সুরা ইয়াসিন

লিখেছেন লিখেছেন ইসমাত সুলতানা কোয়েল ০৫ জুলাই, ২০১৪, ০২:০৭:০২ রাত

ইয়াসিন সুরার আলোচ্য বিষয় তিনটি :

১। তাওহিদের উপর বিশ্ব জাহানের নিদর্শনাবলী ও সাধারন বুদ্ধি বৃত্তির সাহায্যে।

২। আখেরাতের উপর বিশ্ব জাহানের নিদর্শনাবলী, সাধারন বুদ্ধি বৃত্তি ও মানুষের নিজের অস্তিত্তের সাহায্যে।

৩। মুহাম্মদি নবুয়্যতের সত্যতার উপর এ কথার ভিত্তিতে যে তিনি নিজের রিসালাতের ক্ষেত্রে এ সমস্থ কষ্ট সহ্য করছিলেন নিঃস্বার্থভাবে এবজ্ঞ এ বিষয়ের ভিত্তিতে যে তিনি লোকদেরকে যেসব কথার প্রতি আহবান জানাচ্ছিলেন সেগুলি পুরোপুরি জুক্তিসজ্ঞত ছিল এবং সেগুলি গ্রহণ করার মধ্যেই ছিল লোকদের নিজেদের কল্যাণ।

এ যুক্তি প্রদর্শনের শক্তির উপর ভিতি প্রদর্শন এবং তিরস্কার ও সতর্ক করার বিষয়বস্তু অত্তন্ত জোরেশোরে বার বার উল্লেখ্য কড়া হয়েছে, যাতে ঋদয়ের তালা খুলে যায় এবং যাদের মধ্যে সত্যকে গ্রহণ করার সামান্যতম যোগ্যতাও আছে তারা যেন কুফরির উপর ভাল থাকতে না পারে।

ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, নাসাই, ইবনে মাজাহ, তাবারানি প্রমুখগন মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা কড়া হয়েছে, নবি সাল্লালাহু আলাইহি অয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াসিন সুরাটি কোরআনের হৃদয়। এটি ঠিক তেমনি একটি উপমা যেমন সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কোরআন বলা হয়েছে। ফাতিহাকে উম্মুল কোরআন গণ্য করার কারন হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে কুরআন মজিদের সমস্থ শিক্ষার সংখিপ্তসার এসে গেছে। অন্যদিকে ইয়সিনকে কুরআন স্পন্দিত হৃদয় বলা হয়েছে এ জন্য যে, কুরআন দাওয়াতকে সে অত্যন্ত জোরেশোরে পেশ করেছে, যার ফলে জড়তা কেটে যায় এবং প্রাণ প্রাহ গতিশীল হয়।

এই হযরত মা’কাল ইবনে ইয়াসার থেকেই হযরত ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের ম্রতদের উপর সুরা ইয়াসিন পাঠ করো।“ এর পিছনে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা হচ্ছে এই যে, এর মাধ্যমে মরার সময় মুসলমানের অন্তরে কেবল মাত্র ইসলামী আকিদা বিশ্বাসী তাজা হয়ে যায় না বরং বিশেষভাবে তার সামনে আখিরাতের পূর্ণ চিত্রও এসে যায় এবং জানতে পারে দুনিয়ার জিবনের মনজিল অতিক্রম করে এখন সামনের দিকে সব মনজিল পার হয়ে তাকে যেতে হবে। এ কল্যাণ কারিতাকে পূর্ণতা দান করার জন্য আরবি জানেনা এমন বেক্তিকে সুরা ইয়াসিন শুনাবার সাথে সাথে তার অনুবাদও শুনিয়ে দেয়া উচিৎ। এভাবে উপদেশ দান ও স্মরণ করিয়ে দেবার হক পুরোপুরি আদায় হয়ে যায়।

নিচে সুরা ইয়াসিন এর কিছু উল্লেখযোগ্য আয়াত দেয়া হলঃ

৩৬.) পাক-পবিত্র সে সত্ত্বা৩০ যিনি সব রকমের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, তা ভূমিজাত উদ্ভিদের মধ্য থেকে হোক অথবা স্বয়ং এদের নিজেদের প্রজাতির (অর্থাৎ মানব জাতি) মধ্য থেকে হোক কিংবা এমন জিনিসের মধ্য থেকে হোক যাদেরকে এরা জানেও না।৩১

