তাবলীগ - ফাযায়েলে হজ : ফাযলামির একটা সীমা আছে...(পর্ব ০১)

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য চৌধুরী ১৭ জুন, ২০১৩, ১০:০১:৩৬ রাত

তাবলীগ জামায়াতের ভণ্ডামি নিজে জানুন এবং অপরকে জানান।

ফাযায়েলে হজ : ফাযলামির একটা সীমা আছে...(পর্ব ০১)

ধরুন আপনার বিয়ে। এখন আপনি কি আপনার বাবাকে দাওয়াত দিবেন?

ব্যাপারটা হাস্যকর কিনা?

ঠিক তেমনি হাস্যকর তাবলীগ জামায়াতের কাজ। তারা মুসলিমদেরই দাওয়াত দেয় অথচ অমুসলিমদের আশে পাশেও ভিড়েনা। অমুসলিমদের এড়িয়ে গিয়ে মুসলিমদের ডাকে। মাশাআল্লাহ এটা নিতান্তই সওয়াবের কাজ। কিন্তু হাস্যকর এই যে ওরা এটাকেই দ্বীনের কাজ মনে করে।

আমাদের রাসুল সাঃ মুসলিমদের নামাজের তাগিত দিতেন কিন্তু এটাকে দিন প্রচার বলে দাবি করতেন না। বরং সেটাকে দ্বীনের কাজ বলতেন এবং তিনি অমুসলিমদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। ফলে তাকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক নির্যাতন ও নিপীড়ন।

আর গ্রামে গ্রামে ঘুরে মুসলিমদেরই ডেকে এনে মসজিদে বসিয়ে বয়ান শোনায় তাবলীগ। এরা কি তাহলে সত্যিই দিন প্রচার করে নাকি শুধুই মনগড়া ভন্ডামি?

রাসুল সাঃ যখন দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন তখন তাকে অনেক রক্ত ঝরতে হয়েছে, অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। তিনি দ্বীন প্রচারে অনেক অপমানিত হয়েছেন অনেক লাঞ্চিত হয়েছেন। তার দ্বীন প্রচারে অনেক বাঁধা আসতো।

তাঁর লা ইলাহা এর দাওয়াতে তৎকালীন নেতা এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তিরা রুখে দাঁড়িয়েছিল।

কিন্তু তাবলীগের দাওয়াতে কেউই রুখে দাঁড়ায় না। তাহলে বোঝা গেল তাবলীগের দাওয়াহ আর রাসুলুল্লাহ এর দাওয়াহ এক নয়। তাবলীগের লাইলাহা ইল্লাল্লাহ আর রাসুলুল্লাহ এর লাইলাহা ইল্লাল্লাহ এক নয়। এক যদি হতো তাহলে তারাও অনেক বাঁধার সম্মুখিন হতো। বরং তা না হয়ে সরকা তাদের সাহায্য করে, পীরের মুরিদ তাদের সহায়তা করে।

দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে রাসুল সাঃ তাঁর সাহাবিদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছেন কুফফারদের বিপক্ষে এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে। অস্ত্র দিয়ে লড়াই করেছেন। যার প্রমান আমরা পাই আল কুরআন এর শত শত আয়াতে।

অথচ আজকের তাবলীগ জামায়াত জিহাদের অপব্যাখ্যা করে। তারা বলে 'নফসের জিহাদ বড় জিহাদ'। এরা জাল হাদিস তৈরি করেছে এই রকম। অথচ আল্লাহ্‌ সুবহানওয়াতালাহ শত শত বার আল কুরআন এর আয়াতে বলেছে 'তোমাদের ওপর যুদ্ধকে ফরজ করা হয়েছে'। অনেক আয়াতে 'জিহাদ' শব্দ না বলে সরাসরি 'কেতাল' বা হত্যা/যুদ্ধ উল্লেখ করেছে। কারন আল্লাহ্‌ ভালই জানেন যে তাঁর একদল বান্দা এই জিহাদ শব্দ্বের অপব্যখ্যা করবে। তাই যাতে কেতাল শব্দের অর্থ পাল্টাতে না পারে তাঁর ব্যাবস্থা আমার সর্বপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ্‌ তালাহ করেই দিয়েছে, আল্লাহু আকবার।

সুতরাং কুরআনের প্রায় ৫০০ আয়াতের অপব্যাখ্যার কারনে তারা মুনাফিক হয়ে গেছে।

আমি প্রায় ৩ মাস এদের সাথে জড়িত ছিলাম, খুব কাছে থেকে দেখেছি এদের। আল্লাহ্‌র রহমতে প্রথম দিনই আমি হুবুহু বয়ান দিতে পারায় আমি আমিরের অনেক ঘনিস্ট হয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে যে তাদের ভণ্ডামি চোখে ধরা পড়বে তা কল্পনাও করিনি।

