লেবাননে বাংলাদেশি নারীদের কান্না থামাবে কে?

লিখেছেন লিখেছেন বাশার ২৪ মে, ২০১৪, ১২:৪৪:২৭ রাত

#breaking

লেবাননে বাংলাদেশি নারীদের কান্না থামাবে কে?

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিকের দেশ লেবাননে; যেখানে কর্মরত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি নারীদের ৬০ হাজারই গৃহপরিচারিকা।

‘কাফা’ ও ‘লিগ্যাল এজেন্ডা’ নামের দু’টি সংস্থা পরিচালিত বাংলাদেশি ও নেপালি নারীকর্মীদের উপর অতি সাম্প্রতিক বিশেষ জরিপ অনুযায়ী, ৮২ শতাংশ নারীকর্মীকে তাদের মতের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করে থাকেন ৬২ শতাংশ নারী। এক মাস বা বেশি সময়ের জন্য বেতন আটকে রাখা হয় ৫৪ শতাংশ নারী শ্রমিকের। কখনও একা বাইরে যেতে দেওয়া হয় না ৯০ শতাংশকে। আর সাপ্তাহিক ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত ৯১ শতাংশ নারী।

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাইরে থেকে তালাবদ্ধ রেখে কাজ করতে বাধ্য করা হয় ৫০ শতাংশ নারী শ্রমিককে। রান্নাঘরে ঘুমান ১৯ শতাংশ, ব্যালকনিতে ৭ শতাংশ, বাথরুমের কাছেও ঘুমাতে বাধ্য করা হয় অনেককে। ভালো খাবার খেতে দেওয়া হয় না ৩২ শতাংশকে। মারাত্মক যৌন নিগ্রহের শিকার শতকরা ১০ শতাংশ নারী। বাংলাদেশি নারীকর্মীদের উপর অব্যাহত যৌন নির্যাতনের ব্যাপকতা বিশেষভাবে হাইলাইটেড হয়েছে উক্ত জরিপে।

মরুপ্রান্তর ভেসেছে আজ আমাদেরই মা-বোনদের চোখের জলে, লেবাননের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে চাপা কান্নায়। তাদের দেখভাল করতে সরকার আদৌ আন্তরিক কি-না বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করেটা কি- এসব প্রশ্ন বিগত দিনে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা নিয়েও অতীতে কথা উঠেছে বহুবার। কার কানে কে দেবে পানি? আগে জর্ডান থেকে দেখা হলেও গত বছর লেবাননে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ দূতাবাস।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এমন একজন ব্যক্তি লেবাননে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন যার স্ত্রীর গৃহকর্মী নির্যাতনের মতো অপকর্মের খেসারতে গত বছর সুইডেনে ইমেজ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ, বিনষ্ট হয় লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি। লেবাননে দায়িত্বরত বর্তমান রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার তখন স্টকহলমে। সুইডেন ছাড়াও নরওয়ে ফিনল্যান্ড ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড, এতোগুলো দেশের বিশাল দায়িত্ব পালনে তিনি কতটা উপযুক্ত ছিলেন তা নিয়ে কানাঘুঁষা হয় বিভিন্ন মহলে। এমনও শোনা যায়, ওই সময় দায়িত্বে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে ২০১০ সালের অক্টোবরে বেশ ক’জন সিনিয়র কূটনীতিবিদকে ডিঙিয়ে গওসোল আযম সরকারকে প্রথম বারের মতো রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সুইডেনে।

পাঁচটি দেশের দায়িত্বে তার সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের আগেই ঘটে অঘটন। স্টকহলমের অভিজাত বাড়িতে কর্মরত গৃহপরিচারিকা তৈয়বাকে অনেক আগ থেকেই নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন করতেন রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী সাদিয়া আযম। তৈয়বাকে কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল ঢাকা থেকে। দিনকে দিন টর্চারের মাত্রা যখন প্রায় সীমাহীন, এমন এক সময় গত বছর মার্চে অত্যাচার-নির্যাতন আর সইতে না পেরে তৈয়বা কোনোমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা গিয়ে ওঠেন পুলিশ অফিসে। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জানাজানি হয়ে যায় সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারের স্ত্রীর গৃহপরিচারিকা তৈয়বাকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা স্টকহলম পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর যা হওয়ার তাই হলো। জিরো টলারেন্স। সাদিয়া আযমকে সুইডেন ছাড়ার নির্দেশ দেয় সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কয়েক মাসের মাথায় গ্রীষ্মকালীন ছুটির পরপরই রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারকে সুইডেন থেকে সরিয়ে নেয় বাংলাদেশ সরকার। স্টকহলম টু বৈরুত। নির্মম বাস্তবতায় এভাবেই রচিত হয়েছিল নেক্কারজনক এ ট্র্যাজেডি।

সময়ের পরিক্রমায় লেবানন প্রবাসী দুই লাখ বাংলাদেশি নারীদের সুখ-দুঃখ দেখভালের দায়িত্বে আজ সেই রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার। তার মধ্যে ৬০ হাজার বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকার অধিকার রক্ষায় তথা নির্যাতিতা বাংলাদেশি নারীকর্মীদের আর্তনাদে তিনি কি ব্যথিত হবেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিনিয়র কূটনীতিবিদ আফসোস করেই বললেন, গৃহপরিচারিকার স্বার্থ রক্ষায় যিনি নিজের ঘরেই ছিলেন উদাসীন, তিনি কি করে আজ লেবাননে হাজার হাজার স্বদেশী নারীদের কান্না থামাবেন?

বিষয়: আন্তর্জাতিক

৯৩৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

225230
২৪ মে ২০১৪ রাত ০১:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বাংলাদেশের এই উচ্চশিক্ষিত! মেধাবি! কুটনিতি বিদরা প্রবাসি শ্রমিক দের কষ্টের উপার্জন থেকে ডলারে বেতন নেন আর তাদের কে উপেক্ষা করে নিজেদের ব্রাম্মনত্ব বজায় রাখেন।
225254
২৪ মে ২০১৪ রাত ০২:২৩
বাশার লিখেছেন : ধন্যবাদ
225278
২৪ মে ২০১৪ সকাল ০৫:৩৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : ক্ষমতাবান লোকেরা তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত, এসব ব্যাপারে তাদের কোন মাথা ব্যথা বা দায়িত্ব বোধ আছে কিনা সন্দেহ! খুবই অমানবিক!!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File