ছুটির দিন আরেকটু বিছানায় গড়িয়ে নেই....

লিখেছেন লিখেছেন আমরা স্বাধীন ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৭:৫৫ রাত



ইনি হলেন সার্জেন্ট। কারেন্টের চেয়েও দ্রুতগতি, তড়িতের চেয়েও করিৎকর্মা।উনি সামনে এসে হাজির হলেন। সব কাগজপত্র উনাকে দেখালাম। উনার কিছুতেই মন বসলোনা। তারপর, কি আর করা। সেই আগের মতো- গোপন চুক্তি হলো, আর আপনার এই অসহায় বান্দার আরেকবার মুক্তি মিললো।

ভাবলাম,এবারতো কিছু খেতে হবে। গতএকমাসে বলতে গেলে না খেয়েই আছি।একটা বেশ ভালো রেস্টুরেন্ট দেখে ক্ষিদা যেন চেগিয়ে ওঠলো। মোরগ, খাসী আর ডিম দিয়ে বেশ ভালো করে খেয়ে আবার রাস্তায় নামলাম। শরীর থেকে দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে। কাঠের প্রথম চালান নিতেই এ ত্রাহি অবস্থা।শরীর একটু ঠান্ডা হওয়ার জন্য এক গ্লাস তাজা ফলের রসও টেনে দিলাম।

এমন সময় দেখি পত্রিকার হকার। এ কয়দিন দেশের আর কোনো খবর নেয়া হয়নি।

পত্রিকার শিরোণাম দেখেই মাথা চড়কির মতো ঘুরে ওঠলো।

"শহরের রেস্টুরেন্টগুলো মরা মোরগ, গরু,ছাগলের মাংস দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।

বিষাক্ত ফরমালিন যুক্ত ফল নানা ক্যামিকাল রঙ মিশিয়ে জোস হিসাবে বিক্রি"-

ইয়া খোদা, নাজানি কি হারাম জিনিস এই কিছুক্ষণ আগে পেটের ভিতর গেলো। শরীরের ক্ষতি হয় হোক। কিন্তু মরা মোরগ, গরু,ছাগলের মাংসতো পুরাই হারাম । ফরমালিন তবে হালাল হবে নাকি হারাম হবে জানা নেই। না জানি কি জিনিস পেটের ভিতর ঢুকলো। রহম করো মেহেরবান> এসব চিন্তা করতে করতে আর পেটের ভিতর ড্রামের আওয়াজ শুনতে শুনতে গাড়ীতে এসে বসলাম।

সবেমাত্র গাড়ী চলতে শুরু করেছে। এমন সময় দেখি গাড়ীর সামনে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন নিয়ে আরেক বান্দা হাজির। না জানি ইনার আবার কোন ধান্দা। নামতে বলার সাথে সাথেই নামলাম। বললেন- সুন্দরবন ধ্বংস করে এতোগুলো কাঠ কোথায় নেয়া হচ্ছে।

আমি বললাম- আপনি আবার কে ভাই? দুঃখিত চুল ছোটতো তাই ভাই মনে করেছিলাম। চেহারা দেখে এখন মনে হচ্ছে বোনই হবেন।

বললো- আমাকে চিনোনা। আমি দেশের একজন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক । সাংবাদিকরা কেঁচো খুড়ে ক্যাচাল বের করে, আর আমি রানা প্লাজা খুঁড়ে ম্যাকাপ নায়িকা বের করি। তা সুন্দরবন এভাবে ধ্বংস করছেন কেন বলেন?

এখানে সুন্দরবন কই পাইলেন? এটাতো রাঙামাটি বনের কাঠ।

হাহাহহাহা। সেম জিনিসইতো হলো। আগেই বলেছিলাম না-আমি একজন অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক। তাই এটা সুন্দরবন থেকে মেরে দেয়া কাঠ -আমি প্রমাণ করবোই।

বিশ্বাস করেন- একথা শুনার পরপরই আমার শুধু বারবার মুসা'র কথা মনে হচ্ছিল। এভারেস্টের মুসা না। ফেরাউনরে যে একটা জোরে চটকানা মেরেছিলো সেই মুসা।-ইস যদি এরকম করে একটা মারতে পারতাম-একেবারে কানচাবা বরাবর। কিন্তু নারী অধিকার বলে কথা ।কি জানি আবার কি হয়/ তাই ধৈর্য্য নিয়ে সহ্য করে উনার কথা শুনে গেলাম।

উনি বলা শুরু করলেন-

রাঙা মানে কি? নিশ্চয়ই সুন্দর। আর বন ঐ খানে যা সুন্দরবনেও তা।

তাই রাঙামাটির বন আর সুন্দরবনের বন-একইতো হলো। বলেই উনি হাত দিয়ে জুটা করে উনার খাটা চুলের মাঝে একটি দেখার মতো পাউলি খেলালেন।

বুঝলাম আমার ওপর ঘা বাড়তেছে। সাংবাদিকতো সাংঘাতিক তার ওপর যদি হয় নারী সাংবাদিক তাহলে এই ঘাতো ডিজিটাল ক্যাল দিয়েও হিসাব করা যাবেনা। তাই এবার একটা বড়দানে আপোষে আসলাম।

প্রথম কাঠ চালানের কাহিনী এখানেই শেষ করি। এভাবে ছয়মাস কাঠ চালান আনতেই কী পরিমাণ হুজ্জুতি যে গেছে-ইয়া মাবুদ।

সবকিছু গুছিয়ে এবার কাজ শুরু করে দেবো। সময় আছে আর মাত্র ছয়মাস।

পরদিন ভোরেই আপনার নাম নিয়ে কাজ শুরু করবো বলে ঘর থেকে বের হলাম। দেখি কয়েকজন- দরজার সামনে। নয়া মুসিবত হাজির হলো। বললো- এতোবড় কাজ কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হচ্ছে? আর ইন্জীনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের নকশাঁ'র অনুমোদন নেয়া আছে কিনা?

পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। শুরু হলো ফাইল চালাচালি। এই বিল্ডিং থেকে ঐ বিল্ডিং এ পাঠায়। দশতলা থেকে তিন তলায়, আবার তিন তলা থেকে সাত তলায় লেফ্ট রাইট।কিন্তু নকশাঁ আর পাশ হয়না। ঐ দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। জমিনের ওপর রাখা সব কাঠ তাদের নিজের তাগিদে পচতে শুরু করেছে। ঠেকাতো আমার। ওরা পইচা মইরা গেলেই বেঁচে যায়। এই দুনিয়ায় কিছু বান্দাদেরও সেই গতি । মরতে পারলেই বেঁচে গেলো। আর বেঁচে থাকলেই মরে গেলো।

বিল্ডিং এ দৌড়াদৌড়ি করে ঘরে ফিরতেই পেলাম একটা খাম। স্থানীয় সংগঠনের একটা বিশেষ দিবস উদযাপনে আমার উপরে বিশেষ চাঁদা ধার্য্য করা হয়েছে।

পুরা মাথায় হাত। সময় ফুরিয়ে আসছে। বলতে গেলে নিজের কাছেই পাত্তি শর্ট। একসপ্তাহ অপেক্ষার পর। সাণ্গ পাঙগ নিয়ে সংগঠনের সভাপতি হাজির। এবার একেবারে ডাইরেক্ট থ্রেট। ১ দিনের মধ্যে চাঁদা না পেলে কাঠে আগুন লাগবে। আর যাওয়ার আগে ১টা পুচকা পোলা দাড়ি ধরে কিভাবে যে হেচকা টান দিয়ে গেলো সেকথা আর না বাড়াই।এমনিতেই কিতাবের পৃষ্ঠা বড় হয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা,অনেক শুনলাম। কিন্তু এমন করে কাঁদছো কেন বলো?

সেটা হলো আরো করুন। এর মধ্যে শুরু হলো আরেক ঝামেলা। একদল হুজুর বলেন -এটা পুরো নাফরমানি। এরকম কোনো আদেশ হতে পারে না।

আরেকদল বলেন- কাঠ সব দান করে দিয়ে তাওবা পড়তে হবে নতুবা মুরতাদ ফতোয়া জারি হবে, কল্লা কাটারও ফতোয়া আসতে পারে। এইখানে আপনাকে একটা কথা না বলে পারছিনা। ইশারা দেনতো বলি।

কেউ কাউকে গালি দিলো- তখন মুরুব্বিরা বলে -মাপ করে দাও এটা আল্লাহ দেখবে।

কেউ কারো হক মেরে খেলো- ঠিকই মুরুব্বিরা বলে- মাপ করে দাও -আল্লাহ বিচার করবে।

কেউ কাউকে নাজেহাল করলো- একই বিচার - মাপ করে দাও আল্লাহ আছেনা। উনি এর বিচার করবেন।

