হযরত সালমান আল ফারসির (রা) ইসলাম গ্রহণের অসাধারণ কাহিনী: পর্ব—১ ==========================================

লিখেছেন লিখেছেন আলোর পথে আলোকিত ০৫ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:৫৭:০২ দুপুর



হযরত আব্দুল্লাহ ইবন্‌ আব্বাস (রা) ছিলেন রসুলুল্লাহের (সা) চাচাতো ভাই। তিনি বিভিন্ন সাহাবীর (রা) কাছ থেকে দ্বীন শিক্ষা নিয়েছেন। হযরত সালমান ফারসি (রা) ছিলেন আবদুল্লাহ ইবন্‌ আব্বাসের (রা) অন্যতম শিক্ষক। তিনি (হযরত সালমান ফারসি (রা)) হযরত হুসাইনেরও (রা) শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন জ্যৈষ্ঠ সাহাবাদের মধ্যে অন্যতম। ইবন্‌ আব্বাস (রা) যেহেতু তাঁর (হযরত সালমান ফারসি (রা)) শিষ্য ছিলেন তাই তিনি তাঁর কাছ থেকে শুনেছেন যে কিভাবে তাঁর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। কাহিনীটা খুবই মজার এবং মনোমুগ্ধকর!!

হযরত সালমান ফারসি (রা) বর্ণনা করেন, “আমি পারস্যের [বর্তমান ইরান] আস্পাহানের একটা গ্রামের,[গ্রামের নাম ছিল ‘জি’] অধিবাসী ছিলাম। আমার পিতা ছিলেন গ্রামের ‘দাহকান’ [আগুন রক্ষাকর্তা, কারণ সেই সময়ে ইরানের ধর্ম ছিল জোরাষ্ট্র, আর এরা ছিল আগ্ন উপাসক, তাই এদের কাজ ছিল দিন রাত ২৪ ঘন্টা আগুন প্রজ্বলিত রাখা। প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় এরকম একটা জায়গায় (উপাসনালয় ধরণের) আগুন জ্বালিয়ে রাখা হত এবং একজন আগুনের রক্ষাকর্তা থাকত যে চরম নিবেদিত এবং সে সর্বদা আগুনটাকে পর্যবেক্ষন করবে যেন আগুন নিভে না যায়! সমাজে তার মর্যাদা ছিল ব্যাপক। ]। আমার পিতা গ্রামের কৃষি বিষয়ক ব্যাপারে কর্তাব্যক্তি ছিলেন, যেটা ছিল খুবই গুরত্বপূর্ণ একটা পদ [জোতিষশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা ও অন্যান্য বিষয় তখনকার দিনে যেগুলো কৃষি বিষয়ক জ্ঞানের জন্য অপরিহার্য ছিল]।” হযরত সালমান ফারসি (রা) তার পিতার হাত ধরে পরে তিনিই আগুনের রক্ষাকর্তা হন, যেটা ছিল বিরাট একটা পবিত্র দায়িত্ব এবং পদ।

হযরত সালমান ফারসি (রা) বলেন যে, “আমার পিতা আমাকে ভীষণ ভালবাসতেন। তিনি আমাকে তার চোখের আড়াল হতে দিতেন না [তিনি সাবালক হওয়ার পরও তাঁর পিতা তাঁকে সবসময় চোখে চোখে রাখতেন]। আমার পিতা আমাকে কোন জায়গায় যেতে দিতেন না। আমি আগুন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কিছুই জানতাম না [জোরাস্ট্র ধর্ম সম্পর্কেই তাঁর জ্ঞান ছিল অন্য কিছু নয় ]। একদিন আমার পিতা বাড়ি তৈরি করছিলেন এবং একটা জরুরী প্রয়োজনে তিনি আমাকে বাইরে পাঠালেন।”

হযরত সালমান ফারসি (রা) এর আগে কোনদিন তাঁর গ্রাম ছেড়ে যান নি যদিও তিনি ছিলেন সাবালক। তাঁর পিতা তাঁকে যেতে দেননি। কিন্তু এদিন ছিল ব্যতিক্রম একটা ঘটনা। সালমান ফারসি (রা) গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর কাছে মনে হচ্ছে যেন এটা একটা ভিন্ন জগত!! যেহেতু তিনি এর আগে এদিকে আসেন নি। যেতে যেতে হযরত সালমান ফারসি (রা) একটি খৃস্টানদের চার্চের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। যদিও তাঁর চারিদিকে জোরাস্ট্র ধর্মাবলীরা থাকত কিন্তু সেখানে এক আধটা খৃস্টানরাও [যেই গ্রামের পথ দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন] ছিল। হযরত সালমান ফারসি (রা) একটু কৌতুহলী হয়ে উঠলেন, তিনি জানতে চাইলেন যে এই উপাসানালয়ে কি হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি তাদের প্রার্থনা শুনলাম, তাই আমি ঘটনাটা দেখতে গেলাম। আমি চার্চের ভিতর গেলাম এবং আমি তাদের প্রার্থনার ধরন দেখে খুবই আকৃষ্ট হলাম। আমি তাদের ধর্ম দেখে খুবই আশ্চর্য হলাম এবং সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বসে থাকলাম [যদিওবা তাঁর পিতা তাঁকে সকালবেলা কিছু জিনিস আনতে পাঠিয়েছিলেন]। যখন আমি বাড়ি ফিরলাম আমি আমাদের সেই বাড়ি যেটা আমাকে দেখাশুনা করতে বলা হয়েছিল সেখানে পর্যন্ত গেলাম না! আমি যখন বাড়ি পৌছুলাম আমার পিতা আমাকে বললেন, “আমি তোমার জন্য লোক পাঠিয়েছিলাম। আমি তোমাকে নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ব্যাপারটা কি, হয়েছিল কি?” হযরত সালমান ফারসি (রা) বললেন, “আমি একটা চার্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম এবং আমি তাদের ইবাদতের ধরণ দেখে মুগ্ধ হলাম।” আমার পিতা আমাকে বললেন, “ওদের কাছে থেকে দূরে থাক, তোমার ধর্ম ওদেরটার থেকে ভাল।”

হযরত সালমান ফারসি (রা) ছিলেন একজন সাদাসিধে মানুষ [অনেক সময় মানুষের সামাজিকতার কারণে অন্তরে এক, বাইরে প্রকাশ করে আরেক, কিন্তু হযরত সালমান ফারসি (রা) এরকম ছিলেন না। তাঁর ভিতর এধরণের অভ্যাস ছিল না, তিনি সোজাসাপ্টা কথা বলতেন]। তিনি তাঁর পিতাকে বললেন, “না। এই ধর্মটাই বেশি ভাল।” তাঁর পিতা খুবই আশ্চার্য হয়ে গেল এবং মনখারাপ করলো। তিনি তাঁকে বন্দি করে রাখলেন।

চলবে..

বিষয়: বিবিধ

৪৬৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File