আমি আবার হেঁটে চলি দিগন্ত খুঁজে ফিরি

লিখেছেন লিখেছেন তানজিমুল হাসান মায়াজ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:০৪:৪৬ রাত

বাঁকা পথ ,পথ সরু,পথে বাধা ।হাজারো পথ হাজার রকম। হেটেছি ,হাটছি আর হেটে যাবো যতদিন না গন্তব্যে পৌছাই।

-- ছোট্ট আমি দু’হাত দু’পা মাটিতে ভর করে দাড়াতে চেষ্টা করেছি। না ,তখনই দাড়াতে পারিনি। ধপাস করে পরে গেছি মাটিতে। চেষ্টা থামেনি দাড়িয়ে হাটতে শেখার। আবার দাড়ানোর চেষ্টা করেছি দু’হাত -দু’পা এক সাথে করেছি। না এবার ও পারিনি পড়ে গেছি মাটিতে। এবার যেন একটু বেশি ই ব্যথা পেয়েছি। বাবা দৌড়ে এসে কোলে তুলে নিয়েছে ,আদর করেছে, নিজের ঘারের উপর বসিয়ে উঠোন জুড়ে হেটেছে। আমি হেসেছি, হা হা হাহ হাহ হা হা করে হেসেছি। আমাকে শুণ্যে ছুড়ে দিয়েছে আমি আকাশের দিকে উড়ছি,আবার আমায় জড়িয়ে ধরে বুকে চেপে নিয়েছে। আমি হাসছিতো হাসছি, আমার হাসি যেন আর থামেনা। মনে হয়েছে আমি আকাশ জয় করে ফিরে এসেছি।আর “মা” সেতো একবার রান্না ঘরে ছুটছে আবার আমার ময়লা করে রাখা জামা নিয়ে পুকুর ঘাটে ছুটছে। একটু পর পর নতুন জামা পড়িয়ে দিচ্ছে আমি আবার ময়লা করছি। দুপুর ঘনিয়ে এলেই কুসুম গরম পানি গামলায় ঢেলে আমাকে ছেড়ে দিত সেই গামলায়।এ যেন আমার কাছে বিশাল সমুদ্র।আমি খিল খিলিয়ে হাসতে থাকি ,হাত-পা ছুড়ে সাতার কাটি। আমার শরীর ঘষে-মেজে পরিষ্কার করে “মা” যখন সেই গামলা থেকে আমায় তুলে নেয়।মনে হয় আমি সমুদ্র জয় করে ফিরে এসেছি।

আমি বড় হই ,স্কুলে যাই ,পরীক্ষা দেই প্রথম হই।আমি খেলতে যাই,ক্রিকেট ব্যাট-বল হাতে নিয়ে নেমে পড়ি মাঠে। আমরা জিতে যাই,জয়ের উন্মাদনায় ট্রফি নিয়ে হাসতে হাসতে বাবা’র হাত ধরে বাড়ি ফিরি। আমার হাসিতে “মা”য়ের মনে ও যেন আনন্দের ঝর বয়ে যায়। হাত ধরে পুকুর ঘাটে নিয়ে সাবান দিয়ে কচলে কচলে হাত-পা পরিস্কার করে দেয়। আমি হেটে ঘরে যাবোনা,“মা” বলল কেন? আরে আমার পায়ে যে মাটি লেগে যাবে আবার। “মা” আমায় কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসে,আর বলে এত বড় হয়েছিস এখন কি আর তোকে কোলে নিয়ে হাটতে পারি? আমার মুখে “মা” খাবার তুলে দেয়।আমি মর্জি করি আমি খাবোনা,মজা হয়েছেতো একটু খেয়ে দেখ। “মা”য়ের কথায় খাবার মুখে দেই। কিরে মজা হয়েছে? হ্যা, হয়েছে।আমার “হ্যা” তে যেন “মা”য়ের ‍মুখের ভাজে খুশির রেখা ভেসে উঠে।

আমি বড় হই আগের চেয়ে একটু বেশি হয়তো। আমাকে নিয়ে বাবা ছুটে দূর শহরের দিকে বাবা’র চোঁখ ভিজে লাল হয়ে যায়, “মা” চোঁখের পানি ফেলে বিদায় দেয়। আমি হাটতে থাকি ।সেই শুরু হয় একলা পথ চলা।

চলতে চলতে থমকে দাড়াই,“বাবা” ধমকে উঠে বলে, আরে বোকা থামলি কেন? হেটে চল আমিতো আছি তোর পাশে। আমি চলতে থাকি , সরু পথে পিছলে যাই ছিটকে পরে যাই। “বাবা” আগলে ধরে। সেই ছোট বেলার মত ,হাটতে শেখার সেই সময়ের মত। আমি হেঁটে চলি,পথ ভুল করে বসি কিনা সেই পাহারায় বাবা সবসময় আমার পাশে থাকে। দূরে থেকে ও আমার পাশে থাকে।

“মা” বলে কি খেয়েছিস?দুপুরে খেয়েছিস,?এত বেলা করে ঘুমালে তো শরীর খারাপ করবে। যা খেয়ে নে। আমার মনে হয় “মা” আমার পাশে।

আমি শহরের যানজট,অলি-গলি পার হয়ে মধ্যরাতে ঘরে ফিরি। “বাবা” বলে ঘরে ফিরে জানিয়ে দেবে আমায়। নইলে আমাদের ঘুম হয়না। আমি ফিরে যাই সেই ছোট্ট বেলায় ,“বাবা’র” বুকে শুয়ে থাকা সেই দিন গুলোয়।

আমি পথ চলতে চলতে আটকে যাই “মা” বলে কিসের এত চিন্তা তোর? “বাবা” বলে আমিতো অাছি তুই হেটে চল বহু দূর যত দূর তোর চোখ যায়।

আমি আবার হেঁটে চলি।দিগন্ত খুঁজে ফিরি।

-- তানজিমুল হাসান মায়া’জ--

বিষয়: বিবিধ

১১৮৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355225
২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:২৪
শেখের পোলা লিখেছেন : এমনই করেই নিজের হাঁটায় ভাঁটা পড়বে আর সন্তানকে হাঁটা শেখাবেন৷ এজন্যই বলা হয়েছে;- 'ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে'ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File