জুলুমের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহশাহেদ ১০ মে, ২০১৩, ০১:০১:৩৪ রাত

কিয়ামতের দিন যে সমস্ত বিষয়ের হিসাব হবে, তার মধ্যে জুলুমের হিসাব অন্যতম। অনেক সময় জুলমের প্রতিদান দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ছোট একটি ঘটনা বর্ণনা করতে চাই। মিশরের সবিখ্যাত আল-আহরাম পত্রিকার একটি ঘটনা শুনুন। জনৈক মহিলা লিখছেনঃ তাদের ঘরে একটি কাজের মেয়ে ছিল। মেয়েটি তার, তার স্বামীর এবং তাদের একমাত্র ছেলের সেবা করত। মেয়েটির বয়স ছিল দশ বছর। সে ছিল একজন দরীদ্র কৃষকের মেয়ে। বেতন ছিল মাত্র বিশ জুনাইহ (টাকা)। এই সামান্য বেতন সত্ত্বেও মেয়েটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের খেদমত করত। কাপড়-চোপড় ধৈৗত করত, খানা তৈরী করত, তাদের একমাত্র ছেলেটিকে স্কুলে দিয়ে আসাসহ ঘরের সকল কাজ-কর্ম করে দিত। এরপরও সামান্য ত্র“টি হলে এবং কোন খেদমত পেশ করতে দেরী করলে মেয়েটি তার স্বামী প্রহার করত, নানা রকম কষ্ট দিত এবং বৈদতি সকসহ বিভিন্ন প্রকার জুলুম-নির্যাতন করত। শুধু তাই নয়, তারা মেয়েটি কেবল পরিত্যন্ত খাবার খেতে দিত। ভাল কোন খাবার তাকে প্রদান করত না। নির্যাতনের প্রচন্ডতার কারণে এক পর্যায়ে মেয়েটি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। যেহেতু মেয়েটি এখন আর কাজ করার উপযোগী ছিল না, তাই তারা মেয়েটির আর কোন খুঁজ-খবর নিল না।

ঐ দিকে তাদের একমাত্র ছেলে লেখাপড়া শেষ করে একটি সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করল। পরবর্তীতে ছেলের ঘরে একটি অন্ধ পুত্র সন্তান প্রসব করল। এতে তাদের পরিবারে দুঃখের কালো ছায়া নেমে আসল এবং তাদের পরিবারের সুখ-শান্তি সম্পূর্ণরূপে বিদায় নিল। তারা অনেক বিজ্ঞ ডাক্তারের সরণাপন্ন হল। কিন্তু কোন কাজ হল না। ডাক্তার তাদেরকে এই বলে শান্তনা দিল যে, পরবর্তীতে সন্তান প্রসব করলে সম্পূর্ণ সুস্থ ও দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন সন্তান প্রসব করবে। তাদের মনে আশার আলো জ্বলে উঠল। কয়েক মাস পর তাদের পুত্র বধু একটি সুন্দরী কন্যা সন্তান প্রসব করল। তারা এতে অত্যন্ত খুশী হল। এবার ডাক্তার তাদেরকে নিশ্চিত করল যে যে, মেয়েটি সম্পূর্ণ সুস্থ। তার চোখে কোন দোষ নেই। এই মেয়ে চোখে দেখবে ইনশা-আল্লাহ্। কিন্তু এবারও একই রকম মুসীবত দেখা গেল। মেয়েটির বয়স যখন সাত মাসে উপনীত হল তখন দেখা গেল মেয়েটি শুধু একদিকে চেয়ে থাকে। তারা এবারও মেয়েটিকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেল। ডাক্তর এবার বললঃ এই মেয়েটি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছে।

মহিলাটি বলেনঃ এ খবর শুনে আমার ছেলে মসবীতে ধৈর্যধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল এবং এক পর্যায়ে সে মানষিক রোগে আক্রান্ত হল। তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হল। পুত্র বধুও একই রোগে আক্রান্ত হল। মোট কথা পরিবারের সকলেই একই রোগে আক্রান্ত হল। পরিবারের সকলের কাছ থেকেই সুখ-শান্তি চিরদিনের জন্য বিদায় নিল। মহিলাটির কথা, আমি একদিন একাই বসেছিলাম। হঠাৎ সেই অন্ধ মেয়েটির কথা সরণ করলাম। যে মেয়েটি আমাদের নির্যাতনের কারণে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি মেয়েটির খুঁজ নেওয়া শুরু করলাম। রোডে, বাড়িতে এমন কি সকল স্থানেই তাকে খুজে বেড়ালাম। নানা জনকে জিজ্ঞেস করলাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সন্ধান পেলাম। তার কাছে গিয়ে তাকে ডাক দিলাম। সে খুশী মনে আমার ডাকে সাড়া দিল। দেখলাম, সে তার সমস্ত দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়েছে। আমরা যে নির্যাতন তাকে করেছিলাম, একটি বারের জন্যও সে তা উল্লেখ করল না। আমি তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলাম। সে যেহেতু চোখে দেখে না, তাই আমি তার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম। বাড়িতে আসার পর যখন আমার অন্ধ নাতনী তার আওয়াজ শুনতে পেল, তখন,সে ক্রন্দন শুরু করে দিল এবং কাজের মেয়েটির সাথে তার এক গভীর সম্পর্ক তৈরী হল। আমরা সকলেই এ কথা উপলদ্ধি করতে সক্ষম হলাম যে, কাজের মেয়েটির উপর নির্যাতন করার কারণেই আমাদের পরিপারে দুঃখের এই কালো ছায়া নেমে এসেছে। আমি মেয়েটিকে বললাম আমাদেরকে তুমি ক্ষমা করে দাও। এরপর আমি অন্ধ নাতী, অন্ধ নাতনী এবং কাজের সেই মেয়েটির খেদমত শুরু করলাম।

হে জালেম সম্প্রদায়! সাবধান! কিয়ামতের দিন জুলুমের পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তোমরা অচিরেই জুলমের পরিণাম আখেরাতের পূর্বে দুনিয়াতেও ভোগ করবে। সুতরাং হে মুসলিম! তুমি তোমার কোন মুসলিম ভাইকে অন্যায়ভাবে প্রহার করো না, তাকে হত্যা করো না, তার হক নষ্ট করো না, তার মান-ইজ্জতের উপর আক্রমণ করনো, তাকে অপমান করো না। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

( يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرما فلا تظالموا

হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের উপর জুলুমকে হারাম করেছি। তোমাদের মাঝেও পারস্পরিক জুলুমকে হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর জুলুম করো না। (সহীহ মুসলিম।

হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে জুলুম হতে বাচাও। আমাদেরকে ন্যায় বিচার করার তাওফীক দাও। আমাদেরকে তুমি বিশেষভাবে হেফাজত কর এবং তোমার রহমতরে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখো। আমীন।

তথ্যসূত্র জানতে এখানে ক্লিক করুনঃhttp://www.youtube.com/watch?v=AI-lVhNGaZ0

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File