আপুদের জন্য আসন্ন ঈদের টিপস

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:৫০:১০ বিকাল



রহিমা আপার সালামের উত্তর দেওয়া আওয়াজ শুনেই বললাম আপা কেমন আছেন ? মন খারাপ কেন ?

কেমনে বুঝলেন , পারভীন আপা , সাহেবের সাথে ঝগড়া হয়েছে । তাই মন ভাল নেই ।

শুনেন আপা ,আল্লাহ মাফ করুন । যেই ঝগড়া আপনার মনে আনন্দ নষ্ট করে দেয় তা না করাই তো ভালো ।

আপা , সে বলে ঈদের বাকি আর বেশি দিন নেই । প্রিজ এখন খালি করছি না কেন ? তাড়াতাড়ি খালি না করলে মাছ মুরগী সহ সব ফেলে দিবে । বলেন আপা ডীপ প্রিজ নেই এখন কি করি।

আপা আমারো ডীপ প্রিজ নেই । একটু বুদ্ধি খাটান।।ইনশাল্লাহ ঝগড়া ছাড়াই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

হয়ত অনেকের কাছে খারাপ লাগবে আমার টিপস গুলো শুনে । আমার রহিমা আপার অনেক ভাল লেগেছে ।

আসন্ন ঈদের টিপসঃ

১। নরমাল প্রিজের সব বের করে বাছাই করে খুব প্রয়োজনীয় গুলো আলাদা করুন । যা আপনার ঈদের আগে ও পরে খুব দরকারী তা রাখুন । যেমন ফল , সালাতের সবজি গুলো, মেহমানকে দেওয়ার জন্য ভিন্ন সাধের কিছু পিঠা ইত্যাদি।

২। ডিপ করা রোস্টের মুরগী গুলো ফ্রাই করে কন্টেনার বক্সে করে এখনি ডিপে রাখুন ।

৩। বড় মাছ গুলো হাফ ফ্রাই করে বক্সে করে ডিপে রাখুন ।

৪ । ছোট মাছ চটচটি করবেন বা দুপেয়াজূ করবেন তা এখনি হাফ রান্না করে বক্সে রেখে ডিপে রাখুন ।

৫। কিছু মসল্লা বাটা তা বক্সে রেখে এখনি ডিপে রাখুন ।

৬। ভাবচ্ছে ডিপ তো সেই ভরাই রয়ে গেল । না আপু , ঈদের দিন কাচা মাংস রাখার আগে নরমালের চাবি বাড়ায়ে ঠান্ডার পরিমান বাড়িয়ে ডীপের সব বক্স গুলো নরমালের পিছনের দেওয়াল এর সাথে মিলিয়ে তাকে রাখুন ।

৭। কয়েক টুকর কাঠ কয়লা বা বাতাবী লেবুর কেটে রেখে দিন । একটার গ্রান আর অন্যটার সাথে মিশবে না ।

৮। সাহেব ঈদের দিনের তাজা মাংস রান্না বেশি পছন্দ করেন । তা হলে ঈদের দিন বেশি করে রান্না করুন । মুখ ভাল ভাবে লাগে এমন বক্সে করে নরমালে রাখুন ।

৯। অনেকেই ঈদের দিন মাংস রান্না করতে গিয়ে বেশি নরম করে ফেলে। যা ২য়বার গরম করতে গেলে সাধ নষ্ট করে ফেলেন ।

১০।হাফ রান্না হয়ে এলেই মাংসের ঝোল আলাদা করে অন্য পাতিলে নিয়ে শুকিয়ে ফেলুন ।মাখা মাখা হয়ে আসলে মাংসের সাথে মিশিয়ে দিন ।আর কিছুক্ষন রেখে নামিয়ে দিন।

১১। আত্নীয় স্বজন দের টা ঈদের দিন পৌছাতে পারেন নাই ?কি হয়েছে নিয়ত করে ডিপে রাখুন।বাসার খাবারের টা কোথায় রাখবেন? লবন আর হলুদ দিয়ে ভালভাবে গরম করে পানি সরায়ে নরমালে রেখে দিন ।ডিপ খালি হলে ঐটাই ডিপে রেখে দিন।

১২। মাংস বেশিবার একই রকম রান্না সাহেব বা মেহমানরা খেতে চান না। একটু ভিন্ন ভিন্ন রকম করে দিন।

১৩। মাংসের আচার টা অনেক মজাদার আবার অনেক তাড়াতাড়ি মেহমান আসলে সামনে দেওয়া যায়।

১৪। আপুরা সব শেষে যেই কথাটা বলব তা হল আপনি যাদের ভালবেসে আপনার নিপুন শিল্প দিয়ে রান্না করে ভোজন রসিকদের ভালবাসা আদায় করে দিচ্ছেন ।আপনিই তাদের হত্যাকারী হয়ে যাবেন না প্লিজ। কারন আপনার রান্না করা মাংসের চর্বি গুলো হার্টের রুগী বা হাইপেসারের রুগীর যে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।তারজন্য কেউ দায়ী না করুক আপনার বিবেক দায়ী করবেন।

