নামাজে মন ফেরানো - ২
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:২৫:৪২ রাত
আমরা মানুষরা এই জীবনে দুইটা জিনিস চাই - Perfection and praise নিজেদের জন্যে আমরা চাই Perfection, নিজেদের সব ব্যাপারে আমরা আশা রাখি যে, পারফেক্টভাবে করতে পারবো - পারফেক্ট Career, পারফেক্ট বিয়ে, পারফেক্ট বাড়ি। আর অন্যের কাছ থেকে আমরা আশা করি - প্রশংসা আর appreciation. আমরা চাই আমাদেরকে অন্যেরা সমাদর করবে। মানুষের জীবনের বেশির ভাগ কষ্ট আসে এই দুই এর অভাবে। হয়, নিজেরা পারফেক্টলি কিছু করতে পারিনা, তাই নিজের উপর হতাশ। নাহলে অন্যের কাছে যেটা আশা করেছি সেটা পাইনি, তাই অন্যের উপর হতাশ! যেটা আমার কাছে amazing লাগে সেটা হচ্ছে, আল্লাহ বার বার নামাজে আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, Perfection and praise belongs to Allah only! ত্রুটিহীন এবং প্রশংসা - এই দুইটা Quality আল্লাহ রব্বুল আলামিনের আয়ত্বে। আমাদের আয়ত্বে না যেই আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে বলছি, "সুবহানাকা আল্লাহুম্মা (আল্লাহ তুমি কত পবিত্র, ত্রুটিহীন), ওয়া বিহামদিকা (এবং আমি তোমার প্রশংসা সারাজীবন করেই যাবো) - সাথে সাথে আমরা আল্লাহর সামনে নিজেদের impercet nature কবুল করে নিচ্ছি এবং অন্য কারো attention না খুঁজে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফোকাস করছি। এটা খুব পাওয়ারফুল। নামাজে দাঁড়িয়েই এটা একজন মুসলিমকে মেন্টালি স্ট্রং করে দেয়। সে জানে যে, তার হতাশ হবার কিছু নেই, পারফেকশানের মালিক আল্লাহ। সে নিজে না. আল্লাহ তাকে তার perfection এর জন্যে বিচার করবেন না, বরং তার আন্তরিক চেষ্টার জন্যে পুরষ্কৃত করবেন। অন্য কারো কাছে প্রশংসা বা উপযুক্ত সমাদর না পেলে তার কষ্টের কিছু নেই; সত্যিকার প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, মানুষের নিজের জন্যে না এবং আল্লাহ তার বান্দাকে সবচেয়ে বেশি appreciate করেন। অন্য কেউ এই মুহূর্তে না করলেও কষ্ট নেই।
ওয়া তাবারকাসমুকা - "আল্লাহ তোমার নামগুলি কতই না বরকতপূর্ণ!" এখানে, আরবি "বারাকাহ" শব্দটার সহজ অনুবাদ ইংরেজিতে "Blessing", বাংলায় আশীর্বাদ। কেউ দোয়া চাইলে আমরা বলি, "May Allah Bless you", মানে আল্লাহ তোমাকে বরকত দিক. বরকত বলতে আমরা বুঝি কল্যাণ, মঙ্গল - জীবনে যা কিছু ভালো। "বারাকাহ"-র আরেকটা ইন্টারেস্টিং অর্থ আমরা অনেকেই জানি না. বারাকাহ মানে হচ্ছে, যখন আল্লাহ আমাদের কল্যাণ এমনভাবে বাড়িয়ে দেন যে, আমরা অনেক কম সময়ে অনেক বেশি কিছু অর্জন করে ফেলতে পারি। বারাকাহর একটা উদাহরণ দেই, এই বছরের রোজায় আমার এক বোন কয়েকজন মুরব্বিদের ইফতারে দাওয়াত করবেন বলে নিয়ত করলেন। কিন্তু, আপুর হাতে ওইদিন সময় ছিল অনেক কম। আমি নিজে সেদিন আপুকে দেখেছি ইউনিভার্র্সিটির কাজ শেষে খুব ব্যস্তভাবে বাসায় ফিরছিলেন। আমি দিনের কাজ শেষে বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, দেখলাম আপু মিটিং শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে তার বাসার দিকে যাচ্ছে। আমি ঘড়ি দেখলাম, সাড়ে পাঁচটা বাজে। মোটে হয়তো দুই ঘন্টার মতন আছে হাতে কিছু রান্না করার মতন। এতগুলা মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে এবং তারা আমাদের আব্বু-আম্মু শ্রেণীর। আপু তখন ভাবলো, ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার জন্যে নিয়ত করেছি খাওয়াবো, তুমি আমাকে পথ করে দাও! ইফতারের আগে যখন আপুর সব কাজ শেষ হলো. টেবিল ভর্তি খাবারের আইটেমগুলো দেখে আপুর মনে হলো - "এটা আমি করি নাই! এটা আমার পক্ষে সম্ভব না! এটা আল্লাহর কাজ!" এটাই আল্লাহর বারাকাহ। যখন আল্লাহর সময়ে বারাকাহ দেন, তখন সেটা এমনভাবে প্রশস্ত হয়ে যায় যে, কম সময়ে কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব হয়, যেটা আল্লাহর বারাকাহ ছাড়া অসম্ভব! নামাজ এমন একটা ইবাদাত, যেটা করতে খুব কম সময় লাগে, কিন্তু যদি ঠিকভাবে করতে পারা যায়, তাহলে সেটা আমাদের জন্যে অসম্ভব রকমের কল্যাণ এবং বরকত নিয়ে আসে! নামাজের শুরুতেই যখন আমরা বলছি যে, "ওয়া তাবারকাসমুকা" - "আল্লাহর নামগুলি বরকতপূর্ণ" - তার মানে, এরকমের অসম্ভব কল্যাণ আল্লাহ ছাড়া আসা সম্ভব নয় - এটাই আমরা মেনে নিচ্ছি। সুবহানাল্লাহ!
ওয়া তা আ'লা জাদ্দুকা - "জাদ্দুকা" মানে "Determination, Decree", বাংলায় "ইচ্ছাশক্তি, আইন পাশ করে দেওয়া". "আ'লা" মানে "Higher, উঁচু, মহান। অর্থ দাঁড়ায় - আল্লাহর ইচ্ছা সবচেয়ে বড়. সুবহানাল্লাহ ! আমাদের কত ইচ্ছা থাকে, কিন্তু সবসময় আমাদের ইচ্ছামতন সবকিছু হয়না। নামাজে যখন পাঁচবার করে আমরা বলি - "আল্লাহ, আমার ইচ্ছার থেকে আপনার ইচ্ছা বড়!" এটা আমাদেরকে নিজেদের limitation মেনে নিয়ে আল্লাহর Wisdom কে Trust করতে শেখায়! মনে শান্তি দেয়.
ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা - "আল্লাহ, আমি আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবো না" - এই পর্যায়ে নামাজে আমরা স্বীকার করি নেই যে, আল্লাহ আমাদের প্রভু। আমরা তাঁর গোলাম। আমরা আল্লাহর ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করবো না, নিজেদের Desire এর সামনে করবো না, সোসাইটির সামনে করবো না, শয়তানের সামনে করবো না. আমরা আল্লাহর থেকে বেশি আর কাউকে গুরুত্ব দিবো না.
সুবহানাল্লাহ! আচ্ছা, একটু ভাবি, দিনের মধ্যে পাঁচবার করে যদি আমরা কাউকে বলি যে, "তুমি আমার লাইফে সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট" এবং বলার সাথে সাথেই যদি এমন কিছু করি যেটা আমাদের কথার পুরো বিপরীত। তাহলে ওই ইম্পরট্যান্ট মানুষ আমাদের নিয়ে কি ভাববে? এই কাজ তো আমরা আল্লাহর সাথে দৈনিক করে আসছি। এজন্যেই যে বুঝে নামাজ পড়ে, তার কাছে ব্যাপারটা অন্যরকম। তারা আসলেই কুরআনের এই আয়াতকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন, "নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে!" (সূরাহ আনকাবুত - ২৯:৪৫). আমরা এটা পড়ি আর আমাদের মনে হয় - "কই! নামাজ পড়েও তো খারাপ কাজ করেই যাচ্ছে!" এটা আমাদের নিজেদের দুর্বলতা, নামাজের না। আল্লাহ আমাদের তাওফিক বাড়িয়ে দিন। আমিন ইয়া রাব্বুল আ'লামিন
ইনশাল্লাহ to be continued ...)
Source: “Meaningful Prayer” Course by Shaykh AbdulNasir Jangda
(https://www.qalam.institute/meaningfulprayer)
বিষয়: বিবিধ
১১৫৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সময় নিয়ে লিখাটি পড়ার জন্যে জাঝাকাল্লাহু খইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন