এ কেমন ভালোবাসা!

লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম মুনতাসির ১১ মে, ২০১৪, ১০:৪৯:০৬ সকাল

ইসলামে মুসলিম অমুসলিম সব মা’ই মর্যাদার দাবিদার। আল্লাহ পাক নারীকে মায়ের মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মা তার মাতৃত্বের কারণে শ্রদ্ধা, সম্মান ও সুন্দর আচরণ পাওয়ার হকদার। তাই ‘মা’ নারী ও পুরুষ সবার কাছে মর্যাদার স্বর্ণশিখরে অধিষ্ঠিত। এ নিখিল বিশ্বে মায়ের কোল হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মাতৃস্নেহ এক জান্নাতি নিয়ামত। ‘মা’ স্নেহের পরশ দিয়ে সন্তানাদির হৃদয়কোণে স্বস্তি, সান্ত্বনা ও প্রশান্তি উপহার দেয়। সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। নয় মাস গর্ভে ধারণ করে ‘মা’ তার কলিজার টুকরোকে হৃদয়ের তন্ত্রী ছিঁড়ে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করে জীবন-মরণের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রসব বেদনার অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে এ উন্মুক্ত পৃথিবীতে ভূমিষ্ট করেন। জন্মের দু’বছর ধরে বুকের পান করিয়ে তিল তিল করে বড় করে তোলেন। মায়ের এ কষ্ট তাকে নিজেকে বহন করতে হয়। কোনো পুরুষ এ কষ্টের ভাগীদার হতে চাইলেও সম্ভব নয়। তাই মায়ের সম্মান, ইজ্জত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিতকল্পে ইসলাম চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে বলেছে ‘মায়ের পদতলে প্রত্যেক সন্তানের বেহেশত’। মায়ের মর্যাদার এ সুমহান স্লোগান ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ প্রদান করেনি। তাই সর্বাগ্রে আল্লাহর ইবাদত, এরপর মায়ের খিদমত। এটা আসমানি বিধান।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমার পালনকর্তা (কতিপয়) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন (তা এই) যে, তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুব্যবহার করবে। যদি তাদের মধ্যে একজন কিংবা দু’জনই তোমার কাছে বৃদ্ধ বয়সে অবশ্যই পৌঁছে যায়, তাহলে (তাদের খিটখিটে ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে) তাদের তুমি উহ্ শব্দও বলবে না এবং তাদের ধমকও দেবে না। আর তাদের সঙ্গে তুমি সম্মানজনক কথা বলবে এবং তাদের জন্য দোয়ার মধ্য থেকে নম্রতার বাহু ঝুঁকিয়ে দাও। আর তাদের জন্য দোয়াস্বরূপ এ কথা বলবে, হে আমার পালনকর্তা, তাদের দু’জনের ওপর ঐরূপ দয়া কর, যেরূপ তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন

করেছিলেন (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪ আয়াত)।

ইসলাম মাকে বিশেষ দিনে ভালোবাসতে বলে নি, ইসলামে মায়ের জন্য ভালবাসা, দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধ পালনের আদেশ নিত্য দিনের।

পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে­

‘হজরতআব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় আমল কি? তিনি বললেনঃ সময়মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম, তারপর কি? তিনি বললেনঃ পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। আমি বললামঃ অতঃপর কোন আমল? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।

রাসূল(সা.)আরো বলেছেন: ‘হযরতমুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা সালামী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাঃ-এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে জিহাদে শরিক হতে চাই, যাতে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের মঙ্গল লাভ করব। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার জন্য, তোমার কি মা জীবিত আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ফিরে যাও, গিয়ে তার খিদমত করো... আফসোস তোমার জন্য। তার পায়ের কাছে পড়ে থাকো, সেখানেই জান্নাত’।

‘হযরত মা’আয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) দশটি অসিয়ত করেছিলেন। তন্মধ্যে ১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, যদি তোমাদের সে জন্য হত্যা কিংবা অগ্নিদগ্ধ করা হয়। ২. নিজের পিতা-মাতার নাফরমানি কিংবা তাদের মনে কষ্ট দেবে না, যদি তারা এমন নির্দেশও দিয়ে দেন যে, তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ ত্যাগ করো’।

হয়রত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের ওপর পিতা-মাতার কি হক রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, তারা দু’জন তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।

‘রাসূল (সা.) বলেছেন: যে পুত্র স্বীয় পিতা-মাতার অনুগত, সে যখনই নিজের পিতা-মাতার প্রতি সম্মান ও মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন প্রতিটি দৃষ্টিতে সে একটি করে কবুল হজের সাওয়াবপ্রাপ্ত হয়’।

পিতা-মাতার খুশি ও অখুশির সাথে আল্লাহ পাকের খুশি-অখুশি জড়িত। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাঃ বলেছেন­ ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত’।

ইসলামমায়ের মর্যাদাকে বাবার মর্যাদার সমান করেনি; বরং মায়ের মর্যাদা বাবার মর্যাদার চেয়ে তিন গুণ বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (মুয়াবিয়া ইবনে হীদা আল-কুরাইশী) রাসূল (সা.)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। অতঃপর লোকটি বললেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। অতঃপর লোকটি বললেন তারপর কে? তিনি বললেন তোমার বাবা’। এখানে বাবার মর্যাদার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন পয়েন্ট বেশি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম মায়ের জাতকে কতখানি মর্যাদা দিয়েছে তার প্রমাণ রাসূল (সা.)-এর ওই বাণীতে পাওয়া যায়। ‘এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)এর কাছে গিয়ে বললেন­ হে আল্লাহর রাসূল, আমি একটি বড় পাপ করেছি। আমার কি তওবার কোনো সুযোগ আছে? রাসূল সাঃ বললেন, তোমার কি মা আছে? লোকটি বললেনঃ না। রাসূল (সা.) আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি খালা আছে? লোকটি বললেনঃ হ্যাঁ, আছে। রাসূল সাঃ বললেন, তোমার তওবা আল্লাহর কাছে কবুল করার জন্য তোমার খালার সেবা করো’।

এ প্রসঙ্গে আরো একটি বর্ণনা আছে­ ‘এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! জিহাদে যেতে চাই, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? রাসূল (সা.) বললেন, তোমার কি মা আছে? উত্তরে লোকটি বললেন, হ্যাঁ আছে। তখন রাসূল সাঃ বললেন­ তাহলে তুমি তোমার মায়ের সেবা করো। কেননা মায়ের পায়ের নিচেই জান্নাত’।

একটা কথা মনে রেখো তুমি যত বড় শিক্ষিতই হও, যত প্রতিভাধরই হও, তোমার মা অশিক্ষিতা হলেও মায়ের পায়ের

নিচেই তোমার জান্নাত।

বিষয়: বিবিধ

১১৬২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

220118
১১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৫৭
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : একটা কথা মনে রেখো তুমি যত বড় শিক্ষিতই হও, যত প্রতিভাধরই হও, তোমার মা অশিক্ষিতা হলেও মায়ের পায়ের নিচেই তোমার জান্নাত।

চরম সুন্দর কথা।
220160
১১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File