কারাগারে এবং অনেকে নিখোঁজ নন তারপর ও র‌্যাবের ‘সাম্প্রতিককালে নিখোঁজ’ এর তালিকায়

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২১ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৩১:০৫ বিকাল



সাম্প্রতিককালে নিখোঁজদের র‌্যাবের তালিকায় অনেকের নাম নিয়ে সরেজমিন তদন্তে দেখা যাচ্ছে কারাগারে এবং অনেকে নিখোঁজ নন তারা তারপর ও র‌্যাবের ‘সাম্প্রতিককালে নিখোঁজ’ এর তালিকায়।

সারাদেশে ঠিক কতোজন তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন তা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে।এ নিয়ে কাজ করছিল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব।সবশেষে র‌্যাব নিখোঁজদের একটি তালিকা করেছে।এতে ২৬২ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

র‌্যাবের তালিকায় নিখোঁজ ২৬২ জন কিন্তু আসলেই কি এরা নিখোঁজ ?

আসুন এক এক করে দেখি তাদের অবস্থান .

‘সাম্প্রতিককালে নিখোঁজ’ এর তালিকায় নাম দেখে একাধিক ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তি এবং তাদের স্বজন নিজেরাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জানিয়েছেন, তারা কোথাও যাননি।

শাহজালাল বিমানবন্দরের বাহির থেকে গায়েব তার নাম ও তালিকায়

নিখোঁজ ২৬১ জনের যে তালিকা দিয়েছে তাতে ২৪ নম্বরে তেহজীবের নাম রয়েছে।

থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল হাউস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ডেল্টা টিচিং (ইংরেজি শিক্ষা বিষয়ক) কোর্সের জন্য তেহজীব গত ১৩ মার্চ ব্যাংকক যান। ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি ও আরবি ভাষা জানতেন তেহজীব।

১৭ মে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন তিনি। এরপর মোবাইলে গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হলেও পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশ প্রথমে জিডি নিতে চায়নি। পরে তাকে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ দিয়ে বলা হলে তিনি জিডি নিয়েছিলেন বলে জানান তেহজীবের বাবা।

“এতেই সন্দেহ হয় হয়তো তাহজীব সরকারি কাস্টডিতে রয়েছেন।যদিও তার বিরুদ্ধে আগে কোথাও কোন ধরনের অভিযোগ ছিল না,” বলেন তিনি ।

র‌্যাবের দেওয়া নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকায় ৮৯ নম্বরে থাকা রাশেদ গাজী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে

র‌্যাবের দেওয়া নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকায় ৮৯ নম্বরে থাকা রাশেদ গাজী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে।গত ১৪ জুলাই রাশেদকে র‌্যাব হেফাজতে নেওয়া হয় ।পরের দিন ১৫ তারিখ তাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নেওয়া হয়।রাশেদ গাজীর বাবা আব্বাস গাজী সাতক্ষীরা তালা থানার সাতপাখিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষিকাজ করে জীবন যাপন করেন।

র‌্যাবের ‘সাম্প্রতিককালে নিখোঁজ’ এর তালিকার ১ নম্বর

ব্যক্তি ঢাকায় তার কর্মস্থলে রয়েছেন


ক্রমিকে থাকা ১ নম্বর নিখোঁজ’

ব্যক্তি বগুড়ার ধুনট উপজেলার সাইদুল ইসলাম ঢাকায় তার কর্মস্থলে রয়েছেন .



নিখোঁজ ২৬২ জনের ৬০ নম্বরে মোস্তফা, গরু কিনতে গিয়ে অপহৃত হন তিনি


কী হয়েছিল জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, গত ৬ তারিখ আমি গরু কিনতে গিয়েছিলাম। কেউ আমাকে ফলো করছেন এমন কিছু বুঝিনি আমি। আমার কাছে ৩১ হাজার ৫শ টাকা ছিল। কীভাবে আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম তাও জানি না। যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে, তখন আমি বুঝতে পারি, আমি একটা মাইক্রোবাসে। কোথায় নিয়ে গিয়েছিল আমি তাও জানি না। যারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা বারবার আমার কাছে আরও টাকা চাইছিল। টাকা না দিলে আমাকে সাগরে ভাসিয়ে দেবে বললে আমি বুঝতে পারি, আমাকে কক্সবাজারের দিকে হয়ত নিয়ে আসা হয়েছে।

তারা কতজন ছিলেন জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, বেশির ভাগ সময় আমার চোখ-হাত বাঁধা ছিল। আমি বলতে পারবো না তারা কতজন ছিলেন।

কীভাবে মুক্তি পেলেন প্রশ্নের উত্তরে কামাল বলেন, গত মঙ্গলবারের আগে কোনও একসময় আমাকে তারা কক্সবাজারে ফেলে দিয়ে যায়। স্থানীয় এক লোক আমাকে উদ্ধার করে আমার বাড়ির ঠিকানা জেনে, বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমার পুরো শরীর কাদা-বালুতে মাখামাখি ছিল। সেই লোকই আমাকে কাপড় কিনে টিকিট করে দেন।

অপহরণকারীরা কেন ছেড়ে দিলো,কোনও টাকা দিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, আমি বার বার বলেছি, আমাকে মেরে ফেলো তোমরা। আমার পরিবারের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমি আর বাঁচবো না। তাহলে পরিবারের লোকের কাছে টাকা চেয়ে তাদের বিপদে ফেলবো কেন! তারা আমাকে অনেক শাসিয়েছে। দুই লাখ টাকা দিলেই ছেড়ে দেবে বলেছে। কিন্তু আমি বারবারই তাদের বলি, আমাদের টাকা দেওয়ার কোনও অবস্থা নেই।

সেনানিবাসে কর্মরত থেকেও নিখোঁজ !!!

র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকায় ১৫৮ নম্বরে আছে শায়েস্তা খাঁর নাম। তার বাবা আব্দুস সবুর খান রংপুর সেনানিবাসে মেস ওয়াটার হিসাবে কর্মরত।

রংপুর সেনানিবাসে নিরাপত্তারক্ষী কর্মরত থেকেও নিখোঁজ

শফিউল ইসলাম রংপুর সেনানিবাসে মেস কুক হিসাবে কাজ করেন (১৫ এমপি ইউনিট)। তার ছেলে মো. সাঈদ রংপুর সেনানিবাসে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কর্মরত। র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকার ১৬০ নম্বরে তার নাম আছে।

বাড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি তারপর ও তালিকায়

র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকার মধ্যে ৫৫ নম্বর তালিকায় রয়েছে মো. সিদ্দিক আলীর নাম। তার বর্তমান ঠিকানা লেখা রয়েছে-২৮৬/এ আমবাগান, মগবাজার, রমনা, ঢাকা। কিন্তু আমবাগার এলাকায় ২৮৬/খ নম্বর বাড়ি পাওয়া গেলেও ২৮৬/এ নম্বর বাড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কারাগারে তার পর ও নিখোঁজের তালিকায়

র‌্যাবের দেওয়া ওই তালিকায় ২১৫ নম্বর ক্রমিকে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রহমতুল্লাহ রাজশাহীর কারাগারে রয়েছেন ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজলোর মাগুরা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।

তাদের কেউ নিখোঁজ নেই

বগুড়ার নিখোঁজদের তালিকায় গাবতলী থানার তেলিহারা গ্রামের সুজন নামে একটি নাম রয়েছে। সে ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে নিখোঁজ বলে তালিকায় জানানো হয়।

গাবতলী থানার ওসি শাহীদ মাহমুদ খান জানিয়েছেন - “সুজন নামের ১২টি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ নিখোঁজ নেই। তারপরে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”

ওই তালিকায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানার আজিমিলন গ্রামের আকবর হোসেন ঢালির ছেলে সিয়াম (১৮) এর নাম রয়েছে।

বলা হয়েছে, তিনি বগুড়ার শাজাহানপুরে উত্তর শাকপালার বাইতুর মামুর মসজিদের পাশে আব্দুর রউফ খন্দকারের বাসায় ভাড়া থেকে বগুড়া শাহ সুলতান কলেজে একাদশ শ্রেণিতে র শিক্ষার্থী ছিল । ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর থেকে সে নিখোঁজ।

শাহজাহানপুর থানার ওসি মাসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন , “এখনও আমরা সিয়াম নামের কারও সন্ধান পাইনি।

চুয়াডাঙ্গায় বাবা মায়ের সাথেই আছে তারপর ও নিখোঁজ

১৬১ নম্বরে থাকা সাব্বির আহম্মেদও নিখোঁজ নন। রংপুরে ডিসির মোড় কেরানীপাড়ার কাজী আশরাফ ভবনে থাকতেন তিনি।

সাব্বিরের বাবা কাজী আশরাফ উদ্দিন রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তারা এখন চুয়াডাঙ্গায় থাকেন।এখন সে তার বাবা মায়ের সাথেই আছে।



প্রেসক্লাবের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে তার পর ও নিখোঁজ !!


