সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০৫:৫০:৪৪ সকাল
দেশে নির্বাচনের হাওয়া বইছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সবার কাম্য। পত্র-পত্রিকা বা মিডিয়ায় প্রতিদিনই সরকারি দল, বিরোধী দল, জনগন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, জনপ্রশাসন সবাই সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা বলছে এবং এটাও প্রকাশ করছে তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তবে সরকারি দলের দাবি, বিরোধীরা দেশে গৃহযুদ্ধ করতে চায়, বিরোধী দলের দাবী সরকারি দল ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করবে, ভোট চুরি করবে, ভোট ডাকাতি করবে। বিগত বছর গুলোতে সরকার তাদের নিজস্ব কর্মীদের পুলিশে নিয়োগ দিয়েছে, প্রশাসনে নিজস্ব লোক নিয়োগ করেছে, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার সবাই সরকারের নিজস্ব লোকজন ইত্যাদি। তবে, সরকারি বা বিরোধী পক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচন চাইলেও তারা নিজেরাই মুলত সুষ্ঠ নির্বাচনের প্রধান প্রতিবন্ধক। নির্বাচন যেহেতু ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি, সেজন্য উভয় পক্ষই কামনা করে জোরপূর্বক নির্বাচনে জিততে। এক্ষেত্রে সরকারি দল একটু বেশীই সুবিধা পায়। একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে প্রতিবন্ধকাগুলো রয়েছে সেগুলো প্রথমতঃ রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা, দ্বিতীয়তঃ পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য তৃতীয়তঃ নির্বাচন কমিশন ও মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, চতুর্থত প্রশাসন। সুষ্ঠ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে সেগুলো হচ্ছে, নির্বাচনের পূর্বে আইন ও নিয়ম বহির্ভুত প্রচার-প্রচারণা, বিরোধী পক্ষ বিশেষ করে প্রধান বিরোধীপক্ষকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে বাধা দেওয়া, তাদের লোকজনকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নেতা-কর্মীকে পুলিশ দিয়ে হয়রানী, দুর্বল প্রার্থীদের অবজ্ঞা করা ইত্যাদি। এছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলো কালো টাকা দিয়ে ভোট ক্রয়, নির্বাচনের আগে ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ভোটের আগের দিন রাতে ব্যাপক টাকা ছড়ানো, ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাঁধা প্রদান, কেন্দ্রে নিজ দলের লোক বেশী থাকার জন্য 'ডামি' নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ, জোর পূর্বক কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, ব্যালট পেপারে নিজ দলের প্রতীকে সিল মারা ইত্যাদি। সুষ্ঠ নির্বাচনে পুলিশ যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে তাহলো, পেশাগত জীবন শুরুর পূর্বে তিনি যে দল করতেন সেই রাজনৈতিক দলের লোজকনের অপরাধ প্রশ্রয় দেওয়া, ভোট কেন্দ্রে পেশী শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ প্রদান, বিরোধী পক্ষকে হয়রানী। অনেক সময় পুলিশ ও আইন-শৃংখলা বাহিনী পূর্বেই কোন রাজনৈতিক পক্ষের নিকট থেকে টাকা খেয়ে তাদের পক্ষের লোকদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেয় আর বিরোধী পক্ষের যে কেন্দ্রে ভোটার বেশী সে কেন্দ্র গন্ডগোল লাগিয়ে বা ককটেল ফাটানোর সুযোগ করে দিয়ে পিটিয়ে ভোটারদের কেন্দ্র ছাড়া করা হয়। এভাবে সেসব কেন্দ্রে পছন্দের প্রার্থীর ভোট বাড়ানো হয়। এছাড়াও পুলিশ সরকারি বা যাদের নিকট থেকে টাকা খায় তাদের জাল ভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল করা, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানোর মত গুরুতর অপরাধ দেখেও নিস্ক্রিয় ভুমিকা পালন করে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পালনে বাধা প্রদান করে।
নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে তাহলো, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রয়োনীয় আইন ও বিধি তৈরী না করে বিতর্কিত আইন ও কালা-কানুুন তৈরী করা। প্রিজাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত লোকজনকে অবস্থানের সুযোগ দেওয়া, পোলিং অফিসাররা ভুয়া ভোটার সনাক্ত না করা, জাল ভোট প্রদানকারী ব্যক্তিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে না দিয়ে উল্টো সহযোগিতা করা। অবৈধ ভাবে সীল মারার জন্য ব্যালট পেপার সরবরাহ করা, ভোট গননার সময় ব্যালট বাতিল করা, ভোট গননা পেপারে জোর পূর্বক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী এজেন্ট এর স্বাক্ষর নেওয়া, ভোট গননার ভুয়া ফলাফল ঘোষনা করা, সঠিক সময়ে ভোটের ফলাফল ঘোষনা না দেওয়া, বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষনা না করে অন্য প্রার্থীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষনা করা।
প্রশাসন সুষ্ঠ নির্বাচনে যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে সেগুলো হচ্ছে, যে কোন পক্ষ অবলম্বন, বিরোধী পক্ষের অভিযোগ গ্রহণ না করা বা করলেও তার প্রতিকার না করা, সঠিকভাবে ও নিরাপত্তার সাথে ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম না পাঠানো, ভুল ও ঝুকিপূর্ণ স্থানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, রাজনৈতিক দল, আইন-শৃংখলা বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় তৈরী না করা, ঝুকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া, ভোটের দিন সঠিকভাবে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা প্রয়োগ না করা, মারামারি বা গন্ডগোল দেখলে ভোট কেন্দ্র থেকে পলায়ন, ভোট কেন্দ্রের ভলাফল পরিবর্তন করা, বিজয়ী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষনা না করে অন্য প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষনা করা। গন্ডগোল, জালভোট, ভুয়া সীল মারা কেন্দ্রের ভোট বাতিল না করা।
বিষয়: বিবিধ
১০৩৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এর লক্ষণও আমরা দেখেছি - আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুনের ঘটনা হলে ইসির কাছে সেটা হয়ে যায় নির্বাচনী উৎসব , আর বিএনপির অফিসের সামনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে সংঘর্ষ পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগলে সেখানে দোষ হয়ে যায় বিএনপির। গ্রেফতারও হয়। আর আওয়ামী লীগের বেলায় এরকম ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করবে না, শুধু ঠেকাবে।
আর নতুন করে শুরু হয়েছে নেতাকর্মীদের নামে মামলা, হামলা। এরকম চলতে থাকবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যাতে বিরোধীপক্ষের কর্মীদের মামলা , হামলা সামাল দিতেই দিন পার হয়ে যায়। দলের জন্য যে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করবে সেটার সামান্যতম সুযোগও না পায়।
ইভিএম কিনেছে ১১ গুন বেশী দামে আর রিটার্নিং অফিসারদেরকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ব্রিফিং দিয়েছে - এসবেই বোঝা যায় নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ ও ফেয়ার হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন