আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ)এর নিকট জিহাদের প্রকার ও স্তরসমূহঃ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহশাহেদ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:১৬:২৯ দুপুর

উপরোক্ত বিশ্লেষণের পর আমাদের জানা উচিত যে, জিহাদের চারটি প্রকার রয়েছে। (১) নফসের সাথে জিহাদ, (২) শয়তানের সাথে জিহাদ, (৩) কাফের ও মুনাফেকদের সাথে জিহাদ এবং (৪) জালেম, গুনাহগার ও বিদআতীদের সাথে জিহাদ।

নফসের সাথে জিহাদঃ

নফসের সাথে জিহাদের চারটি স্তর রয়েছে। (১) ইলম, দ্বীনে হক ও হেদায়াতের তালাশের চেষ্টা করা এবং এর উপর নফসকে বাধ্য করা। কারণ দ্বীনে হকের জ্ঞান অর্জন ছাড়া সাফল্য অর্জনের কোন সুযোগ নেই। বান্দা তা অর্জনে ব্যর্থ হলে ইহকাল ও পরকালে সে হতভাগা হবে। (২) বান্দা ইলম অর্জন করার পর ইলমকে আমলে পরিণত করবে। কারণ আমল ছাড়া ইলম তার কোন উপকারে আসবে না। (৩) ইলম ও আমলের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দিবে। অজ্ঞদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিবে। অন্যথায় সে আল্লাহর নাযিলকৃত হেদায়াত ও সত্য গোপন করার অপরাধে অপরাধী হবে এবং তার ইলম অন্যের উপকার করলেও তার নিজের কোন উপকার করবে না এবং তাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষাও করবে না। (৪) আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াতের কাজে যে সমস্ত বিপদ আসে বান্দা তার উপর নফসকে সবুর করতে বাধ্য করবে। মানুষেরা তাকে কষ্ট দিলেও সে ধৈর্যধারণ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় সে সব কিছুই মাথা পেতে মেনে নিবে। যার ভিতরে এই চারটি গুণ পাওয়া যাবে সে রাব্বানী তথা আল্লাহ্র প্রিয় অলী হতে পারবে। সালাফগণের সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কোন আলেমই ততক্ষণ পর্যন্ত রাব্বানী হওয়ার যোগ্য হয় না যতক্ষণ না সে সত্যকে ভালভাবে বুঝতে সক্ষম হয়, সে অনুযায়ী আমল করে এবং তা মানুষকে শিক্ষা দেয়। সুতরাং যে শিখল, আমল করল এবং শিক্ষা দিল তাকে স্বর্গরাজ্যে মহা সম্মানের সাথে ডাকা হবে।

শয়তানের সাথে জিহাদঃ

শয়তানের সাথে জিহাদের দু’টি স্তর রয়েছে। (১) ঈমান নষ্ট করার জন্য শয়তান যে সমস্ত সন্দেহ এবং ওয়াসওয়াসা বান্দার অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেয় তা প্রতিহত করার সংগ্রাম করা। (২) শয়তান মানুষের অন্তরে পাপ কাজের প্রতি যে আগ্রহ ও আসক্তি নিক্ষেপ করে তা প্রতিহত করার সংগ্রামে সদা প্রচেষ্টা চালানো। মজবুত ঈমান ও দৃঢ় মনোবল দিয়ে প্রথমটির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এবং ধৈর্যের মাধ্যমেই দ্বিতীয়টির মোকাবেলা করা সম্ভব। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُواْ، وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ

“তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল। (সূরা সেজদাহঃ ২৪) সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা সংবাদ দিয়েছেন যে, দৃঢ় বিশ্বাস ও সবরের মাধ্যমেই নের্তৃত্ব পাওয়া যাবে, ধৈর্যই খারাপ নিয়ত ও কুপ্রবৃত্তিকে প্রতিহত করে এবং মজবুত ঈমান সন্দেহ বিদূরিত করে।

কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদঃ

কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদেরও চারটি স্তর রয়েছে। (১) অন্তরের মাধ্যমে জিহাদ, (২) জবানের মাধ্যমে জিহাদ, (৩) মালের সাহায্যে জিহাদ ও (৪) জান ও হাতের মাধ্যমে জিহাদ। কাফেরদের সাথে জিহাদ করতে হবে অস্ত্রের সাহায্যে। আর জবানের সাহায্যে জিহাদ করতে মুনাফেকদের সাথে।

জালেম, পাপী ও বিদআতীদের সাথে জিহাদঃ

এই প্রকার লোকদের সাথে জিহাদের তিনটি স্তর রয়েছে। (১) ক্ষমতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে হাত দিয়ে জিহাদ করতে হবে। (২) হাত দিয়ে করতে অক্ষম হলে জবান দিয়ে করতে হবে। (৩) তাতেও অক্ষম হলে অন্তর দিয়ে করতে হবে।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জিহাদের সর্বমোট ১৩টি স্তর খুঁজে পাচ্ছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِالغَزْوِ، مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنَ النَّفَاقِ

“যে ব্যক্তি জিহাদ না করে কিংবা নিজের মনের মধ্যে জিহাদের আকাঙ্খা না রেখেই মারা গেল সে নিফাকীর একটি বৈশিষ্ট নিয়ে মারা গেল।

হিজরত ব্যতীত জিহাদ পূর্ণ হয় না। ঈমান ব্যতীত জিহাদ ও হিজরত উভয়টিই মূল্যহীন। আল্লাহর রহমতকামীগণই এই তিনটি গুণে গুণান্বিত হয় এবং তা অর্জন করতে সচেষ্ট হয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

إنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِى سَبِيلِ اللهِ أُولَئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللهِ، وَاللهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

“আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহ্র পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহ্র রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়”। (সূরা বাকারাঃ ২১৮)

ঈমান আনয়ন করা যেমন প্রতিটি মানুষের উপর ফরজ ঠিক তেমনই প্রত্যেক মুমিনের উপর প্রতি মুহূর্তে দু’টি হিজরত করা আবশ্যক। এককভাবে ও ইখলাসের সাথে আল্লাহর এবাদত, আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর কাছেই আশা-আকাঙ্খা করা, আল্লাহকে ভালবাসা এবং একনিষ্টভাবে তাওবা করার মাধ্যমেই আল্লাহর দিকে হিজরত করতে হবে। আর রাসূলের অনুসরণ, তাঁর আদেশের সামনে নত হওয়া, তিনি যেই সংবাদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করা এবং তাঁর আদেশকে অন্যদের আদেশের উপর প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে রাসূলের দিকে হিজরত করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ومَن كانت هِجْرتُهُ إلى دُنيا يُصيبها أو امرأةٍ يتزوَّجُهَا فَهِجْرته إلى ما هاجر إليه

“কারো হিজরত যদি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উদ্দেশ্যে হিজরত বলে গণ্য হবে। আর কারো হিজরত যদি দুনিয়া অর্জন অথবা কোন নারীকে বিবাহের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তার হিজরত সেভাবেই গৃহীত হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।

ঠিক তেমনই আল্লাহর আনুগত্যে নফসকে বাধ্য রাখতে এবং শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য জিহাদ করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরজে আইন। এখানে একজন অন্যজনের স্থলাভিষিক্ত হবে না।

কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে উম্মাতের কোন একটি দল এই প্রকারের জিহাদে আঞ্জাম দিলে এবং তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেলে অন্যদের উপর হতে ফরজিয়াত উঠে যাবে।

আল্লাহর যেই বান্দা সর্বোত্তম জিহাদ করেছেনঃ

সেই বান্দা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক কামেল যিনি জিহাদের সকল স্তর ও প্রকার বাস্তবায়ন করেছেন। এ জন্যই আল্লাহর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক কামেল ও মর্যাদাবান। কারণ তিনি জিহাদের সকল স্তরই বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি আল্লাহর রাস্তায় যথার্থরূপে জিহাদ করেছেন। নবুওয়াত ও রেসালাত পাওয়ার পর থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছেন। যখন তাঁর উপর কুরআনের এই আয়াত গুলো নাযিল হলঃ

يَاأَيُّهَا الٌمُدَّثِّرُ، قُمٌ فَأَنْذِرْ، وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ، وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ، وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ، وَلاَتَمْنُنْ تَسْتَكْثِرْ، وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ.

“হে চাদরাবৃত! উঠ সতর্ক কর। তোমার প্রভূর মহাত্ব ঘোষণা কর। তোমার পোষাক পবিত্র কর এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক। অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেনা এবং তোমার পালন কর্তার উদ্দেশ্যে সবর কর। (সূরা মুদ্দাস্সির ১-৭) তখনই তিনি দাওয়াতের কাজে লেগে গেলেন এবং ভালভাবে উঠে দাঁড়ালেন। দিনে ও রাতে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে দাওয়াতী কাজে মশগুল থাকলেন। আর যখন তাঁর উপর কুরআনের এই বাণী অবতীর্ণ হলঃ

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنْ الْمُشْرِكِينَ

“অতএব তুমি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দাও যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেনা।” (সূরা হিজর- ৯৪) তখন তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন এবং আল্লাহর কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন। তাঁর জাতির লোককে খোলাখুলি দাওয়াত দিলেন। এতে কোন নিন্দুকের নিন্দা এবং সমালোচকের সমালোচনার ভয় করেন নি। ছোট-বড়, স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, সাদা-কালো এবং জিন-ইনসান সকলকেই আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করার আহবান জানালেন। তাদের মূর্তীসমূহের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করতে লাগলেন। তাদের অক্ষমতার ব্যাপারে নানা প্রকার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন। তাওহীদের প্রয়োজনীয়তা এবং শিরকের ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে লাগলেন। এতে মক্কাবাসী চরম ক্রোধে ফেটে পড়ল। শুরু হল ইসলামের বিরোধিতা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুসলমানগণ মুশরিকদের থেকে নানা প্রকারের শত্র“তা, অত্যাচার ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের সম্মুখিন হতে লাগলেন।

এটিই আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টিগত সুন্নাত (বৈশিষ্ট)। যে কেউ হকের দাওয়াত দিবে তার প্রতি শত্র“তা পোষণ করা হবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

 مَا يُقَالُ لَكَ إِلا مَا قَدْ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَ إِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ وَذُو عِقَابٍ أَلِيمٍ

“আপনাকে তো তাই বলা হয়, যা বলা হত পূর্ববর্তী রাসূলগণকে। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার কাছে রয়েছে ক্ষমা এবং রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”। (সূরা ফুসসিলাতঃ ৪৩) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِىٍّ عَدُوّاً شَيَاطِينَ الإنْسِ وَالْجِنِّ

“এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্র“ করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে”। (সূরা আনআমঃ ১১২) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

كَذَلِكَ مَا أتَى الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّنْ رَسُولٍ إِلاَّ قَالُواْ سَاحِرٌ أوْ مَجْنُونٌ أَتَوَاصَوْا بِهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ

“এমনিভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রাসূল আগমন করেছে, তারা বলেছে: যাদুকর, না হয় উম্মাদ। তারা কি একে অপরকে এই উপদেশই দিয়ে গেছে? বস্তুত ওরা দুষ্ট সম্প্রদায়”। (সূরা যারিয়াতঃ ৫২-৫৩) এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে সান্তনা দিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন যে, পূর্ববর্তী নবীগণ হচ্ছেন তাঁর আদর্শ। আর আল্লাহ্ তাআলা নবীর অনুসারীদেরকেও এই বলে সান্তনা দিয়েছেন যেঃ

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوْا الجَنَّةَ وَلَمَّا يأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُم، مَّسَّتْهُمُ البَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُواْ حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ، أَلا إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ

“তোমরা কি এই ধারণা করে নিয়েছ যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ তোমাদের সামনে সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করে নি, যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে? তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনিভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তার প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত এ কথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহ্র সাহায্য। তোমরা শুনে নাও, আল্লাহ্র সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী”। (সূরা বাকারাঃ ২১৪) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لا يُفْتَنُونَ * وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِينَ صَدَقُواْ وَليَعْلَمَنَّ الْكَّاذِبِينَ * أمْ حَسِبَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّـيِّئاتِ أَن يَسْبِقُونَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ * مَنْ كَانَ يَرْجُواْ لِقَاءَ اللهِ فَإنَّ أَجَلَ اللهِ لآتٍ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ * وَمَنْ جَاهَدَ فَإنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهِ إِنَّ اللهَ لَغَنِىٌ عَنِ العَالَمِينَ * وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَـيِّئاتِهِمْ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَحْسَنَ الَّذِى كَانُوا يَعْمَلُونَ * وَوَصَّيْنَا الإنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً، وَإن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِى مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلا تُطِعْهُمَا، إِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَـبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ * وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُدْخِلَنَّهُمْ فِى الصَّالِحِينَ * وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللِّهِ فَإذَا أُوذِىَ فِى اللهِ، جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللهِ وَلئِنْ جَاءَ نَصْرٌ مِّن رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ، أَوَ لَيْسَ اللهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِى صُدُورِ العَالَمِينَ

“মানুষ কি মনে করে যে, তারা এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি ফলে তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। তদ্বারা আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ। যে আল্লাহ্র সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহ্র সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। যে জিহাদ করে (কষ্ট স্বীকার করে), সে তো নিজের জন্যেই জিহাদ করে। আল্লাহ্ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব। আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমার প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত করব। কিছু লোক বলে, আমরা আল্লাহ্র ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি। কিন্তু আল্লাহ্র পথে যখন তারা নির্যাতিত হয়, তখন তারা মানুষের নির্যাতনকে আল্লাহ্র আযাবের মত মনে করে। যখন আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন সাহায্য আসে তখন তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। বিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ্ কি তা সম্যক অবগত নন? (সূরা আনকাবুতঃ ২-১০)

বান্দার উচিত উপরোক্ত আয়াতগুলো, তার বর্ণনাভঙ্গি এবং এর মধ্যকার হুকুম-আহকামের ভান্ডারগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। কেননা মানব জাতির কাছে যখন নবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে তখন তাদের সামনে দু’টি সুস্পষ্ট কথা চলে এসেছে। তাদের কেউ বলেছেঃ আমরা ঈমান আনয়ন করলাম। আবার অন্য একদল বলেছেঃ না, আমরা ঈমান আনয়ন করব না। এই বলে তারা কুফরী ও অন্যায়ের পথে অবিচল রয়ে গেছে। যারা বলেছে, আমরা ঈমান আনয়ন করলাম, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ফিতনায় ফেলেছেন। এখানে ফিতনা অর্থ হচ্ছে বিপদাপদে ফেলে পরীক্ষা করা। যাতে করে সত্যবাদীগণ মিথ্যুকদের থেকে পৃথক হয়ে যায়। আর যারা ঈমান আনয়ন করে নি; বরং কুফরীতেই রয়ে গেছে তারা যেন এ কথা না ভাবে যে, আমরা আল্লাহকে অক্ষম করে দিয়েছি এবং তাঁকে পরাজিত করে ফেলেছি। অচিরেই তাকে তিনি টান দিবেন এবং পাকড়াও করবেন।

সুতরাং যারা নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের আনুগত্য করেছে, শত্র“রা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছে ও কষ্ট দিয়েছে। সুতরাং তারা এমন বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছে যা তাদেরকে কষ্ট দিয়েছে। আর যারা নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে নি এবং তাদের আনুগত্যও করে নি, তাদেরকে উভয় জগতে শাস্তি দেয়া হয়েছে বা হবে। তাদের এই শাস্তি ও কষ্ট নবী-রাসূলদের অনুসারীদের কষ্টের চেয়ে অধিক যন্ত্রনাদায়ক ও দীর্ঘতম।

মোটকথা বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী সকল মানুষকেই কষ্ট ভোগ করতে হবে। কিন্তু বিশ্বাসীর কষ্ট আর অবিশ্বাসীর কষ্টের মধ্যে পার্থক্য এই যে, মুমিনগণ দুনিয়াতে প্রথমে দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের সম্মুখীন হবে। অতঃপর দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের পরিণাম খুবই ভাল হবে। আর ঈমান থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে প্রথমে তারা অল্প দিনের জন্য সুখ ও শান্তি পেলেও অচিরেই তারা স্থায়ী কষ্ট ও আযাবের দিকে ধাবিত হবে।

ইমাম শাফেঈ (রঃ)কে জিজ্ঞেস করা হলঃ বান্দার জন্য কোন্টি উত্তম? কষ্টের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা ছাড়াই তাকে প্রতিষ্ঠিত করা? না বিপদাপদে ফেলে পরীক্ষা করার পর প্রতিষ্ঠা দান করা? ইমাম শাফেঈ (রঃ) জবাবে বললেনঃ প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্ তাআলা কাউকে পরীক্ষা না করে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করেন না। তিনি উলুল আযম তথা সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী রাসূলদেরকেও বিপদাপদের সম্মুখীন করেছেন। তারা যখন ধৈর্য ধারণ করেছেন তখন আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করেছেন। সুতরাং কোন মুমিন যেন কখনই এ কথা না ভাবে যে, সে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ হতে রেহাই পাবে। যে সমস্ত মুমিন বিপদাপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তাদের বুদ্ধি ও বিবেকের মধ্যেও পার্থক্য হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বুদ্ধিমান হচ্ছে ঐ মুমিন যে অস্থায়ী সামান্য কষ্টের বিনিময়ে বিরাট এবং স্থায়ী কষ্টকে বিক্রয় করে দিল আর সবচেয়ে নির্বোধ ও হতভাগা হল ঐ ব্যক্তি যে অস্থায়ী এবং সামান্য কষ্টের বদলে চিরস্থায়ী বিরাট কষ্টকে ক্রয় করে নিল।

যদি বলা হয় বিবেকবান ব্যক্তি কিভাবে এটি (মহা সাফল্যের বিনিময়ে ক্ষুদ্র বস্তু) নির্বাচন করতে পারে? উত্তরে বলা যেতে পারে যে, নগদ ও বাকীর বিষয়টি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নফস সবসময় সামনে যা উপস্থিত আছে তাই গ্রহণ করতে চায়। দূরবর্তী কোন জিনিষের জন্য অপেক্ষা করতে চায় না। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

كَلاَّ بَلْ تُحِبُّونَ العَاجِلَةَ * وَتَذَرُونَ الآخِرَةَ 

“কখনও না, বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে ভালবাস এবং পরকালকে উপেক্ষা কর”। (সূরা কিয়ামাহঃ ২০-২১) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ

إِنَّ هَؤُلاءِ يُحِبُّونَ العَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَاءَهُمْ يَوْماً ثَقِيلاً