১৫। আপনি মাংসের চর্বি একেবারে ফেলে দিন ।আমি তো সিদ্ধ করে প্রথ্ম একেবারে চেকে ফেলে দেই । তারপর ঠান্ডা হলে উপরে শক্ত হয়ে বসা শক্ত চর্বি গুলো তুলে ফেলে দিন ।

১৬। মজার বা মুখরোচক হওয়া রান্নার কথা ভাবছেন? তা আল্লাহর উপর দায়ীত্ব দিয়ে দিন । আপনার হাজার চেষ্টা হলেও আল্লাহর রহমত না থাকলে তা কেউই ভাল বলবে না।

১৭। আর প্রশংসা কথা ভাবছেন? সমস্ত প্রশংসা তো একজনি পাওনাদার ।তাই আমার বলতেআল্লাহর সাহায্যে আমার চেষ্টা আর আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কিছুই নয় ।

প্রতিবেশীর কাছে মুখ বাচানোর জন্য সাহেব কে দামী গরু কিনে কোরবানীর জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না বাচ্ছা দের কেও চাপ প্রয়োগ করতে দিবেন না। তা হলে বেচারা হালাল পথ বাদ দিয়ে হারাম পথে চলে যাবে আর আল্লাহ এই লোক দেখানো ত্যাগ কবুল না করবেন না। কারন লোক দেখান কাজ় মুনাফিকের কাজ । স্বামী / পিতার আর্থিক অবস্থ্যা আগে জেনে নিন ।তার পর ১৬ তারিখের ঈদের খরচ আর ঈদের পরে বাকী মাস চলার খরচ দুই টাই চিন্তা করে ব্যয় করার পরামর্শ দিন আর সংসারের অন্যদেরকেও তা বুঝান।

শুধু চড়া দামে কিনে ঐ নিরীহ পশুটার গলায় ছুরি চালানোর নামই কোরবানী নয়।বরং নিজের নফসের কুপ্রবৃত্তির গলায় ছোরা চালিয়ে তাকে ধ্বংস করে নিজের বিবেক কে তাকওয়াবান করার নামই কোরবানী ।আপনি নিজের বিবেক দিয়ে ভাবেন ,অপরাধ ঐ নিরীহ পশুটা করে নাই । অপরাধ করে আমার নফস। আমাকে ফেরেস্তাদের বিবেক আর শয়তানের কুপ্রবৃত্তি এই দুইটা করার ক্ষমতাই দেওয়া হয়েছে । আমি যখন বিবেক কে কাজে লাগাইয়ে ভাল কাজ করি তখন আমি ফেরেস্তার চেয়েও মর্যাদাশীল হয়ে যাই আর যখন নফস কে কাজে লাগায়ে কুপ্রবৃত্তি অনুসারে খারাপ কাজ গুলো করি তখন আমি এই পশুর চেয়েও অধম হয়ে যাই।

"বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, যার কোন শরীক নেই৷ "

সুরা আনয়াম ১৬২

তাই আমার নফস কে কতল করে যখন বিবেক কে ইসলামের বিধান মোতাবেক কাজে লাগাতে পারব তখনই আমি একজন মানুষ হতে পারব। ইনশাল্লাহ। এই খানে আমাদের মেয়েদের ভুমিকা অনেক বেশি। কারন আমার অল্পতুষ্ট মনোবল যত বৃদ্ধি পাবে আমার স্বামী তত হালাল পথে রিজিকের সন্ধান করবে।আর সেখানেই জান্নাতী সুখ এসে ধরা দিবে।আর আমার লোভ সামলাতে না পারলে পুরো পৃথিবী এনে দিলেও আমাদের স্বামী স্ত্রীর সংসারে সুখ আসবে না।আর তুষের আগুনের মত অশান্তির আগুন আমার সোনার সংসারটা গ্রাস করে ফেলবে। আসুন আমরা সব সময় সর্বঅবস্থ্যায় আমাদের হৃদয়ের কাবার চারিদিকে ঘুরতে থাকি আর বলতে থাকি লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক - আল্লাহ আমি হাজির আল্লাহ তোমার এই গোলাম তোমার সব হুকুম পালনে করতে এই দেহ ও মন নিয়ে হাজির । তুমি প্রভু আমার উপ্সথিতি কবুল করে নাও ।

আপনাদের কথা ভেবে কিছু কথা আমার অভিজ্ঞতা থেকে দিলাম ।যদি কারো উপকার হয় তা আল্লাহ যেন আমার আখিরাতের জন্য তা কবুল করে নেন আর যদি আপনার খারাপ লাগে তা হলে আমি ক্ষমা চাই ।আর আপনার থেকে কিছু শিখতে চাই ।তাই আমাকে কিছু জানাবেন । আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর ভাবে এই ত্যাগের মাসে খারাপ সব ত্যাগ করার ভাল কিছু নেক কাজ করার তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

২৩০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File