এরা কুরআন একটু কমই মানে, এদের ধর্মীয় গ্রন্থ হলো 'ফাযায়েলে আমল'। আমাকে প্রায়ই এই কিতাব থেকে বয়ান দিতে হতো।

এই ফাযায়েলে আমলের কারনেই ওরা ফাযলামি শিখেছে। আরও একটি কিতাব আছে 'ফাযায়েলে হজ'। অসংখ্য রুপকথা আর ভণ্ডামি দিয়ে এই কিতাব তৈরি। অসংখ্য ভুল তাদের এই কিতাবে। এই ফাযায়েলে হজ নামক বইটিতে স্পষ্ট শিরক রয়েছে, তাদের আকিদায় অনেক সমস্যা। তাব্লিগে যারা নতুন তারা লক্ষ্য করুন...

নিচে তা সামান্য তুলে ধরা হলো।

১নং ভণ্ডামিঃ

শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে অবশেষে আমি হুজুর এবং শায়ইখানের কবরের মধ্যে সালাম পড়িয়া আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল।

আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হবো।

এই কথা আরজ করে মিম্বর শরীফের নিকট গিয়ে আমি শুইয়া পড়লাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। ডানে হযরত আবু বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে হজরত আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ আমাকে ডেকে বলেন, এই দেখ, হুজুর সাঃ তাশরীফ এনেছেন। আমি উঠা মাত্রই মহানবী সাঃ আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলি।

তারপর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হাতে বাকী অর্ধেক ছিল (রুটি অবশিষ্টাংশ)। [সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৬ পৃষ্ঠা।]

জবাবঃ ও আমার ভাইয়েরা! দেখুন এদের শিরকের মাত্রা দেখুন। রাসুলের রওজা মোবারকে খাবার চাওয়া কি শিরক নয়?

রিজিকের মালিক কে? 'ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর।' (সূরা হুদ-৬)

নবীর রওজায় রুটি, মাজারে গিয়ে শিন্নি আর শাহবাগে গিয়ে বিরিয়ানি চাওয়া কি এক নয়? এখন তো দেওয়ান বাগির মুরিদেরা মাজারে গিয়ে মিনটোস চকোলেট চাইবে। এরা ভন্ড এবং মুশরিক।

২ নং ভণ্ডামিঃ

বিখ্যাত সূফী (?) ও বুজুর্গ হজরত শায়খ আহমদ রেফয়ী (রঃ) ৫৫৫ হিজরী সনে হজ্জ সমাপন করিয়া নবীজির রওজা জিয়ারতের জন্য মদিনায় হাজির হন। সেখানে তিনি নিম্নোক্ত রওজার সামনে দাঁড়াইয়া নিম্নোক্ত দুটি বয়াত পড়েন। "দূরে থাকা অবস্থায় আমি আমার রুহকে হুজুর সাঃ এর খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম। সে (রুহ) আমার নায়েব হইয়া আস্তানা শরীফে চুম্বন করিত। আজ আমি শ্বশরীরে দরবারে হাজির হইয়াছি। কাজেই হুজুর আপন হস্ত বাড়াইয়া দেন যেন আমির ঠোট উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করে। বয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে (ল্যাও ঠ্যালা) কবর হইতে হাত মোবারক বাহির হইয়া আসে এবং হযরত রেফায়ী উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করেন।

বলা হয় যে, সে সময় মসজিদে নববীতে ৯০ হাজার লোকের সমাগম ছিল। সকলেই বিদু্তের মতো হাত মোবারকের চমক দেখিতে পায়। তাহাদের মধ্যে মাহবুবে ছোবহানী(!নিজেকে গাইছুল আজম দাবি করেছিলেন) আব্দুল কাদের জিলানীও ছিলেন। সূত্র: ফাজায়েলে হজ্জ-২৫৮ পৃষ্ঠা ২৩তম নবী প্রেমের কাহিনী।

জবাবঃ ও আমার ভাইয়েরা! দেখুন কত বড় গাঁজাখুরি কথা!

রুহ দেখি পুরাই রিমোট কন্ট্রোল... যায় আর আসে...

যাইহোক মসজিদে নববীতে একসাথে ৯০ হাজার লোকের ক্যাপাসিটি করছে নাকি? আর সবাই এক সাথে দেখবে হাতের ঝলকানি? এট কি কোন মুর্খকেও বিশ্বাস করাতে পারবেন?

