বাবা-মা এর প্রতি সন্তানের দোয়া ও কর্তব্য

লিখেছেন লিখেছেন শেখ জাহিদ ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৪৮:৫৭ রাত

সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালবাসা হচ্ছে নিখাদ ভালবাসা। এতে তাঁদের কোনো স্বার্থচিন্তা থাকে না। এ খাঁটি ভালবাসা আল্লাহর দান। শিশু-সন্তানের প্রতিপালনের জন্য আল্লাহ মা-বাবার মনে এ ভালবাসা দান করেছেন। এর কারণেই তাঁরা সন্তানের জন্য কষ্ট করেন। কিন্তু বিরক্ত হন না। সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতার কারণে কত রাত জেগে কাটিয়ে দেন। সন্তান কাঁদে, দুধ পান করে, মা জেগে থাকেন। সন্তানের অসুখ-বিসুখ হয়, বাবা-মা রাত জেগে তার সেবা করেন। আবার দিনে মা ঘরের কাজ করেন, বাবা বাইরের কাজে যান। সন্তানকে ঘিরে তাদের দু’জনের কত চিন্তা-ভাবনা, পরিশ্রম। এজন্য আল্লাহ তাআলা সন্তানকে আদেশ করেছেন সে যেন মা-বাবার সাথে ভাল ব্যবহার করে।

সুরায়ে আনকাবূতে এসেছ (তরজমা) আমি মানুষকে মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার আদেশ করেছি। ২৯ : ৮

অন্য এক আয়াতে এসেছে (তরজমা) ...তোমার পালনকর্তা (দুটি বিষয়ের) আদেশ করেছেন। এক. তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত করবে, দুই. মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। ১৭ : ২৩

এ আয়াতে এক আল্লাহর ইবাদত তথা তাওহীদের পরই বাবা-মা’র সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ পাকের কাছে বাবা-মা’র সাথে সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব কত বেশি।

মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহারের কিছু দিক

ফাওয়ায়েদে উসমানীতে শাইখুল হিন্দ রাহ. ‘সদ্ব্যবহার’-এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ‘মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারের অর্থ হল, তাঁরা যতদিন বেঁচে থাকেন ততদিন নিজের জান-মাল দিয়ে তাদের সেবা ও খেদমত করা এবং অন্তরে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা পোষণ করা। আর তাঁদের মৃত্যুর পর তাদের জানাযা পড়া। দুআ করা, ইস্তেগফার করা, তাঁরা কোনো ওসিয়ত করে গেলে তা সামর্থ্যানুযায়ী পুরা করা। তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা, তাদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রাখা। তাদের নিকটাত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ইত্যাদি’ -পৃ. ৩৭৭

মা-বাবার সাথে নম্র ব্যবহার করা

আল্লাহ তাআলা বলেন,

... ﻭَ ﻗُﻞْ ﻟَّﻬُﻤَﺎ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﻛَﺮِﯾْﻤًﺎ ... ﻭَ ﻗُﻞْ ﺭَّﺏِّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﯿٰﻨِﯽْ ﺻَﻐِﯿْﺮًﺍ .

‘...এবং তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল, ...আর দুআ কর, হে আমার রব! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন। -সূরা ইসরা ১৭ : ২৩-২৪

বিখ্যাত তাবেয়ী সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ‘মাতা-পিতার সাথে এমনভাবে কথা বল, যেমন অপরাধী গোলাম তারা বদ মেযাজী মনিবের সাথে বলে’।

সুতরাং বাবা-মা’র সাথে কখনো রেগে কথা বলা যাবে না, ধমক দিয়ে কথা বলা যাবে না। তাদের সাথে কথা বলতে হবে নম্রভাবে, কোমল ভাষায়। আর তাদের জন্য দুআ করতে হবে-

ﺭَّﺏِّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﯿٰﻨِﯽْ ﺻَﻐِﯿْﺮًﺍ

দুআর ভাব ও মর্মার্থ

এ দুআর অর্থ এই যে, আমি যখন দুর্বল শিশু ছিলাম তখন তারা আমার জন্য কত কষ্ট করেছেন। আমার একটু আরামের জন্য, আমার ভালোভাবে বড় হওয়ার জন্য কত ব্যবস্থা করেছেন। সব ধরনের অসুখ-বিসুখ বিপদাপদ থেকে আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন, নিজেদের আরাম-আয়েশের কোনো পরোয়া করেননি। আজ যখন তারা বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে পড়েছেন আমি-আমার সামর্থ্যানুযায়ী তাদের খেদমত করলেও তাদের পুরো হক আদায় হবে না।

কাজেই হে আল্লাহ! আমি আপনার আদেশ অনুসারে সাধ্যমত তাদের সেবা করছি, এরপর আপনার কাছে আবেদন করছি, আমার বাবা-মা যতদিন বেঁচে থাকেন এবং যখন তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তখনও তাঁদের উপর আপনার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করুন। -ফাতওয়ায়ে উসমানী পৃ. ৩৭৭

কুরআন আমাদেরকে কত সুন্দরভাবে বাবা-মা’র হক আদায়ের শিক্ষা দিয়েছে। কুরআনের শিক্ষাই শ্রেষ্ঠ শিক্ষা। সুতরাং আমরা কুরআনের শিক্ষা অনুসরণ করব এবং বাবা-মা’র সুসন্তান হব।

বিষয়: বিবিধ

১০৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376468
১৯ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৮:০৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : مرحبا بكم بارك الله فيك وجزاك الله خيرا وشكرا لك আল্লাহ মা-বাবার মনে এ ভালবাসা দান করেছেন। এর কারণেই তাঁরা সন্তানের জন্য কষ্ট করেন। কিন্তু বিরক্ত হন না। অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ
376725
২৪ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৩১
হতভাগা লিখেছেন : ঘরে বাবা মাকে রাখলে স্ত্রী অশান্তি করে , ঝগড়া ঝাটি করে ।

এমতাবস্থায় আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে বাবা মাকে ওল্ড হোমে রাখার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় কি না যেখানে তারা কিছুটা হলেও শান্তিতে থাকতে পারবেন ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File