কাঠগড়ায় মাজহাব - আহলে হাদিস কি এবং কেন?

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য চৌধুরী ০৯ জুন, ২০১৩, ০৯:২৮:২৬ রাত

আচ্ছালামু আলাইকুম। মাজহাব এবং আহলে হাদিসদের নিয়ে মানুষের ভুল ধারনার সমাধান নিয়ে এই লেখা। আশা করি সকলেই পড়বেন, অনেক উপকৃত হবেন।

প্রথমে আমরা জানবো মাজহাব কি এবং কেন?

মাজহাব শব্দের অর্থ চলার পথ। ইসলামি পরিভাষায়ঃ সিদ্দিকীন, শোহাদায়ে কেরাম ও সতকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের মনোনীত ইসলামিক পথের নামই হল মাজহাব। চারজন ইমামের দেখানো পথের আলোকে চারটি প্রতিষ্ঠিত মাজহাব চালু আছে।

আমাদের মোল্লা সমাজ ইসলামকে প্রধানত দুটি দলে ভাগ করেছে। সুন্নি এবং শিয়া।

সুন্নির মাঝেই চারটি মাজহাব রয়েছে। যথাঃ হানাফি, মালেকি, শাফেঈ এবং হাম্বলী। শিয়াদের দুটি মাজহাব আছে, যথাঃ জাহেরি আর একটি বিলুপ্তি সুফিবাদ।

আর যারা কোন না কোন একটা মাজহাব মানে তাদের বলা হয় মাজহাবী। আর যারা কোন নির্দিষ্ট মাজহাব নয় বরং চার ইমামের প্রতি সম্মান দিয়ে সব গুলো থেকেই সহীহটা গ্রহন করে তাদের বলা হয় সালাফি।

কতিপয় মাজহাবীরা সালাফিদের লা মাজহাবী বা ওহাবী ও বলে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোন লামাজহাবী নেই কারন সালাফিরা সকল মাজহাবকেই সম্মান করে এবং সহীহটা বেছে নেয়। এখন তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও মাজহাব মানে সুতরাং তাদের(যারা নির্দিষ্ট মাজহাব মানেনা) লা মাজহাবী বলা যাবেনা। তাদের সালাফি বলতে হবে।

যারা কথায় কথায় বলে 'আমি কোন মাজহাব মানিনা' তারা আসলে সালাফি নয় বরং তারা ফেইক সালাফি।

এবার আসুন দেখি আহলে হাদিস কারা?

আমরা সাধারনত আহলে হাদিস বলতে একদল মুসলিমদের বুঝি, আমরা এটাকেও মাজহাব বানিয়ে ফেলেছি।

আমাদের সুন্নি সমাজে আহলে হাদিসদের খারাপ চোখে দেখা হয় যা অতি বর্বর। আমি জন্মগতভাবে হানাফি মাজহাবের অনুসারি ছিলাম। কিন্তু পরে নিজে যখন কুরআন ও হাদিস চর্চা শুরু করি তখন ভুল বাঙ্গে এবং নির্দিস্ট মাজহাব ত্যাগ করে সালাফি হই।

হানাফি মাজহাবে আহলে হাদিসকে ঘৃণা করা শেখানো হয় যা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারেনা। আসুন আজ সহজে আহলে হাদিস চিনি।

'আহলে হাদিস বা আহল-ই-হাদিস আরবী শব্দ।'

'আহল = Follower/Followers'

'ই = of (উল)'

'হাদিস = Hadith (sunnah)'

আহলে হাদিস অর্থ দাঁড়ায় Follower of Hadith বা হাদিসের অনুসারী।


যারা কুরআনের পর একমাত্র সহীহ হাদিসানুসারে চলে তাদেরকে আহলে হাদিস বলা যায়। এদের সালাফিও বলা হয়।

সালাফিরা নির্দিষ্ট কোন মাজহাব কট্টোরভাবে মানেনা বরং সব মাজহাব থেকেই সহীহ গুলো গ্রহন করে। তারা কারও সাথে বিরোধীতা করিনা, কেবল সালাফিরাই ইসলামের সঠিক জ্ঞ্যান সবার কাছে ছড়িয়ে দেয় সবচেয়ে বেশী।

বিশ্বের অধিকাংশ আলেম, কুরআন গবেষক, ইসলাম প্রচারকরা সালাফি ছিলেন। আজকের ইসলামী আকাশের সবচেয়ে জ্ঞ্যানী তারকাটি হলেন স্যার ডাঃ জাকির নায়েক, তিনিও সালাফি। আমাদের দেশে সবচেয়ে নামকরা আলেম মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানীও সালাফি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি পীর মাজারিদের মত বিখ্যাত হতে পারেননি কারন তিনি রাজনীতি কিংবা পীরের পক্ষে নন।

সৌদি বাদশা, মক্কার ইমাম থেকে শুরু করে IRF এর অধিকাংশ গবেষকই সালাফি। অথচ আজ সালাফিদের দেখে নাক শিটকায় কিছু মুর্খের দল। আসলে এরা মাজহাব বা আহলে হাদিস সম্পর্কে জানেইনা।

এবার আসুন মাজহাবিদের মুখোশ খুলে দিই।

মাজহাব মানা কি বাধ্যতামূলক??