ব্যাখ্যাঃ

এটি তাওহিদের সপক্ষে আরও একটি যুক্তি। এখানে আবার পূর্ব থেকে উপস্থিত সত্য গুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি নিয়ে একথা বলা হচ্ছে যে, দিনরাত তোমরা যেসব জিনিস স্বচক্ষে দেখে চলেছও এবগ কোন প্রকার ভাবনা চিন্তা না করেই এমনিই সামনের দিকে এগিয়ে চলে যেতে থাক সেগুলোর মধ্যেই সত্যের সন্ধান দেবার মত নিদর্শনাবলী রয়ে গেছে। নারি পুরুষের জুতি ত মানুষের নিজের জন্মের উৎস। জীব জন্তুর বগশধারাও পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় পশুর মিলনের সাহায্যেই এগিয়ে চলেছে। উদ্ভিদ সম্পর্কেও মানুষ জানে, তাদের মধ্যে বিপরীত লিজ্ঞের প্রতি জুরি বাধার নীতি কার্যকর রয়েছে। এমনকি নিস্প্রান জড় বস্থুর মধ্যেও দেখা যায় বিভিন্ন বস্তু যখন একটা অন্যটার সাথে জুক্তবদ্ধ হয় তখনি তাদের থেকে নানা প্রকার যৌগিক পদার্থ অস্থিত্ত লাভ করে। স্বয়ও পদার্থের মৌলিক গঠন ঋনাত্মক ও ধনাত্মক পদার্থের বৈদ্যুতিক শক্তির সংযোগেই তৈরি হয়েছে। এ জুথি বদ্ধতা, যার মাধ্যমে এ সমগ্র বিশ্ব-জাহান অস্থিত্ব লাভ করেছে, প্রজ্ঞা ও সৃস্তি কুশলতার এমন সব সূক্ষ্মতা জটিলতার অধিকারী এবং তার মধ্যে প্রতিটি জোরায় সশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের মধ্যে এমন সব সম্পর্ক পাওয়া যায়, যার ফলে স্বাধীন বুদ্ধি বৃত্তির অধিকারী কোন বেক্তি এ জিনিসটিকে একটি আকস্মিক ঘটনা চক্র বলতে পারেন না। আবার একথা মেনে নিতেও পারেন না, যে বিভিন্ন ইলাহ এসব অসংখ্য জোট সৃস্তি করে এদের মধ্যে এ ধরনের বুদ্ধিমত্তা সহকারে জুড়ি বেধে দিয়ে থাকবেন। পুরুষ ও স্ত্রী পরস্পরের জুড়ি হওয়া এবং তাদের জুড়ি হওয়ার ফলে নতুন জিনিসের সৃস্তি হওয়া স্বয়ং শ্রস্ঠার একত্বের সুস্পষ্ট প্রমান।

কিছু প্রশ্নঃ

১। সমাজে প্রচলিত আছে সব মানুষের জোড়া আছে কিন্তু আমরা কিছু মানুষকে আজীবন বিয়ে ছাড়া থাকতে দেখি তাই এ ব্যাখ্যা থেকে বলা যায় জোরায় থাকতে বলা হয়েছে কিন্তু জোড়া তাদের আগেই বানান আছে এটা কিন্তু সুস্পষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি। হয়তবা তারা তাদের জোড়া খুজতে ব্যথ হয়েছে অথবা সমাজের মানুষের দায়িত্বহীনতার কারনে এ পরিস্থিতির সৃস্তি হয়েছে। তাই এই ধরনের দায়িত্বহীনটা সমাজে বিশৃঙ্গখলা তৈরি কড়া ছাড়া আর কিছুই করছে না। দোয়া করি সবাই সবার দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ হন।

