নামাজে মন ফেরানো - ১০

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৯:১৮:১৮ সকাল

নামাজটা শেষ হলেই মনে হয় এই মুহূর্তে জায়নামাজ গুটিয়ে দৌড় দিতে হবে! অথচ জায়নামাজে বসে দুই মিনিট যিকির করার ভার্চু বলে শেষ করা যাবে না! নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলা যায় এমন আমার প্রিয় কয়টা আমল আছে।

● “রাসুল (সাঃ) যখন নামাজ শেষে সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন।এখানে প্রশ্ন হলো, আমরা এইমাত্র নামাজ পড়লাম! নেকীর একটা কাজ করলাম। তাহলে ভালো একটা কাজের শেষে কেন "আস্তাগফিরুল্লাহ" বলছি? এটার উইজডম হচ্ছে, ঈমানদাররা কখনোই কোনো ভালো কাজ করে "অনেক কিছু করে ফেললাম" এরকম মনোভাব রাখতে পারিনা। ভালো কিছু করেই সেটা নিয়ে অহংকারী হয়ে যেতে পারিনা। বরং যেই কাজটা করেছি সেটার মধ্যেও যে নিজেদের ভুল ত্রুটি থাকতে পারে, এটা স্বীকার করে নিয়ে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে নিজেদের অপারগতার জন্যে ক্ষমা চাই। রসূল (সাHappy এর মতন পিউর মানুষ, যেখানে তিনি নামাজ শেষ হতে না হতেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন, সেখানে নামাজ শেষে সেই ক্ষমার আমাদের আরো বেশি প্রয়োজন! অনেকের ব্যস্ততার জন্যে জায়নামাজে বেশিক্ষন বসে থেকে জিকির করা সম্ভব না হলেও তিন সেকেন্ডে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলে এই সুন্নাহ পালন করাটা বেশ প্রাকটিক্যাল আলহামদুলিল্লাহ!

নামাজ শেষে তিন বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলে রাসূল (সাHappy বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”। "হে আল্লাহ্‌! আপনিই শান্তি, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়, পরাক্রমশালী এবং মর্যাদা প্রদানকারী।"

(মুসলিম১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১, তিরমিযী ১/৬৬।)

● হজরত মুআয ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে বললেন, হে মুআয! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, মুআয তুমি প্রত্যেক নামাজের শেষে এই দুয়াটি কখনো পড়া থেকে বিরত থেকো না- ‘আল্লাহুম্মা আ-ইন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন যেন আমি আপনাকে মনে রাখতে পারি, আপনার শুকরিয়া আদায় করতে পারি এবং সবচেয়ে সুন্দরভাবে আপনার ইবাদাত করতে পারি।"

● জুওয়াইরিয়া (রা.) বলেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) ফজরের সময় আমার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তখন আমি জায়নামাজে বসে আল্লাহর জিকির করছিলাম। রসূল(সাHappy কয়ঘন্টা পরে চাশতের নামাজের সময় হলে আমার ঘরে ফিরে এলেন। তখনও আমি জায়নামাজেই বসে ছিলাম। তখন রসূল(সাHappy আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জুওয়াইরিয়া! আমি যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই তুমি যিকিরে মশগুল ছিলে? আমি বললাম, "হ্যাঁ।" তখন তিনি আমাকে বললেন, "আমি তোমাকে চারটি বাক্য বলছি (তিনবার করে)। যদি এগুলোকে ওজন করা হয় তবে তোমার করা সমস্ত জিকিরের চেয়ে এগুলোই বেশি ভারি হবে। আর তা হলো -"সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আদাদা খলকিহি, ওয়া-রিদা নাফসিহি, ওয়া জিনাতা আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি। " (সহিহ মুসলিম শরিফ : ৭০৮৮)

অর্থ: "আমি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা সমেত তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। সেই পরিমাণে ঘোষণা করছি যেটা তার সৃষ্টিকুলের সংখ্যার পরিমাণ, তিনি সন্তুষ্ট হওয়ার পরিমাণ, তার আরশের ওজনের সমপরিমাণ, তার কথা লিপিবদ্ধ করার কালি পরিমাণ।" সুবহানাল্লাহ! অর্থটা পড়লে বুঝা যায় যে কেন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে যিকির করার সওয়াব পেয়ে যাওয়া সম্ভব শুধু এই চারটি বাক্য বলার মাধ্যমে!

● লাস্ট দুয়াটা আমার কাছে খুব স্পেশাল। আমার মনে হয়, এই পৃথিবীতে একটা মানুষ যা যা চাইতে পারে, তার সবকিছু এক কথায় সামারাইজ করা হয়েছে এই দুয়াটাতে! হজরত উম্মে সালামা রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গেই নিয়মিত এ দুয়াটি পড়তেন।

"আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান, ওয়া রিজকান তাইয়্যিবান, ওয়া আমলান মুতাক্কব্বালান।"

"হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এমন জ্ঞান চাই যেটা কল্যাণকর, এমন রিজিক চাই যা পবিত্র ও হালাল। এবং এমন আমল করার তাওফিক চাই যা তোমার দরবারে কবুল হবে।" [ইবনে মাজাহ-৯২৫ নাসায়ি সুনানে কুবরা-৯৯৩০]

সুবহানাল্লাহ! জীবনের ১৫ থেকে ২০ বছর চলে যায় ডিগ্রি অর্জন করে ভালো একটা চাকরির পিছনে ছুটতে ছুটতে! এতো সাধনার সেই জ্ঞান যদি শেষ দিবসে আমাদের উপকারী না হয় আর আমাদের অর্জিত রিজিক যদি পবিত্র না হয় - তাহলে বিরাট লস!! আর এই দুই অর্জনের মাঝে যা যা আমল করা হয় সেটা যদি আল্লাহর দরবারে কবুল না হয়, তাহলে দুনিয়া-আখিরাত দুইটাই বরবাদ! সেজন্যেই এই দুয়াটা বেস্ট!

আল্লাহ আমাদের নামাজগুলির মাধ্যমে আমাদের জন্যে কল্যাণের দরজা খুলে দিক. আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাত কবুল করে নিক! আমিন!

বিষয়: বিবিধ

৯২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File