কিন্তু কোনো বেশ্যা যখন ( ইয়া মাওলা রাগের মাথায় কি বলে ফেললাম) ধর্মের ওপর ক্ষেপে যায় তখন হয় একে কতল করো, না হয় দেশ ছাড়া করো। তখন আর বিচার হুজুররা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়ার অপেক্ষা করেননা। গর্দান কাটো আর স্বর্গ ঢুকে পড়ো। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে একেবারে বাগোয়াস কত চটি লেখক /লেখিকা আন্তর্জাতিক সিদ্ধি বাগিয়ে নিলো।

বুঝলাম।তা তুমি কাঁদছো কেন? নৌকা কি একেবারেই তৈরী হয়নি।

আপনিতো সব কিছুই জানেন।

নৌকা বানানোর ফাইল ছয়মাস ধরে লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের নতুন করে চাঁদা না দেয়ায় কাঠের স্তুপের ভিতর চোরাচালানীর মাল রেখে দিয়ে সেটার ছবি তোলে আজকের পত্রিকায় বিরাট রিপোর্ট ছেপেছে। কিছু না বলে পিকনিক পার্টি অনেক কাঠ ওদের গাড়ীতে করে নিয়ে গেছে। কিছু কাঠের পচন ধরেছে। নানারকরম হুমকি ধামকি চলছে।এর ওপর আবার,স্থানীয় দুগ্রুপের ব্যাপক মারামারিতে কিছু কাঠে আগুন লাগিয়েছে -এখানে আসার আগে টিভিতে দেখলাম এ ব্যাপারে দুজনের মাঝে ব্যাপক কথা কাটাকাটি হচ্ছে। একজন আরেকজনকে নগদে গুম করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। এই ফ্যাসাদে পড়ে কি করি আপনিই বলেন।

এসব কথা শেষ করতে না করতেই দেখি আকাশ পরিস্কার। ধীরে ধীরে মেঘ কেটে যাচ্ছে। বাতাসের গতি আর তেমন একটা নেই। ঝড় বৃষ্টি যেন থেমে গেছে অকস্মাত।নীরব, শান্ত, সুন্দর হয়ে আসছে প্রকৃতি।

বললাম, ইয়া মাবুদ। ঝড় থেমে গেলো, মেঘ কেটে গেলো। আর কি তবে প্লাবন হবেনা। দেশ ধ্বংস হবেনা?

শ্রষ্ঠা বললেন- দেখো নূহা- আমি চাইলে সৃষ্টি করি, চাইলে ধবংস করি।আবার ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো কিছুকে চাইলে নতুন করে সৃষ্টিও করি। তবে যা একবার ধ্বংস হয়ে গেছে, তা কে আবার নতুন করে ধ্বংস করিনা। ধ্বংস হওয়া জিনিসকে নতুন করে গড়া যায়, কিন্ত যা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে-তা কে নতুন করে ধ্বংস করার আর কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করিনা। তোমার কাছ থেকে যা শুনলাম এখানে আর ধ্বংস করার মতো কিছু অবশিষ্ট নাই।

এমন সময় শুনি চীৎকার চেচামেচি। কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলাম। মায়ের গলার আওয়াজ।কি সকাল থেকে নুহা, নৌকা,ধ্বংস, সৃষ্টি শুরু করেছিস। এতো ডাকা ডাকছি, ঘুম ভাঙ্গার কোনো লক্ষণ নেই। ছুটির দিনে দেরীতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আর ছাড়তে পারলিনা।

তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে ভুলে যাওয়ার আগে পুরো স্বপ্নটা নিজের ডায়েরীতে লিখে রাখলাম। একবার মন চাইলো ব্লগে অথবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস হিসাবে লিখি, অথবা পত্রিকায় পাঠিয়ে দেই। আবার চিন্তা করলাম, দূর এসব লিখে লাভ কি হবে,খামোখা ঝামেলায় জড়ানো। এর চেয়ে বরং ভালো, ছুটির দিন আরেকটু বিছানায় গড়িয়ে নেই।

আরিফ মাহমুদ, (ছোট গল্পকার)

আটলান্টা, যুক্তরাষ্ট্র,

বিষয়: বিবিধ

১০৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File