জামায়াতকে বদলে ফেলার এখনই সময়

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তফা মোঘল ০২ আগস্ট, ২০১৩, ১১:১২:২৬ সকাল

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী ইসলামী সংগঠন এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের এমন একটি গ্রামও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে জামায়াতের কোন কর্মি বা সমর্থক নেই। আবার জামায়াত সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের অবস্থানও অন্যকোন যেকোন ছাত্রসংগঠনের চেয়ে মজবুত। সারাদেশে তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বি¯তৃত। আর্থিকভাবেও জামায়াতে ইসলামী অন্যকোন রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা এই সংগঠনটির গায়ে কালিমা লেপন করেছে! স্বাধীনতার পর জামায়াত-শিবিরের চেয়ে আর কেউ বেশি দেশপ্রেমের প্রমান দিতে পেরেছে বলে আমি মনে করিনা। অথচ আজ তাদেরকেই দেশবিরোধী হিসেবে প্রমাণ করা হচ্ছে তাও আবার দেশের আদালতের মাধ্যমে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে জামায়াতের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। এতদিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে খোঁচা দিলেও আজ (০১ আগষ্ট) সরাসরি কলিজায় খামচা দিয়েছে। এতে জামায়াতের প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মি ও সমর্থকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কেউ রাজপথে কিছূটা প্রতিক্রিয়া দেখালেও বেশিরভাগই নিরবে নিভৃতে চোখের পানি ফেলছে। দু’হাত তুলে মহান মালিকের সাহায্য প্রার্থনা করছে। জানিনা এই ফরিয়াদ আরশের মালিকের নিকট পৌঁছবে কি না। তবে, এটা ঠিক সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জামায়াতে ইসলামীকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পথ নির্দেশ করেছে বলে আমার মনে হয়। জামায়াতে ইসলামী যে ধারার সংগঠন, সে মানের নেতা কিম্বা কর্মি তৈরিতে জামায়াত কতটা সফল তা ভাবার সময় এসেছে। জামায়াতের নেতা এবং কর্মির নিকট থেকে সাধারন মানুষ যা আশা করে জামায়াত তার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে সেই আত্মসমালোচনা আজ সময়ের দাবি।

আমাদের সামনে মিসর, তুরস্ক সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের একজন নেতা বা কর্মির সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও কর্মির তুলনা করলেই বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। বছরের পর বছর শাসক গোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতনের আগুনে পুড়ে পুড়ে আজ তারা খাঁটি সোনায় পরিনত। তাইতো তিন তিন বার নিষিদ্ধ হওয়ার পর তুরস্কের রাফা পার্টি আজ ক্ষমতায়। বহুকাল নিষিদ্ধ থাকার পরেও মিসরের মুসলিম ব্রাদাহুড আজ মার্কিনীদের আতঙ্ক। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে মুরসির সরকারকে হটালেও তার সমর্থকদের রাজপথ থেকে সরাতে পারছেনা মিসরের সেনাবাহিনী। এটা সম্ভব হয়েছে ইসলামের জন্য নিবেদিত একদল জানবাজ নেতা ও কর্মি তৈরির কারনেই। বাংলাদেশে ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখার মত কর্মির অভাব আছে তা কিন্তু নয়। হাজার হাজার তরুণ আল্লাহর রাস্তায় জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সঠিক ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব সেইসব জানবাজ তরুণকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

শীর্ষ নেতাদের জেলখানায় বন্দি করার পর সর্বশেষ গত ৯ মাসে রাজপথে প্রচন্ড শক্তি প্রদর্শন করেছে জামায়াত এবং ছাত্রশিবির। সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়েও জামায়াত-শিবিরকে রাজপথ থেকে সরাতে পারেনি। এটা নিশ্চয়ই জামায়াত-শিবিরের বড় সাফল্য। কিন্তু রাজপথে আমরা জামায়াত-শিবিরের যে শক্তির মহড়া দেখছি এটাতো সত্যিকারের চিত্র নয়। সারাদেশে জামায়াত ও শিবিরের যে সংখ্যক নেতাকর্মি রয়েছে তার কত অংশ আমরা রাজপথে দেখতে পাচ্ছি? আমার ধরনা- ছাত্রশিবিরের শতকরা ৫০ জন নেতা এবং কর্মিকে রাজপথে দেখা গেলেও জামায়াতের ১০ ভাগ কর্মিকেও আমরা মাঠে দেখিনি। শিবিরের পাশাপাশি জামায়াত তাদের শতবরা ৫০ ভাগ কর্মিকে মাঠে নামাতে সক্ষম হলে রাজপথের চিত্রই পাল্টে যেত। কিন্তু জামায়াত এখানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু কেন? জামায়াত তাদের কর্মিদের মাঠে নামাতে পারছেনা কেন? এর পিছনে অনেক ব্যাখ্যা থাকতেই পারে। তবে, নেতৃত্বের ব্যর্থতা এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন বিপদ মুহুর্তে দল পরিচালনার যোগ্য লোক তৈরি না করেই কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারনেই জামায়াতের এ অবস্থা।

আমরা বিশ্বাস করতে চাই, জামায়াত কৌশলগত কারনেই তাদের জনশক্তিকে রাজপথে না নামিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ঈদের পর হয়তো পুরো শক্তি নিয়েই তারা রাজপথে নামবেন। গোটা জাতি এমনটাই প্রত্যাশা করছে।

শেষ করার আগে শিরোনামে বর্ণিত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোকপাত করতে চাই। সবদিকে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এই সুযোগে জামায়াতকেও বদলে ফেলা প্রয়োজন। বদলে ফেলার অর্থ এই নয় যে, সরকারের দাবি অনুযায়ী সার্বভৌমত্যের মালিক আল্লাহর পরিবর্তে জনগণকে মেনে নেয়া। পলিসিগত ভাবে কিছু পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। যেমন-

১. জামায়াত এখনো একজন যোগ্য এবং ত্যাগী কর্মির চেয়ে দলের সাংগঠনিক পদবীধারী ব্যক্তিকেই বেশি মূল্যায়ন করে থাকে। যদিও তার সে বিষয়ে যোগ্যতার ঘাটতি থাকে।

২. যতটা সম্ভব কম সময়ে বার্ধক্যে উপনীত ব্যক্তিদের কাঁধ থেকে নেতৃত্বের বোঝা নামিয়ে তরুণদের কাঁধে তুলে দেয়া।

৩. গঠনতন্ত্রের কিছু ধারা বিশেষ করে রুকন (সদস্য) হওয়ার শর্ত সংকান্ত ধারাগুলো আরও আধুনিক এবং যুগোপযোগি করা।

৪. সাধারন মানুষের কাছে আরও সহজভাবে ইসলামকে উপস্থাপন করা।

৫. ছাত্রশিবিরের আদলে একটি যুব সংগঠন তৈরি করা।

৬. কেন্দ্রিয়ভাবে ধর্মীয় নেতার পদ সৃষ্টি করা এবং সরকারের মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সংগঠনের পদ বিন্যাস করা।

৭. হামাসের অনুকরণে বাংলাদেশের উপযোগি করে সংগঠনের একটি আলাদা ইউনিট করা।

৮. বৃদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত কোন কর্মিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রেখে মিছিল-মিটিং এর জন্য আলাদা লোক তৈরি করা।

বাংলাদেশের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ; অথচ আল কুরআনের বিধান অনুযায়ী সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। জামায়াতে ইসলামী আল্লাহকে সার্বভৌমত্বের মালিক বলাটাই অপরাধ! একারনেই নাকি নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে!! যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে হাজার বার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হোক তাতে কিচ্ছুই যাই-আসেনা। দলের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে তো আর ঈমান ধ্বংস করা সম্ভব নয়?

বিষয়: বিবিধ

১৩৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File