“নিশ্চয়ই এরা পার্থিব জীবনকে ভালবাসে এবং এক কঠিন দিবসকে পশ্চাতে ফেলে রাখে”। (সূরা ইনসানঃ ২৭) মানুষ সমাজের অন্যান্য লোকদের সাথে বসবাস করে। মানুষের রয়েছে অনেক ইচ্ছা ও স্বপ্ন। যে মুমিন বান্দা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করে সেও মানুষ। সমাজের অন্যান্য মানুষেরা সাধারণতঃ চাইবে যে, সেও তাদের ইচ্ছানুপাতে চলুক। সে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক না চললে; বরং তাদের বিরোধীতা করলে তারা তাকে কষ্ট ও শাস্তি দিবে। এটিই বাস্তব। আর সে যদি তাদের মর্জী অনুযায়ী চলে তাতেও সে কষ্ট পাবে। কখনও তাদের পক্ষ হতে আবার কখনও অন্যদের পক্ষ হতে। যেমন কোন দ্বীনদার ও মুত্তাকী লোক যদি ফাসেক ও জালেম সম্প্রদায়ের মাঝখানে বাস করে তাহলে সে ঐ সমস্ত জালেম ও পাপিষ্ঠদের পাপ কাজে সমর্থন ও সম্মতি দেয়া ব্যতীত কিংবা ফাসেকদের কর্মকান্ডে চুপ থাকা ব্যতীত কখনই তাদের অত্যাচার হতে রেহাই পাবে না। সে যদি তাদেরকে সম্মতি দেয় কিংবা চুপ থাকে তাহলে প্রথমে হয়ত সে তাদের অনিষ্ট হতে রেহাই পাবে, কিন্তু অচিরেই তারা তার উপর চড়াও হবে, তারা তাকে কষ্ট দিবে এবং লাঞ্ছিত করবে। প্রথমে সে যেই পরিমাণ অত্যাচারের ভয় করেছিল এখন তাদের প্রতিবাদ করার কারণে সে আরও বহুগুণ বেশী অপমানের শিকার হবে। সে যদি তাদের অত্যাচার হতে বেঁচেও যায়, কিন্তু অন্যদের হাতে অবশ্যই লাঞ্ছিত হবে ও শাস্তি পাবে।

সুতরাং প্রথম হতেই মুমিন ও দ্বীনের দাঈদেরকে সাবধান হতে হবে এবং দৃঢ়তার সাথে ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে হবে। আয়েশা (রাঃ) আমীরুল মুমিনীন মুআবিয়া (রাঃ)কে যেই উপদেশ দিয়েছিলেন তার উপরই আমল করতে হবে। তিনি মুআবিয়া (রাঃ)কে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ

্রمَنْ أَرْضَى الله بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ الله مُؤْنَةَ النَّاسِ، وَمَنْ أَرْضَى النَّاسَ بِسَخَطِ الله لم يُغْنُوا عَنْهُ مِنَ الله شَيْئَاًগ্ধ

“যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে মানুষের কষ্ট হতে তাঁকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে সন্তুষ্ট করবে মানুষেরা তাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করতে পারবে না”।

যে ব্যক্তি পৃথিবী ও তার মধ্যে বসবাসকারী মানুষের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করবে সে ঐ সমস্ত লোকদের মধ্যে এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবে যারা জালেম শাসক এবং বিদআতীদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সাহায্য করে। আল্লাহ্ যাকে হেদায়াত করেন, সঠিক পথ দেখান এবং কুপ্রবৃত্তির অকল্যাণ থেকে বাঁচান সেই কেবল তাদের হারাম কাজে সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকে এবং তাদের জুলুম নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করে। পরিণামে দুনিয়া ও আখেরাতে সে সুফল প্রাপ্ত হয়। যেমন সাফল্য অর্জিত হয়েছে নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীদের জন্য, আনসার ও মুহাজিরদের জন্য এবং পরীক্ষার কবলে পতিত উলামায়ে কিরামদের জন্য।

দ্বীনের দাঈগণ যেহেতু কষ্ট ও নির্যাতন হতে রেহাই পাবে না তাই আল্লাহ্ তাআলা এই অস্থায়ী কষ্ট ভোগকারীদেরকে শান্তনা দিয়ে বলেনঃ

مَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ اللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللَّهِ لآتٍ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ وَمَنْ جَاهَدَ فَإِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهِ إِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

