দ্য জার্নি টু ফেইথ- ১১

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ০৯:৫০:০৬ রাত



"... ইসলামের মাঝে আমি ধীরে ধীরে আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেতে লাগলাম! আমার মনে হতো আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বানিয়ে আবার আমাদেরকেই পরীক্ষার মধ্যে ফেলে কষ্ট দিচ্ছেন কেন। এটা তো Fair না! অথচ ব্যপারটা মোটেও এমন না। যদি এমন হতো যে আল্লাহ্‌র আমাদের পরীক্ষার সাগরে ভাসিয়ে আমাদের কোন খেয়ালই রাখছেন না, তবে সেটা নাহয় অবিচার হতো। কিন্তু আল্লাহ্‌ আমাদের যে পরীক্ষা নিবেন, সেটা ১৪০০ বছর আগে থেকেই আমাদের জানিয়ে রেখেছেন। কুরআনে আছে,

**“তারা কি মনে করে তারা বলবে তারা ঈমান এনেছে, আর তাদেরকে কোন পরীক্ষা করা হবে না?”**

**[সূরা আনকাবুত-আয়াত ২]


শুধু জানিয়ে দিয়েই শেষ না, আল্লাহ্‌ তা’আলা সেই পরীক্ষায় পাশ করতে কি কি করতে হবে, সবকিছুই কুরআনে বলে দিয়ে গেছেন। এমনকি রসূল(সাঃ) কে রোল মডেল হিসেবে পাঠিয়ে আমাদেরকে চাক্ষুষ ডেমো পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানআল্লাহ্‌! তাহলে এটা কিভাবে অবিচার হলো! টিচার সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছাত্রকে পড়ালো, ইম্পর্ট্যান্ট টপিক দাগিয়ে দিল। ছাত্র কিছুই পড়লো না। দিন শেষে সেই কেয়ারিং টিচারকেই ছাত্রের খাতায় বড় করে রসগোল্লা দিতে হলো। আর দোষ এখন টিচারের যে ছাত্র ফেইল করেছে?

আমার এটাও মনে হতো যে আমাদেরকে এভাবে বানিয়ে, পরীক্ষা করে, জান্নাত-জাহান্নাম দিয়ে আল্লাহ্‌ কি পাচ্ছেন? তাঁর কি লাভ হচ্ছে? সূরা ইখলাসে আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম! সুবহানআল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌ স্বয়ং-সম্পূর্ণ, স্বাধীন সত্ত্বা! আমাদের প্রার্থনার তার কোন প্রয়োজন নেই। সারা পৃথিবীর সবাই আল্লাহ্‌র ইবাদাত ছেড়ে দিলেও এতে আল্লাহ্‌র রাজত্য থেকে একটা কিছু কমে যাবে না, আবার সারা দুনিয়ার সবাই মিলে আল্লাহ্‌র ইবাদাত করলেও আল্লাহ্‌র মাহাত্ম্য কিছু মাত্র বেড়ে যাবে না। আমরা নামাজ পড়ি আমাদের নিজেদের আত্মাকে সুস্থ রাখতে। আমরা ইসলাম মানলে আমাদের-ই লাভ! আমরাই দুনিয়া-আখিরাতে ভালো থাকবো। এতে আল্লাহ্‌র এক চুল লাভ বা ক্ষতি হবে না। তিনি আমাদের রব, আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তিনি সবচেয়ে ভালোবাসেন। আমরা এত অকৃতজ্ঞ বান্দা, তারপরো প্রতি মুহুর্তে আমাদের খেয়াল রাখেন। আমাদের কে অনেকের থেকে অনেক ভালো রেখেছেন, অনেক সুস্থ রেখেছেন। তাঁর দিকে এক পা এগিয়ে গেলে, আল্লাহ্‌র বান্দার দিকে দশ কদম এগিয়ে আসেন। আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ করলে আল্লাহ্‌র বান্দাকে কখনো ফিরিয়ে দেন না। হয় দুনিয়াতে নাহলে আখিরাতে এর প্রতিদান দেন। সুবহানআল্লাহ্‌! সেই আল্লাহ তা’আলাকে খুশি করার জন্যে সামান্য চেষ্টা করে যাওয়াটা আসলে কি এতই কঠিন আমার জন্যে ?

আমি যত ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকি, ততই ইসলামকে ভালোবাসতে থাকি! .. “And in Islam I found Love! Alhumdulillah!” তবে মাঝে মাঝে আমার কিছু কিছু বিষয় নিয়ে বেশ কনফিউশান লাগতো। যেমন নবী(সাঃ) এর এতগুলো বিয়ে করা আমার কাছে কেমন যেন লাগতো! তখন সোজা আয়িশার কাছে চলে যেতাম। আয়িশা আমাকে অনলাইনে কিছু লেকচার শোনার লিংক দিতো, নাহলে আরো কিছু বইয়ের নাম দিত পড়তে। আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে আল্লাহ্‌ ঠিক-ই সব প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে দিতেন। জানলাম মহানবী(সাঃ) বহু বিবাহের প্রত্যেকটার পিছনে যথেষ্ট প্রজ্ঞা ছিল। তার বিয়ে গুলি তিনি করেছিলেন ইসলামের স্বার্থেই, আল্লাহ্‌র আদেশে। তার সাথে সাফিয়া(রাঃ) এর বিয়ের পরে ইহুদিদের একটা বড় অংশ ইসলাম গ্রহণ করে। ছোট থাকতেই আয়িশা(রা) এর সাথে বিয়ে হয়ে যাবার জন্যে আয়িশা(রাঃ) ছোট থেকেই নবী(সাঃ) সাথে ইসলাম শিখে শিখে এমনভাবে বড় হয়েছেন যে পরবর্তীতে তিনি-ই স্কলার হয়ে উম্মাহ্‌কে ইসলাম শিখিয়ে গিয়েছেন। শুধু তাঁর মাধ্যমেই আমরা ২০০০ এর বেশি হাদীস জেনেছি। এরকম Wisdom আছে প্রত্যেকটা বিয়েতে! নবী(সাঃ) সব বিবিদের জীবনী নিয়ে একটা বই আয়িশা আমাকে পড়তে দিল। বইটা পড়ে আমার সব কনফিউশান দূর হয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ্‌! আর সে সময় আরবে বহু বিবাহ কোন ব্যপার-ই ছিল না। এখনকার সমাজে এটা তেমন প্রচলিত না হলেও তখন এটা একটা নর্মাল ব্যপার ছিল। আর এ নিয়ে কত নাস্তিক মূর্খের মতন আমাদের নবী(সাঃ)কে ব্যঙ্গ করেন!!.

এর পরের কনফিউশান ছিল- জিহাদ আর চারপাশে যা ঘটছে!!! সুবহানআল্লাহ্‌! বিসমিল্লাহ বলে মদ খাওয়া শুরু করলেই যেমন মদ হালাল হয়ে যায় না, তেমনি “আল্লাহু আকবার’ বলে মানুষ মারলেই সেটা জিহাদ হয়ে যায় না!

ইসলাম ব্যালেন্সড একটা জীবন-ব্যবস্থা! এটা কখনোই নির্বিচারে মানুষ হত্যা সাপোর্ট করে না, আবার অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে চুপ থাকাও সাপোর্ট করে না, এই দুইয়ের মধ্যে ব্যালেন্স করেই ইসলামের বিধান! যুদ্ধের নাম শুনলেই সবার মন খারাপ হয়, মানুষ মারা যাচ্ছে, রক্তারক্তি হচ্ছে– কিন্তু সেই যুদ্ধই যখন ভাষার জন্যে হয়, সেটা ঠিক আছে, দেশের বর্ডার বাঁচাতে হয়, সেটা ঠিক আছে। পাওয়ারের জন্যে হয়, তেলের জন্যে হয়- সেটাও ঠিক আছে,; কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে হলেই- সেটা টেররিস্‌ম!! এ কেমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড! পড়তে গিয়ে বুঝলাম ইসলামের বিরুদ্ধে ব্রেইনওয়াশ্‌ড করার মিডিয়া আর রিসোর্সের-ও অভাব নেই! আলহামদুলিল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ আমাকে রক্ষা করেছেন, নাহলে আমিও তো ব্রেইনওয়াশ্‌ড হয়েই ছিলাম! পড়াশোনা করে, রিসার্চ করে আমি বুঝলাম যে, আরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তো আমাদের-ই শান্তি।

যখন পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ছিল, তখন দেশ খুঁজে যাকাত দিবার মতন একটা গরিব মানুষ পাওয়া যেত না! আর এখন চারপাশে দারিদ্র, যুদ্ধ-বিগ্রহ, অন্যায়, খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি সব মিলিয়ে কি ভয়াবহ অবস্থা! ইসলাম প্রতিষ্ঠিত নেই বলেই এই অবস্থা! সবই যে মানুষের পাপের দুই হাতের কামাইয়ের ফল। :(

যাহোক ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে ততদিনে প্রায় এক বছরের মতন হয়ে গেছে। এভাবেই স্টাডি করে, রিসার্চ করে জানতে জানতে, বুঝতে বুঝতে আমার মন নরম হয়ে আসতে লাগলো। আমার মনে হলো সারাজীবন মুসলিম পরিবারে বড় হয়েও আমি তো আসলে একটা কাফির-ই ছিলাম! আমার মনে হচ্ছিল আমি নতুন করে কাফির থেকে মুসলিম হলাম। নরম হয়ে যাওয়া অন্তরে ছাঁচ কেটে নিজের নড়বড়ে ঈমান টাকে বসিয়ে দিলাম! ইসলামকে আমার জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিলাম! কিন্তু মুখে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌...” তো সবাই বলে। সেটাকে কাজে পরিণত না করলে ঈমানের আর কি মূল্য!

সেখানে গিয়েই আমি আটকে গেলাম! মুখের খই ফোটানো অনেক সহজ, মনে মনে আল্লাহ্‌কে ভালোবাসি, রসূলকে ভালোবাসি বলা- সেটাও সহজ, কিন্তু সেটাকে কাজে প্রমাণিত করা — বললেই হয়ে যায় না!! আমার এত দিনের একটা লাইফস্টাইল, এভাবে এতগুলি বছর ধরে আমি বড় হয়েছি – দুম করে কিভাবে সব ছেড়ে দিবো! আমার মত স্টাইলিশ, ফাস্ট একটা মেয়ে পড়বে হিজাব!! পড়বে নামাজ আর করবে রোযা!!!

আমার অন্তরে তখন চেঞ্জ হবার ইচ্ছার কোন কমতি নেই, কিন্তু সাহস করে কিছুতেই শুরু করে ফেলতে পারছিলাম না। “এ কি ভাববে, ও কি ভাববে!” -- কত রকমের ফালতু চিন্তা! আমার মনে হচ্ছিল আমি উঁচু পাহাড়ের উপত্যকার একদম কোণা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি! জাস্ট একটা ফাইনাল পুশ্‌, আর আমি ঝাঁপিয়ে পড়ব আল্লাহ্‌র কাছে নিজেকে সঁপে দিতে!

আমাদের সেকেন্ড সেমিস্টার তখন প্রায় শেষের পথে, আর তখনই আমাদের কমিউনিটিতে ভয়ঙ্কর একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেল! কেউ জানতো না যে সেই এক্সিডেন্ট-টাই ছিল আমার জন্যে আল্লাহ্‌র পাঠানো সেই “ফাইনাল পুশ” !!

( চলবে ইনশাআল্লাহ্‌ ... )

[ সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত, ছদ্মনাম ব্যবহৃত হল]...

বিষয়: বিবিধ

২১৩৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376213
১৪ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:৫৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ অনেক অনেক ভালো চিন্তা। সুন্দর ,অতি সুন্দর....দারুন চিন্তা।
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২১
311984
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
376216
১৪ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ১২:১৩
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : লিখে যান আপু পরে পড়ব ইনশাআল্লাহ
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২১
311985
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
376221
১৪ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০১:৫৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্লাহ্‌র আমাদের পরীক্ষার সাগরে ভাসিয়ে আমাদের কোন খেয়ালই রাখছেন না তবে সেটা নাহয় অবিচার হতো তিনিতো আহকামুল হাকেমিন। ভালো লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২১
311986
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৫৭
311996
কুয়েত থেকে লিখেছেন : السلام عليكم ورحمة الله وبركاته بارك الله فيك وجزاك الله خيرا وشكرا لك يا اختي الكريمة Good Luck Good Luck
376464
১৯ আগস্ট ২০১৬ রাত ১২:১৫
আমীর আজম লিখেছেন : একটানা পড়ে যাচ্ছি প্রত্যেকটা গল্প। সম্মোহিত হয়ে আছি যেনো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File