রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ আমরা যেভাবে চাঁদাবাজি-মাস্তানী রুখে দিতাম
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:২২:১২ রাত
১৯৯৯ সালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ভিপি, প্রো-ভিপি, জিএস, ক্রীড়া সম্পাদক, ধর্মীয় সম্পাদক, সহ-ধর্মীয় সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। এছাড়াও শহীদ মোনায়েম হলে পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল। আমি ধর্মীয় সম্পাদক পদে বিজয়ী হই। এছাড়ও ২০০০ সালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ছাত্র সংসদের নেতা হিসেবে আমরা কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন করি এছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, জাসদ, ছাত্রদলের চাঁদাবাজি, মাস্তানী রুখে দিতে সক্ষম হই। আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো মধ্যে ছিল, লাইব্রেরীতে প্রচুর বই ক্রয়, ক্লাসরুমগুলোতে ফ্যান লাগানো, মসজিদ মোজাইক করা, হলগুলো সংস্কার করা, নতুন ডিপার্টমেন্ট 'মেকাট্রনিক্স ও ইলেকট্রো মেডেক্যাল' সংযোজন এবং এর জন্য ভবন নির্মান আরও অনেক কিছু। আর সবচেয়ে বড় যে কাজটি করতাম তা হলো বন্ধু সংগঠনের ছাত্রনেতাদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা। ওদের চাঁদাবাজির স্টাইল ছিল (ক) হল ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, (খ) হলে সিট দেওয়ার নামে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া (গ) আপেক্ষমান তালিকা থেকে ছাত্র ভর্তি করার নাম করে ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া (ঘ) কলেজের মেনিফেস্টো ওদের মাধ্যমে বিক্রি করতে বাধ্য করে ছাত্রদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া। কোন ছাত্র টাকা দিতে অপারগ হলে নির্যাতন করা। এসব নির্যাতিত ছাত্রদের জন্য ছাত্রশিবির ছিল আল্রাহর রহমত স্বরুপ। আমরা অত্যন্ত দুঢতার সাথে মাস্তান ও ছাত্রনেতাদের হলে ফাঁও খাওয়া বন্ধ করে দেই। যেসব ছাত্র হলে সিট নেওয়ার জন্য বা ভাল ডিপার্টমেন্টে ভর্তির জন্য টাকা দিত তাদেরকে আমরা ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দের চাঁচাত ভাই, খালাত ভাই ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে অবশিষ্ট চাঁদার টাকা দেওয়া থেকে রক্ষা করতাম। অনেক ছাত্রকে তারা তুলে নিয়ে যেতে চেলে আমরা তাদের উদ্ধার করতাম। বন্ধু সংগঠনের চাঁদাবাজ নেতারা সবচেয়ে কষ্ট দিতো ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের। তাঁদের চাঁদাবাজির স্টাইল ছিল, আপেক্ষমান তালিকার নিচের দিকে যাদের ভর্তি হওয়ার সম্ভবনা নেই তাদের কাছ থেকে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা নিত এরপর প্রথম আপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি হওয়ার দিন তারা রেজিস্টার অফিসের সামনে গার্ড দিত যেন কোন মেধাবী ছাত্র ভর্তি হতে না পারে। তাদের ভর্তির আবেদন পত্র নিয়ে ছিড়ে ফেলত। এভাবে প্রথম, দ্বিতীয় আপেক্ষমান তালিকা থেকে যেন ছাত্ররা ভর্তি না হতে পারে সে ব্যবস্থা করে নিম্ন তালিকা থেকে ওরা যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের ভর্তির সুযোগ তৈরী করত। আর আমরা ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ মেধাবী ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের ভর্তির আবেদন যা ওরা ছিড়ে ফেলত অথবা রেজিস্টার অফিসে যাদের ঢুকতে দিতো না তাদের আবেদন পুনরায় লিখে একসাথে অনেক আবেদন নিয়ে রেজিস্টার অফিসে জমা দিতাম। এটা নিয়ে ঐ সংগঠনের চাঁদাবাজ ছাত্রদের সাথে আমাদের ব্যাপক মারপিট হতো। যাহোক এভাবেই আমরা ছাত্রদের অধিকার রক্ষা করতাম। ফলে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট হয়ে উঠেছিল ছাত্রশিবিরের দুর্জয় ঘাটি। রাজশাহী মহানগরীতে আওয়ামী দুঃসাশন বিরোধী আন্দোলনেও ছিল রাজশাহী পলিটেকনিকের ছাত্ররা অগ্রগামী।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমাদের সময় যেসব সন্ত্রাসীরা সাধারণ ছাত্রদের গায়ে হাত তুলতে ভয় পেত শুধুমাত্র ছাত্রশিবিরের কারণে আজ ছাত্রশিবির না থাকার কারণে সেই পলিটেকনিকে অধ্যক্ষ মহোদয়কে পানিতে চুবানোর দুঃসাহস দেখায় এবং সেজন্য পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ ছাত্ররাজনীতিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বিষয়: বিবিধ
৮৪৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর কত ভুল স্ট্র্যাটিজি নিয়ে নিজে ও দেশটাকে পথে বসাবেন? এখন তো সময়ও নেই শোধরানোর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন