মির পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘ বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন, বলার কোন মানেই হয়না। এখানে ১৫৮ আয়াতের শুরুতে উল্লেখিত 'বাল' হচ্ছে 'retraction particle' যা পূর্ববর্তী কথা 'নাকচ' করে দেয়। এখানে ১৫৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছিল, তারা তাঁকে 'শুলে' ছড়ায়নি, তিনি 'মারাও যাননি', (বাল) বরং তাঁকে আল্লাহ তার কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। এখানে 'রাফাহ' মানে 'মর্যাদায়' উন্নীত বুঝালে পূর্বের আয়াতের অর্থ 'নাকচ' করেনা, কারন 'মর্যাদায়' উন্নীত হলে এখানে 'বাল' শব্দটি কখনোই ব্যবহৃত হতোনা।

পঞ্চমতঃ রাসূল সাঃ ঈসা আঃ এর আগমণ সংক্রান্ত কয়েক হাজার সহীহ হাদীস হাদীস-গ্রন্থগুলোতে আছে, এখানে শুধু একটা উল্লেখ করি। পোস্টের পরের অংশে আর কিছু হাদীস বলব এই সংক্রান্ত।

আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন, নবী সা; বলেছেন, “কতইনা আনন্দের কথা! যখন ঈসা ইবনু মারইয়াম আকাশ থেকে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন, আর ইমাম হবেন তোমাদের থেকে” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, ইবনু মানদাহ, বায়হাকী)

এখানে বলাই আছে, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’-যেই নামটি আল্লাহর দেয়া এবং ‘মরিয়ম’ নামটিও আল্লাহর দেয়া। আর হাদীসে ‘আকাশ’ বা আরবীতে ‘শামা’ শব্দটি উল্লেখিত আছে। আর ‘নুযুল’ শব্দটি –অর্থ ‘অবতরণ’। অবতরন করা হয় ঊপর থেকে, কিন্তু মির্জা গোলাম কখনো অবতরণ করেনি, সে পাঞ্জাবে জন্মে নিয়েছিল এবং ছোট থেকে বড় হয়েছিল। আবার বলি, শব্দটি ‘নুযুল’ মানে ‘অবতরণ’।

৬ষ্টতঃ কোরানের সূরা নিসার পরের আয়াতটি মানে ১৫৯ নং আয়াত—

“প্রত্যেক কিতাবী ঈসার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন”।

বরং ঈসা আঃ এর ওপর ইহুদীরা এখনো ঈমান আনে নি, আর খ্রিস্টানরা তাঁকে ঈশ্বর বানিয়ে নিয়েছে।

আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, “ঈসা আঃ অবতরণ করবেন। তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রুশ বিলুপ্ত করবেন, তাঁর জন্য সালাত একত্র করা হবে, তিনি ধন সম্পদ দান করবেন, এমনকি তা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যাবেনা। তিনি খারাজ তুলে দিবেন। তিনি রাওহাতে অবতরণ করবেন এবং সেখান থেকে হাজ্জ বা ‘উমরাহ করবেন অথবা দুটোই একত্রে করবেন। এরপর আবু হুরায়রা তিলওয়াত করলেন, ‘প্রত্যেক কিতাবী ঈসার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন’ (সুরা নিসা-১৫৯)” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আহমাদ)

আর ওপরে উল্লেখিত ঈসা আঃ সম্পর্কিত একটি কথাও মসীহ দাবীকৃত মির্জা কাদিয়ানির জন্য সত্য হয়নি। এই নিয়ে পরবর্তী পোস্টে লিখেছি।

সূরা নিসার ১৫৯ অনুযায়ী ইহুদী খ্রিস্টান সহ কিতাবিদের সবাই ঈসা আঃ এর ওপর তাঁর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে। কিন্তু তাঁকে আল্লাহ আকাশে তোলার পূর্বেতো দূরে থাক, আজ পর্যন্তও ইহুদীরা ঈসা আ; কে নবী বলে বিশ্বাস করেনা। তাই তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন, কোরানের এই আয়াত মিথ্যা হয়ে যাবে। তাই কাদিয়ানিদের নিম্নের আয়াতের ব্যখ্যা শুদ্ধ নয়, তারা বলে, “আল্লাহ বলেছেন ঈসা আ; কে মৃত্যু দেবেন। আর আরবীতে ‘মুতাওয়াফফিকা’ অর্থ মৃত্যু, আল্লাহ বলেছেন ঈসা আঃ কে মৃত্যু দিবেন। আর কোরআনে সব জায়গায়ই ‘মুতাওয়াফফিকা অর্থ মৃত্যু করা হয়েছে” (কাদিয়ানিদের ‘ওফাতে ঈসা ও মসীলে ঈসা’ ৭ পৃষ্টা)

এই ব্যাখ্যা ভূল। কারন—

প্রথমতঃ মুতাওয়াফফিকা শব্দটি এসেছে ‘তাওয়াফফা’ থেকে যার অর্থ ‘নেয়া এবং আদায় করা’। আর আর কোরআনে এই আয়াতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, "নিয়ে নিব' অর্থে 'মৃত্যু' অর্থে নয়। কাদিয়ানিরা বলার চেষ্টা করে কোরআনে সব স্থানেই তাওয়াফিফা অর্থ মৃত্যু এসেছে। কিন্তু, এই কথাটিও ভূল, কারন কোরআনে সূরা যুমারের ৪২ নং আয়াতেও ‘তাওয়াফফিকা’ শব্দটি ‘ঘুম’ অর্থেও এসেছে, “আল্লাহ মানুষের প্রাণ নিয়ে নেন, মৃতুকালে আর যে মরেনা তাঁর নিদ্রাকালে”

অন্যসব জায়গায় এই অর্থ মৃত্যু হলেই যে ঈসা আঃ এর ব্যাপারেও এর অর্থ মৃত্যু হবে এমনটা নয়, আমাদের দেখতে হবে মোহাম্মদ সাঃ এর অর্থ কী বলেছেন, তিনি কি ঈসা আ; এর অবতরণ সংক্রান্ত কোন হাদীস বলেছেন?? হ্যাঁ বলেছেন। তাহলে এর অর্থ মৃত্যু নয়। কারণ কোরআন আমরা মোহাম্মদ সা; থেকে বেশী বুঝিনা।

এখানে খ্রিস্টানদের আকীদা যে ঈসা আঃ ঈশ্বর। যদি ঈসা আঃ আসলেই মারা যেত, তাহলে এই আয়াতে আল্লাহ বলতেন, যাও ঈসার কবর দেখে আসো, যে কবরে মিশে গেছে সে কীভাবে ঈশ্বর হতে পারে?? উল্টো তা না বলে কোরানে ঈসা আঃ এর পরবর্তী আগমন সম্পর্কে বলা আছে এবং হাদীসে আছে সকল আহলে কিতাব ঈসা আঃ এর মৃত্যুর পূর্বে ঈমান আনবে।

এরপরো যদি বলা হয় না ঈসা আঃ এর মৃত্যু অর্থেও এই শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তবে তাদের বলব, ঈসা আঃ যে মারা যাবেন তা কি কেউ অস্বীকার করে?? কারন “প্রত্যেক প্রাণিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”। ঈসা আঃ ও মারা যাবেন তবে পৃথিবীতে ২য় আগমণের পর। আর এখানে শুধু বর্ণনাতে ঘটনার আগ-পিছ হয়েছে। কোরআনে অনেক জায়গাতেই এটা হয়েছে।

এখানে আমি আরবদের (sahih international) অনুবাদ কৃত কোরানের একটি অনুবাদ দিব, যা সমগ্র বিশ্বে গ্রহণযোগ্য সাথে ইউসুফ আলীর বিশ্বখ্যাত অনুবাদটিও......তারা 'মুতাওয়াফফিকা' অর্থ কি করেছে?? আরবরা?? তারা নিশ্চয়ই কাদিয়ানি থেকে আরবি শিখবে না! সূরা আলে ইমরান ৫৫ নং আয়াত...

Sahih International

[Mention] when Allah said, "O Jesus, indeed I will take you and raise you to Myself and purify you from those who disbelieve and make those who follow you [in submission to Allah alone] superior to those who disbelieve until the Day of Resurrection. Then to Me is your return, and I will judge between you concerning that in which you used to differ.

Yusuf Ali

Behold! Allah said: "O Jesus! I will take thee and raise thee to Myself and clear thee (of the falsehoods) of those who blaspheme; I will make those who follow thee superior to those who reject faith, to the Day of Resurrection: Then shall ye all return unto me, and I will judge between you of the matters wherein ye dispute.

ঈসা আঃ এর অবতরণ সংক্রান্ত কোরানের আয়াত......

“সে (ঈসা ইবনে মরিয়ম) হবে কেয়ামতের একটি নিদর্শন, তোমরা সে (কেয়ামতের) ব্যাপারে কখনো সন্দেহ পোষন করোনা......” (আল যুখরুফ-৬১)

ঈসা আঃ কেয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন কেয়ামতের নিদর্শন হিসেবে, মানে তখন কেয়ামতের খুব বেশী দেরী থাকবেনা।

“প্রত্যেক কিতাবী ঈসার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন”। (সূরা নিসা-১৫৯)

ঈসা আঃ সংক্রান্ত কাদিয়ানিদের ৩০ আয়াত এর জবাব...

প্রথমত বলে রাখা ভালো, কাদিয়ানিরা ঈসা আ; এর মৃত্যু সংক্রান্ত যেই সব আয়াত দেখায় তার কোথাও ঈসা আঃ এর মৃত্যু হয়েছে লিখা নেই। আর এর বেশীরভাগই ঈসা আঃ সংক্রান্ত আয়াত নয়। আমি আগেই বলেছি, মূসা আঃ সংক্রান্ত আয়াত ঈসা আ; এর বেলায় প্রযোজ্য নাও হতে পারে, আমাদের দেখতে হবে মোহাম্মদ সাঃ ঈসা আঃ এর আগমণ সম্পর্কে কি বলেছেন। আর এখানে কোরআন ব্যাখ্যার কোন নিয়ম নীতিই মানা হয়নি। যাই হোক, এরপরো তাদের ৩০ লাইনের উত্তর দিলাম...

(এই উত্তর গুলো আমার অনেক ব্যাখ্যা সহকারে লিখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পোস্টটি অতিরিক্ত বড় হয়ে যাওয়ায়, সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। কাদিয়ানি ভাইয়েরা এক আয়াত বাড়তি যোগ করে রেফারেন্স দেখবেন)

১। সূরা আলে ইমরানঃ ৫৫ (এটার ব্যাখ্যা আগেই দিয়েছি।)

২। সূরা নিসা ১৫৮; (এটার ব্যাখ্যাও দিয়েছি)

৩। সূরা আল মায়েদা ; ১১৭-১১৮ ( এই বাক্যটিকে ঈসা আঃ এর মৃত্যুর জন্য প্রমাণ করা তাদের কাজ যারা কোরআন এবং হাদীস সম্পর্কে জানেনা, এখানের ঈসা আঃ ও আল্লাহর মধ্যে কথোপকথন টি হবে কেয়ামতের দিন যার আগে ঈসা আঃ পৃথিবীতে অবতরণ করে মৃত্যুবরন করবেন, আয়াতটির পূর্ব আয়াত পড়লেই বোঝা যাবে।)

৪। সূরা নিসা ১৫৯; (এর ব্যখ্যাও দিয়েছি।)

৫। সূরা মায়িদা ৭৫; “মরিয়মের পুত্র মসীহ্ কেবল একজন রসূল। তাঁর পূর্বে সব রসূল অবশ্যই গত হয়ে গেছেন। তাঁর মা ছিল একজন সিদ্দিকাহ্ (সত্যবাদিনী)। তাঁরা উভয়েই খাবার খেত। দেখ! কিভাবে আমরা তাদের জন্য নিদর্শনাবলী সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি। আবার দেখ! তাদেরকে কিভাবে বিপথগামী করা হচ্ছে”

এই আয়াতে কোথাও বলা নেই ঈসা আঃ মৃত। বলা আছে তাঁর পূর্বের সব রাসূল মৃত। আর কাদিয়ানিরা ব্যাখ্যা করেছে, তিনি যেহেতু খাবার খেতেন এবং মরিয়ম আঃ ও খাবার খেতেন এবং যেহেতু মরিয়ম আঃ মৃত, তাই ঈসা আঃ ও মৃত। আর নবীরা খাবার না খেয়ে বাঁচতে পারেনা (আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইট থেকে)।

বোকামীরও একটা সীমা থাকা উচিৎ! এই আয়াত খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে, তারা ঈসা আঃ এবং মরিয়ম উভয়কেই স্রষ্টা বলে দাবি করে। এবং বলে মরিয়ম হচ্ছেন স্রষ্টার মা, এই জন্য তাঁর পূজা করে। আল্লাহ বলছেন, দেখ, এরা উভয়েই খাবার খায়, আর স্রষ্টা খাবার খায়না কারন স্রষ্টার খাবারের দরকার নাই। এভাবে খ্রিস্টানদের বলা হচ্ছে, দেখ এরা কেউ ঈশ্বর নয়। আর নবী রাসূল সবাই খাবার খেত, তারা কেউ ফেরেশতা নয়, এটা প্রমানের জন্যেই আল্লাহ কোরআনে নবী রাসূলদের এই সব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, কারন কাফেররা বলত, নবী রাসূল হবে ফেরেশতা, মানুষ কীভাবে নবী রাসূল হয়। যাই হোক, এই সংক্রান্ত আয়াত আমি আগেই আলোচনা করেছি। আর এই সব বৈশিষ্ট্য যতদিন নবী রাসূল গণ পৃথিবীতে থাকবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য, আসমানে থাকা অবস্থায়ও তাদের খেতে হবে এটা কাদিয়ানিরা পেল কোথায়??

৬। সূরা আম্বিয়া ৯; এই আয়াতও একই রকম। কাদিয়ানিরা বলছে, এই আয়াতে বলা হয়েছে, কেউই চিরকাল বেঁচে থাকবে না। (আহমদিয়া বাংলা ওয়েভসাইট)

তো এই কথা কি ঈসা আঃ এর আকাশে উঠা বাতিল করে?? কিংবা কেউ কি বলছে যে ঈসা আঃ মৃত্যুবরণ করবেনা?? উনি মারা যাবে কেয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে আগমনের পর।

৭। সূরা আলে ইমরান ১৪৪; “ মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নয়। নিশ্চই তাঁর পূর্বের সব রসূল গত হয়ে গেছে”

এই আয়াতেও কাদিয়ানিরা কোরআন বিকৃতি করেছে। এখানে সব রাসূলের কথা বলা হয়নি, সঠিক অনুবাদ ‘অনেক রাসূল গত হয়েছেন’। সোজা কথায়, All Messengers নয় Many Messengers। নিছে দু’টি অনুবাদ দিলাম......

Sahih International

Muhammad is not but a messenger. [Other] messengers have passed on before him. So if he was to die or be killed, would you turn back on your heels [to unbelief]? And he who turns back on his heels will never harm Allah at all; but Allah will reward the grateful.

Yusuf Ali

Muhammad is no more than a messenger: many Were the messenger that passed away before him. If he died or were slain, will ye then Turn back on your heels? If any did turn back on his heels, not the least harm will he do to Allah; but Allah (on the other hand) will swiftly reward those who (serve Him) with gratitude.

৮। সূরা আম্বিয়া-৩৪; কেউই চিরকাল বেঁচে থাকবেনা। ঈসা আঃ কে কি কেউ চিরকাল বেঁচে থাকবে বলে দাবী করেছে?? তাঁর মৃত্যু হবে কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে অবতরণের পর যেইভাবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে।

৯। সূরা বাকারা ১৩৪; এই আয়াতে সব নবী রাসূলদের উম্মাতের কথা বল হয়নি। এখানে শুধু ইসমাইল, ইব্রাহিম, ইসহাক এবং ইয়াকূব আঃ এর উম্মতের কথা বলা হয়েছে (সূরা বাকারা-১৩৩ দেখুন) । আর এখানে তাদের উম্মাত দের কথা বলা হচ্ছে, নবী-রাসূলদের কথা নয়।

১০। সূরা মারইয়াম-৩১; আসমানে পৃথিবীর সিস্টেম চলবে, তা কে বলেছে?? নামায, রোজা, যাকাত এগুলো পৃথিবীর জন্য, আসমানের সিস্টেম আল্লাহই ভালো জানেন।

১১। সূরা মারইয়াম-৩৩ (এখানে মারা যাবে বলা হয়েছে, আর ঈসা আঃ অবশ্যই মারা যাবে)

১২। সূরা হাজ্জ ৬- ঈসা আঃ অবশ্যই মারা যাবেন, কিয়ামতের পূর্বে, আবার বলি কোন মুসলিমই বিশ্বাস করেনা ঈসা আঃ চিরকাল বেঁচে থাকবে।

১৩। সূরা বাকারা-৩৬; এখানে আদম আঃ এর কথা বলা হচ্ছে, আদম আঃ কে বেহেশত থেকে নামিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিল। এখানে বলা হচ্ছেনা মানুষ মাটির দেহ নিয়ে আকাশে যেতে পারবেনা। আদম আঃ বেহেশতে কোন দেহ নিয়ে ছিলেন?? যেখান থেকে তাঁকে নামিয়ে দেয়া হল। আর মোহাম্মদ সাঃ আসমানে এই মাটির দেহ নিয়েই গিয়েছেন।

১৪। সূরা ইয়াসিন-৬৯; এখানে পৃথিবীর আয়ুর কথা বলা হচ্ছে আসমানে অবস্থানরত কারো আয়ুর কথা বলা হচ্ছেনা। আর কাদিয়ানিদের বোকামি সীমা ছাড়িয়েছে, তারা ধরেই নিয়েছে পৃথিবীর ২৪ ঘন্টায় যেমন এক দিন আসমানেও সেই রকম রাত দিন হয়। কত বোকা এরা!

১৫। সূরা রুম ৫৪, ইউনুস ২৪, মুমিনূন ১৫, আয যুমার ২১, ফুরকান-২০, আন নাহল ২০-২১, সূরা আহযাব-৪০, আন নাহল-৪৩, ফজর-২৭-৩০, রূম ৪০, সূরা আররহমান ২৬-২৭, সূরা কামার ৫৪-৫৫, সূরা আম্বিয়া ১০১-১০২, সূরা নিসা-৭৮,

সবগুলোর ব্যাখ্যাই এক, কাদিয়ানিরা বুঝাতে চাচ্ছে ঈসা আঃ কে মৃত্যু বরণ করতে হবে, তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেনা।

আমরাও বলিঃ ঈসা আঃ অবশ্যই মৃত্যু বরণ করবেন। আমি বুঝিনা কাদিয়ানিরা কেন ধরে নিচ্ছে, আসমানে থাকতে হলে পৃথিবীর মতো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, কিংবা কোরআন কিংবা ইঞ্জিল এর সকল নিয়ম আসমানের জন্য প্রযোজ্য! তাদের বলি, সময় উঠা-নামা করে এই পৃথিবীতেই, আসমানে অতীত, ভবিষ্যত বলে কিছু নেই কিংবা সেখানেও পৃথিবীর মতো ২৪ ঘন্টায় দিন হবে এটা যাদের নূন্যতম জ্ঞান নাই তারাই বলে। কোরাআন কিংবা ইঞ্জিল এর নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবীতে চলতে বলা হয়েছে, আসমানে নয়।

সূরা হাশর ৭; কাদিয়ানিদের এই ব্যাখ্যা সব ধরণের ‘কৌতুক’ কে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখানে রাসূল সা; এর আদেশ নিষেধ মানতে বলা হয়েছে, বয়স সম্পর্কে এই আয়াতে কিছু নেই। আর আসমানেও পৃথিবীর মতো সময় বৃদ্ধমান, এটা এই বোকারা কোথায় পেল?? আর ঈসা আঃ মোহাম্মদ সা; এর উম্মত হয়েই পৃথিবীতে বাস করবেন এবং কোরআন মেনেই সব করবেন, বুখারীতে অন্তত তাই দেয়া আছে।

সূরা বনী ইসরাঈল ৯৩; এর ব্যখ্যা আগেই দিয়েছি।

যাই হোক, এই ৩০ আয়াতে ব্যখ্যা আরো বড় করে রেফারেন্স সহকারে দেয়ার ইচ্ছা ছিল, তবে পোস্টটি লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় অতি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। তবে পরবর্তীতে সময় পেলে, এই ৩০ আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহকারে পোস্ট দিব ইন শা আল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

২৫১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File