২। এ সুরায় তাকদির নিয়েও কথা আছে মানুষ কিছু হলেই ভাগ্য কে দোষারোপ করে কিন্তু এগুলো হলও মানুষের কর্মফল যা আল্লাহ এভাবে বলেছেন যে, “প্রত্যেক বেক্তির কল্যাণ ও অকল্যাণ এর পরোয়ানা আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি।“ অর্থাৎ কেউ কারও জন্য অপয়া বা অকল্যাণ জনক নয় সব তাদের তাকদিরের ফল অর্থাৎ তাদের কর্মফল আর কিছু ক্ষেত্রে একজন মানুষের কর্মফল অন্য মানুষকেও কষ্ট দিতে পারে তাই কারও কল্যাণ এর সাথে মাঝে মাঝে অন্য একজন মানুষের কর্ম জড়িত যেমন থাকে তেমনি একজন মানুষের অকল্যাণের সাথে অন্য মানুষের কর্মফল জড়িত থাকতে পারে কিন্তু এটা অপয়ার বিষয় নয় এটা তাদের কর্মফল সেজদি খারাপ কিছু না করত তাহলে হয়ত অন্য অনেকগুলো মানুষ কষ্ট পাওয়া থেকে বিরত থাকত তাই আমাদের সবাইকে তাদের দায়িত্ব আর কর্ম সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে তানা হলে সমাজের বিশৃঙ্গখলা আমরা কোনভাবেই ঠেকাতে পারব না। আল্লাহর নিয়মগুলো না মেনে চললে এ অসমতা ঘটতেই থাকবে।

আমার খুদ্র জ্ঞান থেকে এই লেখা ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

241787
০৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০২:১৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি ।
241789
০৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০২:৪৪
আফরা লিখেছেন : আল্লাহর নিয়মগুলো না মেনে চললে এ অসমতা ঘটতেই থাকবে। অনেক ধন্যবাদ ।
241791
০৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০২:৪৬
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : মাসাল্লাহ সুন্দর হয়েছে । লেখতে থাকুন Good Luck Good Luck
241801
০৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৫৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপু,একসেলেন্ট হয়ছে।চালিয়ে যান। আল্লাহ যেন
আপনার হাতকে গতিশীল করেন। আমিন।
241812
০৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:২৬
ভিশু লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ! মৃত্যুপথযাত্রীদের কাছে অর্থসহ তিলাওয়াতের ব্যাপারটি অত্যন্ত যৌক্তিক, তাতে ঐ অন্তিম মুহূর্তে তাঁদের মধ্যে বিশেষ এক অনুভূতির সৃষ্টি হবে; সেই সাথে মহানবী সা.এর বাণী অনুযায়ী কল্যাণও লাভ করবো আমরা সেদিন! জাযাকাল্লাহ খাইরান!
241813
০৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:৩১
ভিশু লিখেছেন : সবকিছুকে জোড়া-জোড়া সৃষ্টির ব্যাপারটির ভিত্তিতে যারা জীবনেও বিয়ে করেন না - তাঁদের বিয়ে করার মটিভেশনটি ঠিক উপযুক্ত মনে হয় না! ঐ কথায় আসলে সৃষ্টি জগতের এক বিশাল এবং ব্যাপক গুরুতত্ত্ব প্রকাশ করেছেন মহান আল্লাহ - যা ভেবে দেখার দাবী রাখে, ঈমান বৃদ্ধি করে!
241814
০৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:৩৮
ভিশু লিখেছেন : 'কেউ কারও জন্য অপয়া বা অকল্যাণজনক নয়' - অত্যন্ত চমৎকার একটি শিক্ষা! অথচ খৃষ্টান সমাজে অনেকের অকল্যাণের জন্য কোনো একজনকে ডাইনী (witchcraft) বানিয়ে দায়ী করা হয়, বিশ্বাস করা হয়! কোথাও কোথাও তাদেরকে হত্যাও করা হয়! তথাকথিত মডার্ন ঐ জনগোষ্ঠী দেখুন মানবতার দৃষ্টিতে এখনো কতো পশ্চাৎপদ! বস্তুতঃ ইসলামই হলো সম্পূর্ণরুপে কুসংস্কারমুক্ত একটি এভার-মডার্ন জীবনব্যবস্থা, আলহামদুলিল্লাহ...Praying Happy Good Luck Rose
241827
০৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৩৯
রাইয়ান লিখেছেন : সুরা ইয়াসীন নিয়ে অসাধারণ সুন্দর লেখা.... অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !
242182
০৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:১৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : যাযাকুমুল্লাহ।
১০
247738
২৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৩৫
বাজলবী লিখেছেন : অনেক সুন্দর করে লিখেছেন পড়ে ভালো লাগলো।জাযাক অাল্লাহ খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File