৩নং ভণ্ডামিঃ

জনৈক বেদুঈন হুজুর (ছঃ) এর কবর শরীফের নিকট দাড়াইয়া আরজ করিল,

হে রব! তুমি গোলাম আজাদ করার হুকুম করেছো। ইনি (নবী সাঃ) তোমার মাহবুব, আমি তোমার গোলাম(নাউজুবিল্লাহ)। আপন মাহবুবের কবরের উপর আমি গোলামকে (জাহান্নামের) আগুন হইতে আজাদ করিয়া দাও। গায়েব হইতে আওয়াজ আসিল, তুমি একা নিজের জন্য কেন আজাদী (ক্ষমা) চাহিলে? সমস্ত মানুষের জন্য কেন আজাদী চাহিলে না। আমি তোমাকে আগুন হইতে আজাদ করিয়া দিলাম।

(সূত্র: ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৪ পৃষ্টার ১ম কাহিনী)

জবাবঃ ছি ছি ছি রাসুলের কবরে গিয়ে মাজার ব্যাবসায়িদের মত ক্ষমা চায়! কত বড় শিরক...

গায়েবি আওয়াজ কেবল নবীরাই শোনে। বেদুইন কিভাবে শুনলো?

নাকি কানে এয়ারফোন দিয়ে সে Bhoot FM এ শুনতেছিল??

ক্ষমা কার কাছে চাইতে হবে ভাই?? আপনি রাসুলের রওজায় চান কেন??

আরও অনেক ভণ্ডামি আছে এই কিতাবের। এগুলোর আর ব্যখ্যা দিবনা, নিজেই পড়ুন আর মজা লুটুন।

১। শায়েখ ইব্রাহিম এবনে শায়বান (রঃ) বলেন, আমি হজ্বের পর মদিনা পাকে পৌছাইয়া কবর শরীফে হাজির হইয়া হুজুর পাক সাঃ এর খেদমতে ছালাম আরজ করিলাম। উত্তরে হুজরা শরীফ হইতে ওয়ালাইকুমুস্সালাম শুনিতে পাই।

সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্ব-পৃষ্ঠা-২৫৫ (৫ নং কাহিনী)

২। আল্লামা কাস্তালানী (রঃ) বলেন, আমি একবার এমন কঠিন রোগে আক্রান্ত হই যে, ডাক্তারগণ পর্যন্ত নিরাশ হইয়া যায়। অবশেষে আমি মক্কা শরীফ অবস্থানকালে হুজুর সাঃ এর উছিলায় দোয়া করিলাম। রাত্রি বেলায় আমি স্বপ্নে দেখি, এক ব্যক্তির হাতে একটি কাগজের টুকরা, তাহাতে লেখা রহিয়াছে, ইহা আহমাদ বিন কাস্তালানীর জন্য ওষুধ। হুজুরে পাক (সাঃ) এর তরফ থেকে তাহার নির্দেশে (?) ইহা দান করা হইয়াছে। আমি ঘুম হইতে জাগ্রত হইয়া দেখি আমার মধ্যে রোগের কোন চিহ্ন নাই।

সূত্রঃ ফাজায়েলে হজ্জ্ব-২৫৫ পৃষ্ঠা (৬ নং কাহিনী)

তাদের আরও একটি ধর্মীয় পিচ্চি গ্রন্থ হলো 'ছয় নম্বর'। ছয় নম্বর বইটিতে ছয়টি বিষয় নিয়ে বলা হয়েছে যা মানলে আপনার জান্নাতের গ্যরান্টি দেওয়া হয়। কত বড় বিদাত দেখুন! মিলাদ পড়লে রাসুল খুশি হয়!! কোন হাদিসে পাইলাম না আর এখানে এরা শুরু করছে কি।

অমুকের ছয় নম্বর বাচ্চারা বলে 'আমরা ছাড়া সবই বিদআত'। ওরা হলো আলিফ লায়লার মত খালি নামাজ(তাও আবার সহিহ নয়) পড়ে আর মুসলিমদেরই নামাজের দাওয়াত দিতে 'দ্বীন প্রচারক' সাজে। সহিহ সুন্নাহর ওপর চলা ইসলামের দায়ীদের ফিতনাবাজ ট্যাগ দেওয়া আর জিহাদের অপব্যাখ্যা করা অর্থাৎ ইসলামকে ব্যাবহার করে টিকে থাকা এদের কাজ যার কারনে তারা বাধাপ্রাপ্ত হয়না।

অনেকের চুল্কানি থাকতে পারে, আগেই বলি আমি জামায়াত শিবির করিনা কিংবা আমি আহলে হাদিস নই। আমি মুসলিম এটা ইয়ামার পরিচয়।

যাইহোক তাবলীগের নিয়ত ভালো, আর তা হলো দ্বীন প্রচার। তাই তাবলীগের ভাইদের অনুরোধ করছি আপনারা ফাযলামির কিতাব বাদ দিতে কুরআন পড়ুন, হাদিস অনুসরণ করুন। নিয়ত অনুসারে কাজ করুন, আপনারা নিজেরাও বলেন 'প্রত্যেকটা কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল'। সুতরাং জেনে বুঝে বিদআত আর শিরক করেন কেন?

*শিরক মুক্ত আকিদাহ চাই - ফি সাবিলিল্লাহ*

বিষয়: Contest_mother

৫১৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File