“যে আল্লাহ্র সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহ্র সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। যে ব্যক্তি জিহাদ করে (কষ্ট স্বীকার করে), সে তো নিজের জন্যেই কষ্ট স্বীকার করে। আল্লাহ্ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী”। (সূরা আনকাবুতঃ ৫-৬) সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা এই অস্থায়ী কষ্টের জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করেছেন। আর সেটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ দিবস। বান্দা যেই স্বাদ উপভোগ করার জন্য কষ্ট ভোগ করেছে সেই কারণে সে দিন বান্দা অফুরন্ত স্বাদ গ্রহণ করবে। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাকে স্বীয় সাক্ষাৎ প্রদানের ওয়াদা করেছেন। যাতে বান্দা তাঁর সাক্ষাতের আশায় ক্ষণস্থায়ী দুঃখ-কষ্ট সহজেই ভোগ করতে পারে। বরং কখনও কোন কোন বান্দার অবস্থা এ রকম হয় যে, সে আল্লাহর সাক্ষাতের আগ্রহের মধ্যে ডুবে গিয়ে সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায় এবং তা অনুভব করে না। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুর সাক্ষাতের আকাঙ্খা করেছেন। আল্লাহর সাক্ষাতের শখ বা ইচ্ছা অন্তরে জাগ্রত হওয়া বিরাট একটি নেয়ামত। তবে এই নেয়ামতটি পাওয়ার জন্য কিছু মৌখিক ও শারীরিক আমল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা সেই কথাগুলো শুনেন এবং সেই আমলগুলো সম্পর্কে অবগত আছেন। যারা এই নেয়ামতটি পাওয়ার হকদার আল্লাহ্ তাআলা তাদের সম্পর্কেও অবগত আছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَكَذَلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِيَقُولُوا أَهَؤُلاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ

“আর এভাবেই আমি কিছু লোককে কিছু লোক দ্বারা পরীক্ষায় ফেলেছি- যাতে তারা বলে যে, এদেরকেই কি আমাদের সবার মধ্য থেকে আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহ দান করেছেন? আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত নন”? (সূরা আনআমঃ ৫৩) বান্দার কাছ থেকে কোন নেয়ামত ছুটে গেলে সে যেন এই আয়াতের এই অংশটি পাঠ করেঃ আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত নন?

অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুজাহিদদেরকে অন্য আরেকটি শান্তনা এভাবে দিয়েছেন যে, আল্লাহর রাস্তায় তাদের জিহাদ মূলতঃ তাদের নিজেদের জন্যই। এর ফল তারাই ভোগ করবে। আর আল্লাহ্ তাআলা বিশ্ববাসীদের প্রতি সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী। এই জিহাদের ফায়দা তারাই হাসিল করবে। আল্লাহ্ তাআলার এতে কোন লাভ নেই।

আর মহান আল্লাহ্ তাআলা সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর পথে জিহাদ এবং তাঁর প্রতি অবিচল ঈমান তাদেরকে সালেহীনদের কাতারে শামিল করবে।

অতঃপর যারা বিনা ইলমে এবং না বুঝে ঈমান আনয়ন করে তাদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা সংবাদ দিয়েছেন যে, তাদেরকে যখন আল্লাহর পথে কষ্ট দেয়া হয় তখন তারা মানুষের দেয়া কষ্টকে আল্লাহর সেই আযাবের মতই মনে করে, যা থেকে বাঁচার জন্যই তারা ঈমান আনয়ন করেছে। আর আল্লাহ্ তাআলা যখন তার সৈনিক ও বন্ধুদেরকে বিজয় দান করেন তখন তারা বলে আমরা তোমাদের সাথেই ছিলাম। তাদের অন্তরে যে নিফাক রয়েছে সে সম্পর্কে আল্লাহ্ অবগত আছেন।

মোটকথা আল্লাহ্ তাআলার হিকমতের দাবী হচ্ছে, তিনি অবশ্যই মানুষদেরকে পরীক্ষা করবেন। এর মাধ্যমে পবিত্র আত্মা অপবিত্র আত্মা থেকে আলাদা হয়ে যাবে, কে তার বন্ধুত্ব ও সম্মান পাওয়ার হকদার আর কে তা পাওয়ার হকদার নয় তাও পরিস্কার হয়ে যাবে। কেননা নফস্ মূলতঃ জাহেল ও জালেম হয়ে থাকে। অজ্ঞতার কারণে নফসের মধ্যে এমন অপবিত্রতা প্রবেশ করে যা থেকে আত্মাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা জরুরী। যদি এই দুনিয়া হতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আত্মা নিয়ে যেতে পারে তাহলে তো ভাল। অন্যথায় তাকে নরকে যেতে হবে। বান্দা যখন পাক ও পবিত্র হবে তখনই তাকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।

বিষয়: বিবিধ

২৫৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File