যখন দেশেই চলছে IPL তখন দূরে যাবেন কেন!

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মাঝি ২৩ মে, ২০১৬, ০৬:৫০:১৫ সন্ধ্যা



ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আলোচিত সমালোচিত আসরের নাম IPL. যার পুরো নাম হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ। ক্রিকেটের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য অবশ্য অনেকেই এই প্রিমিয়ার লীগকে ভালো চোখে দেখেন না। তবে উপর্যুপুরি চার-ছক্কা হইহই মার্কা দর্শকের জন্য তা অনেক আনন্দ ও বিনোদনের মাধ্যমও বটে। ফেসবুকে আমার এক সিনিয়র ভাই মজা করে লিখেছেন – “আমার মতো সিজনাল দর্শকদের জন্য ভালই। এক ইনিংসেই সাকিবের ব্যাটিং ও মুস্তাফিজের বলিং...”

বিষয়টা দারুণ মজার তাই না! একই দলের প্লেয়ার তৃতীয় একটি পক্ষের হয়ে খেলতে গিয়ে মুখোমুখি অবস্থান। তাও আবার বিশ্বসেরা দুই খেলোয়ার, যাদের নিয়ে আমরা হরহামেশাই গর্বে বুকের ছাতি ফাটিয়ে ফেলি! ভারত মাতা কি জয়…! এমন আয়োজন দাদাদের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু আমার আজকের লেখাটি কিন্তু আসলেই ক্রিকেট নিয়ে নয়। তবে অবশ্যই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ লীগ নিয়ে। ভারত যে শুধু এই প্রিমিয়ার লীগের ভেলকি ক্রিকেটেই লাগিয়ে দিয়েছে তা কিন্তু নয়। এ ভেলকি লাগিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও। একদিকে বাংলার আমোদপ্রিয় যুব সমাজকে ক্রিকেটীয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ দেখিয়ে ব্যস্ত রাখছে। আর অন্যদিকে বাকী সাধারণ জনগণকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ দেখিয়ে ব্যস্ত রাখছে।



এই প্রিমিয়ার লীগের গ্রান্ড ওপেনিং হয় ৫ জানুয়ারী ২০১৪ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে। এরপর শুধু বাংলার মানুষ এই প্রিমিয়ার লীগের ভেলকি একের পর এক দেখেই চলেছে। খেলার মাঠে সাকিব-মোস্তাফিজকে যেমন মুখোমুখি দেখেছে, ঠিক একইভাবে দেখেছে রাজনীতির নামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমে এসেছে এক অসীম আধার রজনী। যেখানে বাকশালের প্রেতাত্মাদের একদলীয় শাসনে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী। আর এরই মধ্যে রাজনীতির ময়দানে নাট্যমঞ্চের মতই বিরোধী দলের রোল প্লে করছে গৃহপালিত একটি বিরোধী দল। জনগণ সবই দেখছে, সবই বুঝতে পারছে কিন্তু টু টা শব্দ করার যেন ক্ষমতা নেই।

এইতো মাত্র ক’দিন পূর্বে নারায়নগঞ্জে পিয়ার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে এমনই একটি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচ দেখলো দেশের মানুষ। ক্ষমতান্ধ আওয়ামী দস্যুদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনা নতুন কোন খবর নয়। দেশের এমন কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেখানে সোনার ছেলেরা এধরণের ঘটনা ঘটায়নি। কিন্তু ব্যতিক্রম হয়ে গেল শ্যামল কান্তি ভক্তের বেলায়। প্রিমিয়ার লীগের অংশ হিসেবে হঠাৎ করেই দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে একটি বিশেষ ধর্মের শিক্ষকদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের অবমাননা করার খবর ইদানিংকালে খুব বেড়ে গেছে। অথচ এমন কোন নজির নেই যে, ইসলাম ধর্মের অনুসারী কোন শিক্ষক ওই বিশেষ ধর্ম নিয়ে কটুক্তি তো দূরের কথা, সাধারণ কোন উক্তি করেছেন! অর্থাৎ এটা খুব পরিষ্কার যে, পরিকল্পিতভাবেই হঠাৎ করে এই অপকর্মটি বিশেষ কারও ইঙ্গিতে ঘটানো হচ্ছে।

এবার আসুন আইপিএলের মূল চিত্রটা দেখার চেষ্টা করি। সাকিব-মোস্তাফিজ যেমন একই দলের খেলোয়াড় হয়েও আইপিএলের ভিন্ন দুটি দলের হয়ে খেলছেন, ঠিক একইভাবে এদেশের চেতনাব্যবসায়ী, আধিপত্যবাদের দোসর গোষ্ঠি রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারতীয় প্রিমিয়ার লীগের ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে খেলছে। এখানে ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারীও একটি বিশেষ দলের, থাপ্পড় মেরে কান ধরে উঠবস যিনি করিয়েছেন তিনিও অবৈধ অনির্বাচিত সরকারের সাজানো বিরোধী দলের অনির্বাচিত সংসদ সদস্য, যারা এহেন কর্মের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে কান ধরে ওঠবসের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে তারাও ওই নির্দিষ্ট একটি দল ও মতের। আর এ পুরো খেলারই আয়োজক ভারত। দেশে যে বিরোধী দল বলতে কিছু থাকার কথা বা আছে, অথবা দেশে যে অনির্বাচিত বা অবৈধ সরকারের শোষণ চলছে তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ একের পর এক ইস্যু তৈরী করে জনগণকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এরই ভাঁজে ভাঁজে চলছে দাদাবাবুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রতিযোগিতা। দেশপ্রেমিক নেতাদের হত্যা (বিশেষতঃ যারা ভারতের আধিপত্যবাদ বিরোধী ভূমিকা পালন করেন), বন্দর দখল, জঙ্গল দখল, পাহাড় দখল, নদী দখল, বাজার দখল, মিডিয়া দখল, চাকরির বাজার দখল, সংস্কৃতি দখল, সর্বোপরি রাষ্ট্রপরিচালনার মূলমন্ত্র রাজনীতি দখলের মাধ্যমে কার্যত দেশটাই আজ দখল করে নিয়েছে ভারত।

আর সাধারণ জনগণ বসে বসে শুধু সেই ক্যরিশমেটিক ভেলকিবাজী দেখেই যাচ্ছে যেন কিছুই করার নেই। আর থাকবেই বা কি করে? গুম, খুন, হত্যা ও পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে যেভাবে নির্দয়ভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে, তাতে দেশের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে সোচ্চার কন্ঠে আওয়াজ তুলতে প্রায় ভুলতে বসেছে। আর তাই জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু করে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রেসক্লাবগুলো হয়েছে গৃহপালিত আন্দোলনের শেষ আশ্রয়স্থল। সেখানে অনুমতি মিললে কেউ আন্দোলন করে আর না মিললে করে না। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের ব্যানারেও শোভা পাচ্ছে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর ছবি!

রাজনীতির ময়দান থেকে যতদিন পর্যন্ত এই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের অশুভ খেলা বন্দ না করা যাবে, ততদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের জন্য কোন আশার বাণী নেই। আর এই খেলা সাঙ্গ করতে হলে জনগণকে দর্শকের সারি থেকে খেলোয়াড়ের সারিতে নেমে আসতে হবে। অন্যথায় দেশটা মুজিবীয় দর্জিদের হাত ধরে সিকিম হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

বিষয়: বিবিধ

২০৭৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369895
২৩ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৯
আফরা লিখেছেন : লিখা টা দুইবার এসেছে ।
২৩ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৩
306955
স্বপ্নচারী মাঝি লিখেছেন : দুঃখিত, ঠিক করে দিয়েছি। ধন্যবাদ খেয়াল করার জন্য।
369903
২৩ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৭
369943
২৪ মে ২০১৬ সকাল ০৯:১২
হতভাগা লিখেছেন : হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতা । তাই এরকম গোছের কাউকে দেখলে উনাদের দেবভক্তি মজেগে ওঠে। ভক্ত স্যার তো আরেক কাঠি সরেস ।
369962
২৪ মে ২০১৬ দুপুর ১২:০১
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : শিক্ষক শ্রী শ্যামল কান্তি বাবুকে ধর্ম বিদ্বেষের জন্য এম পি সেলিম ওসমান সাহেব কান ধরিয়ে ওঠবস করালেও তার শীর নত করাননি। কান ধরে উঠবস করার সময় শ্যামল বাবু পড়ে গেলেও সে সামনের দিকে উপুড় হয়ে নাপড়ে, পেচনের দিকেই পড়েছিলেন। যার কারণে তাঁর পাচা মাটিতে লাগলেও শীর উঁচুই ছিল। কিন্তু জনাব নাসিম সাহেবের পায়ে মাথা ঠুঁকে তিনি শুধু তার শীর নয় সকল কান ধরা জাতির শীর নত করে, বর্তমান শিক্ষা কমিশনের 'শিক্ষকের মর্যাদা'নামক কবিতা সিলেবাস থেকে বাদ দেয়ার উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করলেন বাবু। নজরুলের ''চির উন্নত মম শীর'' কেও মিথ্যা প্রমান করলেন। রবীন্দ্র নাথের "ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা''এর পরিবর্তে বাবু তার কর্মের মধ্যমেই বুঝিয়ে দিলেন 'ও নেতা তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা '।রবীন্দ্র নজরুলের দিন শেষ, শ্যামল বাবুদের বাংলাদেশ। ধর্ম অবমাননায় ক্ষতি নাই, কান ধরলেই লজ্জা পাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File