বাংলাদেশের রাজনীতিক ও শুয়োরের কথা

লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ০৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৩৫:৩০ সকাল



মো. অহিদুজ্জামান

ফাল্গুন মাস। পরন্ত বিকেল।নদীর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি।ওপাড়ে কালো কালো মেঘ।মৃদু হাওয়ায় ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ ভাঙ্গে। নদীটা উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে গেছে।আঁকা-বাঁকা বয়ে চলা নদীর বিরান বাঁকে তাকালে শরীলটা শিউরে ওঠার মত। ভাটির স্রোতের তোরে মনও চমকে যায়।আর সেই টানে পাল তোলা নাও গুলো শাঁশাঁ করে ছুটছে।পালে আর হালে বাতাস সমানে সমান। মাঝি-মাল্লার কণ্ঠেও গান।সকলেই আপন মনে আপন ভূবনে। আমিও আপন মনে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করতেছিলাম। দেখতে দেখতে তীব্র স্রোতের মাঝে আউলা বাতাসে ছন্দপতন তরঙ্গ দেখে আমার ধ্যান উতরে যায়। মনে হলো এঅঞ্চলের নদীগুলো তো সাগর পানেই চলে।এটা নিত্য দিনের খেলা। নতুন কিছু নয়।সাগরও বেশি দূরে নয়। স্রোতের টান দেখলেই তা অনুমান করা যায়। বুঝতে কষ্ট হয় না সমুদ্রগর্ভে টান পড়েছে। তবে একটু পরেই ফিরে আসবে সবটুকু। সাগর তো ! সেতো আর ইতর রাজনীতিবিদের মতো কেউ নয়। শুধুই খাই খাই করে নিজের উদর ভরে।কিছুই অবশিষ্ট রাখে না। জলাধিপতির কাছ থেকে তা কি আর হয়। একটু পরেই যা ফিরিয়ে দিবে তাতে মাঠ-ঘাট থৈ থৈ টইটুম্বুর হবে। কুলকুল রবে উছলে উঠবে সব জাগবে নতুন প্রাণ। সে কি এক অনুভুতির শিহরণ তুলবে মনে-প্রাণে শ্যামল-সবুজে।আমি নতুন করে ভাবতে শুরু করলাম আমাদের দেশে এই জলাধিপতির মত একজন রাজনীতিক কবে আসবে। সংস্কৃত ভাষায় একটি শ্লোক আছে। এতে বলা হয়েছে- মানুষের মধ্যে নরসুন্দর, পাখির মধ্যে কাক, পশুর মধ্যে খেকশিয়াল এই তিন শ্রেণী নিজেদেরকে বুদ্ধিমত্তায় দৈত্য মনে করে। মূলত জাত-পাত-পদ আর চরিত্রের বিচারে তিনটিই অত্যন্ত নিচ।বাংলাদেশের রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী-সুশীল সমাজও তাই। যাইহোক দার্শনিক হিরাক্লিটাস বলেছিলেন একই নদীতে দু'বার অবগাহন করা যায় না। তার যুক্তি হচ্ছে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ নদীর স্রোত গতিশীল- থেমে নেই। আর দু'মুহুরিকালে গতিময় স্রোত থামলেও সবকিছুই নিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে।আমিও জাগতিক সবকিছুর মাঝে সেই পরিবর্তন দেখতে পেলাম।কিন্তু নিচতার কোন পরিবর্তন নেই। হিরাক্লিটাস সম্ভত এই দিকটা ভাবেন নাই।

প্রকৃতির দিকে তাকালে আমরা নানা মনমুগ্ধকর বিষয়ে অবলোকন করে থাকি। আমি নদীর স্রোত-তরঙ্গ আর আউলা বাতাসের মাঝে জীবনের উপজীব্য দেখতে পেলাম। লক্ষ্য করলাম ভরা নদীর থৈথৈ- এ একটা সুরেলা রাগাবেস আছে। মনে হয় পানির থৈথৈ ভৈরবি সুর তুলেছে। জারি সারি ভাটিয়ালি রাগে। মাঝি-মাল্লা, মজুর-কৃষক সকলের মন-প্রাণের সুর।কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে নিচতার মাঝে কোন রাগ-তাল সুর নেই।বাংলাদেশের রাজনীতিকদের এটি আর একটি উদাহরণ।বাংলাদেশের রাজনীতিকদের এই নিচতা দেখে শুয়োরের পালের কথা মনে পড়ে। নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে বড় বড় শুয়োরের পাল যেতো। দেখতাম রাখাল বড় একটি বাঁশের লাঠি হাতে শুয়োরের পাল নিয়ে ছুটছে।কিছুক্ষণ পরপর রাখাল পালেরগোঁদা শুয়োরটার পাঁজরের ওপর জোড়া কষে ঘাই মেরে লাইন ঠিক রাখতো। আর ওই লাঠিখানাই হচ্ছে শুয়োর পালের শৃঙ্খলার নিশানা। তাই রাখাল তার লাঠিখানা পালের সামনে উঁচিয়ে ধরে হাঁটতো। কারণ লাঠি আর তার ঘাই হচ্ছে শুয়োরের শৃঙ্খলা।রাখাল ক্লান্ত হলে কিছুক্ষণ বিরতির জন্য ওই লাঠিখানা সামনে দাঁড় করিয়ে রাখলে শুয়োরগুলো আগবাড়ায় না।কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে শুয়োরগুলো ম্যাচাকার শুরু করে দেয়। সাথে সাথে সপাঙ সপাঙ ঘাই। অমনি চুপ।কারণ ওদের মধ্যে সহিষ্ঞুতা নেই। সহপরমত বোঝে না। নিজের সুবিধা মতো চলাটাই ওরা স্বাচ্ছন্দবোধ করে। পাশে কিংবা সামনে যেটা থাকে তার পিছনধারে দাঁত বসিয়ে দেয়াটা ওদের অভ্যাস। যেমনটা আমাদের দেশের রাজনীতিকদের বদ্ধমূল জন্মগত অভ্যাস। এটাই হচ্ছে ওদের গণতন্ত্র।

আমার বয়স ষোল কি সতের। আমি নদী পাড়ে বসে আছি্। ভাবছি কীভাবে ভরা নদী শুকিয়ে যায়। তারুণ্য হারায়। ভরা যৌবন পলকে নিঃশেষ হয়। কিন্তু প্রকৃতি যেন তার নির্মিৎসা লীলায় সদা অপার হয়ে থাকে। দেখতে দেখতে ওপাড়ের কালো মেঘ আরো কালো হলো। বাতাস থেমে গেল। নিস্তব্ধতা নেমে এলো। হঠাৎ ঘুর্ণিবায়ু তছনছ করে চলে গেল। নদী পাড়ে সন্ধাতারা ফুলগুলির চিহ্নমাত্র নেই। একটু আগে যে ছন্দ ছিল তা আর নেই। কিন্তু আমি আজো এই দু'টি দৃশ্য ভুলতে পারছি না। কিন্তু কেন ভুলতে পারছি না সে জবাব দিয়েছেন দার্শনিক ডেকার্ড।তিনি বলেছেন মানুষের মন একটা পরিষ্কার সেলেটের মত। তার ভাষায় টেবুলারেজা বা সেলেটে লিখতে গেলে মাঝে মাঝে যেমন কিছু কড়া দাগ পরে যায় তা আর ওঠে না। তেমনি চলার পথে মাঝে মাঝে মানুষের মনেও কিছুকিছু আঁচড় কাটে তা আর মুছে যায় না। আমার মনেও চলার পথে কিছু দাগ কেটেছে তা হয়তো আর কোনদিনই উঠবে না। আর এই অভিজ্ঞতা বোধহয় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের।

বিষয়: রাজনীতি

১৯০৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

159165
০৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:০১
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হুম অভিজ্ঞতা বড়ই খারাপ জিনিস; আচরন-চিন্তাধারা-কেই বদলে দেয় অথবা আবদ্ধ রাখে সীমাবদ্ধতায় ...
159278
০৫ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
সিকদারর লিখেছেন : আমার বয়স ষোল কি সতের।
এই বয়সেই লেখার এত ধার । দোয়া করি আরো বাড়ুক । লিখতে থাকুন । লেখনীতে আপনার ভবিষ্যত খুবই উজ্জল।
160499
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৫
শারমিন হক লিখেছেন : ধন্যবাদ
162155
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০২
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File