র‌্যাবের দেয়া নিখোঁজের তালিকার ১৫৯ নম্বরে আছে রেজোয়ানুর রহমানের নাম। তার ডাক নাম রকিব। বাড়ি নগরীর কামালকাছনা বৈরাগী পাড়ায়। তার বাবা মজিবর রহমান চাকরি করেন রংপুর এলজিইডিতে। আর রেজোয়ানুর সোয়া তিন বছর ধরে কাজ করেন রংপুর প্রেসক্লাবের নিচ তলায় একটি কম্পিউটারের দোকানে।



টিঅ্যান্ডটি কলোনি বাসায় তারপর ও নিখোঁজ


র‌্যাবের প্রকাশিত নিখোঁজের তালিকার ৫৬ নম্বরে থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলম কখনো নিখোঁজ ছিলেন না বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের একদিন খোঁজ না পেয়ে তিনি বিষয়টি স্থানীয় থানা ও র‌্যাবকে জানিয়েছিলেন।

র‌্যাবের প্রকাশিত নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত জাহাঙ্গীরের বাসা মগবাজারের ৩৫/১ টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে।

ওয়াকি পড়াশোনা করছেন তুরস্কে তার পর ও নিখোঁজ !!!

ওয়াকি চৌধুরী গত ৭ মার্চ উচ্চশিক্ষার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পাড়ি জমান। নিয়মিতই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু র‌্যাবের তালিকায় তিনি নিখোঁজ।

ওয়াকির বাবা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহিদ আহমেদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন - “আমার দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ওয়াকি। সে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পড়ে ভর্তি হয় এলসিএসে। ওখান থেকে ও লেভেল, এ লেভেল এবং এলএলবি পড়ে সে উচ্চশিক্ষার জন্য যায় তুরস্কে। তাহলে সে নিখোঁজ হলো কোথায়?”

এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াকির বাবা বলেন, “আমি তো থানায় সাধারণ ডায়েরিও করিনি। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথায় পেল আমার ছেলে নিখোঁজ?”

একজন ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ তার পর ও তালিকায় নাম আছে

নিখোঁজের তালিকার ১৬২ নম্বরে থাকা মো. রেজাউল করিম (বয়স ২৮) মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। রংপুর কোতয়ালী থানার কলাবাড়ী মাহিগঞ্জ এলাকায় তারা থাকতেন। এখন সেই বাড়িতে কেউ থাকেন না। স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, ‘রেজাউলের মানসিক রোগ ছিল। সে মাটিসহ যা পেত তাই খেত। কিছুদিন আগে গাইবান্ধায় একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়। ওই বাড়ির বারান্দায় শুয়ে ছিল রেজাউল। পরে পুলিশ তাকে ধরে নেয়। এরপর মা রোজিনা বেগম তাকে ছাড়িয়ে আনে।

নিখোঁজ কয়েকজনের ছবি দিয়ে ইতোমধ্যে টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন ? মানহানির জন্য কে নেবে এর দায় ? মূল উদেশ্য কি ?



এখন সহজে প্রশ্ন আসছেই - বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে , ডিবির নামে যাদের তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে তাদের নাম যুক্ত করার পথ খুলে দেয়া হচ্ছে ?


( নিখোঁজ তরুণ-তরুণীদের ব্যাপারে অনুসন্ধানে নামে যা পাওয়া যাচ্ছে তার বিবরণী চলবে - পরবর্তী পর্বে )

বিষয়: বিবিধ

২০৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375061
২১ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : এ দেশে এ সব সম্ভব। চলুক।
375084
২২ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৮:৫৫
হতভাগা লিখেছেন : গুম করে ফেলবে বা মেরে ফেলে নিঁখোজের তালিকায় দিয়ে দেবে - সবাই তখন বুঝে নেবে যে আইএসে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে ।

অসুস্থতার কারণ ক্লাসে আসতে পারে নি ২ সপ্তাহ - কলেজ/বিশ্ব বিদ্যালয় তা থানায় জানিয়ে দেবে -- সবাই তখন বুঝে নেবে যে আইএসে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে ।

পারিবারিক সমস্যার কারণে এক সেমিষ্টার মিস হয়ে গেছে - কলেজ/বিশ্ব বিদ্যালয় তা থানায় জানিয়ে দেবে -- সবাই তখন বুঝে নেবে যে আইএসে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে ।

কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ
375107
২৩ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৬:৪২
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আমরা যারা দেশের বাহিরে থাকি। আমরাও
নিখোজ। সরকারের মাথা খারাপ হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File