আপনাদের সাথে ওপেন চ্যালেঞ্জ, 'নির্দিষ্ট একটা মাজহাব মানতেই হবে' এরকম যেকোন একটা হাদিস কিংবা আয়াত দেখাতে পারলে আমি আপনারটা মেনে নেবো এবং ফেসবুক ছেড়ে চলে যাবো।

অনেকে এই রেফারেন্স দিয়ে নিজেদের মুর্খতার পরিচয় দেয়।

"তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলম নিকট জিজ্ঞাসা কর।" সুরা আল আম্বিয়াঃ৭, সুরা আন নাহালঃ৪৩ .



এখানে 'আহলে ইলম' অর্থ হলো জ্ঞ্যানী বা জ্ঞ্যানের অনুসরনকারী। আল্লাহ সোবহানওয়াতাআলাহ বলেছেন না জানলে জ্ঞ্যানীদের জিজ্ঞেস করতে। এখানে দুইটি কন্ডিশন আছে।

* আপনার যদি না জানা থাকে তবে জিজ্ঞেস করুন। এর অর্থ হলো জানা থাকলে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নাই। আপনি যদি কুরআন হাদিস পড়ে বুঝতে পারেন তবে আপনার জন্য মাজহাব নয়। আর যদি না পারেন তবে মাজহাব পালন করুন।

মেধাবী ছাত্ররা পাঠ্য বই( কুরআন ও হাদিস) পড়েই ভাল ফল আনতে পারে তাদের গাইডের(মাজহাব) প্রয়োজন হয়না।

আরও আছে..

"হে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা “ উলিল আমর” তাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯"



* "উলিল আমর" অর্থ হলো নেক শাসকবর্গ। এখানে রাসুলের সাথে উলিল আমর বা নেক শাসকদের অনুসরন করতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে নয়।

মাজহাবের চারজন ইমামের চেয়ে হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এবং হযরত আবু বক্কর রাঃ কি বড় শাসক ছিলেন না??

তাহলে তাদের মাজহাব নেই কেন?? নাকি এবার মাজহাবিরা বলবে 'তারা শাসক ছিলেন না'??

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো হানাফি মাজহাব তৈরি হয়েছে তার মৃত্যুর ১০০ বছর পর। তাহলে তার প্রকৃত দেখানো পথ আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ। সেই মাজহাবকে আকড়ে ধরে জান্নাত পাওয়ার চিন্তায় বিভোর মাজহাবিরা কি তাকওয়া রেখে কাজ করে নাকি শুধুই ভণ্ডামি?

আরও একটি মজার কথা হলো, ইমাম বুখারি নিজে মানতেন শাফেয়ী মাজহাব অথচ তার দেখানো পথকেই আরেকটা (হানাফি) মাজহাব হিসেবে তৈরি করা হয়েছে! তাহলে আপনি যদি ইমাম বুখারিকেই মানবেন তাহলে তো হানাফি মাজহাব নয় বরং শাফেয়ী মাজহাব আপনার মানা উচিৎ। কারন আপনি যার মাজহাব মানেন তিনি নিজেই নিজের মাজহাব মানতেন না।

অনেকেই বলেন 'আমি মুসলিম ঘরে জন্ম না নিলেও ইসলাম গ্রহন করতাম' কারন আমরা বাপ দাদার দেখানো পথে নয় বরং আল্লাহ্‌র দেখানো পথে চলি। তাদের জন্য ইমানের একটি পরীক্ষা হলো মাজহাব। যারা আমার মত জন্মগতভাবে মাজহাবি তারা দয়া করে সহিহ হাদিস পড়ুন এবং আপনাদের দাওয়াত রইলো আল কুরআনের প্রতি। এরপর নিজেই বুঝবেন মাজহাব কি।

সালাফি হতে গেলে আলাদ কালিমা কিংবা দয়ার প্রয়োজন নাই। নিজেরাই সহিহ হাদিস পড়ুন কিংবা অন্য মাজহাবের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব দূর করুন। এরপর নিজেরাই সালাফি হতে পারবেন।

মুসলিমদের মাজহাব হবে একটাই আর সেটা হলো রাসুল সাঃ এর মাজহাব বা রাসুলের দেখানো পথ। আমরা মুসলিম তাই আমরা এক মাত্র রাসুল সাঃ ব্যাতিত কোন বানোয়াট মাজহাব মানিনা। বরং মাজহাবের সহিহ হাদিসগুলি মানার চেষ্টা করি। আমরা চার ইমামকেও সম্মান করি কিন্তু তাদের নিয়ে যারা মাজার ব্যাবসার মত মাজহাব ব্যাবসা খুলেছে তাদের মুখোশ খুলে দিতে চাই।

আসুন আমরা রাসুলের আদর্শ গ্রহন করি। এক রাসুল ব্যাতিত কেউ আমাদের আদর্শ হতে পারেনা।

মাজহাব সম্পর্কে একটা কুরআনের আয়াতই যথেষ্ট।

'যারা দ্বীন সম্মন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন, দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন।' সুরা আন-আমর, আয়াত ১৫৯।


আল্লাহ্‌ আমাদের সত্যটা জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমীন।

বিষয়: Contest_mother

৪৬৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File