বন্ধুর মেসেজের তিন শব্দ : আম্মু মারা গেছে....

লিখেছেন লিখেছেন জোস্নালোকিত জ্যাস ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৪৮:০৯ রাত

যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রনা.....

গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠেছি একটা মেসেজ পেয়ে। বব্ধু লিখেছে শুধুমাত্র তিনটা ওয়ার্ড " আম্মু মারা গেছে। "

বাক্যটা পড়ে ওয়াল্লাহী, বিস্বাস হয়নি। মনে হল কয়েকদিন ফোনে কথা হয়নি তাই ফাজলামি করতেছে। আবার ভয় ভয়ও লাগিয়েছিল কারন অত বড় ফাজলামি করার মানুষ সে নয়। প্রায় কয়েকবার ফোন দিলাম। অন্য একজন রিসিভ করে বললো ঘটনা সত্য। অই মুহুরতে আমার সর্বস্ব যেন অবস হয়ে গেল। এক দৌড়ে গেলাম সেখানে।

পৌছে দেখি এগারো বা সাড়ে এগারোটা বাজে। লোকজন ছোটাছুটি। একটা টিনের চালার কাছে দাড়িয়ে কান পেতে শুনছি ওদের কান্না।আহাজারি তে ভরে গেছে গোটা বাড়ি। আমার গলা ঢুকিয়ে গেল ওদের আওয়াজে।

ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম। কিছু পরে অনেক গুলো বাইক এলো। টেম্পো এলো। মাইক্রো এলো। অনেক রিক্সা ভ্যান এলো গেল। ঠায় দাড়িয়েই ছিলাম আর বন্ধুটির কি হবে তাই ভেবে বুকে চিনচিন করছিল।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ যহরের আজান দিল। নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ শেষে মাইকে এলান দেওয়া হল। দোয়া করে আবার গেলাম ওদের বাড়ির ধারে। সকাল থেকে তিন ঘন্টা সাহস যুগিয়ে বন্ধুটির সামনে যেতে হিম্মাত হল না। আবার সেই একই যায়গায় গেলাম। ওখানেই আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। একবার সাহস যুগিয়ে পা বাড়ালাম কান্নার আওয়াজ ধরে। দরজায় অই চিৎকার শুনে অন্তর ফেটা যাওয়ার উপক্রম। জানি এই সময় অর সামনে গেলে হয়তো আমাকে দেখে আরও বেশী কাদবে। বারান্দায়, আঙীনায় সেকি কান্নার মাতন। আর এগুতে পারলাম না। আবার ব্যাক করে সেই চালার নিচে গেলাম।

আসরের আজান দিল। কয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলাম তারা এসে গেল। আব্বু, দাদু, চাচা, ও কয়েকজন আলেম সহ এলেন। ওনাদের সাথে নামাজ পড়তে গেলাম।

নামাজ শেষে এসে দেখি আন্টিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ময়দানে। সবাই কালিমা পাঠ করতে করতে জানাজায় গেলাম। আংকেল আর বন্ধুটির বড় ভাই সামনে গিয়ে কথা বললেন। চোখ দিয়ে আঝোরে প্রিয়জন হারানোর জলের স্রোত ভাসছিল...

মা হারানোর কষ্ট কতটা ভারি সেই কষ্ট ভাইটাকে দেখলে বোঝা যাচ্ছিল। নিজের সহধর্মীনী মরহুমাকে নিজের হাতে মাটিতে শায়িত করা সময় আংকেল হু হু কেদেছিল। আমাদের সবার চোখ ভিজিয়ে দিল সেই কান্না।

আব্বুদের ও বন্ধুদের বিদায় দিয়ে সাহস যুগিয়ে গেলাম বন্ধুটির কাছে। দেখি বিছানায় নিথর বন্ধু আমার খালি বিলাপ করছে। এই দেখে বারান্দায় আটকে গেলাম। কান্নার আওয়াজ শুনে পাও চলছিল না। দ্রুত বের হয়ে আবার গেটে এলাম।

কিভাবে যেন বন্ধুটি আমাকে দেখে ফেলেছে। বাইরে থেকে ওর ফোনে ফোন দিলাম। আরেক বন্ধু ফোন ধরলো। তার কাছে শুনতে পেরে আবার দৌড়ে তার সামনে গেলাম। আহারে, আমার অন্তরে ওর আওয়াজ খঞ্জরের মত বিধলো। যতই থামাতে চাই ততোই বেড়ে দিগুণ হয়। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আসলে যার চলে যায় সেই বোঝে।অনেক কষ্টে নিজের চোখ কে ফাকি দিতে চাইলাম। লোনা জল কে ধোকা দিতে চাইলাম। কিন্তু অসহায় বন্ধুর দিকে তাকিয়ে পারিনি....

অতপর ওখানে আর রইলাম না। কারন সহ্য হচ্ছিল না অসহায় মাসুম মলিন মুখটির দিকে তাকিয়ে........

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

285348
১৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:২৪
তার কাটা লিখেছেন : আল্লাহ বন্ধুটির আম্মাকে জান্নাত দান করুন।
285363
১৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩১
কাহাফ লিখেছেন :
নিয়তীর অমোঘ বিধান মেনে চলেই এক এক করে প্রিয়জনদের অনেকেই চলে যায়!প্রাণপণ চেষ্টায়ও ধরে রাখা যায় না!
الهم اغفر لحينا و ميتنا..........
285446
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : আসলেই সত্যি যার চলে যায় সেই বোঝে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File